Remove ads
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আদিবাসী জনগোষ্ঠী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মারমা হলো বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী।[১] মারমা আদিবাসী জনগোষ্ঠী সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয়।[২] তিন পার্বত্য জেলায় তাদের বসবাস দেখা গেলেও মূল জনগোষ্ঠীর অধিকাংশের বসবাস বান্দরবানে। ‘মারমা’ শব্দটি পালি শব্দ মারম্মা থেকে এসেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমারা আরাকান থেকে এসেছে বিধায় তাদের ‘ম্রাইমা’ নাম থেকে নিজেদের ‘মারমা’ নামে ভূষিত করে।[৩] এছাড়াও, ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম রাজ্য থেকে শুরু করে পূর্ব মিয়ানমার পর্যন্ত এই জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।[২]
এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
|
မရ်မာ | |
---|---|
মোট জনসংখ্যা | |
৩ লাখ + | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
বাংলাদেশ: (বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা) | ৩,২৪,২৬১ |
মিয়ানমার: (রাখাইন রাজ্য) | অজানা |
ভারত: (ত্রিপুরা) | ৩৫,৭২২ |
ভাষা | |
মারমা, বাংলা, বর্মী | |
ধর্ম | |
থেরবাদ বৌদ্ধ | |
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী | |
তলইং-মোন, রাখাইন |
মারমারা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। তারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। কথা বলার ক্ষেত্রে মারমাদের নিজস্ব ভাষা মারমা বর্ণমালা ব্যবহার করে। মারমা সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। পুরুষদের মতো মেয়েরাও পৈতৃক সম্পত্তির সমান উত্তরাধিকারী হয়। ভাত মারমাদের প্রধান খাদ্য। পাংখুং, জাইক, কাপ্যা ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মারমা সমাজে জনপ্রিয়। তাদের প্রধান উৎসব ও পার্বণগুলো হচ্ছে সাংগ্রাই পোয়ে, ওয়াছো পোয়ে, ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে এবং পইংজ্রা পোয়ে। মারমা তইরাংস্বা ইতিহাসভিত্তিক বইয়ের লেখক নুথোয়াই মারমা বারাঙ। বান্দরবানে মারমা লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি। বাংলাদেশে চাকমা আদিবাসীর পর মারমা দ্বিতীয় বৃহত্তর নৃগোষ্ঠী। মারমা মেয়েরা 'দেয়াহ', কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা 'বারিস্তা উংগি' নামক একটি কাপড় পরিধান করেন, কলার ছাড়া একটি জ্যাকেট এবং একটি টারবান বা পাগড়ি পরিধান করেন। তবে বর্তমানে মারমা নারীরা অন্যান্য নারীর মতো 'রাঙ্কাই'-এর পরিবর্তে ব্লাউজ এবং বার্মিজের প্রিন্টের থামি পরা শুরু করেছে।
মারমা শব্দটি পঞ্চমতম বোমাংগ্রী কংহ্লাপ্রু অষ্টদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ১৭৯৮ সালে তখনকার রাজপ্রাসাদ অবস্থিত সোয়ালক স্থানে লেখক ফ্রান্সিস বুখাননের নিকট উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে বোমাংগ্রী মংশৈপ্রু কর্তৃক তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের নিকট মারমা জাতিসত্বার পরিচিতি তুলে ধরেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তার বৃত্তের মানুষের কাছে সত্তর দশকের শুরুর দিকে মুদ্রিত হয় এবং তৎকালীন সরকার স্বীকৃতি দেয়। [৪] বর্মী ভাষায়, মারমারা মারামা (မရမာ) নামে পরিচিত।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মারমারা পূর্বে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মগ বা মাঘ নামে পরিচিত ছিল কারণ চট্টগ্রামে আগ্রাসনের সময় ডাচ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের তৎকালীন কিছু রাখাইন সম্প্রদায় সেই জলদস্যুদের সাথে হাত মেলানোর জন্য বাঙালিরা তাদের মগ/মাঘ বলে অভিহিত করত। প্রকৃতপক্ষে সংস্কৃতি ও শারিরীক গঠন কাঠামোতে সাদৃশ্য থাকলেও মারমা ও রাখাইন জাতিসত্বা এক নয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] তাই বাঙালীদের দ্বারা আরোপিত এই নামগুলোকে মর্যাদাহানিকর হিসেবে মারমারা বিবেচনা করে, কারণ বাঙালীরা মগ এর শাব্দিক অর্থ "জলদস্যু" বুঝানো হয়। ত্রিপুরা রাজ্যের কিছু মারমা মারিমা বা মগ বা মাঘ হিসেবে নিজেদেরকে আত্মপরিচয় অব্যাহত রেখেছে, কারণ তারা মনে করে শব্দটি "মগধ" থেকে উদ্ভূত, যার স্থানটি বৌদ্ধধর্মের গৌরর্বোজ্জল ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ভারতীয় রাজ্যের নাম।[৫] তাদের বিশ্বাস তারা উক্ত মগধ রাজ্যের আদিবাসিন্দা ছিল।
বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামে মারমা ১৬শ শতাব্দীর দিকে অভিবাসন শুরু হলেও মূল অভিবাসন শুরু হয় আরাকান সম্রাট মাংখামাং কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৬তম ভাইসরয় মংচপ্রু (মংচপ্যাইং) এর আমলে। কথিত আছে, ১৫৯৯ খ্রীষ্টাব্দে আরাকান সম্রাট মাংরাজাগ্রী বোগোহ্ (পেগু) সম্রাট নাইদাব্রাং এর রাজ্য হাইসাওয়াদী পতন ঘটিয়ে সম্রাটের রাজকণ্যা খাইমাহ্নাং ও তার রাজপুত্র মংচপ্রু এবং পেগু রাজ্যের বাসিন্দাসহ ৩৩ হাজার পরাজিত সৈন্যকে ম্রাকউ রাজ্যে নিয়ে এসে কালাদাং নামক স্থানে পুনর্বাসিত করা হয়। পরবর্তীতে সম্রাট মাংরাজাগ্রী রাজকুমারী খাইমাহ্নাংকে বিয়ে করেন। রাজকুমার মংচপ্রু যৌবনে পদার্পন করলে নিজ মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করান। ১৬১২ সালে আরাকান সম্রাট মাংরাজাগ্রী মৃত্যুবরণ করলে সেই স্থলে রাজকুমার মাংখামাং অভিষিক্ত হন। পরবর্তীতে ১৬১৪ সালে সম্রাট মাংখামাং(সম্বন্ধী) কর্তৃক মংচপ্যাইং পার্বত্য অঞ্চলের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং পার্বত্য অঞ্চলে আগমনের সময় সেই হাইসাওয়াদী রাজ্য থেকে আসা কালাদাং নামক স্থানে পুনর্বাসিত আত্মীয়সজনসহ আগ্রহী সৈন্যদেরকে পাবর্ত্য অঞ্চলে নিয়ে আসা হয়। এই অভিবাসন প্রক্রিয়াটি সেই ১৬শ শতাব্দী থেকে ১৮ শতাব্দী পর্যন্ত ধারাবাহিকতা ছিল। এপার থেকে ওপার অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে মায়ানমায় (বার্মা) এই অভিবাসন প্রক্রিয়া এখনো বর্তমান।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমানরা কৌশলগতভাবে চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করে।[৬] ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ সালের মধ্যে সরকার ৪,০০,০০০ এরও বেশি বাঙালি মুসলমানকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করে,[৫] প্রতিটি পরিবারকে ৫ একর জমি এবং বিনামূল্যে খাদ্য রেশন প্রদান করে। পরবর্তীতে বছরের পর বছর ধরে মারমা জনসংখ্যা কমে গেছে, বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর জেলায়।[৪] ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে বাঙালি মুসলিম বসতি স্থাপনকারী ও বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের উপর ১৫টিরও বেশি গুরুতর গণহত্যা চালায়।[৫] সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং সামাজিক অস্থিরতার প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকে ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্য ও বার্মায় (বর্তমানে মায়ানমার) পালিয়ে যায়।[৫] বাংলাদেশ সরকার জোরপূর্বক বাংলাদেশী সমাজে একীভূত করার মাধ্যম হিসেবে মারমাদেরকে বৌদ্ধধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে এবং বৌদ্ধ মন্দির (কিয়াউং) ধ্বংস করেছে।[৫] অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৯ ও ১৯৯০ সালে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের আদিবাসী অধিবাসীদের নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিয়মতান্ত্রিক বিবরণ নথিভুক্ত করেছে।[৭]
বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান মারমা সম্প্রদায়ের উপর ধর্মীয় সহিংসতাকে তীব্র করেছে।[৫] ২০০৪ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে, মুসলিম চরমপন্থীরা সামরিক বাহিনীর সাথে মিলে ১,০০০ বৌদ্ধ বাড়ি এবং ১৮টি বৌদ্ধ মন্দির জ্বালিয়ে দেয়, হাজার হাজার মারমাকে বাস্তুচ্যুত করে এবং ৩০ জন ব্যক্তিকে হত্যা করে।[৫] জমি দখলও মারমা সম্প্রদায়কেও প্রভাবিত করেছে। বান্দরবানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ সেক্টরের সদর দপ্তর নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালে কর্তৃপক্ষ মারমাদের ৩৪ একর কৃষিজমি দখল করে নেয়।[৮] ২০১৮ সালে জসিম উদ্দিন মন্টু নামে এক হোটেল ডেভেলপার ৪২টি মারমা পরিবারের অধ্যুষিত ১০০ একর জমির দখল নেয়।[৯]
জেনেটিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মারমা জনসংখ্যায় মাতৃ হ্যাপ্লোগ্রুপের ক্ষেত্রে উচ্চ মাত্রার ভারতীয় ও নিম্ন মাত্রার পূর্ব এশীয় জিনগত পূর্বপুরুষত্ব রয়েছে, এবং ত্রিপুরা এবং চাকমা জনসংখ্যার তুলনায় মার্মাদের মধ্যে হ্যাপ্লোটাইপ বৈচিত্র্য অধিকতর, এবং এটি তাদের মধ্যেই সর্বোচ্চ, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় এই অঞ্চলে মারমাদের উপনিবেশায়ন গভীরতর ছিল।[১০]
অন্যান্য আদিবাসী বা উপজাতি জনগোষ্ঠীর মতো মারমারাও জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এবং নববর্ষ উপলক্ষে নানারকমের ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালন করে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উৎসব সমূহ হচ্ছে:- বুদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াংগ্রাই বা প্রবারণা পূর্ণিমা, সাংগ্রাই ইত্যাদি। মারমাদের বর্ষবরণ উৎসব-কে সাংগ্রাই বলে। এসব উৎসবের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎসবও পালন করে থাকে, যা প্রায়সময়ই পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। ধন্যবাদ।
এই পূর্ণিমা তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। এটি একটি ধর্মীয় উৎসব। প্রত্যেক বছরেই অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনটি মহাসমারোহে উৎসবটি পালন করা হয়।
তুলা থেকে সুতা তৈরী করে তা রং করে এক রাতেই বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের পরিধানের চীবর তৈরী করা হয় বলে একে কঠিন চীবর বলে।
ওয়াগ্যই বা প্রবারণা পূর্ণিমা হলো মারমাদের একটি প্রধান ধর্মীয় উৎসব। এই দিন মারমাদের প্রতিটি সমাজ ও বিহারে এই উৎসবটি অতি আনন্দ ও খুশির সঙ্গে পালন করা হয় । এই দিন ঘরে ঘরে সুস্বাদু পিঠা তৈরী করা হয় । রাত্রে বেলায় এই দিনে মারমারা গৌতম বৌদ্ধের মহা চুলকে পূজা ও উৎসর্গ করার জন্য ফানুসবাতি উড়ানো হয়।
মারমাদের নববর্ষ উৎসবের নাম ‘সাংগ্রাই’। এটি তাদের অন্যতম প্রধান একটি ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। পয়লা বৈশাখকে উপলক্ষ করেই তারা এই উৎসবের আয়োজন করে। বর্ষবরণ উপলক্ষে তারা সাংগ্রাই- এ আকর্ষণীয় নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পানিখেলা সেসব অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। ওই দিন মারমা তরুণ-তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি ছিটিয়ে আনন্দ করেন। পানি ছিটানোর মাধ্যমে তারা বিগত বছরের গ্লানি ও কালিমা ধুয়েমুছে দূর করেন। তা ছাড়া পানিখেলার মাধ্যমে তারা পছন্দের মানুষটিকেও খুঁজে নেন। পানিখেলা ছাড়াও তারা পাংছোয়াই (ফুল সাংগ্রাই), সাংগ্রাই জীঈ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং বুদ্ধস্নানের মতো অন্যান্য অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন করে।[১১]
বাংলাদেশে তিন পার্বত্য জেলা, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ও মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বসবাসরত মারমা জনগোষ্ঠীর সবাই মারমা ভাষা বললেও এলাকা ও অঞ্চলভেদে উচ্চারণ আলাদা। কিন্তু কোন এলাকার মারমা ভাষা প্রমিত ভাষা হবে সেটা এখনও ঠিক করা যায়নি। তবে প্রথম মারমা-বাংলা ভাষার অভিধান হিসেবে এ বইটি সবারই কাজে লাগবে।[১২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.