Loading AI tools
সূফি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শাহ মখদুম রূপোশ (১২১৬-১৩১৩ খ্রিষ্টাব্দ) বাংলার প্রথিতযশা সুফী সাধক এবং ধর্ম-প্রচারকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষার্ধে এবং চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুতে বাংলাদেশ তথা রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেছিলেন।[১] তার অনুপম ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে শত শত মানুষ ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন। মূলত শাহ মখদুমের মাধ্যমেই বরেন্দ্র[২] এবং গৌড়[২] অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম বিস্তার লাভ করে।[৩] বর্তমানে এসব অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। শাহ মখদুমের প্রকৃত নাম আব্দুল কুদ্দুস।[৪] ধর্ম এবং জ্ঞান সাধনায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার জন্য বিভিন্ন সময়ে তার নামের সাথে “শাহ”, “মখদুম”, “রূপোশ” ইত্যাদি উপাধি যুক্ত হয়। তিনি শাহ মখদুম রূপোশ নামেই বেশী বিখ্যাত।
শাহ মখদুম রূপোশ | |
---|---|
জন্ম | আব্দুল কুদ্দুস ২রা রজব,৬১৫ হিজিরী মোতাবেক ১২১৬ খ্রিস্টাব্দ বাগদাদ |
জাতীয়তা | ইরাকি |
শিক্ষা | ইসলামী ফিকহ ও সুফীতত্ত্ব |
পেশা | ইসলাম প্রচার |
পরিচিতির কারণ | সুফী সাধনা ও ইসলাম, প্রচার |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | বাংলাদেশে ইসলাম প্রচার |
মৃত্যুর পর তাকে তার বলে দেওয়া স্থানে সমাহিত করা হয়। তার কবর বর্তমান রাজশাহী শহরের দরগাপাড়ায় অবস্থিত, যার দক্ষিণে প্রমত্তা পদ্মা নদী এবং পূর্বে রাজশাহী কলেজ অবস্থিত।[২] প্রতি বছর হিজরী সনের রজব মাসের ২৭ তারিখ এখানে মৃত্যুবার্ষিকী তথা উরশ পালন করা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে শাহ মখদুমের হাজার হাজার ভক্ত অনুসারী সেদিন তার মাজার জিয়ারতে আসেন।[৩]
শাহ মখদুমের জন্ম সাল নিয়ে অনেক মতভেদ প্রচলিত আছে। তবে বিভিন্ন প্রামাণিক সূত্রানুযায়ী বলা যায়, তিনি ১২১৬ (হিজরী ৬১৫ সালের ২রা রজব) সালে বাগদাদের এক বিখ্যাত সুফী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[৫] তার দাদা বড়পীড় হযরত আব্দুল কাদির জিলানীর মৃত্যুর ৫৪ বছর পর শাহ মখদুমের জন্ম হয়। তার পিতার নাম সায়্যিদ আযাল্লাহ শাহ, তিনিও অনেক জ্ঞানী এবং ধর্ম বিশারদ সুফী ছিলেন।
শাহ মখদুম রুপোশ (১২১৬-১৩১৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার প্রথিতযশা সুফিয়া সাধক এবং ধর্মপ্রচারদের মধ্যেও অন্যতম।
হযরত শাহ মখদুম রূপোশ হযরত আলী এর বংশধর ছিলেন। বড়পীর হযরত আব্দুর কাদির জিলানী তার আপন দাদা।[১] শাহ মখদুমের বংশ তালিকা নিম্নরূপঃ [৬]
শাহ মখদুমের বাল্যকাল কাটে বাগদাদ নগরে। জ্ঞানচর্চার হাতে-খড়ি হয় তার পিতা আযাল্লাহ শাহের মাধ্যমে। [৭] আযাল্লাহ শাহ তৎকালীন সময়ের একজন বিশিষ্ট আলেম এবং ধার্মিক হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। সুফী জ্ঞানে তার অগাধ পান্ডিত্য ছিল । শিশু বয়সেই তিনি তার পুত্র আব্দুল কুদ্দুস শাহ মখদুমকে আব্দুল কাদের জিলানী প্রতিষ্ঠিত কাদেরিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন।[৮] কিছুদিনের মধ্যেই শাহ মখদুমের তীক্ষ্ণ মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। অল্প বয়সেই তিনি কুরআন, হাদিস, ফিকহ, আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ, সুফিতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে ফেলেন। কিন্তু কিছুদিন পর, যখন শাহ মখদুম কৈশোরকালীন সময়ে ছিলেন, তখন তার পিতা শাসকদের রোষানলে পড়েন এবং স্বপরিবারে বাগদাদ ছাড়তে বাধ্য হন। অন্যদিকে তাতারীদের আক্রমণে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের লন্ডভন্ড অবস্থা। সমস্ত সাম্রাজ্য তারা ধ্বংস করতে থাকে। ১২৫৮ সালে তাতারীদের হাতে বাগদাদ নগরীর পতন ঘটে ।[৯] বাগদাদ নগরীর পতন হওয়ার আগেই পিতা আযাল্লাহ শাহের সাথে শাহ মখদুম বাগদাদ ত্যাগ করে ভারতের দিকে রওয়া হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
বাগদাদ ছেড়ে যাওয়ার পর শাহ মখদুমের পরিবার সিন্ধুতে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে থাকাকালীন সময়ে বিখ্যাত সূফী জালাল উদ্দীন শাহ সুরের মাদ্রাসায় তিনি ভর্তি হন এবং ইসলামের উচ্চতর বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। উচ্চ শিক্ষাতেও তিনি অদম্য মেধার পরিচয় রাখেন। সুফী ধারাবাহিকতার বিভিন্ন শিক্ষা, প্রকৃতিগত উন্নত যোগ্যতা, ইজতেহাদী শক্তি ইত্যাদি অর্জনের মাধ্যমে তিনি কাদেরীয় তরীকার সিদ্ধ পুরুষে পরিণত হন। সে সময় তাকে “মখদুম” খেতাব দিয়ে ভূষিত করা হয়। পড়াশোনা শেষ করে তিনি তার পিতার কাছে ফিরে যান।[১০]
বাগদাদ থেকে বিতাড়িত হয়ে আযাল্লাহ শাহের পরিবার দিল্লীতে এসে বসবাস করেন। যখন তাতারীরা বাগদাদ ধ্বংস করে তখন দিল্লীর সম্রাট ছিলেন নাসিরুদ্দীন। তার শাসনামলে প্রকৃতপক্ষে রাজ্য শাসন করতেন গিয়াসউদ্দীন বলবন। উভয়ের সাথেই আযাল্লাহ শাহ এবং শাহ মখদুমের ভালো সম্পর্ক ছিলো । দিল্লীতে বসবাসকালীন সময়ে আযাল্লাহ শাহ তার তিন পুত্র সৈয়দ আহমেদ আলী তন্নরী ওরফে মিরান শাহ, শাহ মখদুম এবং সৈয়দ মনির আহমেদ শাহকে সুফী জ্ঞান দান করে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে পূর্ব ভারত তথা বাংলাদেশে যাওয়ার আদেশ দান করেন। হালাকু খার মৃত্যুর পর আযাল্লাহ শাহ বাগদাদে ফিরে আসেন এবং তার তিন পুত্র ইসলাম প্রচারে ভারতে থেকে যান । [১০]
সেই সময় বাংলার শাসক ছিলেন তুঘরিল খান। তিনি দিল্লীর সুলতানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহ দমন করতে বৃদ্ধ বয়সে গিয়াসউদ্দীন বলবন ১২৭৮ সালে বাংলাদেশে বিদ্রোহ দমন করতে আসেন। গিয়াসউদ্দীন বলবনের যুদ্ধযাত্রার সময় শাহ মখদুম তার তিন ভাই এবং শতাধিক অনুসারী নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে তাদের অনুগামী হন। তখন শাহ মখদুমের বয়স ছিলো ৬০ বছরেরও বেশি। [১১] গিয়াসউদ্দীন বলবন এর সাথে যুদ্ধে তুঘরিল খান পরাজিত হলে বোখরা খানকে সুলতান বানানো হয়। বোখরা খান হলেন গিয়াসউদ্দীন বলবনের পুত্র। বোখরা খান আলেম এবং ধর্ম-প্রচারকদের খুব সম্মান করতেন। সেই সূত্রে তার সাথে শাহ মখদুমের গভীর সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তিনি গৌড়ে বসবাস শুরু করেন।
ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ মখদুম রূপোশ গৌড় থেকে বের হয়ে আসেন এবং দক্ষিণ দিকে যাত্রা শুরু করেন। নৌপথে যাত্রা করে তিনি নোয়াখালীতে এসে পৌঁছান। নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী রেল স্টেশন থেকে ১০/১২ মাইল দূরে শ্যামপুর নামক গ্রামে তিনি তার প্রথম আস্তানা স্থাপন করে ধর্ম প্রচারের কাজ অব্যাহত রাখেন। [১২] ১২৮৭ সালে কাঞ্চনপুরে তিনি একটি খানকা নির্মাণ করেন। এসময় তার অনেক ভক্ত অনুরাগী তৈরি হয়। তার অনুপম চরিত্র, আর ইসলামের সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে শত শত মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আসেন। এখানে দুই বছর থাকার পর খবর পেলেন যে গৌড়ে তার প্রাণপ্রিয় শিষ্য তুরকান শাহ ইসলাম প্রচারকার্যে মারা যান। সংবাদপ্রাপ্তির পর তিনি ১২৮৯ সালে কিছু সঙ্গী সাথী নিয়ে গৌড়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
নোয়াখালী থেকে নৌপথে শাহ মখদুম রূপোশ রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এসে অবতরণ করেন। বাঘায় পদ্মা নদী থেকে ২ কিলোমিটার দূরে তিনি বসতি স্থাপন করেন এবং এ অঞ্চলের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার ওপর গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। রাজশাহী তখন মহাকালগড় নামে পরিচিত ছিলো।[১৩] [১৪] মহাকালগড় শাসন করতেন তৎকালীন সামন্তরাজ কাপলিক তন্ত্রে বিশ্বাসী দুই ভাই। তাদের একজনের নাম হলো আংশুদেও খেজ্জুর চান্দভন্ডীও বর্মভোজ এবং অপর ভাই হলেন আংশুদেও খেজ্জুর চান্দখড়্গ গুজ্জভোজ।[১৪] এই দুই ভাইয়ের অত্যাচারী শাসন ব্যবস্থায় জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠে। সেই সময় রাজশাহী বা মহাকালগড় অঞ্চলে নরবলী দেওয়ার প্রচলন ছিলো। জনগণ এই প্রথার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদী চেতনা লালন করতো। সর্বোপরি প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিলো একদম দুর্বল। শাহ মখদুম শাসকের এই দুর্বলতা কে উপলব্ধি করে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি একই সাথে নৌবাহিনী, অশ্বারোহী বাহিনী এবং পদাতিক বাহিনীর জন্য লোকবল সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যে তার বাহিনী অপরাজেয় শক্তির অধিকারী হয়ে উঠে। সেখানে তিনি একটি ছোট কেল্লাও নির্মাণ করেছিলেন। এদিকে শাসকচক্র এসব সংবাদ পেয়ে পাল্টা বাহিনী গঠন করেন। ফলে যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠে।[১৪]
শাহ মখদুম রূপোশ রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় ৪৪ বছর অবস্থান করেন। এই সময় দেওরাজদের সাথে শাহ মখদুমের তিন বার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
নৌ,অশ্বারোহী এবং পদাতিক বাহিনীতে বলিয়ান শাহ মখদুমের সেনাবাহিনী যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকত। শাহ মখদুম নৌপথে বাঘা থেকে রাজশাহীতে এসে তার ভক্ত, অনুসারী এবং স্থানীয় জণগন কে সাথে নিয়ে যুদ্ধযাত্রা শুরু করেন। অশ্বারোহী একটি দল মহাকলগড়ের রাজবাড়ী দেবালয় ঘিরে ফেলেন। ফলে ভয়াবহ যুদ্ধ লেগে যায়। উভয় পক্ষে অনেক অশ্বারোহী ছিলো। যুদ্ধ রক্তগঙ্গায় পরিণত হয়, এতে বেশুমার মানুষ হতাহত হয়। রাজা এবং শাহ মুখদুমের অনেক ঘোড়াও যুদ্ধে মারা পড়ে। অনেক ঘোড়া মারা যাওয়ার কারণে ঐ অঞ্চলের নাম ঘোড়ামারা হয়ে যায়।[১২] ঘোড়ামারা অঞ্চলটি বর্তমান রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি থানা।
যুদ্ধ শেষে শাহ মখদুম বাঘায় ফিরে যান।
প্রথম যুদ্ধের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দেওরাজদ্বয় সৈন্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন। তারা নিজ ধর্মবিশ্বাসীদের শাহ মখদুমের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলেন। এই খবর শাহ মখদুম জানতে পেরে তিনিও সেনা প্রস্তুত করেন। বিশেষত যারা শাসকদের অত্যাচারে অতীষ্ঠ ছিলো, তিনি তাদেরকে এক কাতারে নিয়ে আসেন। এই বৃহৎ সম্মিলিত বাহিনী দলে দলে ভাগ হয়ে দেওরাজের ওপর আক্রমণ করে এবং বিপক্ষীয় সেনাদের ধ্বংস করে দেয়। শাহ মখদুম জয়লাভ করেন। সামন্ত শাসকরা রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে চলে যান, বাকিরা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণত্যাগ করে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলে ইসলামের ভিত্তি মজবুত হয়ে যায়। যুদ্ধ শেষ করে শাহ মখদুম আবার বাঘায় ফিরে যান এবং সেখানে একটি বিজয় তোরণ নির্মাণ করেন। পাশাপাশি বাঘা এলাকার নাম বদলে মখদুম নগর রাখেন। পলাতক রাজা এবং তার অনুসারীরা বন-জঙ্গলে চলে যায় এবং সেখানে একত্রিত হয়। তারা নতুন করে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। নব্য বিজিত রাজ্য দখলে রাখতে শাহ মখদুম মখদুম নগর ত্যাগ করে মহাকালগড় বা রাজশাহীতে এসে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। কিছুদিন পর সামন্তরাজ সৈন্য নিয়ে ফিরে আসে এবং শাহ মখদুম তার জীবনের তৃতীয় এবং শেষ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। এই যুদ্ধেও দেওরাজদ্বয় তেমন কোন বীরত্ব দেখাতে পারে নি। আবার পরাজয় ঘটে তাদের। ছয় জন রাজকুমারসহ দুইজন রাজ-ভ্রাতা বন্দী হন। শাহ মখদুম তাদের হত্যা না করে মুক্ত করে দেন এবং আহত রাজকুমারদের নিজের হাতে সেবা করে সুস্থ করেন। শাহ মখদুমের এমন মহানুভবতা দেখে দেওরাজদ্বয় ইসলাম গ্রহণ করেন।[১৫]
কথিত আছে, শাহ মখদুম কুমিরের পিঠে চড়ে নদী পার হতেন। তার অতিপ্রাকৃত শক্তিতে শুধু কুমির নয়, বনের বাঘও বশ্যতা স্বীকার করতো বলে জনশ্রুতি আছে। বর্তমানে শাহ মখদুমের কবরের পাশে সেই কুমিরকে সমাহিত করা হয়। কুমিরটির কবর এখনো আছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
রাজশাহী অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি সারাদিন ধ্যান আর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। কথা বলতেন কম। কুরআন পড়তেন বেশি। একদিন তিনি উপলব্ধি করেন যে তার মৃত্যু আসন্ন। তারপর তিনি তার ভক্তদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহাকালগড়ে ডেকে পাঠান। সবাইকে নসিহত বানী দান করে একসাথে জোহরের নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তিনি তার যোগ্য শিষ্যদের এলাকা ভাগ করে দিয়ে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব প্রদান করেন। আসরের নামাজের পর আবার সবাইকে ডেকে বর্তমান তার কবরের স্থান দেখিয়ে দিয়ে বলেন যে তার মৃত্যুর পর সেখানে যেন তাকে দাফন করা হয়। নিজের লাঠি দিয়ে সে স্থানে দাগ কেটে চিহ্নও দিয়ে দিলেন। মাগরিবের নামাজ পড়ে তিনি হুজরাখানায় ঢুকে সাদা চাদর দিয়ে আপাদমস্তক ঢেকে ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর হুজরা থেকে আর বের হচ্ছেন না দেখে শিষ্যরা হুজরার ভেতরে গিয়ে দেখেন উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ সাধক শাহ মখদুম রূপোশ ইহলীলা সাঙ্গ করে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
হিজরী ৭১৩ সালের রজব মাসের ২৭ তারিখ, অর্থাৎ ১৩১৩ খ্রিষ্টাব্দ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১৬][১৭] যদিও কিছু সূত্র ১৩১৩ খ্রিস্টাব্দের সাথে সম্পর্কিত বছরটি উল্লেখ করে, অন্যরা পরামর্শ দেয় যে তিনি ১১৭ বছর বয়সে ১৫৯২ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। মুঘল শাসনামলে, আলী কুলী বেগ, দ্বাদশ শিয়া এবং আব্বাসের সেবক, কবরের উপরে একটি বর্গআকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট মাজার (সমাধি) নির্মাণ করেছিলেন।[১৮] ভক্তরা প্রতি বছর দরগাহ প্রাঙ্গণে ২৭ রজব তারিখে উরসের মাধ্যমে মখদুমের মৃত্যু স্মরণ করেন। ১৮৭৭ সালে মাজারের মুতাওয়াল্লি (অভিভাবক) বলেছিলেন যে মুঘল সম্রাট হুমায়ূন উপহার হিসাবে মাজার এস্টেটটি ভাড়া মুক্ত করেছিলেন।[১৯]
প্রতিবছর রজব মাসের ২৭ তারিখ শাহ মখদুম রূপোশের মাজারে ওরস পালন করা হয়।[২০][২১]
শাহ মখদুমের নামে রাজশাহী মহানগরীতে একটি থানার নামকরণ করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য একটি হল আছে তার নামে। রাজশাহীর বিমান বন্দরের নাম শাহ মখদুম বিমান বন্দর রাখা হয়েছে। এছাড়াও তার নামে শহরে একটি মেডিকেল কলেজ ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। রাজশাহীসহ আশেপাশের এলাকায় বহু দোকান, যানবাহন, শপিং মল, রাস্তা, ভবন ইত্যাদির নাম শাহ মখদুমের নামে রাখা হয়। তাছাড়া রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বৃহৎ সড়ক তার নামে নামকরণ করা হয়েছে যা শাহ মখদুম এভিনিউ নামে পরিচিত।
এই নিবন্ধটি অসম্পূর্ণ। আপনি চাইলে এটিকে সম্প্রসারিত করে উইকিপিডিয়াকে সাহায্য করতে পারেন। |
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.