রঘুনাথ দাস গোস্বামী (১৪৯৪-১৫৮৬) বা ওরফে দাস গোস্বামী চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণীপ্রচারক শ্রী যদুনন্দন-আচার্যের শিষ্য ছিলেন (দেখুন বিলাপ কুসুমাঞ্জলির শ্লোক ৪, চৈতন্য-চরিতামৃত-আদিলীলা অধ্যায় ১২, অন্ত্যলীলা ৬ অধ্যায়)। রঘুনাথ দাস গোস্বামী সম্মিলিতভাবে বৃন্দাবনের ছয় গোস্বামী নামে পরিচিত বৈষ্ণবগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন। ষড়গোস্বামী একসাথে দার্শনিক রচনা এবং রেকর্ড স্থাপন করেন যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ঐতিহ্যের ধর্মতাত্ত্বিক ভিত্তি হয়ে ওঠে। ছয়জনের মধ্যে, রঘুনাথ দাস তার সরলতা এবং ত্যাগের জন্য বিখ্যাত ছিলেন।

দ্রুত তথ্য শ্রীলরঘুনাথ দাস গোস্বামী গোস্বামী, ব্যক্তিগত তথ্য ...
শ্রীল

রঘুনাথ দাস গোস্বামী

গোস্বামী
রঘুনাথ দাস গোস্বামী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৪৯৪
কৃষ্ণপুর, হুগলী জেলা, বর্তমান পশ্চিম বঙ্গ [1]
মৃত্যু১৫৮৬
ধর্মহিন্দুধর্ম
জাতীয়তাভারতীয়
আখ্যাবৈষ্ণবধর্ম
বংশব্রাহ্ম-মাধ্ব-গৌড়ীয়
সম্প্রদায়গৌড়ীয় বৈষ্ণববাদ
যে জন্য পরিচিতগৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের সারসংগ্রহ
দর্শনঅচিন্ত্য ভেদ অভেদ
ধর্মীয় জীবন
গুরুনিত্যানন্দ
ভিত্তিকবৃন্দাবন, ভারত
সম্মানবৃন্দাবনের ষড় গোস্বামী
বন্ধ

পটভূমি

বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সপ্তগ্রামের [2] ধনী জমিদান গোবর্ধন দাসের পুত্র হিসাবে রঘুনাথ জন্মগ্রহণ করেন। রঘুনাথ দাস স্বাভাবিক ভোগ,সুখ, আনন্দের প্রতি বিশেষ অনাগ্রহ এবং অপেক্ষাকৃত অল্প বয়স থেকেই বেশি ধর্মীয় সাধনার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন বলে জানা যায়। রঘুনাথের এই বৈরাগ্য তার পিতামাতার অসন্তোষের কারণ হয়েছিল। রঘুনাথ দাস আধ্যাত্মিক জীবন যাপনের লক্ষ্যে গৃহ ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পিতামাতা তাকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে রক্ষী নিয়োগ করে। অবশেষে রঘুনাথ দাস তার বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং জগন্নাথ পুরীতে যাত্রা করেন। সেখানে তিনি তার গুরু চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে দেখা করেন।

পানিহাটি চিড়া দধি উৎসব

রঘুনাথ দাস গোস্বামী যে একটি প্রধান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন তা হল পানিহাটির চিড়া-দধি উৎসব। বলদেবের অবতার ভগবান নিতাইচাঁদ এবং তার সহযোগীদের সাথে দেখা করতে রঘুনাথ পানিহাটিতে গিয়েছিলেন। নিতাই তাকে সেখানে উপস্থিত সমস্ত ভক্তদের চিড়া-দধি (চিড়ার সাথে মিশ্রিত দই) খাওয়াতে অনুরোধ করেছিলেন। রঘুনাথ আশেপাশের গ্রাম থেকে উপকরণের ব্যবস্থা করে এবং তার সহযোগীদের সাহায্যে দুই ধরনের চিড়া-দধি প্রস্তুত করেন। একটিতে দই, চিনি এবং কলার সাথে মিশ্রিত চিড়া ছিল; এবং অন্যটিতে ছিল মাখন, চিনি, ঘি এবং ভোজ্য কর্পূরের সাথে মিশ্রিত চিড়া।

তারপর প্রস্তুত চিড়া-দধি পরিবেশন করা হয়, এবং সবাই তা উপভোগ করেছিল।[3]

সংযমী জীবনধারা

কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী রচিত চৈতন্য চরিতামৃতের বিবরণ অনুসারে, রঘুনাথ দাস চরম ভক্তিমূলক অনুশীলনের জীবনযাপন করেছিলেন। তিনি দিনে চব্বিশের মধ্যে বাইশ ঘণ্টার বেশি সময় কাটাতেন হরে কৃষ্ণ মহা মন্ত্র উচ্চারণ করে, এবং স্বল্প পরিমাণে আহার করতেন, দেড় ঘণ্টা বা কোন দিন তারও কম সময় ঘুমাতেন। তার বস্ত্র ছিল সাধারণ ছিন্ন কাপড় এবং একটি জোড়াতালি দেওয়া উত্তরীয়।

এই প্রসঙ্গে রঘুনাথ দাস বলেছেন:

"যদি কারো হৃদয় নিখুঁত জ্ঞান দ্বারা পরিশুদ্ধ হয় এবং কেউ পরম ব্রহ্ম কৃষ্ণকে উপলব্ধি করে, তবে সে সমস্ত কিছু লাভ করে। কেন এমন ব্যক্তি তার জড় দেহ বজায় রাখার জন্য খুব সতর্কতার সাথে চেষ্টা করে একজন পাপীর মতো কাজ করবে?"

রঘুনাথ দাস গোস্বামী জগন্নাথ পুরীতে ষোল বছর চৈতন্য মহাপ্রভুর সেবা করেছিলেন। এর পরে তিনি বৃন্দাবনে যান ১৫৪৩-৪৪ সালে [2] যেখানে তিনি রাধা-কুণ্ড নামে পরিচিত এক পবিত্র হ্রদে বহু বছর বাস করেন। তাঁর ভজন-কুটির বা উপাসনার স্থান আজও সেখানে বিদ্যমান এবং বহু তীর্থযাত্রী সেখানে গিয়ে থাকেন।

প্রধান কৃতিত্ব

  • অভীষ্ট-সূচনা
  • চৈতন্যাষ্টক (স্তবাবলী)
  • দান-কেলি-চিন্তামণি
  • দান-নির্বর্তন-কুন্ডাষ্টক
  • গোপাল-রাজ-স্তোত্র
  • গোবর্ধন-বাস-প্রার্থনা-দশক
  • গোবর্ধনচশ্রয়-দশক
  • গ্রন্থকর্তুঃ প্রার্থনা
  • হরিনামার্থ-রত্ন-দীপিকা
  • মদন-গোপাল-স্তোত্র
  • মনঃ-শিক্ষা
  • মুক্তা-চরিত
  • মুকুন্দাষ্টক
  • নব-যুব-দ্বন্দ্ব-দিদৃক্ষাষ্টক
  • নবাষ্টক
  • প্রার্থনামৃত
  • প্রার্থনাশ্রয়-চতুর্দশক
  • প্রেম-পুরবিধ-স্তোত্র
  • প্রেমাম্ভোজ-মরন্ড
  • রাধা-কৃষ্ণ-উজ্জ্বল-কুসুম-কেলি
  • রাধা-কুণ্ডাষ্টক
  • রাধিকাষ্টক (স্তবাবলী)
  • রাধিকাষ্টোত্তর-শত-নাম-স্তোত্র
  • রঘুনাথ-দাস-গোস্বামীনাঃ প্রার্থনা
  • স্তবাবলী
  • স্ব-নিয়ম-দশক
  • স্ব-সংকল্প-প্রকাশ-স্তোত্র
  • উৎকণ্ঠা-দশক
  • বিলাপ-কুসুমাঞ্জলি
  • ব্রজ-বিলাস-স্তব

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

বহিঃসংযোগ

Wikiwand in your browser!

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.

Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.

Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.