Loading AI tools
মারমা এবং রাখাইনদের নববর্ষ উৎসব উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাংগ্রাই বাংলাদেশী মারমা এবং রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর নববর্ষ উৎসবের নাম,[1][2] যা প্রতিবছর এপ্রিলের ১৩ থেকে ১৫ তারিখে পালিত হয়।[3] যদিও এটি মারমাদের অন্যতম প্রধান একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, তবে রাখাইনরাও নিজস্ব নিয়মে সাংগ্রাইয়ের মাধ্যমে বর্ষবরণ করে নেয়।[4] মারমাদের ক্ষেত্রে তাদের বর্মী বর্ষপঞ্জি অনুসরারেই এটি পালিত হয়। মারমাদের বর্ষপঞ্জিকাকে “ম্রাইমা সাক্রঃয়” বলা হয়। “ম্রাইমা সাক্রঃয়” এর পুরনো বছরের শেষের দুই দিন আর নতুন বছরের প্রথম দিনসহ মোট তিনদিন কে মারমারা সাংগ্রাই হিসেবে পালন করে থাকে। আগে “ম্রাইমা সাক্রঃয়” অনুযায়ী এই তিনদিন ইংরেজি ক্যালেন্ডারের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে পড়লেও এখন ইংরেজি ক্যালেন্ডারের সাথে মিল রেখে এপ্রিলের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করা হয়। ১৩ তারিখের সকালে পাঃংছোয়াই (ফুল সাংগ্রাই), ১৪ তারিখে প্রধান সাংগ্রাই আর ১৫ তারিখে পানি খেলার সাথে মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলোও অনুষ্ঠিত হয়।[5]
သင်္ကြန် সাংগ্রাই নববর্ষ উৎসব | |
---|---|
পালনকারী | মারমা সম্প্রদায়, রাখাইন সম্প্রদায় |
ধরন | বৌদ্ধিক |
তাৎপর্য | নতুন বৎসর আগমনের চিহ্ন |
উদযাপন | ঘর বাড়ি ফুল দিয়ে সাজিয়ে, বিহারে মোমবাতি জ্বালিয়ে এবং প্রার্থনা করে, প্রতিবেশীর বাড়ি ঘুরে ঘুরে। |
পালন |
|
তারিখ | ১৩, ১৪ এবং ১৫ এপ্রিল |
সম্পর্কিত | বৈসাবি |
মারমা সম্প্রদায় সেই আদিকাল থেকে অন্যান্য সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে পুরনো বছরের বিদায় এবং নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানাতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান পালন করে আসছে, যা মারমা ভাষায় সাংগ্রাই নামে পরিচিত। মূলত 'সাক্রাই' (সাল) শব্দ থেকেই 'সাংগ্রাই' শব্দ এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যা বাংলায় 'সংক্রান্তি' বলে পরিচিত। মারমা সম্প্রদায়ের 'সাংগ্রাই জ্যা'র (মারমা বর্ষপঞ্জি) গঠনের মাধ্যমে সাংগ্রাইয়ের দিন ঠিক করা হয়ে থাকে। মাইংমা ১৩৫৯ খ্রিষ্টাব্দের আগে থেকেই এ 'সাক্রাই' বা সাল গণনা করা হয়, যা 'জ্যা সাক্রই' নামে পরিচিত।[6][7]
সাংগ্রাই এপ্রিলের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হলেও মারমাদের মাঝে সাংগ্রাই নিয়ে উদ্দীপনা জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়। মারমা গ্রামের গিন্নীরা সাংগ্রাই নিয়ে নানা পরিকল্পনা করতে থাকে। তারা নতুন করে তাদের ঘরগুলো সাজাতে থাকে। মাটির ঘরগুলোকে আবার নতুন করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়, মাচাং আর ছনের ঘরগুলোতে পুরনো ছন বাদ দিয়ে পাহাড় থেকে নতুন ছন এনে বাড়িতে লাগানো হয়। এছাড়া জুম থেকে পাওয়া চাউল নানা রকমের পিঠার জন্য রেখে দেওয়া হয়।।[8]
মারমা শুকর ব্যবসায়ীরা তিন মাস আগে থেকেই নতুন নতুন শুকরের ছানা পালতে থাকে যেন সাংগ্রাই-এর বাজারে বিক্রি করতে পারে। মারমা শিকারীরা সাংগ্রাইয়ের আগে তাদের অস্ত্র গুলো গুছাতে থাকে যেন সাংগ্রাই-এর আগেই বড় রকমের হরিণ, গুইসাপ, কচ্ছপসহ আরো নানা রকমের পশু-পাখী শিকার করতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও সাংগ্রাইকে নিয়ে তাদের ব্যবসায়ী পরিকল্পনা বানাতে থাকে।[9]
'পাইংছোয়াই' এর অর্থ ফুল ছিঁড়ার দিন। এটি সাধারণত এপ্রিলের ১২ তারিখের রাতেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। শীতের পর বসন্তের আগমনে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়গুলোতেও বসন্তের ছোঁয়া লাগে, ফলে পাহাড়গুলো দেখা যায় নানান বাহারি ফুলের সমারোহ । নানান বর্ণ গন্ধের ফুলে ফুলে গ্রামের চারপাশ ঘিরে থাকা পাহাড়গুলো ছেয়ে একাকার হয়ে যায়। আর এই ফুলগুলো সাংগ্রাইয়ের জন্য সংরক্ষিত থাকায় এর আগে একেবারেই ছেঁড়া হয় না, যাতে করে পাহাড়ে পাহাড়ে ফুলে বিস্তার ঘটে চোখে পড়ার মতো।
একেবারে “পাইংছোয়াই” এর এক রাতেই ইচ্ছেমতো ফুল ছিঁড়ে ব্যবহৃত হয় বুদ্ধের মূর্তি পূজা এবং বাড়ি সাজানোর কাজে। পাহাড়ে অনেক ফুল থাকলেও কিছু নির্দিষ্ট ফুলই বাড়িঘর গুলো সাজানোর কাজে ব্যবহৃত হয়। তন্মধ্যে “সাংগ্রাই পাইং” নামের মেঘ সাদা রংঙের ফুলটিই সবথেকে জনপ্রিয়। সবাই মূলত এই ফুলকে প্রধান করেই “পাইংছোয়াই” এর পরের দিন তাদের ঘরগুলো সাজাতে থাকে।[10]
সাংগ্রাই পাঃং বা সাংগ্রাই ফুল হলো যৌগিক পুষ্পমঞ্জরি বিশিষ্ট সাদা রঙের পাহাড়ি ফুল। এতে প্রায় এক হতে দেড় ইঞ্চি পরিমাণ অসংখ্য সুবিন্যস্ত পুষ্পমুকুর থাকে। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল যেমন বান্দরবান, চট্রগ্রামের পাহাড়ে পাহাড়ে বসন্তকালে এ সকল ফুলের বিস্তার দেখা যায়।[11]
এই ফুল ছেঁড়ার কাজটি মূলত মারমা তরূণ-তরূণীরাই করে থাকে। 'পাইংছোয়াই' এর রাতে একে কেন্দ্র করে মারমা তরূন-তরূণীরা নানা রকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। অনেকে সারারাত জেগে পিঠা বানায়, আবার অনেকে মারমাদের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খেলার ব্যবস্থা করে। কেউ কেউ আবার ঐতিহ্যবাহী মারমা নাচ - গানের ব্যবস্থা করে থাকে। মূলত মারমা তরূণ-তরূণীরা সারারাত জেগে থাকার জন্যই নানা রকমের কৌশল অবলম্বন করে। অতঃপর শেষ রাত্রি আগত হবার পর অর্থ্যাৎ ভোরের আলো ফোটার আগেই দলে দলে পাহাড়ে গিয়ে 'সাংগ্রাই পাইং' তুলে এনে মায়ের হাতে তুলে দেয়। গিন্নিরা সকাল হলেই সুই - সুতা দিয়ে ফুলগুলো সাজাতে থাকে। প্রথমে ভগবান বুদ্ধকে ফুল দিয়ে পূজা করে সেগুলো দিয়ে প্রত্যেক বাড়িরই প্রতিটি দরজা গুলোকে সাজানো হয়। বাড়ির দরজায় সাজানো ফুলগুলো দিয়েই বোঝতে পারা যায় সাংগ্রাই অর্থাৎ নতুন বর্ষবরন শুরু হয়ে গেছে।[12]
শুধু তরূন - তরূণীরাই নয় বরং মারমা ছোট ছেলে - মেয়েদেরও এই 'পাইংছোয়াই' নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ থাকে। তবে তাদের পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে, বয়োজষ্ঠ্যরা ছোট ছেলে -মেয়েদেরকে সবসময় 'ফ্রজুমা' (মারমা ডাইনি) এর ভয় দেখিয়ে পাহাড়ে যাওয়া হতে বিরত রাখে। এমনকি এই “পাঃংছোয়াই” নিয়ে অনেক কিচ্ছা - কাহিনীও শুনিয়ে থাকে । তন্মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কাহিনীটি হলো, 'ফ্রুজুমার ফাঁদে আটকে যাওয়া। ফ্রুজুমা ডাইনি 'সাংগ্রাই পাইং' এর লোভ দেখিয়ে বাচ্চাদের কোনো একজনকে দলছুট করে এমন গভীর জঙ্গলে নিয়ে যায়, যে দিনের আলো ফোটার আগে কখনোই আর মুক্তি পাবে না। কারণ ফাঁদে পড়ার পর সে যেখানেই যাবে শুধু জঙ্গল আর জঙ্গলই পাবে।[13]
'পাইংছোয়াই' এর দিন অর্থাৎ এপ্রিলের ১৩ তারিখেই ভোর হতে পুর্ণদিন ব্যাপি সাংগ্রাই জীঃঈ শুরু হয়। সাংগ্রাইকে উপলক্ষ করে পাহাড়ি সমতলে বিশাল হাট বসে। হাটে সাংগ্রাইয়ের জন্য ব্যবহৃত প্রায় সকল প্রয়োজনীয় জিনিসই পাওয়া যায়। গিন্নীরা সাংগ্রাইতে বিহারে পাঠানোর জন্য অনেক ভালো ভালো খাবার কিনে। এছাড়াও গৌতম বুদ্ধকে স্নান করানোর জন্য পবিত্র পানি, পাকা নারিকেল, চীনা কাগজ, মোমবাতি, আগরবাতি ইত্যাদি বিহারে পাঠানোর জন্য যার যে রকম সামর্থ্য সেই অনুযায়ী কিনে। এছাড়া সাংগ্রাইতে ছোট-বড় সবারই মাঝে নতুন জামা থাকবেই। আর ছোট্ট বাচ্চারা সাংগ্রাইতে পানি মারার জন্য পানির বোতল, পানি মারার নানা রকমের প্লাস্টিকের অস্ত্রও কিনে রাখে।
এছাড়াও মারমা শুকর ব্যবসায়ীরা কিছু মাস আগে থেকেই পালিত শুকরের ছানা সাংগ্রাই-এর বাজারে তোলে। আর মারমা শিকারীরাও আগে হতেই শিকার করে রাখা বড় রকমের হরিণ, গুইসাপ, কচ্ছপ এবং ব্যাঙসহ আরো নানা রকমের পশু - পাখি বিক্রি করে।
প্রধান সাংগ্রাই বর্তমানে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুসারে এপ্রিলের ১৪ তারিখেই পালন করা হয়।[14][15] মারমা গৃহিণীরা (ইংথসাং) ভালো ভালো ছোয়াঈ (বিহারে যে খাবার পাঠানো হয় তাকে 'ছোয়াঈ' বলে) আর পিঠা নিয়ে বিহারে যায়। শুধু নিজেদের বিহার ছাড়াও আশেপাশের বিহারেও 'ছোয়াঈ' পাঠানো হয়। 'ছোয়াঈ' শুধু ভগবানের উদ্দেশ্যে নয়, নিজেদের আত্নীয়দের মাঝে যারা উপোসথ শীল পালন করে তাদের উদ্দেশ্যেও পাঠানো হয়। বিহার ছাড়াও মারমা বিভিন্ন দেবতাদেরকেও পূজা দেওয়া হয়। এছাড়া গ্রামের পরিচিত বয়োজৈষ্ঠদেরকেও খাবার আর পিঠা পাঠানো হয়।[16]
আর মারমা তরূণ-তরূণীরা দল বেঁধে পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে বয়োজৈষ্ঠ্যদের স্নান করাতে যায়। প্রত্যেক পরিবারের বয়োজৈষ্ঠ্যরা গোসল শেষে তরূন-তরূণীদেরকে সাংগ্রাই এর সেলামি দেই। সেই সাথে তরূন-তরূণীরা বছরের শুরুতে বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে নতুন বছরের আর্শীবাদ নিয়ে আসে। শুধু গোসলই নয় প্রতি পরিবার থেকে মারমা তরূণ-তরূণীদের কিছু না কিছু খেয়ে আসতে হয়।
প্রধান সাংগ্রাই তে বিহারে যে ভগবান বুদ্ধ আছে তাদেরকে পবিত্র পানি দিয়ে গোসল করানো হয়। [17] বুদ্ধকে স্নানস্কৃত পানিকে মারমারা খেয়ে থাকে কারণ মারমাদের বিশ্বাস এই বুদ্ধ স্নানস্কৃত পানি তাদের শরীরে সকল রোগমুক্তির অবসান করাবে। আর এর পরেই ধর্মদেশনা হয়। এতে এলাকার সকল পুরুষ-মহিলা যোগ দেয়। সকল পরিবারেই চাল-নারকেল-চীনা কাগজ-মোমবাতি বিভিন্ন দ্রব্যাদি বিহারে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসে। বিহারের প্রধান বৌদ্ধ ভিক্ষু নতুন বছরের শুভদিনের জন্য ধর্মদেশনা দেন।সেই সাথে নতুন বছরের দিনগুলো যেন শুভাকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ হয় তার জন্য প্রার্থনা করা হয়। ধর্মদেশনার পরই বৌদ্ধ বিহারে সকলেই ভগবানের উদ্দেশ্যে মোমবাতি জ্বালানো হয়। শুধু ভগবান নয় অনেক তাদের পূর্বপুরুষদের জাদিতেও মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।[18]
প্রধান সাংগ্রাই এর দিনের আলো শেষ হয়ে সন্ধ্যে নামতেই মারমা তরূণ-তরূণীরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বিহারে চলে যায়। বিহারে বিহারে গিয়ে তারা মোমবাতি জ্বালাতে থাকে। হাজার হাজার মোমের আলোয় ছেয়ে উঠে প্রতিটা বিহার।সাংগ্রাইকে কেন্দ্র করে এ রাতে প্রত্যেকটা বিহারেই এক নতুন সাজে সেজে উঠে।
মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শেষে মারমা তরূণ-তরূণীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের কাছে একসাথে বসে ধর্মদেশনা শুনে। এছাড়াও পরবর্তী দিনের “ড়িলংপোয়ে” এর জন্য একসাথে বসে আলোচনা করে।
সাংগ্রাই এর প্রধান আকর্ষণ হল পানি খেলা যেটিকে মারমারা বলে “রিলং পোয়েঃ” । সাংগ্রাই উৎসবের শেষদিনে এই পানি খেলা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[19][20] সাংগ্রাইয়ের পানি খেলা শুধুমাত্র মারমাদের নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া আর চীনের দাই জাতিগোষ্ঠীরাও এপ্রিলের মাঝামাঝিতে এই ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকে। মায়নামারে এই ধরনের অনুষ্ঠানকে “থিনগন” আর থাইল্যান্ড ও লাওসে এই অনুষ্ঠানকে “সংক্রান” বলা হয়। থাই ভাষায় “সংক্রান” এর অর্থ হল পরিবর্তন। সাংগ্রাই আসলেই পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়াকেই বোঝায়। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে নতুন জুম চাষের মৌসুমের শুরুও সাংগ্রাই-এর পরেই হয়ে থাকে। শুধু জুম চাষই নয় মারমারা মাঘী পূর্ণিমার পর থেকে সাংগ্রাই এর আগ পর্যন্ত নতুন বিয়েই করে না অর্থাৎ সাংগ্রাইকে মারমারা নতুন বছরের শুরুসহ পুরনো সব জিনিসকে ঝেরে ফেলে নতুন করে শুরু করাকেই বোঝায়। আর তাই মারমারা এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আর্শীবাদ আর শুভাকাঙ্কার আশায় নতুন বছর উদ্যাপন করে থাকে।
প্রধান সাংগ্রাইয়ের পরেই বিভিন্ন জায়গায় “ড়িলংপোয়ে” এর আয়োজন করা হয়ে থাকে। এটি শুধু এপ্রিলের ১৫ তারিখেই নয়, অনেক জায়গায় ১৬,১৭,১৮ তারিখেও আয়োজন করা হয় যেন সকলেই সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারে। অনুষ্ঠানের দিন সকাল থেকেই বিভিন্ন দূর-দূরান্ত থেকে মারমারা তাদের ঐতিহ্যবাহী 'থামি' (মেয়েরা) আর 'লুঙ্গি' (ছেলেরা) পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে থাকে। খুব সকালেই স্থানীয় এলাকার তরূণ-তরূণীরা সাংগ্রাই র্যালী করে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মারমা তরূণ-তরূণীরা 'সাংগ্রাই মা ঞিঞীই ঞাঞাই, রিগ জাঃং কাঈ পাঃ মেঃ /অর্থ :এসো মিশি, সাংগ্রাইয়ের মৈত্রী পানি বর্ষনের উৎসবে' গান গেয়ে দলে দলে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে থাকে।[21]
এরপরে মারমা রোয়াজা (মারমাদের গ্রামপ্রধান) অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের পরপরই আনুষ্ঠানিক “ড়ীলং পোয়ে” শুরু হয়। খোলা ময়দানে বিশাল পাত্র অথবা নৌকা ভর্তি করে জল রাখা হয়। অতঃপর মারমা তরূণ-তরূণীরা দল বেঁধে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায় এবং এক অপরের দিকে পানি ছোড়াছুঁড়ি করে যতক্ষন না তাদের সামনে রাখা পানির পাত্র অথবা নৌকাটি জলশূন্য হয়ে যায়। এভাবে একদলের পর আরেকদল পানি ছোড়াছুড়ির খেলা খেলতে থাকে।
এভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে পানি খেলা ছাড়াও ওইদিন সবার হাতেই একটা করে পানির বোতল থাকে। যার যাকে মন চায় সে তাকেই পানি ছিটাতে পারবে, এতে কেউ কোন আপত্তি করে না বরং এটিকে আর্শিবাদ আর শুভ লক্ষনের প্রতীক হিসেবে ধরে নেয়।[22]
পানি খেলার পরপরই মারমাদের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হতে থাকে। যেমন: মেয়েদের দড়ি টানাটানি খেলা, ছেলেদের বলি খেলা, বাঁশ চড়া (তইং তাং) খেলা ইত্যাদি। এখান থেকে সবচাইতে আকর্ষণীয় খেলাটি হলো ছেলেদের বাশঁ চড়া (“তইং তাং”) খেলাটি। এতে একটা লম্বা ২৫+ ফুট বাশঁ থাকে যার একদম শীর্ষে একটি বড় পরিমাণের টাকা থাকে। মোটামোটিভাবে একজনের কাধেঁ আরেকজন উঠে শীর্ষের টাকাটা নিতে হবে। এতে পাঁচ থেকে ছ' জন হলেই টাকার নাগাল পাওয়া যায়। আর যে দল আগে নিতে পারবে সেই দল-ই সেই টাকা পেয়ে যাবে। তবে বিষয়টাকে খুব সহজ মনে হলেও ততটাও নয়, কেননা বাশেঁর উপরের কোটরে তেল ভর্তি থাকে তাই বাঁশ যত নাড়ানো হবে ততই উপর থেকে তেল পরে বাশঁ পিচ্ছিল হতে থাকবে।
দুপুরের পরই এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মারমাদের ঐতিহ্যগুলোকে নানাভাবে তুলে ধরা হয়। সাংগ্রাই নৃত্য সহ আরো নানা ধরনের নৃত্য এতে পরিবেশন করা হয়। এছাড়া মারমা গুনী শিল্পীরা এতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন মারমা গান পরিবেশন করা হয়। বর্তমান দিনে মারমা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পরই কনসার্টের আয়োজন করা হয়। এই মারমা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর কনসার্টকে নিয়ে মারমা তরূণ-তরূণীরা তাদের নতুন “ম্রাইমা সাক্রয়” কে বরন করে নেয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.