শিলিগুড়ি করিডোর
ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে দেশটির বাকি অংশের একটি সংযোগকারী ভূখণ্ড উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলোর সঙ্গে দেশটির বাকি অংশের একটি সংযোগকারী ভূখণ্ড উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে দেশের অবশিষ্ট অংশের সংযোগরক্ষাকারী একটি সংকীর্ণ ভূখণ্ড। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত এই ভূখণ্ডের আকৃতি মুরগির ঘাড়ের মতো বলে একে চিকেন্স নেক নামেও অভিহিত করা হয়।[1][2] এই ভূখণ্ডের প্রস্থ ২০ থেকে ৬০ কিলোমিটার (১২ থেকে ৩৭ মাইল)।[3] এর দুপাশে নেপাল ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র। ভুটান করিডোরের উত্তর দিকে অবস্থিত।
শিলিগুড়ি এই অঞ্চলের প্রধান শহর। এই শহরটি ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশ, উত্তর-পূর্ব ভারত ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী প্রধান কেন্দ্র।
সূত্রভেদে করিডোরটির পরিমাপ বিভিন্ন।[4] বিভিন্ন সূত্রে এর আয়তন ১৭০ কিমি × ৬০ কিমি (১০৬ মা × ৩৭ মা), যেখানে সবচেয়ে সরু অংশের দৈর্ঘ্য ২০–২২ কিমি (১২–১৪ মা)।[1][2] কমলজিৎ সিংহের মতে করিডোরটির দৈর্ঘ্য ২০০ কিমি (১২০ মা), প্রস্থ ১৭ থেকে ৬০ কিমি (১১ থেকে ৩৭ মা) এবং আয়তন প্রায় ১২,২০০ কিমি২ (৪,৭০০ মা২)।[4] অন্যান্য সূত্রের মতে করিডোরটির দৈর্ঘ্য ২০০ কিমি (১২০ মা), প্রস্থ ২০ থেকে ৬০ কিমি (১২ থেকে ৩৭ মা) এবং আয়তন প্রায় ১২,২০০ কিমি২ (৪,৭০০ মা২)।[3]
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হলে শিলিগুড়ি করিডোরের সৃষ্টি হয়। ১৯৭৫ সালে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে ভারতের সাথে মিলিত হওয়া অবধি রাজতন্ত্রী সিকিম করিডোরের উত্তর দিকে ছিল।[5][6] এটি শিলিগুড়ি করিডোরের উত্তরে ভারতকে একটি সুরক্ষা দিয়েছে এবং চীনা চুম্বি উপত্যকার পশ্চিম দিকের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণকে একীভূত করেছে।
২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এই অঞ্চলে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এই প্রস্তাবে উক্ত অঞ্চলের মাধ্যমে অবাধে চার দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন চালানোর কথা বলা হয়।[7] তবে অবৈধ ড্রাগ ও অস্ত্রচোরাচালান বর্তমানে এই অঞ্চলের প্রধান সমস্যা।[8]
যদিও শিলিগুড়ি করিডোর ভারতের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল অঞ্চল, এর অবস্থান একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করেছে যা বাংলাদেশের পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লীগের মধ্যে বৈরিতার ফলস্বরূপ ভারত বিভাগ হয়েছিল। প্রথম থেকেই এই দুটি নতুন রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক শত্রুতা ও সংঘাতের দ্বারা চিহ্নিত ছিল।
এক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘ভারত-ভুটান-চিনের সীমান্ত মিশেছে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার খুব কাছে। সিকিমের কুপুপের কাছে এখন যেখানে চিনা সেনার ঘাঁটি রয়েছে, সেখান থেকে শিলিগুড়ি করিডরের নাগরাকাটা আকাশপথে মোটামুটি ৪৫-৫০ কিলোমিটার। সেই দূরত্ব কমাতেই চিনা সেনা ডোকলাম কব্জা করতে চাইছে। কারণ, ডোকলাম থেকে নাগরাকাটার আকাশপথে দূরত্ব বড়জোর ২৫ কিলোমিটার।’’ ওই কর্তা জানাচ্ছেন, ডোকলামে স্থিতাবস্থা চলছে বলে এখন হা জেলার মধ্যেই অন্য রাস্তা খুঁজছে চিন।
যাতে ভুটানের মধ্যে দিয়ে শিলিগুড়ি করিডরের খুব কাছে ঘাঁটি গাড়া সম্ভব হয়। ডোকলামে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি কংক্রিট হেলিপ্যাড, কংক্রিটের ছাউনি, সুড়ঙ্গ, নজরদারি টাওয়ার তৈরি করেছে চিনা সেনা।
বেশ কিছু নতুন বাঙ্কারও বানিয়েছে। আর রাস্তা তো তৈরি করেইছে। তবে ডোকলামের সর্বোচ্চ অংশটিতে ভারতীয় সেনা মোতায়েন থাকায় নজরদারির দিক দিয়ে তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে।
ভারতীয় গোয়েন্দারা জেনেছেন, ভুটানের সঙ্গে সীমান্ত-বিবাদ নিয়ে চিনের আলোচনা চলছে ঠিকই। কিন্তু তার আগেই ভুটানের পশ্চিম দিকে ক্রমেই এগিয়ে আসছে চিন। টহলদারি চালাচ্ছে। এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, ‘‘ভুটানের মিডল সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা থিম্পুকে ছেড়ে দিতে চায় চিন। তার বদলে পশ্চিম ভুটানে ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিতে চায় তারা। এই অংশ সিকিম ও কালিম্পং লাগোয়া। গত ২৪-২৫ জুলাই চিনের উপ-বিদেশমন্ত্রী কং শুয়াংইউ থিম্পুতে গিয়ে ফের একই প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন।’’ ওই গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, আনুষ্ঠানিক ভাবে দু’দেশের যা কথাবার্তাই হোক না কেন, পশ্চিম ভুটানের ২৬৯ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় চিনা
সেনার অবাধ গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আগে মাসে এক বা দু’বার চিনের সেনা ‘লং রুট পেট্রলিং’-এ ভুটানের ভিতরে যেত। এখন প্রায়ই তাদের ওই এলাকায় দেখা যাচ্ছে। চিনের আম নাগরিকেরাও মাঝে-মধ্যে ভুটানি সেনার শিবিরে এসে কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। এ সবে ভুটানের দিক থেকেও তেমন কোনও বাধা আসছে না।
এমন পরিস্থিতির কথা জানিয়ে প্রতিরক্ষা, বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে সতর্ক করেছেন গোয়েন্দারা। যদিও গত ৭ মার্চ বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ লোকসভায় জানান, ২০১৭-এর ২৮ অগস্টের পরে ডোকলাম বা সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে আর কিছু হয়নি। এক প্রতিরক্ষা বিশেষ়জ্ঞের কথায়, ‘‘ভুটানের পারোতে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি রয়েছে। পারো থেকে হা জেলায় পৌঁছতে বেশি সময় লাগে না। ফলে এতটা উদ্বেগেরও কোনও কারণ নেই।’’ হাসিমারা ও পানাগড় বিমানঘাঁটি যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখে বলেও জানান তিনি।
তবু সরকার কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না। কারণ ডোকলামে কিছু না-ঘটলেও ২০১৭-এর ২৮ ডিসেম্বর অরুণাচলের আপার সিয়াং জেলার শিয়ুং লা-তে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকে এসেছিল চিনা সেনা। ভারতের আপত্তি ও সীমান্ত বৈঠকের পরে তারা ফিরে যায়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ৫৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি) জানিয়েছে, চিন সীমান্ত বরাবর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে গতি আনতে বেশ কিছু পদক্ষেপের একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে তারা।
এর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের মহড়াও। সীমান্তে হিমাঙ্কের নীচের তাপমাত্রায় আইটিবিপি-র কাজের সুবিধার জন্য শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক ছাউনি তৈরির কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.