Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইসলাম রাশিয়ার চারটি প্রধান ধর্মের মধ্যে অন্যতম। খ্রীষ্টধর্মের পর ইসলাম রাশিয়ার দ্বিতীয় সর্বাধিক স্বীকৃত ধর্ম। ইউরোপে রাশিয়ার সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে; এবং ২০১৭ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের মতে,[3] রাশিয়ায় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মোট জনসংখ্যার ১০,২২০,০০০ বা ৬%। ২০১২ সালে পরিচালিত একটি ব্যাপক জরিপ অনুযায়ী, মুসলিমরা রাশিয়ার জনসংখ্যার ৬.৫% ছিল।[4] যাইহোক, সামাজিক অস্থিরতার কারণে ইসলামিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সহ দুটি ফেডারেল বিষয়ের জনসংখ্যা জরিপ করা হয়নি, যার জনসংখ্যা একসাথে প্রায় ২মিলিয়ন ছিল, যথা চেচনিয়া এবং ইনুগুশটিয়া।[5]
৯০–১০০% |
|
৭০–৮০% | কাজাখস্তান |
৫০–৭০% | |
৩০–৫০% | উত্তর মেসেডোনিয়া |
১০–২০% |
|
৫–১০% | |
৪–৫% | |
২–৪% | |
১–২% |
|
< ১% |
|
আইনের অধীনে এবং রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী ধর্মগুলির মধ্যে একটি হিসাবে স্বীকৃত, ইসলাম রাশিয়ার ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের একটি অংশ, এবং রাশিয়ান সরকার দ্বারা ভর্তুকি দেওয়া হয়।[6] অর্থোডক্স খ্রীষ্টধর্মের পাশাপাশি একটি প্রধান রুশ ধর্ম হিসেবে ইসলামের অবস্থান ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের সময় থেকে শুরু হয়, যিনি ওরেনবার্গ অ্যাসেম্বলির মাধ্যমে ইসলামিক ধর্মযাজক এবং বৃত্তির পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।[7]
শুরু থেকেই রুশ এবং এর উত্তরসূরি রাষ্ট্রসমূহ প্রতিবেশী, শাসক বা প্রজা হিসেবে মুসলিমদের সংস্পর্শে এসেছে।[8] মুসলিম ভূমিসমূহ থেকে দূরপাল্লার রৌপ্য বাণিজ্য প্রথম রুশ রাষ্ট্রসমূহ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এবং খ্রিস্টধর্মের পূর্বে ইসলাম ধর্ম রুশ ভূমিতে পৌঁছায়[8]। ৯৮৮ সালে কিয়েভান রাসের শাসক ভ্লাদিমিরের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের কয়েক দশক আগেই দশম শতাব্দীর মধ্যভাগে ভোলগা বুলগার রাষ্ট্রের শাসকরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ১২৩৬ থেকে ১২৩৭ সালের মধ্যে মোঙ্গলরা ভোলগা বুলগার রাষ্ট্র ধ্বংস করে দেয় এবং এরপর সমগ্র রুশ ভূমিকে পদানত করে। ১৩২৭ সালে গোল্ডেন হোর্ডের শাসক উজবেক খান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এর ফলে এক শতাব্দীরও বেশি সময়ের জন্য রুশ ভূমিসমূহের কর্তৃত্ব মুসলিমদের হাতে ন্যস্ত হয়[8]। এরপর মাস্কোভি ও গোল্ডেন হোর্ডের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের পরিবর্তন ঘটতে থাকলে মস্কোর রাজপুরুষেরা ক্রমাগত গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত সংঘর্ষে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ১৫৫২ সালে রাশিয়ার জার চতুর্থ আইভান গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরসূরি রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রাষ্ট্র কাজান দখল করেন[8] এবং ভৌগোলিক সম্প্রসারণের এক সুদীর্ঘ প্রক্রিয়া আরম্ভ করেন। ক্রমে ক্রিমিয়া, ককেশাস এবং মধ্য এশিয়া রাশিয়ার পদানত হয় এবং এর ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে বহু মুসলিম জাতি রুশ শাসনাধীনে আসে। ১৯৯৭ সালে রুশ সংবিধানে খ্রিস্টধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং ইহুদিধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মকেও রাশিয়ার 'সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে'র অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।[9] বর্তমানে রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫% ইসলাম ধর্মাবলম্বী।
৭ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পারস্যে মুসলিম বিজয়ের অংশ হিসেবে ইসলাম ককেশাস অঞ্চলে প্রবেশ করে, যার কিছু অংশ পরে রাশিয়া স্থায়ীভাবে অন্তর্ভুক্ত করে।[10] বর্তমান রাশিয়ান ভূখণ্ডের মধ্যে মুসলিম হওয়া প্রথম মানুষ, দাগেস্তানি জনগণ (ডারবেন্ট অঞ্চল), ৮ম শতাব্দীতে এই অঞ্চলের আরব বিজয়ের পরে রূপান্তরিত হয়। ভবিষ্যতে রাশিয়ার ভূমিতে প্রথম মুসলিম রাষ্ট্র ছিল ভোলগা বুলগেরিয়া (৯২২)।[11] কাজানের খানাতের তাতাররা সেই রাজ্য থেকে বিশ্বাসীদের জনসংখ্যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইউরোপীয় ও ককেশীয় তুর্কি জনগণের অধিকাংশও ইসলামের অনুসারী হয়ে ওঠে।[12]
গোল্ডেন হোর্ডের শেষ অবশিষ্ট উত্তরসূরি ক্রিমিয়ান খানাটের তাতাররা ১৫৭১ সালে দক্ষিণ রাশিয়ায় অভিযান চালিয়ে মস্কোর কিছু অংশ পুড়িয়ে দেয়।[13] অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ক্রিমিয়ান তাতাররা উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাথে একটি বিশাল ক্রীতদাস-বাণিজ্য বজায় রাখে, ১৫০০-১৭০০ সময়কালে রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে প্রায় ২০ লক্ষ ক্রীতদাস রপ্তানি করে।[14]
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত, ট্রান্সককেশিয়া এবং দক্ষিণ দাগেস্তানের সমস্ত ধারাবাহিক ইরানি সাম্রাজ্য (সাফাভিদ, আফশারিদ এবং কাজার) এবং অন্যদিকে তাদের ভূ-রাজনৈতিক এবং আদর্শগত প্রতিবেশী চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী উসমানীয় তুর্কিদের দ্বারা শাসিত হয়েছিল। উত্তর ককেশাস এবং দক্ষিণ ককেশাস উভয় অঞ্চলে তারা যে সব এলাকায় শাসন করেছিল, শিয়া ইসলাম এবং সুন্নি ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে সংলগ্ন অঞ্চলে আরও অনেক জাতিগত ককেশীয় জনগণের দ্রুত এবং অবিচলিত রূপান্তর হয়।
১৫৫২ সালে ইভান দ্য টেরিবল দ্য টেরিবল টু দ্য গ্রেট কর্তৃক কাজানের রুশ বিজয় থেকে ১৭৬২ সালে ক্যাথরিন দ্য গ্রেটের আরোহণ পর্যন্ত সময়কালে বর্জন এবং বৈষম্যমূলক নীতির মাধ্যমে মুসলমানদের উপর নিয়মতান্ত্রিক রাশিয়ান দমন - সেইসাথে মসজিদের মতো ইসলামের বাহ্যিক প্রকাশ দূর করে মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংস করা হয়।[15] রাশিয়ানরা প্রাথমিকভাবে ইসলামকে সমৃদ্ধ হতে দেওয়ার ইচ্ছা প্রদর্শন করে কারণ মুসলিম আলেমদের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের, বিশেষ করে কাজাখদের কাছে প্রচার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যাদের রাশিয়ানরা অবজ্ঞার চোখে দেখতো।[16][17][18]
১৩৯২ সালে বর্তমান রাশিয়ার নিঝনি নভগরোদ প্রদেশে বসবাসকারী মিশার তাতাররা মাস্কোভির গ্র্যান্ড ডিউকদের অধীনে চাকুরি গ্রহণ করলে মাস্কোভি প্রথম মুসলিম প্রজা লাভ করে।[8] পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে গোল্ডেন হোর্ডের উত্তরাধিকার যুদ্ধে পরাজিত কাসিমভের খানরা মাস্কোভির আশ্রয় লাভ করেন এবং মস্কোয় বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত অভিজাতে পরিণত হন। তবে তা সত্ত্বেও রুশদের কাজান বিজয় ছিল একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, কারণ এর ফলে বিস্তৃত স্তেপভূমিতে রুশ সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পরবর্তী দুই শতাব্দীতে রুশরা বাশকির ও কাজাখ স্তেপের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে এবং এর মধ্য দিয়ে বহুসংখ্যক মুসলিম প্রজা লাভ করে।
১৭৮৩ সালে রুশ সম্রাজ্ঞী দ্বিতীয় ক্যাথেরিন গোল্ডেন হোর্ডের সর্বশেষ উত্তরসূরি রাষ্ট্র ক্রিমিয়া দখল করেন এবং অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষদিকে ককেশাস পর্যন্ত রুশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয়।[8] ১৭৬২ সালে ক্যাথরিন দ্য গ্রেট বর্জন এবং বৈষম্যমূলক নীতির মাধ্যমে মুসলমানদের উপর নিয়মতান্ত্রিক রুশ দমন-পীড়ন প্রদর্শন করেন - সেইসাথে মসজিদের মতো ইসলামের বাহ্যিক প্রকাশ দূর করে মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংস করেন।[19] রাশিয়ানরা প্রাথমিকভাবে ইসলামকে সমৃদ্ধ হতে দেওয়ার ইচ্ছা প্রদর্শন করে কারণ মুসলিম আলেমদের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের, বিশেষ করে কাজাখদের কাছে প্রচার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যাদের রাশিয়ানরা অবজ্ঞার চোখে দেখেছিল।[20][21] বর্তমান আজারবাইজানসহ ট্রান্সককেশীয় রাজ্যসমূহ সহজেই রুশদের পদানত হয়, কিন্তু উত্তর ককেশাস জয় করতে রাশিয়াকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের পুরোটা ব্যয় করতে হয়। ১৮৫৯ সালে ককেশীয় মুসলিমদের সামরিক ও ধর্মীয় নেতা ইমাম শামিলের রুশদের নিকট আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই কেবল রাশিয়ার পক্ষে ককেশাসের জাতিসমূহকে পদানত করা সম্ভব হয়। এর জবাবে কাজাখ ধর্মীয় নেতারা প্যান-তুর্কিবাদকে সমর্থন করে ধর্মীয় উদ্দীপনা আনার চেষ্টা করেছিলেন, যদিও এর ফলে অনেকে নির্যাতিত হয়েছিল।[22] রাশিয়া সরকার কাজাখদের মধ্যে কর্মরত উরাল-ভোলগা এলাকার ইসলামী আলেমদের অর্থ প্রদান করে।[23]
কসাক প্রতিষ্ঠান মুসলিম মিশার তাতারদের নিয়োগ ও অন্তর্ভুক্ত করে।[24] কসাক রেংকে বাশকিরদের যুক্ত করা হয়েছিল।[25] মুসলিম তুর্কি ও বৌদ্ধ কালমিকস কসাক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কসাক উরাল, তেরেক, অস্ত্রখান এবং ডন কসাক হোস্টদের সারিতে কালমিকস ছিল। মিশার মুসলিম, তেপ্তিয়ার মুসলিম, সেবা তাতার মুসলিম এবং বাশকির মুসলমানরা ওরেনবার্গ কসাক হোস্টে যোগ দেয়।[26]
সবশেষে ১৮৬৪ থেকে ১৮৭৬ সালের মধ্যে রাশিয়া কয়েক দফা সামরিক অভিযানের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়ার বুখারা, খিভা ও কোকান্দ খানাতগুলোতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। কোকান্দ খানাতকে পুরোপুরিভাবে উচ্ছেদ করা হয়, এবং বুখারা ও খিভার বহু অঞ্চলকে রাশিয়ার তুর্কিস্তান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। খিভা ও বুখারার অবশিষ্ট অঞ্চল রাশিয়ার আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়।[27] এসব রাজ্যের শাসকদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলিতে বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন বজায় থাকলেও রাষ্ট্রদ্বয়ের বৈদেশিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে। মধ্য এশিয়া বিজয়ের ফলে রাশিয়ার মুসলিম জনসংখ্যা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়, এবং ১৮৯৭ সালের জনশুমারি অনুযায়ী সে সময়ে রাশিয়ায় ১ কোটি ৪০ লক্ষেরও বেশি সংখ্যক মুসলিম অধিবাসী ছিল বলে জানা যায়।
সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর রাশিয়ায় ইসলাম ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। ২১টি রিপাবলিক নিয়ে রুশ ফেডারেশন বা রাশিয়া গঠিত। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ায় সব ধর্ম ও ধর্মীয় কর্ম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। মসজিদ, ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো হয়তো ভেঙে ফেলা হয় নয়তো অফিস বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাস্তিক কমিউনিস্টদের নিবর্তনমূলক শাসনের ফলে রাশিয়ায় ইসলাম ধর্ম ৭০ বছর যাবত প্রকাশ্যে বিকশিত হতে পারেনি। ইসলামের শিক্ষা, প্রচার-প্রসার, দাওয়াত ও তাবলিগ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। রুশ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পালন স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন পাস হলে ইসলাম তার অন্তর্নিহিত সব শক্তি নিয়ে আবার জেগে ওঠে। বর্তমানে ১৪ কোটি ৬০ লাখ রুশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। কেবল মস্কোতেই ১০ লাখ। ইসলাম রাশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রথম হলো অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। ৯০ শতাংশ মুসলমান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী।
সপ্তম শতাব্দীতে ককেশাসের মধ্য দিয়ে রাশিয়ায় ইসলামের আগমন ঘটে। ১৯১৭ সালের আগে রাশিয়ায় ১৫ হাজার মসজিদ ছিল। বিগত ২০ বছরে আট হাজার মসজিদ নির্মাণ বা পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানী মস্কোতে আছে চারটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ। পুরনো মসজিদ ভেঙে মস্কোয় গড়ে তোলা হয় ছয় তলাবিশিষ্ট স্থাপত্যশৈলীতে সুদৃশ্য এক মসজিদ কমপ্লেক্স। এর নাম মস্কো ক্যাথিড্রাল মসজিদ। এতে ১০ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারেন। আশপাশের সড়ক বন্ধ করে দিয়ে আড়াই লাখ মুসলমান ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত মসজিদ কমপ্লেক্সে রয়েছে- নামাজের সুপরিসর স্থান, বিভিন্ন ছোট বড় হল ও মিলনায়তন, গ্রন্থাগার, মিউজিয়াম ও প্রদর্শনীর গ্যালারি। ২০১৫ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ান ও ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে সাথে নিয়ে রুশ ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ মসজিদ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করেন।সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর রাশিয়ায় ইসলাম ক্রমে বিস্তার লাভ করছে। ২১টি রিপাবলিক নিয়ে রুশ ফেডারেশন বা রাশিয়া গঠিত। ১৯১৭ সালে বলশেভিক বিপ্লবের পর রাশিয়ায় সব ধর্ম ও ধর্মীয় কর্ম নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল। মসজিদ, ধর্মীয় উপাসনালয় ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো হয়তো ভেঙে ফেলা হয় নয়তো অফিস বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাস্তিক কমিউনিস্টদের নিবর্তনমূলক শাসনের ফলে রাশিয়ায় ইসলাম ধর্ম ৭০ বছর যাবত প্রকাশ্যে বিকশিত হতে পারেনি। ইসলামের শিক্ষা, প্রচার-প্রসার, দাওয়াত ও তাবলিগ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। রুশ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি পালন স্থগিত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন পাস হলে ইসলাম তার অন্তর্নিহিত সব শক্তি নিয়ে আবার জেগে ওঠে। বর্তমানে ১৪ কোটি ৬০ লাখ রুশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় দুই কোটি। কেবল মস্কোতেই ১০ লাখ। ইসলাম রাশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। প্রথম হলো অর্থোডক্স খ্রিষ্টান। ৯০ শতাংশ মুসলমান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অনুসারী।
ইসলামী শিক্ষা ও বিজ্ঞানের ঐতিহ্য যদিও হারিয়ে গেছে তারপরও রাশিয়ার মুসলমানরা ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য প্রাণপণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। সৌদি অর্থ সহায়তায় ইতোমধ্যে কিছু কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। জার ও বলশেভিক শাসনামলে সরকার নিয়োজিত একজন মুফতি মুসলিম বিষয়াবলি দেখাশোনা করতেন। তিনি মূলত একজন সরকারি কর্মকর্তা। গর্বাচেভের ধর্মীয় স্বাধীনতা নীতির (Perestroika) ফলে তাতারিস্তান, উত্তর ককেশাস ও মস্কোতে নতুন স্বাধীন মুফতির আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীতে শায়খ রাভিল জায়নুদ্দীনের নেতৃত্বে রাশিয়ায় মুফতিদের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল গঠিত হয়। কাউন্সিল সরকারি প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় গণমাধ্যম, দেশ-বিদেশের ইসলামী সংগঠন ও সংস্থার সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বজায় রেখে চলে। সম্প্রতি ‘The Social Doctrine of Russian Muslims’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য দলিল বেরিয়েছে। বর্তমানে তাতার, বাশকির, চেচেন ছাড়াও রাশিয়ার স্থানীয় অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে পবিত্র কুরআন চর্চায় এগিয়ে এসেছেন। এটা রুশ সমাজে ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক রুশ মুসলিম হজ ও উমরাহ পালন করতে যান। ২০০৬ সালে ১৮ হাজার মুসলমান রুশ ফেডারেশন থেকে হজব্রত পালন করেন।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, যাকাত সংগ্রহ ও বিতরণ, ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা, সুদমুক্ত অর্থনীতির বিকাশ, হালাল ব্যবসার প্রচলন, ইসলামী সংবাদপত্র প্রকাশ, রেডিও-টিভি চ্যানেলের ব্যবহার এবং ইসলামী শিক্ষার প্রবর্তনের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন এক টিভি সংবাদ সম্মেলনে বলেন : ‘Islam is a great world religion rooted in the history of Russia. Islam and Christianity are very close, and our Government should support the Muslims organizations.’ অর্থাৎ ‘ইসলাম রাশিয়ার ইতিহাসের গভীরে প্রোথিত একটি বিরাট বিশ্বধর্ম। ইসলাম ও খ্রিষ্টধর্ম অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আমাদের সরকার মুসলিম সংগঠনগুলোকে সহায়তা দিয়ে যাওয়া উচিত।’
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.