স্পেসএক্স
আমেরিকান মহাকাশযান প্রস্তুতকারক কোম্পানি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন (ইংরেজি: Space Exploration Technologies Corporation) বা সংক্ষেপে স্পেসএক্স (ইংরেজি: SpaceX) একটি মার্কিন মহাকাশযান প্রস্তুতকারক এবং মহাকাশ যাত্রা সেবা প্রদানকারী কোম্পানি। এর প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্য হথর্ন নগরীতে অবস্থিত। মহাকাশ যাত্রা ও ভ্রমণ সহজলভ্য করার এবং মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক ২০০২ সালে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৯] স্পেসএক্স মহাকাশযান এবং রকেট ইঞ্জিনের তৈরির পাশাপাশি ড্রাগন কার্গো মহাকাশযানএবং স্টারলিংক স্যাটেলাইট (ইন্টারনেট সরবরাহ করে এমন স্যাটেলাইট) তৈরি করেছে। স্পেসএক্স ড্রাগন ২ মহাকাশযানএর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মানুষ ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে।
![]() | |
![]() ডিসেম্বর ২০১৯ সালে স্পেসএক্স সদর দফতর; ফ্যালকন ৯ রকেটের একটি ফ্লাইটের প্লামগুলি ওভারহেডে দৃশ্যমান | |
বাণিজ্যিক নাম | স্পেসএক্স |
---|---|
শিল্প | মহাকাশ |
প্রকার | ব্যক্তিগত |
প্রতিষ্ঠাকাল | ৬ মে ২০০২[১] |
প্রতিষ্ঠাতা | ইলন মাস্ক |
সদরদপ্তর | |
প্রধান ব্যক্তি |
|
পণ্যসমূহ |
|
পরিষেবাসমূহ | অরবিটাল রকেট লঞ্চ |
আয় | US$2 billion (2019) |
মালিক | ইলন মাস্ক ট্রাস্ট (54% equity; 78% voting control)[২] |
কর্মীসংখ্যা | প্রায় ৮,০০০[৩][৪] (May,2020) |
ওয়েবসাইট | www |
পাদটীকা / তথ্যসূত্র [৫][৬][৭][৮] |
ইতিহাস
সারাংশ
প্রসঙ্গ
২০০১-২০০৪:প্রতিষ্ঠা
২০০১ সালে ইলন মাস্ক পরিকল্পনা করেন মার্স ওয়েসিস নামে একটি প্রকল্পের যেখানে তিনি মঙ্গল গ্রহে গ্রীনহাউজ তৈরি করবেন বলে ঠিক করেন এবং এই গ্রীনহাউজ এর মধ্যে গাছ জন্মায় কিনা পরীক্ষা করবেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে মহাকাশ অনুসন্ধানে জনগনদের আগ্রহ পেতে এবং নাসার বাজেট বৃদ্ধির প্রয়াসে প্রকল্পটি "জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম ভ্রমণ" হবে। তিনি রাশিয়া থেকে সস্তায় রকেট কেনার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের রকেট খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন।
মাস্ক অনুভব করেছিল যে তিনি এমন একটি সংস্থা শুরু করতে পারেন যা তার সাশ্রয়ী মূল্যের রকেট তৈরি করতে পারে। প্রথম দিকে টেসলা এবং স্পেসএক্স বিনিয়োগকারী স্টিভ জুরভেটসনের মতে, মাস্ক গণনা করেছিল যে রকেট তৈরির জন্য কাঁচামালগুলো তখন রকেটের বিক্রয়মূল্যের মাত্র ৩% ছিল। ভার্টিকাল ইন্টিগ্রেশন প্রয়োগ করে প্রায় ৮৫% ইন-হাউস লঞ্চ হার্ডওয়্যার উৎপাদন করে, এবং আধুনিক সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মডুলার পদ্ধতির মাধ্যমে।
২০০২ এর প্রথম দিকে, মাস্ক তার নতুন মহাকাশ সংস্থার জন্য কর্মী সন্ধান করতে শুরু করে। পরবর্তীতে শীঘ্রই এর নাম স্পেসএক্স। মাস্ক রকেট ইঞ্জিনিয়ার টম মুলারের (পরে স্পেসএক্সের প্রপুলশনের সিটিও) কাছে গিয়ে তার ব্যবসায়ের অংশীদার হওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মুয়েলার মাস্কের হয়ে কাজ করতে সম্মত হন এবং এভাবে স্পেসএক্সের জন্ম হয়। স্পেসএক্সের প্রথম সদর দফতরটি ক্যালিফোর্নিয়ার এল সেগুন্দোরের একটি গুদামে অবস্থিত ছিল। সংস্থাটি ২০০৫ সালের নভেম্বরে ১৬০ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে যা ২০২০ সালের মে মাসে আট হাজারে পরিণত হয়েছিল, যখন সিওও গুইন শটওয়েল বলেছিলেন যে স্টারলিংক অনলাইন আনার জন্য এই সংস্থাটির আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করেননি। ২০১৬ সালে মাস্ক আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী কংগ্রেসে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে মার্কিন সরকার রকেট প্রযুক্তিকে একটি "উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি" হিসাবে ব্যবহার করে, যা আমেরিকান ছাড়া কেউ বানাতে পারবে না।
২০০৫-২০০৯: ফ্যালকন ১ ও প্রথম কাক্ষিক উড্ডায়ন

স্পেসএক্স নিজেস্ব অর্থে প্রথম কাক্ষিক উৎক্ষেপণ যান (রকেট) তৈরি করে।[১০][১১] ফ্যালকন ১ ব্যয়যোগ্য, সল্প ধারনকারী, দুই ধাপে কক্ষে পৌছানোর মতন একটি রকেট ছিল। ফ্যালকন ১ উন্নয়নে মোট খরচ আনুমানিক ৯০ মিলিয়ন[১২] থকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি এর ডিএআরপিএ ফ্যালকন প্রোজেক্ট (DARPA Falcon Project) থেকে ফ্যালকন নামটি গ্রহণ করা হয়।[১৩]
২০০৫ সালে স্পেসএক্স দশকের শেষ হতে হতে মানববাহী যোগ্য বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা প্রকল্প অনুসরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এটি প্রকল্পই পরবর্তীতে ড্রাগন মহাকাশযান হয়ে উঠে।[১৪] ২০০৬ সালে নাসা সিওটিএস প্রোগ্রামে আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মানুষ ও পণ্য পুনঃসরবরাহ ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যে স্পেসএক্সকে নির্বাচন করে এবং ৩৯৬ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে।[১৫]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি প্রকল্পের অধীনে ফ্যালকন ১ এর প্রথম দুটি উৎক্ষেপণ ক্রয় করেছিল।[১১][১৬][১৭] এই প্রকল্পে ডিএআরপিএ-তে ব্যবহারের উপযুক্ত নতুন ইউ.এস উৎক্ষেপণ বাহন মূল্যায়ন করা হয়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে প্রথম তিনটি রকেট উৎক্ষেপণই ব্যর্থ হয় যা প্রায় কোম্পানির অবসান ছিল। টেসলা মোটোরস এর অর্থায়ন ব্যর্থ হয়েছিল[১৮] এবং যথাক্রমে টেসলা, সোলারসিটি এবং ইলন মাস্ক ব্যাক্তিগতভাবে একত্রে প্রায় দেউলিয়া হয়েছিল। মাস্ক তখন চাপের কারণে "দুঃস্বপ্ন থকে জেগে উঠতেন, চিৎকার করতেন ও শারীরিক যন্ত্রণায় থাকতেন।"[১৯] Musk was reportedly "waking from nightmares, screaming and in physical pain" because of the stress.[২০]
২০০৮ সালে ২৮শে সেপ্টেম্বর চতুর্থ প্রচেষ্টায় প্রথমবার উৎক্ষেপণ সফল হলে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়।[২১] মাস্ক তাঁর অবশিষ্ট ৩০ মিলিয়ন ডলার স্পেসএক্স ও টেসলার মধ্যে ভাগ করে দেন এবং ডিসেম্বরে নাসা প্রথম বাণিজ্যিক পুনঃসরবরাহ মিশনের (Commercial Resupply Mission; CRS) চুক্তি পুরস্কৃত করে স্পেসএক্সকে ১.৬ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে আর্থিকভাবে কোম্পানিটিতে রক্ষা করে। এই কারণ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সক্ষমতা অর্জনের কারণে ফ্যালকন ১ এর দ্বিতীয় সফল ও সর্বমোট পঞ্চম উৎক্ষেপনের পরে রকেটটি অবসর গ্রহণ করে।[২২] এটি স্পেসএক্সকে কোম্পানির সম্পদ একটি বৃহত্তর কাক্ষিক রকেট ফ্যালকন ৯ উন্নয়নে লক্ষ্য করতে সাহায্য করে। গুয়েন শটওয়েল তৎকালীন নাসা প্রশাসক (ও স্পেসএক্সের সাবেক চুক্তিকারী) মাইকেল গ্রিফিন-এর সাথে সিআরএস চুক্তি স্থির করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় শটওয়েলকে স্পেসএক্সের রাষ্ট্রপতিতে পদোন্নতি করা হয়।[২৩][২৪] গ্রিফিন পরবর্তীতে অনুমান করেছিলেন যে স্পেসএক্স-এর ৮৫% মূলত নাসার পুরস্কারের মাধ্যমে ফেডারেল সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা হয় এবং বাকি ১৫% প্রদান করে ইলন মাস্ক এবং আন্যান্য বেসরকারী বিনিয়োগকারী। তিনি প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক মহাকাশ প্রকল্পের জন্য যা পরিকল্পনা করেছিলেন সেটার তুলনায় সরকারী অর্থায়নের পরিমাণকে "তাঁর দৃষ্টিতে অত্যধিক" মনে করতেন।[২৫]
২০১০-২০১২: ফ্যালকন ৯, ড্রাগন ও নাসার চুক্তি
প্রাথমিকভাবে স্পেসএক্স ছোট ফ্যালকন ১ উড্ডয়ন বাহনের পরে মাঝারি ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্যালকন ৫ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল।[২৬] এর পরিবর্তে ২০০৫ সালে একটি পুনঃব্যবহার যোগ্য ও ভারী উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন যান ফ্যালকন ৯ উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখিত ক্ষমতাগুলো প্রদর্শন করতে সফল হলে নাসা বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক উড্ডয়ন কিনতে চাওয়ায় ফাল্কন ৯ এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এটি মূলত ২০০৬ সালের সিওটিএস (Commercial Orbital Transportation Services) প্রোগ্রামের অর্থের সাহায্যে শুরু হয়েছিল।[২৭] ফ্যালকন ৯, ড্রাগন স্পেসক্রাফট এবং এদের একত্রে উড্ডয়ন ক্ষমতা প্রদর্শনে এর উদ্দ্যেশে এই চুক্তিতে সামগ্রিকভাবে ২৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন তহবিল হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল।[২৭] এই চুক্তির অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জুনে ড্রাগন মহাকাশযানের প্রাথমিক মডেলের সাথে ফাল্কন ৯ উৎক্ষেপণ করা হয়।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ১ (COTS Demo Flight 1) এ ফ্যালকন ৯ এর দ্বিতীয় উড্ডয়নে প্রথমবার ড্রাগন কার্যকরী মহাকাশযানের উৎক্ষেপণে সকল উদ্দ্যেশ্য পূরণ করা হয়। এটি দুটি কক্ষপথ ভ্রমণ করে মিশনের সকল উদ্দ্যেশ্য পূরণ করে সুরক্ষিত অবস্থায় ফেরত আসে।[২৮] ২০১০ এর ডিসেম্বরের মধ্যে স্পেসএক্স প্রত্যেক তিন মাসে একটি করে ফ্যালকন ৯ ও ড্রাগন মহাকাশযান তৈরি করছিল।[২৯]
২০১১ সালের এপ্রিল মাসে, কমারসিয়াল ক্রিউ ডেভেলাপমেন্টের দ্বিতীয় দফার অংশ হিসেবে নাসা স্পেসএক্সকে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি প্রদান করে। এ চুক্তিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মানবাহী যান হিসেবে ড্রাগনকে গড়ে তুলার জন্যে একটি সংযুক্ত উৎক্ষেপণ বাতিল ব্যবস্থা (launch abort system) গড়ে তুলার নির্দেশ ছিল।[৩০] ২০১২ সালের অগাস্ট মাসে মানব বাহন ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নকশা গড়ে তুলতে নাসা স্পেসএক্সকে একটি নির্ধারিত মূল্যের স্পেস আক্ট এগ্রিমেন্ট পুরস্কৃত করে।[৩১]
২০১২ সালের শুরুর দিকে মাস্কের কাছে স্পেসএক্সের দুই-তৃতীয়াংশ স্টকের মালিকানাধীন ছিল[৩২] এবং তাঁর ৭০ মিলিয়ন শেয়ারের মূল্য তৎকালীন প্রাইভেট মার্কেটে অনুমানিক মুল্য ৮৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।[৩৩] এই হিসেবে স্পেসএক্সের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।.[৩৪] ২০১২ সালের মে মাসে ড্রাগন সি২+ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ড্রাগন আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মাল পাঠাতে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক স্পেসক্রাফট হয়ে উঠে।[৩৫] এই উড্ডয়নের পরে, স্পেসএক্স এর মূল্য প্রায় দিগুণ হয়ে দাড়ায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারে বা শেয়ার প্রতি ২০ ডলার।[৩৬][৩৭] এই সময়ের মধ্যে স্পেসএক্স মোট ১ বিলিয়ন ডলারে এর প্রথম দশক চালিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার প্রাইভেট ইক্যুইটি প্রদান করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছিল ইলন মাস্ক এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারী বাকি ১০০ মিলিয়ন দিয়েছিল।[৩৮]
২০১২ সালের শেষভাগে স্পেসএক্স স্বয়ংক্রিয় পুনঃব্যবহার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময়ে অবতরণ প্রযুক্তির সল্প-উচ্চতায়, সল্প-বেগে পরীক্ষণ করা হতো। ফাল্কন ৯ এর প্রাথমিক সংস্করণগুলো লম্বভাবে উৎক্ষেপণ এবং অবতরণ করতো।[৩৯] ২০১৩ সালের শেষের দিকে বুস্টারের অতি বেগ ও উচ্চতার পরীক্ষণ শুরু হয়।[৩৯]
২০১৩-২০১৫: বাণিজ্যিক উড্ডয়ন ও দ্রুত উন্নয়ন

স্পেসএক্স ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি ক্রেতার জন্যে প্রথম বাণিজ্যিক মিশন উৎক্ষেপণ করে। ২০১৪ সালে স্পেসএক্স বিশ্বব্যাপী প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতায় ২০টি চুক্তির মধ্যে ৯টি চুক্তি জিতেছিল।[৪০] এই সালে অ্যারিয়ানস্পেস স্পেসএক্সের সাথে প্রতিযোগিতায় মোকাবেলার জন্যে ইউরোপীয় সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তুকি অনুরোধ করেছিল।[৪১][৪২] ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে, স্পেসএক্সের সক্ষমতা এবং স্বল্পমূল্যে সেবা প্রদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি মালামাল (payload) এর উৎক্ষেপণ মার্কেটেও প্রভাব ফেলে। প্রায় এক দশক ধরে এই মার্কেটে মার্কিন মহাকাশযাত্রা সেবাপ্রদানকারী ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স (United Launch Alliance)-এর আধিপত্য ছিল।[৪৩] এই একচোটিয়া অবস্থায় কিছু বছরে সেবাপ্রদানকারী উৎক্ষেপণ মূল্য বাড়িয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল।[৪৪] ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাসা স্পেসএক্সকে কমার্শিয়াল ক্রিউ ট্র্যান্সপোরর্টেশন ক্যাপাবিলিটি (Commercial Crew Transportation Capability; CCtCap) প্রদান করে মানব পরিবহন ব্যবস্থা (Crew Transportation System) উন্নয়নের চুক্তি চূড়ান্ত করে। এই চুক্তিতে কয়েকটি প্রযুক্তিগত ও প্রমাণপত্রদান (cerification) মাইলফলক, একটি যন্ত্রনিয়ন্ত্রিত উড্ডয়ন পরীক্ষা, একটি মানবচালিত উড্ডয়ন পরীক্ষা এবং প্রমাণপত্রদানের পর ছয়টি কার্যকরী মিশন অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৩১]
২০১৫ এর জানুয়ারীতে কোম্পানির ৮.৩৩% এর জন্যে স্পেসএক্স গুগল এবং ফাইডেলিটি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করে।[৪৫] এতে কোম্পানির মূল্য দাড়ায় প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই মাসে স্পেসএক্স বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানে একটি নতুন উপগ্রহ-পুঞ্জ স্টারলিঙ্ক ঘোষণা করে।[৪৬]
২০১৫ সালের জুনের শেষদিকে ফ্যালকন ৯ এর প্রথম গুরুতর ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে সপ্তম পুনঃসরবরাহ মিশন সিআরএস-৭ (CRS-7) উড্ডয়নের ২ মিনিটে বিস্ফরিত হয়। রকেটটিতে একটি বদ্ধপাত্রে চাপবিশিষ্ট হিলিয়াম অবলম্বন করতে একটি ২ ফুট লম্বা দন্ড ছিল, যেটি ত্বরণের বলে খুলে গিয়েছিল। ফলে একটি ফাটল ধরে এবং উচ্চচাপের হিলিয়াম নিম্নচাপের জ্বালানির ট্যাঙ্কে ঢুকে পরে এবং উড্ডয়নটি ব্যর্থ হয়।[৪৭]
২০১৫-২০১৭: পুনঃব্যবহারের মাইলফলক

স্পেসএক্স সর্বপ্রথম রকেটের প্রথম স্তরকে (first stage) সফলভাবে অবতরণ এবং পুনঃরুদ্ধার করে ২০১৫ সালে ডিসেম্বরে ফ্যালকন ৯ ফ্লাইট ২০ মিশনে।[৪৮] ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে স্পেসএক্স অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ (Autonomus Spaceport Drone Ship; ASDS) অফ কোর্স আই স্টিল লাভ ইউ-তে প্রথমবার সফলভাবে অবতরণ করাতে পেরেছিল। এমন কয়েকটি সফল অবতরণ হলে ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্পেসএক্স ঘোষণা করে যে ফ্যালকন ৯ এর পুনঃব্যবহৃত প্রথম স্তরে পেলোড উড়ালে ক্রেতাদের ১০% মূল্য ছাড় দেয়া হবে।[৪৯]
২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্স নিজের দ্বিতীয় গুরুত্বর ব্যর্থতা দেখে। একটি ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণের পূর্বে নিয়মমাফিক স্থির ইন্ধন পরীক্ষায় (static fire test) জ্বালানি ভরার কার্যক্রমের সময় বিস্ফোরিত হয়।[৫০] এতে অনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলারের যোগাযোগ স্যাটেলাইট নষ্ট হয়ে যায়। রকেটটিতে ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন হয়ে যায় ও এটি হিলিয়াম পাত্রের কার্বন যৌগের সাথে প্রজ্বলিত হয়ে উঠে ফলে বিস্ফোরণ হয়।[৫১] এই দুর্ঘটনাটিকে ব্যর্থ উড্ডয়ন না ধরা সত্ত্বেও এটির ফলে কোম্পানিটির উৎক্ষেপণ সেবা চার মাস স্থগিত হয়ে যায়। এ সময় কোথায় ত্রুতি হয়েছিল তা খুজে বের করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে স্পেসএক্স উড্ডয়ন সেবা পুরনায় চালু করে।[৫২]
একই বছরের মার্চ মাসে স্পেসএক্স একটি উদ্ধারকৃত ফ্যালকন ৯ ব্যবহার করে এসইএস-১০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এ সময়েই সর্বপ্রথম পুনঃ-উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পেলোড-ধারী কাক্ষিক রকেট পুনরায় মহাকাশে ফেরত গিয়েছে।[৫৩] এই রকেটের প্রথম স্তরতিকে আবার উদ্ধার করা হয়। এটি পুনঃব্যবহৃত কক্ষগামী রকেটের প্রথম অবতরণ ছিল।[৫৪]
২০১৭-২০১৮: নেতৃস্থানীয় বিশ্বব্যাপী উড্ডয়ন ব্যবস্থা
২০১৭ সালের জুলাইতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করায় কোম্পানিটির মোট মূল্য দাড়িয়েছিল ২১ বিলিয়ন ডলারে।[৫৫] ২০১৭ সালে বৈশ্বিক মার্কেটে প্রেরিত উৎক্ষেপণ চুক্তিগুলোর মধ্যে ৪৫% স্পেসএক্স অর্জন করেছিল।[৫৬] ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে স্পেসএক্স ১০০টির বেশি উৎক্ষেপণ করেছিল যা চুক্তি থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে।[৫৭] এই চুক্তিগুলোর মধ্যে সরকারি (নাসা/ডোড) [৫৮] ও বেসরকারি দুটি ক্রেতাই ছিল। এটি উৎক্ষেপণের পরিমাণের দিক দিয়ে স্পেসএক্সকে বিশ্বব্যাপী মুখ্য বেসরকারি উৎক্ষেপণ সেবা প্রদানকারী করে তুলে।[৫৯]
২০১৭ সালে স্পেসএক্স একটি অধীনস্থ কোম্পানি দ্য বোরিং কোম্পানি তৈরি করে[৬০] এবং কয়েকটি স্পেসএক্স কর্মী ব্যবহার করে স্পেসএক্সের সদরদপ্তর ও কারখানার পাশে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ছোট সুরঙ্গ তৈরি করে।[৬১] which was completed in May 2018,[৬২] এই কাজ ২০১৮ সালের মে মাসে সম্পন্ন হয় ডিসেম্বরে জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০১৮ চলাকালীন দ্য বোরিং কোম্পানিকে একটি নতুন কর্পোরেট সত্তায় পরিনত করা হয়।[৬৩] এর মূলধনের ৬% স্পেসএক্সের কাছে, ১০% এর অল্প প্রাথমিক কর্মচারীদের কাছে এবং বাকি ইলন মাস্কের কাছে যায়।[৬৩]
২০১৯-বর্তমান: স্টারশিপ, স্টারলিঙ্ক এবং প্রথম মানব উড্ডয়ন

২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে স্টারশিপ ও স্টারলিঙ্ক প্রকল্প অর্থায়ন করতে স্পেসএক্স ১০% কর্মীদের ছাটাই করে।[৬৪] ২০১৯ এর প্রথম দিকে ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে স্টারশিপের প্রাথমিক প্রটোটাইপ গঠন ও পরীক্ষণ শুরু হয়। এই বছরের পরবর্তীতে সকল স্টারশিপ গঠন ও পরীক্ষণ স্পেসএক্সের দক্ষিণ টেক্সাস উৎক্ষেপণ স্থলে স্তানান্তর করা হয়। আরার, ২০১৯ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ৬০টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের প্রথম বড় ব্যাচ উৎক্ষেপণ করার মাধ্যমে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের স্থাপনা শুরু হয়। এটি পরবর্তী বছরে পৃথিবীর বৃহত্তম বেসরকারি স্যাটেলাইট পুঞ্জ হয়ে উঠে।[৬৫] ২০১৯ সালে তিন দফা তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে স্পেসএক্স মোট ১.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধন অর্জন করে।[৬৬] ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের মধ্যে স্পেসএক্স এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়[৬৭] এবং ২০২০-এর মার্চ তা পৌছায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারে।[৬৮]
২০২০ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-২ মিশনে ক্রিউ ড্রাগনের মাধ্যমে সফলভাবে দুইটি মহাকাশচারীদের (ডোগ হার্লি ও বব বেনকেন) অক্ষে পৌছিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করে। এতে স্পেসএক্স প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হয় যে আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মহাকাশচারীদের পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি এটি গত ৯ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি থেকে প্রথম মানববাহী উৎক্ষেপণ ছিল।[৬৯][৭০] এই মিশনটি ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার এর কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ (Kennedy Space Center Launch Complex 39-A; LC-39A) থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।[৭১]
২০২০ সালের ১৯শে অগাস্টে বেসরকারি কোম্পানি দ্বারা সংগঠিত সবচেয়ে বড়গুলোর একটি ফান্ডিং রাউন্ডে স্পেসএক্স ১.৯ বিলিয়ন অর্জনের পরে কোম্পানিটির মূল্য দাড়ায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার।[৭২][৭৩][৭৪] ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারপ্রতি প্রায় ৪২০ ডলারে[৭৪] একটি ইক্যুইটি রাউন্ডে ৯৯ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে আরও ১.৬১ বিলিয়ন ডলার অর্জন করলে কোম্পানিটির মূল্য আনুমানিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার হয়। ২০২১-এর মধ্যে স্পেসএক্স ইক্যুইটি অর্থায়নের মাধ্যমে মোট প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ থেকে এই মূলধনের বেশিরভাগই স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট পুঞ্জের গঠন কার্যক্রমে এবং স্টারশিপ উৎক্ষেপণ বাহনের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়েছে।[৭৫] ২০২১ এর অক্টোবরের মধ্যে স্পেসএক্সের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০০.৩ বিলিয়ন ডলার।[৭৬] ২০২১ সালের মধ্যে স্টারলিঙ্কের জন্যে ভূমিতে কম্পিউটার ও যোগাযোগ সেবার দেয়ার জন্যে স্পেসএক্স গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম ও মাইক্রোসফট অ্যাজুরে-এর সাথে চুক্তিতে প্রবেশ করে।[৭৭] ২০২২ সালে অর্থায়নের নতুন দফায় স্পেসএক্সের মূল্য হয় ১২৭ বিলিয়ন ডলার।[৭৮]
২০২১ সালের জুলাইতে স্পেসএক্স এ শর্টফল অফ গ্রাভিটাস নামক একটি নতুন স্বয়ংক্রিয় ড্রোন শিপের উন্মোচন করে। ২০২১ সালে ২৯শে অগাস্টে সিআরএস-২৩ মিশনে এটিতে প্রথমবার একটি বুস্টার অবতরণ করানো হয়।[৭৯] ২০২২ সালের প্রথম ১৩০ দিনের মধ্যেই স্পেসএক্স ১৮ বার রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং দুবার মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফেরত নিয়ে আসে। ২০২২ সালের বেশিরভাগ মিশনই স্টারলিঙ্কের ছিল। এটি একটি ভোক্তানির্ভর ইন্টারনেট ব্যবসা যা গুচ্ছে গুচ্ছে ইন্টারনেট-সম্প্রচার সক্ষম স্যাটেলাইট পাঠিয়ে থাকে। বর্তমানে পৃথিবীর অক্ষে স্টারলিঙ্কের ২,২০০ টির বেশি স্যাটেলাইট আছে।[৮০] ২০২১ সালের ১৩ই ডিসেম্বর কোম্পানির সিইও ইলন মাস্ক ঘোষণা করেন যে স্পেসএক্স একটি কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ প্রকল্প শুরু করছে যেটায় সংগৃহীত কার্বনকে রকেট জ্বালানিতে পরিণত করা হবে।[৮১][৮২] এর পূর্বে ফেব্রুয়ারিতে তিনি সবচেয়ে ভালো কার্বন আটক প্রযুক্তি (carbon capture technology) তৈরি করার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরকে আর্থিক পুরস্কার দিতে এক্স প্রাইজ ফাউন্ডেশনকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দান করার ঘোষণা দেন।[৮৩][৮৪]
২০২২ সালের অগাস্টে রিউটার্স জ্ঞাপিত করে যে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের চলাকালে রাশিয়া সয়ুজ রকেটের প্রাপ্তি আটকিয়ে রেখেছে বিধায় স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ কাঠামো সাময়িকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) স্পেসএক্সের সাথে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে।[৮৫]
২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত স্পেসএক্সের প্রায় ৭৫০০ টি পরবর্তী প্রজম্মের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনুমোদন দেয়।[৮৬]
২০২২ সালে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ এক বছরে একই প্রকার বাহনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ উৎক্ষেপণের জন্যে বিশ্ব রেকর্ডধারী হয়ে উঠে।[৮৭][৮৮]টেমপ্লেট:Primary source inline ২০২২ এ স্পেসএক্স প্রায় প্রতি ৬ দিনে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং মোট ৬১ বার উৎক্ষেপণ করেছিল। কেবলমাত্র নভেম্বরে একটি ফ্যালকন হেভি উৎক্ষেপণ বেতীত বাকি সকল উৎক্ষেপণ ফ্যালকন ৯ রকেটে করা হয়েছিল।[৮৯]
সংক্ষেপে অর্জনসমূহ
তারিখ | অর্জন | Flight |
---|---|---|
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ | প্রথম বেসরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণ তরল-জ্বালানি নির্ভর রকেট কক্ষে পৌছায়।[৯০] | ফ্যালকন ১ ফ্লাইট ৪ |
১৪ জুলাই, ২০০৯ | প্রথম বেসরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণ তরল-জ্বালানি নির্ভর রকেট অক্ষে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট পাঠায়। | ফ্যালকন ১ ফ্লাইট ৫ এ রাজাকস্যাট |
৯ ডিসেম্বর, ২০১০ | প্রথম বেসরকারি কোম্পানি সফলভাবে একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ, স্থাপন ও উদ্ধার করে। | স্পেসএক্স সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ১ এ স্পেসএক্স ড্রাগন |
২৫ মে, ২০১২ | প্রথম বেসরকারি কোম্পানি একটি মহাকাশযান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠায়।[৯১] | ড্রাগন সি২+ |
২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ | প্রথমবার একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তর অবতরণ করানো হয়। | অর্বকম ওজি২ ম২ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১ |
৮ এপ্রিল, ২০১৬ | সমুদ্র প্ল্যাটফর্মে প্রথমবার একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তর অবতরণ করানো হয়। | স্পেসএক্স সিআরএস-৮ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১ |
৩০ মার্চ, ২০১৭ | একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তরকে প্রথমবার পুনঃব্যবহার, পুনঃউড্ডয়ন ও (দ্বিতীয়) অবতরণ করা হয়।[৫৩] | এসইএস-১০ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১ |
৩০ মার্চ ২০১৭ | প্রথমবার একটি পেলোড সুরক্ষককে নিয়ন্ত্রিতভাবে ফেরৎ আনা ও উদ্ধার।[৯২] | এসইএস-১০ |
৩ জুন, ২০১৭ | প্রথমবার একটি বেসরকারি মালবাহী মহাকাশযানের পুনঃউড্ডয়ন।[৯৩] | স্পেসএক্স সিআরএস-১১ তে ড্রাগন সি১০৬ |
৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ | প্রথম একটি বেসরকারি মহাকাশযানকে সূর্যকেন্দ্রিক অক্ষে পাঠানো হয়। | ফ্যালকন হেভি ফ্লাইট টেস্টে ইলন মাস্কের টেসলা রোডস্টার |
২ মার্চ, ২০১৯ | প্রথম বেসরকারি কোম্পানি যে একটি মানববাহনযোগ্য মহাকাশযানকে কক্ষপথে পাঠায়। | ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-১ |
৩ মার্চ, ২০১৯ | প্রথম বেসরকারি কোম্পানি যে একটি মানববাহনযোগ্য মহাকাশযানকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত করে। | |
২৫ জুলাই, ২০১৯ | একটি পূর্ণ-চক্র বিশিষ্ট দহন চক্র বিশিষ্ট ইঞ্জিনের (full flow staged combustion cycle engine) প্রথম উড্ডয়ন (র্যাপটর)।[৯৪] | স্টারহপার |
১১ নভেম্বর, ২০১৯ | পেলোড খোলকের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউড্ডয়ন। ২০১৯ এর এপ্রিলের আরবস্যাট-৬এ মিশনে এই খোলকটি প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছিল।[৯৫] | স্টারলিঙ্ক ২ ভি১.০ |
জানুয়ারী ২০২০ | পৃথিবীতে বৃহত্তম বেসরকারি স্যাটেলাইট পুঞ্জ অপারেটর।[৬৫] | স্টারলিঙ্ক ৩ ভি১.০ |
৩০ মে, ২০২০ | প্রথমবার একটি বেসরকারি কোম্পানি কক্ষপথে মানুষ পাঠায়।[৯৬] | ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-২ |
৩১ মে, ২০২০ | প্রথমবার একটি বেসরকারি কোম্পানি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মানুষ পাঠায়।[৯৭] | |
২৪ জানুয়ারী, ২০২১ | একক মিশনে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ (১৪৩ টি)।[ক][৯৮] | ফ্যালকন ৯ এ ট্রান্সপোর্টার-১ |
২৩ এপ্রিল, ২০২১ | প্রথমবার একটি মানুষ্যবাহী স্পেস ক্যাপসুলের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউড্ডয়ন।[৯৯] | ক্রিউ ড্রাগন এনডেভর |
১৭ জুন, ২০২১ | একটি "জাতীয় প্রতিরক্ষা" মিশনে প্রথমবার একটি বুস্টার পুনহব্যবহার করা হয়।[১০০] | ফ্যালকন ৯ এ জিপিএস III-০৫, বুস্টার বি১০৬২ এর দ্বিতীয় উড্ডয়ন |
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক দলের প্রথম কাক্ষিক উড্ডয়ন।[১০১][১০২] | ইন্সপাইরেশন৪ |
২৪ নভেম্বর, ২০২১ | কোনো মিশনে ব্যর্থতা বা আংশিক ব্যর্থতা ব্যতীত এক প্রকার রকেটে দীর্ঘতম একটানা কাক্ষিক উড্ডয়ন। (ফ্যালকন ৯, ১০১টি উৎক্ষেপণ)।[১০৩] | ডাবল অ্যাসটেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট (Double Asteroid Redirection Test) |
৯ এপ্রিল, ২০২২ | প্রথমবার সম্পূর্ণ বেসামরিক দলকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়।[১০৪] | অ্যাক্সিওম মিশন ১ |
২০ অক্টোবর, ২০২২ | এক বছরে এক প্রকার রকেট দ্বারা সর্বোত্তম পরিমাণ উৎক্ষেপণ। (ফ্যালকন ৯, ৪৮টি উৎক্ষেপণ)।[১০৫] | স্টারলিঙ্ক ৪-৩৬ |
যন্ত্রপাতি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
উড্ডয়ন যান

স্পেসএক্স তিনটি উৎক্ষেপণ বাহন বা রকেট তৈরি করেছে। ছোট-ভর সক্ষম ফ্যালকন ১ প্রথম উৎক্ষেপণ বাহন ছিল এবং এটি ২০০৯ সালে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছে। মাঝারি-ভর সক্ষম ফ্যালকন ৯ এবং ভারী-ভর সক্ষম ফ্যালকন হেভি উভয়ই বর্তমানে সক্রিয় আছে। ফ্যালকন ১ একটি ছোট রকেট যা কয়েকশত কিলোগ্রাম পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপনের সক্ষম ছিল। এটি ২০০৬ ও ২০০৯ এর মধ্যে পাঁচবার উৎক্ষেপণ করা হয়, যার মধ্যে দুবার সফল হয়েছিল।[১০৬] ফ্যালকন ১ প্রথম বেসরকারি জ্বালানিচালিত রকেট ছিল যা কক্ষপথে পৌছাতে পেরেছিল।[৯০]
ফ্যালকন ৯ একটি মাঝারি-ভর সক্ষম উৎক্ষেপণ বাহন ছিল যা ২২,৮০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কক্ষপথে পৌছাতে পারতো। এটি ডেল্টা IV এবং এটলাস V সহ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য রকেটের প্রতিযোগী ছিল। এর প্রথম স্তরে ৯টি মারলিন ইঞ্জিন ছিল। ২০১০ সালের ৪ই জুনে ফ্যালকন ৯ ভি১.০ প্রথম চেষ্টায়ই কক্ষপথে পৌঁছাতে পেরেছিল। ২০১২ সালের ২২শে মে রকেটটির তৃতীয় উড্ডয়নে সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ২ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এটি প্রথম বেসরকারি মহাকাশযান ছিল যা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌছেছিল এবং সংযুক্ত হয়েছিল।[৩৫] ২০১৩ সালে এটির উন্নতি করে ফ্যালকন ৯ ভি১.১ তৈরি করা হয়, ২০১৫ সালে ফ্যালকন ৯ ফুল থ্রাস্ট এবং অবশেষে ২০১৮ সালে ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ তৈরি করা হয়। ফ্যালকন ৯ এর প্রথম স্তরকে বিপরীতদিকে পরিচালনার মাধ্যমে অবতরণ করা, উদ্ধার করা ও পুনঃউড্ডয়ন করার মতোন করে নকশা করা হয়।[১০৭]
ফ্যালকন হেভি একটি ভারী-ভর সক্ষম বাহন যা প্রায় ৬৩,৮০০ কেজি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠাতে পারবে এবং ২৬,৭০০ কেজি ভুস্থির কক্ষপথে নিতে পারবে। এটি তিনটি সামান্য পরিবর্তিত ফ্যালকন ৯ এর প্রথম স্তরের মূল অংশ, অর্থাৎ মোট ২৭টি মারলিন ১ডি ইঞ্জিন ব্যবহার করে।[১০৮][১০৯] ২০১৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী ফ্যালকন হেভি সফলভাবে এর উদ্বোধনী মিশন পূরণ করে। এই মিশনে ইলন মাস্কের নিজস্ব টেসলা রোডস্টারকে সফলভাবে সূর্যকেন্দ্রিক কক্ষপথে পাঠানো হয়।[১১০]
ন্যাশনাল সেকিউরিটি স্পেস লঞ্চ-এর জন্যে ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভি উভয়েই উৎক্ষেপণ পরিচালনার জন্য প্রত্যয়িত। ২০২৩ এর ১৮ই ফেব্রুয়ারী অনুসারে, ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভিকে ২১০ বার উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।[১১১][১১২] এর মধ্যে ২০৮টি পুরোপুরি সফল মিশন, একটি আংশিকভাবে সফল এবং একটি উড্ডয়নকালীন ব্যর্থতা অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি ২০১৬ সালে স্থির প্রজ্বলন পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে একটি উড্ডয়ন-পূর্বকালীন (pre-flight) ব্যর্থতা হয়েছিল।[১১৩][১১৪]
রকেট ইঞ্জিন

২০০২ সালে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে উৎক্ষেপণ বাহনে ব্যবহারের জন্যে কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন–মারলিন, কেস্ট্রেল ও র্যাপটর– তৈরি করেছে।[১১৫][১১৬] ড্রাগন শ্রেণীর মহাকাশযানের[১১৭] প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা (reaction control system) হিসেবে ড্রেকো এবং ক্রিউ ড্রাগনে বাতিল (abort) সক্ষমতা প্রদানের জন্যে সুপারড্রেকো ব্যবহার করা হয়।[১১৮]
মারলিন শ্রেণির রকেট ইঞ্জিন জ্বালানি হিসেবে তরল অক্সিজেন ও আরপি-১ (এক প্রকার কেরোসিন) ব্যবহার করে। মারলিন ইঞ্জিনকে প্রাথমিকভাবে ফ্যালকন ১ রকেটের প্রথম স্থরে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং বর্তমানে ফ্যালকন ৯ এবং ফ্যালকন হেভি বাহনগুলোর উভয় স্তরে ব্যবহার করা হয়।[১১৯] কেস্ট্রেল ইঞ্জিনে একই জ্বালানি ছিল এবং এটি ফ্যালকন ১ রকেটের দ্বিতীয় স্তরের প্রধান ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।[১১৬][১২০]
ড্রেকো এবং সুপারড্রেকো উভয়ই স্বতঃস্ফূর্ত জ্বালানি (hypergolic propellant) নির্ভর রকেট ইঞ্জিন। ড্রেকো ইঞ্জিনগুলো ড্রাগন ও ড্রাগন ২ মহাকাশযানে প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্যে ব্যবহার করা হয়।[১১৭] এর মধ্যে সুপারড্রেকো ইঞ্জিন অধিকতর শক্তিশালী এবং মানববাহী ড্রাগন ২ এর কোনো মিশন বাতিলের অবস্থা হলে আটটি সুপারড্রেকো ইঞ্জিন মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ বাতিল সক্ষমতা (launch abort capability) প্রদান করে।[১২১]
র্যাপটর একটি নতুন শ্রেণির তরল অক্সিজেন ও তরল মিথেন জ্বালানি নির্ভর পূর্ণ-চক্র ক্রমের দহন চক্র বিশিষ্ট (full flow staged combustion cycle) ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলো বর্তমানে উন্নয়নশীল স্টারশিপ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে ব্যবহার করা হয়।[১১৫] তৈরিকৃত সংস্করণগুলো ২০১৬ সালের শেষের দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়[১২২] এবং ২০১৯ সালে ইঞ্জিনটি প্রথমবার উড্ডয়ন করে স্টারহপার বাহনকে ২০ মিটার (৬৬ ফিট) উচ্চতার নিয়ে যায়।[১২৩]
ড্রাগন স্পেসক্রাফট

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল ও মানুষ পাঠানোর জন্যে স্পেসএক্স ড্রাগন স্পেসক্রাফট তৈরি করেছিল। ড্রাগনের প্রথম সংস্করণ কেবলামাত্র মালামাল পরিবহনে ব্যবহার করা হতো এবং এটি ২০১০ সালে প্রথমবার উৎক্ষেপিত হয়।[২৮] ড্রাগনে মহাকাশযানের দ্বিতীয় প্রজন্ম ড্রাগন ২ বর্তমানে সক্রিয় আছে।[৬৯] এটি ২০১৯ সালের প্রথমদিকে মানববিহীন অবস্থায় প্রথমবার উড্ডয়ন করেছিল এবং ২০২০ সালে মানব সহ উড্ডয়ন করে। নাসার সাথে সিআরএস চুক্তির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পুনঃসরবরাহ করতে ড্রাগন ২ এর মালবাহী বিকল্প রুপ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উড্ডয়ন করা হয়েছিল।[১২৪]
২০২০ সালের মার্চে স্পেসএক্স ড্রাগন এক্সএল প্রকাশিত করে। এটি গেটওয়ে লজিস্টিক্স সার্ভিসেস চুক্তির অংশ হিসেবে নাসার পরিকল্পিত লুনার গেটওয়ে স্পেস স্টেশনে মালামাল পুনঃসরবরাহের মহাকাশযান হিসেবে পরিকল্পিত করা হয়েছে।[১২৫] ফ্যালকন হেভি রকেটে ড্রাগন এক্সএল উৎক্ষেপণ করা হবে এবং এটি ৫০০০ কেজির বেশি ভর গেটওয়ে-তে পরিবহণ করতে সক্ষম। ড্রাগন এক্সএল এককালীন ছয় থেকে বার মাস গেটওয় স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত থাকবে।[১২৬]
স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ

ফ্যালকন ৯ এবং ফ্যালকন হেভির কাক্ষিক উড্ডয়নের পরে স্পেস নিয়মিত এদের প্রথম স্তরগুলো ফেরত নিয়ে আসে। এটি নিজস্ব প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করে পুর্বনিরধারিত অবতরণ ভূমিতে অবতরণ করে।[১২৭] যখন জ্বালানির পরিমাণ উৎক্ষেপণ স্থানে ফেরত আসার অনুকুলে থাকে না, তখন রকেটগুলো সমুদ্রে একটি ভাসমান অবতরণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে ফেরত যায়। এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ (autonomous spaceport drone ships; ASDS) বলা হয়।[১২৮]
এছাড়া স্পেসএক্সের ভাসমান উৎক্ষেপণ প্যাটফর্ম প্রবর্তন করার পরিকল্পনা আছে। ২০২০ দশকে পরিবর্তিত তেল শোধনাগার ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপায় প্রদান করা হবে। এটি মূলত দ্বিতীয় প্রজম্মের উৎক্ষেপণ বাহনের জন্যে তৈরি করা হবে: গুরু-ভর বাহন সক্ষম স্টারশিপ ব্যবস্থা, যা সুপার হেভি বুস্টার ও স্টারশিপের দ্বিতীয় স্তর নিয়ে গঠিত। স্পেসএক্স গভীরপানির দুটি তেল শোধনাগার ক্রয় করেছে এবং স্টারশিপের উৎক্ষেপণ আনুকূল্য করতে উন্নয়ন করছে।[১২৯]
স্টারশিপ

স্পেসএক্স বর্তমানে স্টারশিপ নামক একটি গুরু-ভর বাহন সক্ষম উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি করছে। এটি একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্রথম স্তর, সুপারহেভি এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য় দ্বিতীয় স্তর মহাকাশ বাহন স্টারশিপ নিয়ে গঠিত। ২০২০ দশকের প্রথমাংশের মধ্যে এই ব্যবস্থা কোম্পানিটির বিদ্যমান উৎক্ষেপণ বাহন যন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করবে বলে পরিকল্পিত।[১৩০][১৩১]
স্পেসএক্স প্রাথমিকভাবে ২০১৬ সালে কেবলমাত্র মঙ্গলে গমন ও অন্যান্য আন্তঃগ্রহ ব্যবহারের জন্য একটি ১২ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট আইটিএস ধারণা কল্পিত করেছিল। ২০১৭ সালে তাঁরা একটি ক্ষুদ্রতর ৯ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট বাহনের পরিকল্পনা স্থির করে যা স্পেসএক্সের সকল উৎক্ষেপণ সেবা প্রদানকারী সকল সক্ষমতা প্রতিস্থাপন করবে— পৃথিবীর কক্ষপথে, চাঁদের কক্ষপথে; আন্তঃপ্রহ মিশনে; এবং সম্ভবত, পৃথিবীতে আন্তঃমহাদেশীয় যাত্রী বাহনে— কিন্তু এগুলো করতে হবে একটি স্পস্টভাবে একটি নিম্নতর-ব্যয়ের গঠন দ্বারা।[১৩২]
ব্যপকভাবে ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি কর্মক্ষমতার উন্নতি সম্ভব করতে ২০১৮ সালে স্টারশিপ ব্যবস্থাটি কার্বন ফাইবারের পরিবর্তে স্টেনলেস স্টিল ব্যবহার করে পুনরায় নকশা করা হয়।[১৩৩] বেসরকারি যাত্রী ইয়াসাকু মায়েজাওয়া ২০২৩ সালে স্টারশিপ বাহনে চাঁদের চারদিকে ভ্রমণ করার জন্যে চুক্তি নিবেশ করেছিলেন। স্পেসএক্সের দীর্ঘমেয়াদী দর্শন হলো মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রযুক্তি ও সম্পদের উন্নয়ন করা।[১৩৪][১৩৫][১৩৬]
২০১৯ সালে স্পেসএক্স টেক্সাসের বোকা চিকায় স্টারশিপের প্রথম প্রটোটাইপগুলো তৈরি করা শুরু করে। পরিবর্তিতে এ স্থানের নাম দেয়া হয় স্টারবেস (তারাক্ষেত্র)।[১৩৭] পুনরাবৃত্তিমূলক নকশা নীতি ব্যবহার করে স্পেসএক্স স্টারশিপ তৈরি করছে। এদের উদ্দেশ্য দ্রুতগতিতে একাধিক প্রটোটাইপ তৈরি করা ও পরীক্ষণ করা।[১৩৮][১৩৯] ২০২১ সালের মে মাসে একটি সম্পূর্ণ স্টারশিপ প্রটোটাইপকে প্রথমবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ ও অবতরণ করানো হয়।[১৪০]
স্টারলিঙ্ক
স্টারলিঙ্ক স্পেসএক্স দ্বারা তৈরিকৃত একটি ইন্টারনেট স্যাটেলাইট পুঞ্জ। এটি ~৫৫০ কি.মি উঁচু কক্ষপথে কয়েক হাজারটি অন্তর-যুক্ত যোগাযোগ স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত। স্পেসএক্সের মালিকানাধীন ও পরিচালনায় এটির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী সল্প মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবার গুরুত্বর চাহিদা পূরণ করা।[১৪১] ২০১৫ সালে এর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় এবং স্যাটেলাইটের প্রাথমিক প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্যে ২০১৭ সালে স্পেসএক্সের প্যায স্যাটেলাইট মিশনের সাথে এদের উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে ৬০টি স্যাটেলাইটের প্রথম গুচ্ছ উৎক্ষেপণ করা হয়।[১৪২] ২০২০ সালের শেষের দিকে স্যাটেলাইট পুঞ্জটির প্রারম্ভিকভাবে পরিক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়[১৪৩] and first orders were taken in early 2021.[১৪৪] এবং ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রথম অর্ডারগুলো নেয়া হয়। গ্রাহকদেরকে বলা হয়েছিল ৫০Mbps থেকে ১৫০Mbps স্পিডের এবং লেটেন্সি ২০ms থেকে ৪০ms এর ইন্টারনেট সেবা প্রত্যাশা করতে।[১৪৫] ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্টারলিঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা ১ মিলিয়ন অতিক্রম করেছিল।[১৪৬]

জ্যোতির্বিদরা এতো বৃহৎ সংখ্যক স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনাকে আলো দূষণের বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সমালচনা করেছেন।[১৪৭][১৪৮][১৪৯] কেননা দৃশ্যমান ও রেডিও তরঙ্গদৈঘ্যে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের উজ্জ্বলতা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে।[১৫০] এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে, স্পেসএক্স স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের উজ্জ্বলতা কমাতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।[১৫১] স্টারলিঙ্কের বৃহৎ সংখ্যক স্যাটেলাইট দীর্ঘকালে মহাকাশে ধ্বংসাবশেষের সাথে সংঘর্ষের বিপদ তৈরি করছে।[১৫২][১৫৩] তবে স্যাটেলাইটগুলোতে ক্রিপ্টন জ্বালানির হলো থ্রাস্টার আছে, যার ফলে স্যাটেলাইটের মেয়াদ শেষে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা সম্ভব হবে। এছাড়া এদেরকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এরা আপলিংক করা ট্রাকিং ডাটার অনুসারে কোনো সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে পারে।[১৫৪]
২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স স্টারশিল্ড প্রকল্প ঘোষণা করে। এতে স্টারলিঙ্ক-উদ্ভূত স্যাটেলাইট বাসের সাথে মিলিটারি বা সরকারি পেলোড অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্পেস ডেভেলাপমেন্ট এজেন্সি মহাকাশ ভিত্তিক মিসাইল সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্যে স্যাটেলাইট সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা।[১৫৫][১৫৬]
অন্যান্য প্রকল্প
২০১৫ সালে স্পেসএক্স ঘোষণা করে যে তারা একটি হাইপারলুপ প্রতিযোগিতা পৃষ্ঠপোষকতা করবে এবং প্রতিযোগিতামূলক ইভেন্টের জন্যে স্পেসএক্সের সদর দপ্তরের কাছে একটি ১.৬ কি.মি দীর্ঘ সাবস্কেল পরীক্ষামূলক ট্রাক্ট তৈরি করবে।[১৫৭][১৫৮] ২০১৭ সাল থেকে কোম্পানিটি বার্ষিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করছে।[১৫৯]
২০২০ সালে ডাক্তার ও একাডেমিক গবেষকদের সহযোগিতার সাথে, স্পেসএক্স তাদের সকল কর্মচারীদের কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি-পরীক্ষণ প্রকল্প তৈরিতে অংশগ্রহণ করতে নিমন্ত্রণ করেছিল। এভাবে, ৪৩০০ কর্মচারীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রক্তের স্যাম্পল প্রদান করেছিল। এর ফলে আটটি স্পেসএক্স কর্মচারীকে সহলেখক হিসেবে একটি পিয়ার-রিভিউড সাইন্টিফিক পেপার প্রকাশ করা হয়েছিল যা প্রস্তাব করে যে নির্দিষ্ট পরিমাণ কোভিড-১৯ অ্যান্টিবডি ভাইরাসটির বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।[১৬০][১৬১]
২০১৮ সালের জুলাইতে, থাইল্যান্ডে বন্যায় গুহায় আটক শিশুদের উদ্ধারে সাহায্য করতে মাস্ক নিজের কর্মচারীদের একটি ছোট সাবমারিন তৈরির ব্যবস্থা করে দেন।[১৬২] আন্তর্জাতিক উদ্ধার ডাইভিং দলের নেতা রিচার্ড স্টাটন ব্যাক আপ হিসেবে বাহনটির উৎপাদন এগিয়ে নিতে বলে মাস্ককে উৎসাহ করেন, যদি বন্যা খারাপ হয় সেই ক্ষেত্রের জন্যে।[১৬৩][১৬৪] স্পেসএক্স ও বোরিং কোম্পানির কর্মচারীরা আট ঘন্টার মধ্যে ফ্যালকন ৯ রকেটের তরল অক্সিজেন পরিবহণ টিউব ব্যবহার করে একটি ছোট সাবমারিন তৈরি করে এবং ব্যাক্তিগতভাবে থাইল্যান্ডে বিতরন করে।[১৬৫][১৬৬] কিন্তু এই সময়ের মধ্যেই, ১২টি শিশুর মধ্যে ৮টিকে এনেস্থেশিয়ার প্রভাবের মধ্যে ফেস মাস্ক ও অক্সিজেন ট্যাঙ্ক ব্যবহার করেই উদ্ধার করা হয়ে গিয়েছিল; ফলে থাই কর্তৃপক্ষরা সাবমারিনটি প্রত্যাখ্যান করে।[১৬২]
প্রতিষ্ঠান সমূহ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
স্পেসএক্সের সদর দপ্তর ও প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র হথর্ন, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত।[১৬৭] কম্পানীটি রেডমন্ড, ওয়াশিংটনে একটি গবেষণা ও বৃহৎ কার্যক্রম পরিচালনা করে, টেক্সাসে তাঁদের একটি পরীক্ষণ কেন্দ্র আছে এবং তিনটি উৎক্ষেপণ স্থান আছে ও আরেকটি তৈরি হচ্ছে।[১৬৮] এর পাশাপাশি স্পেসএক্স টেক্সাস, ভার্জিনিয়া এবং ওয়াশিংটনে আঞ্চলিক কার্যালয় পরিচালনা করে। স্পেসএক্সকে ডেলায়ারের রাজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।[৫৮] SpaceX was incorporated in the state of Delaware.[১৬৯]
সদর দপ্তর, উৎপাদন, এবং সংস্কার প্রতিষ্ঠান

হথর্ন, ক্যালিফোর্নিয়ার উপশহর লস এঞ্জেলেসে স্পেসএক্সের সদর দপ্তর অবস্থিত। এই বৃহৎ তিনতলা সংস্থাটি মূলত বোয়িং ৭৪৭ বিমানের কাঠামো বানানোর জন্যে নর্থরোপ কর্পোরেশন তৈরি করেছিল।[১৬৭] বর্তমানে এখানে স্পেসএক্সের অফিস, মিশন কন্ট্রোল, এবং ফ্যালকন ৯ এর উৎপাদন ব্যবস্থাসমূহ রয়েছে।[১৭০]
এই এলাকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ খাতের (সদর দপ্তর, ব্যবস্থা, এবং/অথবা অধীনস্থ কোম্পানী) মধ্যে সবচেয়ে ঘনীভূত স্থানগুলোর একটি। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বোয়িং/ম্যাকডোনেল ডগলাসের প্রধান স্যাটেলাইট তৈরির ক্যাম্পাস, অ্যারোস্পেস কর্পোরেশন, রেথিয়ন, নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি, লস এঞ্জেলেস এয়ার ফোর্স বেসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস ফোর্সের স্পেস সিস্টেম কমান্ড, লকহিড মার্টিন, BAE সিস্টেমস, নর্থরপ গ্রুমম্যান এবং AECOM ইত্যাদি। এর সাথে রয়েছে বৃহৎ সংখ্যক মহাকাশ প্রকৌশলী এবং সাম্প্রতিক কলেজ ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক।[১৬৭]
স্পেসএক্স নিজেদের রকেট ও রকেট ইঞ্জিন উন্নয়নে উচ্চ মাত্রায় অনুভূমিক সংযুক্তিকরণ ব্যবহার করে। স্পেসএক্স নিজেস্ব হাথর্ন ফ্যাসিলিটিতে তাঁদের রকেট ইঞ্জিন, রকেটের স্তর, মহাকাশযান, প্রধান বিমানবিদ্যা এবং সকল সফটওয়্যার তৈরি করে - এটি মহাকাশ শিল্পে অস্বাভাবিক।[১৭১]
২০১৫ সালের জানুয়ারীতে স্পেসএক্স ঘোষণা করে যে তারা মহাকাশযান তৈরির এবং বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট প্রদানের ব্যবসায়ে যুক্ত হবে। রেডমন্ড, ওয়াশিংটনে অবস্থিত ৩০,০০০ বর্গ ফুটের (২৮০০ বর্গ মিটার) অফিস বিল্ডিংকে প্রথম স্যাটেলাইট ফ্যাসেলিটি বানানো হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মোতাবেক, রেডমন্ডে একটি ৪০,৬২৫ বর্গ ফিটের (৩৭৭৪.২ বর্গ মিটার) দ্বিতীয় ফ্যাসিলিটি নেয়া হয়েছে যেটাকে স্যাটেলাইটের জন্যে গবেষণা ও উন্নয়ন ল্যাবরেটরিতে পরিণত করা হয়েছে।[১৭২] ২০১৬ সালের জুলাইতে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট যোগাযোগের সুবিধার্তে ক্যালিফর্নিয়ার অ্যায়েরভিনে অতিরিক্ত ৮০০০ বর্গ ফিট (৭৪০ বর্গ মিটার) ক্রয় করে।[১৭৩]
২০২৪ সালে সদর দপ্তর স্থানান্তর
২০২৪ সালে ১৬ই জুলাই ইলন মাস্ক এক্সে প্রকাশ করেন যে স্পেসএক্সের সদর দপ্তর হথর্ন, ক্যালিফোর্নিয়া থেকে টেক্সাসের স্টারবেসে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
উন্নয়ন এবং পরীক্ষণ ফ্যাসিলিটি

স্পেসএক্স ম্যাকগ্রেগর, টেক্সাস থেকে তাঁদের রকেট উন্নয়ন ও পরীক্ষণ ব্যবস্থা পরিচালনা করে। স্পেসএক্সের সকল রকেট ইঞ্জিনকেই রকেট টেস্ট স্ট্যান্ডে পরীক্ষণ করা হয়, এবং ম্যাকগ্রেগরে ২০১২-২০১৩ সালে ফ্যালকন ৯ গ্রাসহপারের নিম্ন উচ্চতা থেকে ভিটিভিএল (VTVL) ফ্লাইট টেস্টিং করা হয়েছিল।[১৬৮] আরও বৃহত্তর স্টারশিপ প্রটোটাইপের পরীক্ষণ টেক্সাসের ব্রাউনসভিল শহরের নিকটবর্তী অবস্থিত স্পেসএক্স সাউথ টেক্সাস উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে পরিচালিত হয়।[১৭০]
বিল অ্যারোস্পেস নামক এক কোম্পানি থেকে স্পেসএক্স ম্যাকগ্রেগরে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানসমূহ ক্রয় করেছিল। এ স্থানে ফ্যালকন ৯ রকেটের ইঞ্জিন পরীক্ষণের জন্য টেস্ট স্ট্যান্ড বসানো হয়। স্পেসএক্স ক্রয়ের পরে ব্যবস্থাটিতে বেশ উন্নতি সাধন করেছে এবং আশেপাশের কয়েকটি কৃষি জমি ক্রয় করে ব্যবস্থাটির জমির প্রসারন করেছে। ২০১২ সালের অক্টোবর অনুসারে, ম্যাকগ্রেগরের প্রতিষ্ঠানটিতে সাতটি টেস্ট স্ট্যান্ড ছিল যা "দিনে ১৮ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৬ দিন" পরিচালনা করা হতো;[১৭৪] এছাড়া আরও টেস্ট স্ট্যান্ড তৈরি করা হচ্ছে, কেননা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে ও আগামী কয়েক বছরে কম্পানীটির বৃহৎ ইস্তাহার আছে।[১৭৫] নিয়মিত পরীক্ষণের পাশাপাশি ড্রাগন বাহনটিকে ভবিষতে পুনঃব্যবহারের উদ্দ্যেশ্যে জ্বালানি নির্গমন, পরিষ্কার ও সংস্কারের জন্যে ম্যাকগ্রেগরে পাঠানো হয়।[১৭৬]
উড্ডয়ন ফ্যাসিলিটি

বর্তমানে স্পেসএক্সের তিনটি কাক্ষিক উড্ডয়ন কেন্দ্র রয়েছে - কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস ফোর্স স্টেশন, ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস ও কেনেডি স্পেস সেন্টার এবং ব্রাউনসভিল, টেক্সাসে আরেকটি তৈরি করা হচ্ছে। স্পেসএক্স ইঙ্গিত করেছে যে তাঁদের চারটি কাক্ষিক উড্ডয়ন কেন্দ্রই উপযুক্ত মনে হয়েছে এবং তাঁদের চারটি উড্ডয়ন কেন্দ্র পূরণ করার মতন পর্যাপ্ত উড্ডয়ন কাজ রয়েছে।[১৭৭] ভ্যানডেনবার্গ উড্ডয়ন কেন্দ্রটি অতি আনত কক্ষ (৬৬-১৪৫°) অর্জনে সক্ষম, অন্যদিকে কেপ ক্যানাভেরাল মাঝারি আনত কক্ষ (২৮.৫–৫১.৬°) অর্জনে সক্ষম।[১৭৮] প্রত্যাবর্তনের পূর্বে ফ্যালকন ১ এর সকল উড্ডয়ন ওমেলেক দ্বীপের রোনাল্ড রিগান ব্যালিস্টিক মিসাইল ডিফেন্স টেস্ট সাইটে হতো।[১৭৯]
২০০৭ সালের এপ্রিলে স্পেসএক্সের কেপ ক্যানাভেরাল স্পেস লঞ্চ কমপ্লেক্স ৪০ (এসএলসি-৪০) এর ব্যবহারকে ইউএসএএফ অনুমোদিত করেছিল।[১৮০] ২০১০ সাল থেকে এই স্থানটিকে ফ্যালকন ৯ এর উড্ডয়নের জন্যে, মূলত পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথ ও ভূস্থির কক্ষপথের জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছ। ফ্যালকন হেভি উড্ডয়নের জন্যে এসএলসি-৪০ সক্ষম না। স্পেসএক্সের বুস্টার পুনঃব্যবহার প্রকল্পের অংশ হিসেবে, কেপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত সাবেক লঞ্চ কমপ্লেক্স ১৩ কে বর্তমানে লান্ডিং জোন ১ নামকরণ করা হয় এবং ২০১৫ সাল থেকে এটি ফ্যালকন ১ রকেটের বুস্টার লান্ডিং-এর জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।[১৮১]

২০১১ সালে ইজারা করা ভ্যানডেনবার্গ স্পেস লঞ্চ কমপ্লেক্স ৪ (এসএলসি-৪ই) মেরুর নিকটবর্তী কক্ষপথের জন্যে ব্যবহার করা হয়। ভ্যানডেনবার্গ কেন্দ্রটি ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভি উভয়ই উৎক্ষেপণ করতে পারে,[১৮২] কিন্তু নিম্ন আনত কক্ষপথে উৎক্ষেপণ করতে পারে না। এর সংলগ্ন এসএলসি-৪ডব্লিউ কে ২০১৫ সাল থেকে ল্যান্ডিং জোন ৪ এ পরিণত করা হয়েছে। এখানে সফলভাবে ৩টি ফ্যালকন ৯ প্রথম স্তর বুস্টার অবতরণ করানো হয়েছে; প্রথমটি করা হয়েছিল ২০১৮ সালের অক্টোবরে।[১৮৩]
২০১৪ সালের ১৪ই এপ্রিলে স্পেসএক্স লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ স্থান্টির জন্যে ২০ বছর দীর্ঘ একটি ইজারা সাক্ষর করে।[১৮৪] ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভির উৎক্ষেপণের জন্যে এই স্থানটিকে পরিবর্তিত করা হয়।[১৮৫] স্পেসএক্স ২০২০ সালের মে মাসে লঞ্চ প্যাড ৩৯এ থেকে প্রথমবার মানুষ্যবাহী মিশন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাঠিয়েছিল।[১৮৬]

টেক্সাসে বোকা চিকা শহরে স্টারবেস থেকে স্পেসএক্স স্টারশিপ পরীক্ষামূলক বাহনগুলো তৈরি ও উড্ডয়ন করে। ২০১৪ সালের অগাস্টে টেক্সাসের ব্রাউনসভিলের নিকট উৎক্ষেপণ ফ্যাসিলিটি তৈরির প্রথম পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছিল।[১৮৭][১৮৮] এটির জন্যে ২০১৪ সালের অগাস্টে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমতিপত্র জারি করেছিল।[১৮৯] ২০১৪ সালেই স্পেসএক্স নতুন উড্ডয়ন ফ্যাসিলিটি তৈরি আরম্ভ করেছিল[১৯০] এবং ২০১৫ সালের শেষের দিক থেকে নির্মাণ কাজ গতি সাধন করেছিল, এখান থেকে ২০১৯ সালে প্রথম উপকাক্ষিক (suborbital) উড্ডয়ন করা হয়েছিল।[১৭০] ব্রাউনসভিলে বোকা চিকা গ্রামের কিছু বাসিন্দা ও পরিবেশ কর্মীরা বিভিন্নভাবে এই কেন্দ্রটির পাশাপাশি স্টারশিপ উন্নয়ন প্রকল্পকে সমালোচনা করেছে।[১৯১][১৯২]
চুক্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
স্পেসএক্স তাঁদের তৈরিকৃত প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের জন্যে কয়েকটি প্রদর্শন ও বাস্তবায়ন সরবরাহ চুক্তি অর্জন করেছে। আর স্পেসএক্স যুক্তরাষ্ট্রের সামরিকের এভল্ভড এক্সপেন্ডেবল লঞ্চ ভেহিকল-পর্যায়য়ের (ইইএলভি) মহাকাশযানের উড্ডয়নের জন্যে অনুমোদিত আছে। কেবলমাত্র ২০১৮ সালেই প্রায় ৩০টি মিশন সহ, স্পেসএক্সের চুক্তিতে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রয়েছে।[৫৮]
আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে পণ্যসম্ভার পরিবহন

২০০৬ সালে স্পেসএক্স আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে পণ্য বিতরনের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে নাসার পক্ষ থেকে কমার্শিয়াল অরবিটাল ট্রান্সপোর্টেশন সার্ভিসেস (সিওটিএস) চুক্তি অর্জন করে। এর সাথে মানুষ পরিবহনের একটি সম্ভাব্য চুক্তি যুক্ত ছিল। নাসা নতুন প্রযুক্তি ও সক্ষমতা উন্নয়নের জন্যে স্পেস অ্যাক্ট এগ্রিমেন্টসের মাধ্যমে "বীজ টাকা" প্রদান করতে উক্ত চুক্তিটি তৈরি করেছিল। এই চুক্তির মাধ্যমে ড্রাগন মহাকাশযানের পণ্য বিতরন ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যে নাসা স্পেসএক্সকে ৩৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করেছিল। এ সময়ে স্পেসএক্স নিজেস্ব পুঁজিতে ফ্যালকন ৯ রকেট তৈরি করেছিল।[১৯৩] এই স্পেস অ্যাক্ট এগ্রিমেন্ট গুলো নাসার উন্নয়ন খরচে অনেক অর্থ বাঁচিয়ে দিয়েছে; কেননা কেবলমাত্র নাসা উৎপাদন করলে যত ব্যয় হোত তার তুলনায় রকেট উন্নয়ন ৪-১০ গুণ সস্তা হয়ে গেছে।[১৯৪]
২০১০ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ১ মিশন উৎক্ষেপণ করা হয়। তখন স্পেসএক্স প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হিসেবে একটি মহাকাশযান সফলভাবে উৎক্ষেপণ, প্রদক্ষিণ এবং উদ্ধার করে।[১৯৫] ২০১২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে স্পেসএক্স সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ২ মিশন চলাকালীন ড্রাগন সফলভাবে আইএসএস-এর সাথে যুক্ত হয়- বেসরকারি মহাকাশযান দ্বারা এটি প্রথমবার সম্ভব হয়েছে।[১৯৬]
বাণিজ্যিক পুনঃসরবরাহ সেবা (Commercial Resupply Services-CRS) একটি নাসা দ্বারা ২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রদানকৃত একধারা চুক্তি, যা বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত মহাকাশযানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মালামাল ও পণ্য বিতরণের উদ্দ্যেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। ১২টি পণ্য পরিবহণ মিশনের জন্যে প্রথম সিআরএস চুক্তিগুলো ২০০৮ সালে স্বাক্ষরিত করা হয়েছিল এবং স্পেসএক্সকে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছিল। এই পরিকল্পিত ১২টি মিশন ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জারি ছিল।[১৯৭] এর মধ্যে প্রথম মিশন, স্পেসএক্স সিআরএস-১ ২০১২ ১২ই অক্টোবর উৎক্ষেপিত হয়েছিল, কক্ষপথে পৌছেছিল, স্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল ও সেখানে ২০ দিন অবস্থিত ছিল, পরে এটি বায়ুমণ্ডলে পুনঃপ্রবেশ করেছিল এবং প্রশান্ত মহাসাগরে অবতরণ করেছিল।[১৯৮]
এর পর থেকে বছরে প্রায় দুইবার সিআরএস মিশন আইএসএস-এ পাঠানো হচ্ছে। ২০১৫ সালে নাসা এই চুক্তির প্রথম পর্যায় প্রসারিত করে স্পেসএক্সের তিনটি অতিরিক্ত পুনঃসরবরাহ মিশন দাবি করে এবং পরবর্তীতে চুক্তিটিকে আরও প্রসারিত করে আইএসএস-এ মোট ২০টি মিশন ক্রয় করা হয়।[১৯৭][১৯৯][২০০] ২০২০ সালের এপ্রিলে সর্বশেষ ড্রাগন ১ মিশন, স্পেসএক্স সিআরএস-২০ আইএসএস ত্যাগ করে এবং পরবর্তীকালে ড্রাগন সেবা থেকে অবসর গ্রহণ করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে পুরস্কারপ্রাপ্তদের একজন হিসেবে স্পেসএক্সকে দ্বিতীয় পর্যায়ের চুক্তিসমূহ প্রদান করা হয়। স্পেসএক্স আরও উন্নত ড্রাগন ২ মহাকাশযানের মাধ্যমে অতিরিক্ত নয়টি সিআরএস মিশন উড্ডয়ন করবে।[২০১][২০২] ২০২০ সালের মার্চে লুনার গেটওয়ে স্পেস স্টেশনে পণ্য পাঠাতে ড্রাগন এক্সএল তৈরি করার জন্যে নাসা স্পেসএক্সকে চুক্তি প্রদান করে। ফ্যালকন হেভি রকেটের মাধ্যেমে ড্রাগন এক্সএল উৎক্ষেপণ করা হবে।[২০৩]
মানব পরিবহণ

স্পেসএক্স নাসা নভোচারীদেরকে আইএসএস থেকে পরিবহনের দায়িত্বে আছে। নাসার এই চুক্তিগুলো কমার্শিয়াল ক্রু ডেভেলপমেন্ট (সিসিডেভ) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত- যার উদ্দেশ্য হলো বেসরকারিভাবে নিয়ন্ত্রিত মহাযান দ্বারা আইএসএস-এ নভোচারী বহন সক্ষমতা উন্নয়ন। এর প্রথম চুক্তি ২০১১ সালে স্পেসএক্সকে দেয়া হয়,[২০৪][২০৫] এরপর ড্রাগন ২ স্পেসক্রাফট তৈরি ও পরীক্ষণের জন্যে ২০১২ সালে আরেকটি চুক্তি প্রদান করা হয়।[২০৬]
আন্তরজান্তিক স্পেস স্টেশনে যুক্তরাষ্ট্রের নভোচারী নিতে ও ফেরত আনার উদ্দ্যেশ্যে ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্যে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে নাসা স্পেসএক্স ও বোয়িংকে নির্বাচন করে। ২০১৭ সালের পূর্বেই ড্রাগন ২ সম্পূর্ণ ও অনুমোদন করতে নাসা ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্জন করেছিল। এই চুক্তিতে নুন্যতম একটি নাসা নভোচারীসহ ন্যূনতম একটি মানববাহী উড্ডয়ন পরীক্ষার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু ক্রিউ ড্রাগন নাসার মানব-মহাকাশযাত্রার অনুমোদন পাওয়ার পরে চুক্তি অনুসারে স্পেসএক্সকে মানববাহী মিশনে ন্যূনতম দুইটি এবং সর্বোচ্চ ছয়টি নভোচারী আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে নিতে হবে।[২০৭]
স্পেসএক্স ২০১৫ সালের মে মাসে, ক্রিউ ড্রাগন মহাকাশযানের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ উড্ডয়ন পরীক্ষা, একটি প্যাড অ্যাবোর্ট টেস্ট, সম্পন্ন করে[২০৮] এবং ২০১৯ সালের শুরুর দিকে সম্পূর্ণ যন্ত্রচালিত একটি উড্ডয়ন পরীক্ষা পরিচালনা করে। এই ক্যাপসুল আইএসএস-এর সাথে সংযুক্ত হয় ও পরবর্তীতে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করে।[২০৯] ২০২০ সালের জানুয়ারীতে, স্পেসএক্স একটি মধ্য-উড্ডয়ন পরিত্যাগ পরীক্ষা (in-flight abort test) পরিচালনা করে। এই পরিক্ষায় একই কৃত্রিম মিশন পরিত্যাগ পরিস্থিতিতে ড্রাগন স্পেসক্রাফট নিজের লঞ্চ এস্কেপ ইঞ্জিন চালু করে। মামব উড্ডয়নের পূর্বে একটি সর্বশেষ পরীক্ষা ছিল।[২১০]
২০২০ সালের ৩০শে মে, নাসার নভোচারী বব বেনকেন এবং ডগ হার্লিকে নিয়ে অন্তর্জাতিক মহাকাশযানের উদ্দ্যেশ্যে ক্রিউ ড্রাগন ডেমো ২ মিশন উৎক্ষেপিত করা হয়।[২১১] এটি ২০১১ সালের পরে প্রথমবার মানববাহী মিশনের উৎক্ষেপণ এবং প্রথম বেসরকারী মানববাহী উৎক্ষেপণ ছিল। ২০২০ সালের ১৬ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ক্রিউ-১ মিশন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল- এর মধ্যে ছিল নাসা নভোচারী মাইকেল হপকিন্স, ভিক্টর গ্লোভার ও শ্যানন ওয়াকার এবং জাক্সা নভোচারী সওচি নোগুচি;[২১২] এরা সকলেই এক্সপেডিশন ৬৪ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২১৩] ২০২১ সালের ২৩শে এপ্রিল নাসা নভোচারী শেন কিমব্রো ও কে. মেগান ম্যাকআর্থার, জাক্সা নভোচার আকিহিকো হাসিদে এবং ইএসএ নভোচার থমাস পেসকট সহ ক্রিউ-২ মিশন অন্তর্জাতিক মহাকাশযানে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল।[২১৪] ২০২১ সালের ২৪শে এপ্রিল ক্রিউ-২ মিশন সফলভাবে স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত হয়েছিল।[২১৫]

এর পাশাপাশি স্পেসএক্স বেসামরিক নাগরিকদের জন্যে অর্থের বিনিময়ে মানববাহী মহাকাশযাত্রা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে সর্বপ্রথম মিশন ছিল ইনস্পিরেশন৪, যা শিফট৪ পেমেন্টসএর সিইও জ্যারেড আইসাকম্যানের পক্ষ থেকে ২০২১ সালে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই মিশনে ক্রিউ ড্রাগন রেসিলিয়েন্স ক্যাপসুলকে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯এ থেকে ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে উৎক্ষেপিত করা হয়েছিল। এই মিশনে ড্রাগন ক্যাপসুলকে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ৩ দিনের জন্যে রাখা হয়েছিল, এরপর রেসিলিয়েন্স আটলান্টিক মহাসাগরে অবতরণ করে। এর মধ্যের ৪টি সদস্যই স্পেসএক্স কর্তৃক বেসরকারিভাবে নভোচারীর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এই প্রশিক্ষণের মধ্যে অরবিটাল মেকানিক্সের উপর শিক্ষা, নিম্নমহাকর্ষ-বিশিষ্ট পরিবেশে পরিচালনা, চাপ পরীক্ষণ, দুর্ঘটনার প্রস্তুতি ও মিশনের সিমুলেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল।[২১৬]
জাতীয় সুরক্ষা

২০০৫ সালে স্পেসএক্স ঘোষণা করেছিল যে তারা ইনডেফিনিট ডেলিভারি/ইনডেফিনিট কোয়ান্টিটি (আইডিআইকিউ) চুক্তি অর্জন করেছে, এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী কম্পানীটি থেকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পর্যন্ত উৎক্ষেপণ ক্রয় করতে পারবে।[২১৭] তিন বছর পরে, নাসা অনুগত করে যে তারা স্পেসএক্সকে প্রদানকৃত মিশনের পরিমাণের উপর নির্ভর করে ১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত একটি আইডিআইকিউ লঞ্চ সার্ভিসেস চুক্তি প্রদান করেছে।[২১৮] ২০১২ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাথে প্রথম দুটি উৎক্ষেপণের চুক্তি ঘোষণা করে। ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স স্পেস অ্যান্ড মিসাইল সিস্টেম সেন্টার স্পেসএক্সকে দুটি EELV-শ্রেণীর মিশন প্রদান করেছে: ডিপ স্পেস ক্লাইমেট অবজারভেটরি (ডিএসসিওভিআর) এবং স্পেস টেস্ট প্রোগ্রাম ২ (এসটিপি-২)। ২০১৫ সালে ফ্যালকন ৯ রকেটে এসসিওভিআর উৎক্ষেপণ করা হয় ও ২০১৯ সালের ২৫শে জুনে ফ্যালকন হেভি রকেটে এসটিপি-২ উৎক্ষেপণ করা হয়।[২১৯]
২০১৫ সালে ফ্যালকন ৯ ভি১.১ ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্পেস লঞ্চের (এনএসএসএল) জন্যে অনুমোদিত হয়। এতে বিমান বাহিনী কোনো জাতীয় নিরাপত্তার অধীনে শ্রেণীবদ্ধ পেলোডের জন্য় স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ সেবায় চুক্তিভুক্ত করতে পারবে।[১১১] এতে গুপ্ত পেলোডের ক্ষেত্রে মার্কিন বিমান বাহিনীর উৎক্ষেপণের উপর একচেটিয়া ইউনাইটেড লঞ্চ এলায়েন্স (ইউএলএ) এর একচেটিয়া ব্যবসার সমাপ্তি ঘটে।.[২২০] ২০১৬ সালের এপ্রিলে মার্কিন বিমান বাহিনী স্পেসএক্সকে এরুপ জাতীয় নিরাপত্তা জরিত প্রথম উৎক্ষেপণ দায়িত্ব প্রদান করে। এটি ছিল দ্বিতীয় জিপিএস III স্যাটেলাইট ৮২.৭ মিলিয়নের জন্যে উৎক্ষেপণ করা।[২২১] এই মূল্য এরুপ পুরবর্তী মিশনের প্রায় ৪০ শতাংশ কম ছিল।[২২২] SpaceX also launched the third GPS III launch on 20 June 2020.[২২৩] এর সাথে, ২০২০ সালের ২০শে জুনে স্পেসএক্স তৃতীয় জিপিএস III স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের মার্চে, আরও তিনটি জিপিএস III স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্যে স্পেসএক্স মার্কিন বিমান বাহিনীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২৯০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি অর্জন করে।[২২৪]
এছাড়া মার্কিন ন্যাশনাল রিকনেসান্স অফিস (এনআরও) স্পেসএক্সের নিকট থেকে উৎক্ষেপণ সেবা ক্রয় করেছে- এর প্রথমটি ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ১লা মে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।[২২৫] ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে স্পেসএক্স আরও তিনটি জাতীয় নিরাপত্তা জরিত স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্যে জাতীয় বিমান বাহিনীর নিকট থেকে ২৯৭ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি অর্জন করে, এগুলো সব ২০২১ আর্থিক বছর বা তার পরে উৎক্ষেপণ করা হবে।[২২৬] ২০২০ সালের অগাস্টে মার্কিন স্পেস ফোর্স আগামী ৫ থেকে ৭ বছরের জন্যে তাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্পেস লঞ্চ (এনএসএসএল) চুক্তিগুলো প্রদান করে। এর মধ্যে একটি উৎক্ষেপণের জন্যে স্পেসএক্স ৩১৬ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি অর্জন করে। এর পাশাপাশি, উক্ত সময়কালে মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের চাহিদার ৪০ শতাংশ স্পেসএক্স পূরণ করবে।[২২৭]
পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে নতুন মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে স্পেস ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিয়ের জন্যে স্পেসএক্স চাহিদা অনুসারে পরিবর্তিত মিলিটারি স্যাটেলাইট নকশা ও উৎক্ষেপণ করে।[২২৮] এই স্যাটেলাইটপুঞ্জ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পৃথিবী যেকোনো স্থান থেকে নিউক্লিয়ার মিসাইল ও অন্যান্য হাইপারসনিক অস্ত্র উৎক্ষেপিত হলে অবগত, নিশানা ও সম্ভবত প্রতিরোধ করার সক্ষমতা প্রদান করে।[২২৯] রাশিয়া ও চীন উভয়ই এই প্রকল্প নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছে এবং অনেক সংস্থা সতর্কিত করেছে যে এটি অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে ফলে মহাকাশে অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু করতে পারে।[২৩০][২৩১]
উড্ডয়ন বাজারে প্রতিযোগিতা এবং মূল্য নির্ধারণের চাপ
সারাংশ
প্রসঙ্গ
স্পেসএক্সের নিম্নমুল্যের উৎক্ষেপণ, বিশেষ করে ভুস্থির কক্ষপথে যোগাযোগ স্যাটেলাইটের উড্ডয়নের ক্ষেত্রে নিম্নমূল্যের ফলে প্রতিযোগীদের উপরে তাদের নিজেদের মূল্য কমানোর চাপ তৈরি হয়েছে।[১৭১] ২০১৩ সালের পূর্বে, যোগাযোগ স্যাটেলাইটের প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বি মার্কেটে এরিয়ানস্পেস (এরিয়ান 5 উড়িয়ে) এবং ইন্টারন্যাশনাল লঞ্চ সার্ভিসেস (প্রোটন উড়িয়ে) আধিপত্য অর্জন করেছিল।[২৩২] পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে প্রতি উৎক্ষপনে প্রকাশ্য ৫৬.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের মাধ্যমে ফ্যালকন ৯ রকেট বাজারে নূন্যতন দাম হয়ে উঠে।[২৩৩] স্পেসএক্সের এই প্রতিযোগিতার ফলে ইউরোপীয় স্যাটেলাইট পরিচালকেরা এরিয়ান 5 এবং ভবিষ্যতে এরিয়ান ৬ রকেটের মূল্য হ্রাসের জন্যে চাপ প্রদান করছে।[২৩৪]
স্পেসএক্স জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত উৎক্ষেপণের জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে শুরু করলে মার্কিন সামরিক পণ্য উৎক্ষেপণে ইউনাইটেড লঞ্চ এলায়েন্সের একচেটিয়া ব্যবসা শেষ হয়ে যায়।[২৩৫] ২০১৫ সালে জাতীয়, সামরিক এবং গুপ্তচর উৎক্ষেপণে মন্দা ধারণা করে ইউএলএ (ULA) ঘোষণা করে যে তারা বেসরকারি স্যাটেলাইট উৎক্ষপন অর্ডার গ্রহণ না করতে পারলে ব্যবসার বাইরে চলে যাবে। সেই লক্ষ্যে, ইউএলএ উৎক্ষেপণ মূল্য অর্ধেক করতে প্রকট প্রক্রিয়া ও কর্মশক্তি পুনর্গঠন ঘোষণা করেছিল।[২৩৬][২৩৭]
২০১৭ সালে স্পেসএক্স কর্তৃত্ব কংগ্রেসের সাক্ষ্য অনুসারে বোঝা গিয়েছে যে নাসার স্পেস এক্ট এগ্রিমেন্টের "স্পেস স্টেশনে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে একটি উচ্চস্তরের দাবি প্রদান করে (এবং) খুঁটিনাটি ইন্ডাস্ট্রির হাতে ছেড়ে দেওয়া" প্রক্রিয়ার ফলে স্পেসএক্স নিজ থেকে অতি অল্প ব্যয়ে ফ্যালকন ৯ রকেট নকশা ও তৈরি করতে পেরেছে। নাসার নিজেস্ব স্বাধীনভাবে যাচাইকৃত হিসেব অনুসারে, স্পেসএক্সের ফ্যালকন ১ রকেটসহ ফ্যালকন ৯ রকেটের মোট উন্নয়ন খরচ ৩৯০ মিলিয়ন ডলার ধারণা করা হয়। ২০১১ সালে নাসা অনুমান করে যে, নাসার প্রথাগত চুক্তি প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ফ্যালকন ৯ বুস্টারের মতন রকেট তৈরি করতে প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হতো, যা প্রায় দশ গুন বেশি।[১৯৪] ২০২০ সালের মে মাসে, নাসার প্রশাসক জিম ব্রাইডেনস্টাইন মন্তব্য করেছিলেন যে স্পেসএক্সে নাসার বিনিয়োগের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণ বাজাররের ৭০ শতাংশ রয়েছে। এটি একটি বিরাট উন্নতি কেননা ২০১২ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র হতে কোনো বাণিজ্যিক উতক্ষপণই হয়নি।[২৩৮]
কর্পোরেট অ্যাফ্যার্স
সারাংশ
প্রসঙ্গ
পরিচালনা পর্ষদ
বোর্ডে যোগদান করে | নাম | পদবি |
---|---|---|
২০০২[২৪০] | ইলন মাস্ক | SpaceX এর প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সিইও এবং সিটিও; সিইও, প্রোডাক্ট আর্কিটেক্ট, টেসলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান; সোলার সিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান[২৪০] |
২০০২[২৪১] | কিম্বাল মাস্ক | বোর্ড মেম্বার, টেসলা[২৪২] |
২০০৯[২৪৩] | গওয়েন শটওয়েল | স্পেসএক্সের প্রেসিডেন্ট এবং সিওও[২৪৪] |
২০০৯[২৪৩] | লুক নোসেক | সহ-প্রতিষ্ঠাতা, পেপ্যাল[২৪৫] |
২০০৯[২৪৩] | স্টিভ জুরভেটসোন | সহ-প্রতিষ্ঠাতা, ফিউচার ভেনচার্স ফান্ড[২৪৬] |
২০১০[২৪৭] | অ্যান্টোনিও গ্রাসিয়াস | সিইও এন্ড চেয়ারম্যান অফ টি ইনভেস্টমেন্ট কমিটি এত ভ্যালোর ইকুইটি পার্টনারর্স[২৪৮] |
২০১৫[২৪৯] | ডোনাল্ড হ্যারিসোন | বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব এবং কর্পোরেট উন্নয়নের সভাপতি, গুগোল[২৫০] |
নেতৃত্বের পরিবর্তন
২০২২ সালের নভেম্বরে, স্পেসএক্স ঘোষণা করে যে সিওও গওয়েন সটওয়েল এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক জুনকোসা কোম্পানিটির টেক্সাস উৎক্ষেপণ ফ্যাসিলিটি স্টারবেস তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবে। এর সাথে রয়েছে ওমেদ আফসার, যিনি টেক্সাসে টেসলার কার্যক্রম তদারকি করতেন। এই কেন্দ্রের পূর্ববর্তীতে অপারেশনের সিনিয়র পরিচালক, শিয়ামাল পাটেলকে কেপ কানাভেরাল কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে। সিএনবিসি রিপোর্ট করেছিল যে এই নির্বাহী পদক্ষেপগুলো "স্টারশিপকে উড়ানোর জন্যে কোম্পানিটির মধ্যে জরুরিতার অনুভূতি" প্রদর্শন করে।[২৫১][২৫২][২৫৩]
কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি
নাসার প্রাক্তন ডেপুটি এডমিনিস্ট্রেটর লরি গার্ভের কথা অনুসারে, সাধারনত মহাকাশযাত্রার বাজারের মতোই স্পেসএক্সে পুরুষ-প্রধান কর্মচারী সংস্কৃতি রয়েছে।[২৫৪] ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, স্পেসএক্সের ৫টি প্রাক্তন কর্মীদের নিকট থেকে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির দাবি প্রকাশ করা হয়েছিল।[২৫৫] এদের মধ্যে ইনর্টান থেকে পরিপূর্ণ প্রকৌশলী পর্যন্ত ছিল। এই প্রাক্তন কর্মীরা অবাঞ্ছিত অগ্রগতি এবং অস্বচ্ছন্দ মিথস্ক্রিয়ার দাবি করেন।[২৫৬] এর পাশাপাশি, এই বর্ণনাগুলোর মধ্যে উল্লেখ ছিল যে কোম্পানিটিতে যৌন হয়রানির সংস্কৃতি কয়েছে এবং নির্বাহী, ব্যবস্থাপক, এবং মানব সম্পদ কর্মকর্তাদের নিকট করা অভিযোগ প্রায়ই বিবেচনা করা হয় না।[২৫৭]
২০২২ সালের মে মাসে, একটি বিজনেস ইনসাইডার নিবন্ধটি অভিযুক্ত করেছে যে ২০১৬ সালে মাস্ক একটি প্রাইভেট জেটে ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের সাথে যৌন হয়রানিতে জড়িত ছিলেন; এখানে একটি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের অজ্ঞাতনামা বন্ধুর কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।[২৫৮] এর প্রতিক্রিয়ায়, কিছু কর্মচারী একত্রে একটি খোলা পত্রে "ইলনের টুইটারে ক্ষতিকারক আচরন"-কে নিন্দা করে।[২৫৯] এছাড়া এতে কোম্পানিকে স্পষ্টভাবে "নো-অ্যাসহোল" এবং "জিরো টলারেন্স" নীতি সংজ্ঞায়িত করতে বলা হয়, যা তাদের দাবি অনুসারে কর্মচারী অনুসারে অসমভাবে প্রয়োগ করা হয়। পরবর্তী দিনে গওয়েন সটওয়েল ঘোষণা করেন যে এই পত্রের সঙ্গে জরিত সকল কর্মচারীদের বহিস্কার করা হয়েছে এবং দাবি করেন যে কর্মদিবসে করমচারীদের পৃষ্ঠপোষকহীন, অযাচিত সমীক্ষা পাঠানো হয়েছিল যা অনেকে চাপে পড়ে সাক্ষর করেছিল।[২৬০]
এছাড়া বর্ণিত আছে যে এই কম্পানীতে এমন একটি কর্ম সংস্কৃতি আছে যা কর্মচারীদের অত্যধিক কাজ করতে চাপ প্রদান করে এবং এটি বার্নআউট সংস্কৃতির প্রতিপালক হয়ে উঠে।[২৬১] ব্লু ওরিজিনের একটি মেমো অনুসারে, স্পেসএক্সে দীর্ঘ কাজের সময়, সপ্তাহান্তে কাজ করা, এবং ছুটির দিনের সীমাবদ্ধ ব্যবহার প্রত্যাশা করা হয়।[২৬১]
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.