Loading AI tools
সময়ের একটি অংশ যা দিগন্তের সূর্য ডুবে যাবার পর থেকে শুরু হয় উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
রাত বা রাত্রি সময়ের একটি অংশ যা দিগন্তের সমান্তরাল থেকে সূর্য ডুবে যাবার পর থেকে শুরু হয়। গোধূলী লগ্ন বা ঈষৎ অন্ধকার হবার মাধ্যমে রাত তার আবির্ভাবের কথা বিশ্ববাসীকে জানান দেয়। রাতের বিপরীত হচ্ছে দিন। রাত শুরু এবং রাত শেষ হবার ক্ষেত্রে কিছু কিছু উপাদান নির্ভরশীল। তন্মধ্যে - ঋতু, অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, সময়রেখা অন্যতম।
নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের প্রিয় গ্রহ পৃথিবীর একটি অংশ যখন সূর্যের আলোয় আলোকিত হয় তখন তা দিনরূপে গণ্য হয়। পৃথিবীর অন্য অংশে তখন সূর্যের ছায়া হিসেবে আলো আটকে যায় বা বাধাগ্রস্ত হয়। এ আবরণকেই আমরা সহজভাষায় রাতের অন্ধকার বা রাত বলে থাকি।
গড়পড়তা দিনের তুলনায় রাতের সময়সীমা কম। দু'টি কারণে তা হয়ে থাকে। এছাড়াও, গ্রীষ্মকালে দিনের তুলনায় রাত ছোট হয়ে থাকে। কিন্তু শীতকালে রাতের তুলনায় দিন ছোট হয়।
দিন বড় হলে ভূ-পৃষ্ঠ অধিক সময় পর্যন্ত সৌরতাপ গ্রহণ করতে পারে এবং অধিক উত্তপ্ত হয়। কিন্তু দিনের তুলনায় রাত্রি বড় হলে তার বিপরীত অবস্থা ঘটে। ২১ মার্চ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর - এ ছয় মাস উত্তর গোলার্ধে অবস্থান করায় সেখানে গ্রীষ্মকাল এবং দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল বিরাজ করে। গ্রীষ্মকালে দিন বড় হওয়ায় ঐ সময় উত্তর গোলার্ধে অধিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধ কম সৌরতাপ পায়।
২১ জুন সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার ঠিক উপরে লম্বভাবে ৯০০ কোণে এবং দক্ষিণে কর্কটক্রান্তি রেখার ওপরে সবচেয়ে হেলে ৪৩০ কোণে কিরণ বা আলো দেয়। তাই ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন সবচেয়ে বড় অর্থাৎ ১৪ ঘণ্টা এবং রাত্রি সবচেয়ে ছোট অর্থাৎ ১০ ঘণ্টা হয়ে থাকে। ফলে ঐদিন উত্তর গোলার্ধে সর্বাপেক্ষা অধিক এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সর্বাপেক্ষা কম সৌরতাপ গ্রহণ করে। ২২ ডিসেম্বর সূর্যের দক্ষিণায়ন্ত দিনে এর বিপরীত অবস্থা হয়।[1]
মেঘলা রাত্রি মেঘহীন রাত্রি অপেক্ষা অধিকতর গরম হবার কারণ - মেঘহীন রাত্রির বায়ু শুষ্ক এবং মেঘলা রাত্রির বায়ু অপেক্ষাকৃত আর্দ্র থাকে। আর্দ্র বায়ু, শুষ্ক বায়ু অপেক্ষা অধিক তাপ শোষণ করতে পারে। দিবাভাগে ভূ-পৃষ্ঠ তাপ শোষণ করে এবং রাত্রিকালে বায়ুমণ্ডল শীতল হলে ভূ-পৃষ্ঠ এ তাপ বিকিরণ করে। মেঘলা রাত্রির আর্দ্র বায়ু সে তাপ শোষণ করে এবং উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। মেঘলা রাতে ভূ-পৃষ্ঠের বিকীর্ণ তাপ মেঘের মধ্য দিয়ে ঊর্ধ্বাকাশে যেতে পারে না। উপরন্তু, এ বিকীর্ণ তাপ মেঘে প্রতিফলিত হয়ে ভূ-পৃষ্ঠে ফিরে আসে।
পক্ষান্তরে, মেঘহীন রাত্রিতে ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ বাইরে চলে যায় এবং ভূ-পৃষ্ঠ শীতল হয়।
সূর্যের আলো পৃথিবীতে শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। আশ্চর্য্যজনকভাব তা জীব-জগতের প্রত্যেকটি স্তরের আচরণে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। কিছু প্রাণী রাতে ঘুমানোর আয়োজন করে। অন্যদিকে কিছু কিছু কীট-পতঙ্গ যেমন ঝিঁ ঝিঁ পোকা এ সময়ে বেশ সক্রিয় হয়ে একনাগারে ডাকতে থাকে কিংবা জোনাকী পোকা আলো জ্বালায় ব্যস্ত থাকে। নৈশ প্রাণীগুলোও শিকারের সন্ধানে বের হয়। খাদ্য সংগ্রহ করে জীবনধারণ করে কিংবা অনেক সময় তারা নিজেরাই অন্যের শিকারে পরিণত হয়।
শুধুমাত্র জীব-জগতের মধ্যেই দিন-রাতের প্রতিফলন ও প্রভাব বিস্তার সীমাবদ্ধ নেই। উদ্ভিদজগতের মাঝেও এর প্রভাব সবিশেষ লক্ষণীয়।
শিল্প বিপ্লবের পর কৃত্রিম আলো বিশেষ করে বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার ও উন্নয়নের ফলে রাতে কাজ-কর্মের পরিধিও বৃদ্ধি পায়। অনেক স্থানেই বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানে রাতের বেলায় কৃত্রিম আলো প্রজ্জ্বলন করায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স্থায়ী স্থাপনা বিশেষ করে নাইটক্লাব, বার, ফাস্ট-ফুডের দোকান, গ্যাস স্টেশন, পুলিশ স্টেশন ২৪ ঘণ্টা ধরেই চালু থাকছে। অথবা, ১টা, ২টা কিংবা আরো গভীর রাত পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে।
এমনকি কৃত্রিম আলো ছাড়াই শুধুমাত্র চন্দ্র কিরণের উপর নির্ভর করে দূরে ভ্রমণ অথবা বাড়ীর বাইরেও রাতে কাজ করা হয়ে থাকে।
ঊনবিংশ শতকে পিটার নিকোলাই আর্বো কর্তৃক অঙ্কিত চিত্রকর্মে দেখা যায় যে, নর্স পৌরাণীক কাহিনী মোতাবেক নট রাতের দেবী হিসেবে তার ঘোড়া নিয়ে পরিভ্রমণ করে থাকেন।
রাত প্রায় সময়েই বিপদ এবং ভৌতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। কারণ, অজানা আতঙ্কে মানসিক সম্পর্কের ফলে ভয় অন্ধকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানা যায়। মানবজাতি কয়েক মিলিয়ন বছর ধরেই দিনের আলোয় বহুবিধ কাজ-কর্মের সাথে জড়িত রয়েছে।
রাতের সময়টুকু প্রকৃতিগতভাবে মানুষ নিজ শরীর রক্ষাকল্পে বিপদ থেকে দূরে থাকার প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। অপরাধী, প্রাণী এবং অন্যান্য বিপদজ্জনক কর্মকাণ্ডগুলোর অধিকাংশই রাতের অন্ধকারে হয়ে থাকে। এছাড়াও মানবজীবনের উত্তরণ ও সংস্কৃতিতে মধ্যরাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিশ্বাস করা হয় যে, জাদুবিদ্যা প্রায়শঃই রাতে অধিক কার্যকরী হয়ে থাকে। মধ্যরাতেই অধিকাংশ আধ্যাত্ম্যিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। অনুরূপভাবে পৌরাণীকি ও উপ-কথায় ভ্যাম্পায়ার রাতেই অধিক বাইরে বের হয়ে রক্তশোষণ করে বলে মনে করা হয়। ভূত-প্রেতও রাতের সময়েই সচরাচর বের হয়। সকল ধরনের ধর্ম, সংস্কৃতি, বই-পুস্তক এবং উপকথায় রাতের সময়কে সর্বাধিক বিপজ্জনক সময় বলে সকলকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
সাহিত্যকর্মেও রাত এবং অল্প-আলোককে ঐতিহাসিকভাবেই অমঙ্গলের প্রতিমূর্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.