শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ
শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.
বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ হলো গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি। এটি মুজিবের জন্মস্থান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত এবং এটি স্থপতি এহসান খান, ইশতিয়াক জহির ও ইকবাল হাবিব নকশা করেছেন।
স্থানাঙ্ক | ২২.৯০৬৩১৯২° উত্তর ৮৯.৮৯৬৩২৩৯° পূর্ব |
---|---|
অবস্থান | টুঙ্গিপাড়া, বাংলাদেশ |
নকশাকারক | এহসান খান, ইশতিয়াক জহির ও ইকবাল হাবিব |
ধরন | সমাধিসৌধ |
উপাদান | কংক্রিট, সিরামিক ও মার্বেল |
উচ্চতা | ১৪ মি (৪৬ ফু) |
দর্শনার্থী | প্রা. ১৪,৬০,০০০ (২০২১তে) |
শুরুর তারিখ | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৯৮ |
খোলার তারিখ | ১০ জানুয়ারি ২০০১ |
নিবেদিত | শেখ মুজিবুর রহমান |
১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাকে টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত করা হয়। বহু বছর ধরে সামরিক জান্তা সমাধিস্থলে প্রবেশ সীমিত রাখে। ১৯৯৬ সালের জুনে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হওয়ার পর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিকভাবে কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ শুরু করে যা ২০০১ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হওয়ার পর, শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে মাতৃভূমিতে ফিরে আসার পর দেশের ২য় প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর তিনি সরকারি বাসভবনে না গিয়ে পরিবারের সাথে নিজ বাসভবনে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি নিজ বাড়িতেই ছিলেন।[1] সেদিন কিছু অসন্তুষ্ট সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। বাসভবনে হামলাকালে তার স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল নিহত হন।[2][3]
পরের দিন সামরিক জান্তা বনানী কবরস্থানে মুজিবের লাশ ছাড়া বাকি সবার লাশ কবর দেয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের রাজধানী থেকে দূরে তার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন মেজরকে তার লাশ তার গ্রামের আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর ও দাফনের তদারকির দায়িত্ব দেন। মেজর হায়দার আলী ও ১৪ জন সেনা সদস্য হেলিকপ্টারে করে মুজিবের লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে আসে। তারা মোশাররফ হোসেন নামে মুজিবের এক দূরবর্তী আত্মীয়কে খুঁজে পায় যাকে তারা মুজিবকে কবর দেওয়ার দায়িত্ব দেয়। গ্রামের একজন ইমামকে দাফনের প্রক্রিয়াটি সম্পাদনের জন্য আনা হয়, আলী তাকে জানাজা না করে লাশ দাফন করতে বলেন। ইমাম বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি শহীদ হয়, তাহলে তাকে এভাবে দাফন করা যাবে। ইমামের উত্তর শুনে মেজর আলী কম খরচে ও দ্রুত জানাজা সম্পন্ন করতে বলেন। জানাজা সম্পন্ন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাবার পাশে সমাহিত করা হয়।[4] বহু বছর ধরে বঙ্গবন্ধুর সমাধি এলাকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল ও কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।[5]
১৯৯৪ সালে স্থপতি এহসান খান, ইশতিয়াক জহির ও ইকবাল হাবিবকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর বাসভবনকে জাদুঘরে রূপান্তর করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা কাজ শেষ করার পর, শেখ হাসিনা ১৯৯৫ সালে তাদের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য একটি সমাধি কমপ্লেক্স নির্মাণ করতে বলেন। এক বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সরকার সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তাদের নির্বাচন করে। প্রকল্পটি শেষ করতে তাদের দুই বছর সময় দেওয়া হয়। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় কী নির্মাণ করা হবে প্রধানমন্ত্রী তার প্রাথমিক ধারণা দেয়। এর নির্মাণ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে।[6] কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয় ১৭ মার্চ ১৯৯৯-এ এবং উদ্বোধন করা হয় ১০ জানুয়ারী ২০০১ তারিখে।[7] কমপ্লেক্সটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি গ্রামের পরিবেশের সাথে খাপ খায়। যে এলাকায় কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে সেই এলাকার পরিবেশ ও প্রকৃতির যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছিলো।[6]
সমাধি কমপ্লেক্সটি ৩৮.৩০ একর জমির উপর অবস্থিত।[7] এটি গোপালগঞ্জ শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গিপাড়ায় অবস্থিত। ঢাকার গুলিস্তান থেকে এর দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার।[7]
কমপ্লেক্সটির কেন্দ্রে একটি সমাধি ভবন রয়েছে। কমপ্লেক্সের সামনে ও দুই পাশের উদ্যান পেরোনোর পরই বঙ্গবন্ধুর সমাধি। লাল সিরামিক ও সাদা-কালো মার্বেল দিয়ে নির্মিত সৌধে মুজিব ও তার বাবা-মাসহ তিনজনের কবর রয়েছে। সমাধিটি সাদা মার্বেল দিয়ে মোড়ানো ও একটি গম্বুজ দ্বারা ঘেরা। সমাধিসৌধের ওপরের জাফরি কাটা দেয়াল ও ওপরে থাকা কারুকাজ করা কাঁচের মধ্য দিয়ে আলো ছড়িয়ে পড়ে সমাধিতে।[7]
এখানে একটি জাদুঘর সহ ৬০০০ বই বিশিষ্ট একটি গ্রন্থাগার রয়েছে। এখানে একটি প্রদর্শনী কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন সময়ের ছবি এবং দেশি-বিদেশি ঐতিহাসিক সংবাদপত্র রয়েছে। এছাড়া মুজিবকে বহনকারী কফিনটিও এখানে সংরক্ষিত রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র, উন্মুক্ত মঞ্চ, পাবলিক প্লাজা, প্রশাসনিক ভবন, ক্যাফেটেরিয়া, বকুলতলা চত্বর ও স্যুভেনির কর্নার। গ্রন্থাগার হয়ে প্রশস্ত রাস্তার দুই পাশে রয়েছে ফুলের বাগান ও কৃত্রিম পাহাড়।[7]
সমাধিসৌধের পাশে মুজিবের বাড়ি এবং ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত শেখ পরিবারের একটি মসজিদ রয়েছে।[8]
এছাড়াও এখানে মুজিবের জীবনের সাথে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে যেমন একটি পুকুর, পারিবারিক বাগান ইত্যাদি। এখানে শেখ রাসেলের নামে একটি বিনোদন পার্ক রয়েছে।[7]
নাম | ব্যাখ্যা | জন্ম | মৃত্যু | টীকা |
---|---|---|---|---|
শেখ মুজিবুর রহমান | বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ এবং প্রতিষ্ঠাতা পিতা এবং বাংলাদেশের ১ম রাষ্ট্রপতি | ১৯২০ | ১৯৭৫ | অভ্যুত্থানের সময় সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। |
শেখ লুৎফর রহমান | শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা | ১৮৮১ | ১৯৭৫ | ব্রিটিশ ভারতের গোপালগঞ্জ দেওয়ানী আদালতের প্রাক্তন সেরেস্তাদার। |
সায়েরা খাতুন | শেখ মুজিবুর রহমানের মা | ১৮৮৬ | ১৯৭৫ | শেখ-ওয়াজেদ রাজনৈতিক পরিবারের কর্ত্রী এবং গৃহিণী |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, জাতীয় শোক দিবস ও মুজিবের জন্মদিনসহ বিশেষ দিবস উপলক্ষে এখানে অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সফরের সময় বিদেশী গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমাধি পরিদর্শন করেন ও শ্রদ্ধা জানান।[9]
১৯৮৪ সালে সৈয়দ ফখরুদ্দিন মাহমুদ সমাধিটি নিয়ে একটি কবিতা লিখেছেন যার নাম হলো একটি অমর সমাধি।[8]
একটি অমর সমাধি
“দাঁড়াও পথিক বর”। যথার্থ বাংগালী, যদি তুমি হও
ক্ষণিক দাঁড়িয়ে যাও, এই সমাধি স্থলে।
এখানে ঘুমিয়ে আছে, বাংগালীর সর্বশ্রেষ্ট নেতা
এদেশের মুক্তি দাতা, বাংলার নয়নের মণি।
শত দুঃখ জ্বলা স’য়ে, জীবনের বিনিময়ে যিনি
বাংগালীর দিয়ে গেছে স্থান, বিশ্বের দুয়ারে।..."
কবিতাটি সমাধি কমপ্লেক্সের প্রবেশদ্বারে পাথরে খোদাই করা রয়েছে।[7]