Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মোরগের লড়াই, মুর্গার লড়াই বা মুরগীর লড়াই এক ধরনের রক্তাক্ত ক্রীড়া যাতে দুই বা ততোধিক মোরগজাতীয় প্রাণী বৃত্তাকার ককপিটে অংশগ্রহণ করে। সেলক্ষ্যে এজাতীয় মুরগী লালন-পালন, পরিচর্যা ও প্রশিক্ষণ প্রদান করে ক্রীড়া উপযোগী করে তোলা হয়। সাধারণতঃ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মোরগ নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে একে-অপরের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত লড়াইয়ের ন্যায় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। শক্ত ঠোঁট ও নখের সাহায্যে এ লড়াই চলে। যে-কোন একটি মোরগের মৃত্যুবরণ কিংবা লড়াইয়ে অপারগতা প্রকাশ করার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় সমাপ্তি ঘটে। এ লড়াইয়ে বাজী ধরা অন্যতম ক্রীড়া অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
গেমকক বা মোরগের লড়াইয়ের কথা ১৬৪৬ সালে প্রথম প্রামাণ্য দলিলে মোরগকে খেলাধুলা, ক্রীড়া, অবসর কিংবা বিনোদনের প্রধান ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।[1] এর পূর্বেই অবশ্য জর্জ উইলসন ১৬০৭ সালে তাঁর দ্য কমেন্ডেশন অব কক্স অ্যান্ড কক ফাইটিং গ্রন্থে খেলাধুলায় মোরগ নামে ব্যবহার করেন।
সকল ধরনের পুরুষ মুরগীর একই প্রজাতির মধ্যে লড়াইয়ে প্রবৃত্তির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয় তার জন্মের শুরু থেকেই। দুই বছর পর্যন্ত মোরগটির প্রতি সেরা যত্ন নেয়া হয়। পেশাদার ক্রীড়াবিদদের ন্যায় লড়াইয়ের পূর্ব পর্যন্ত এ সেবা মোরগ মালিক দিয়ে থাকেন। তবে, প্রাণী কল্যাণ এবং প্রাণী অধিকার কর্মীরাসহ অনেকেই মোরগের লড়াইকে রক্তাক্ত ক্রীড়া হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।[2]
মোরগের লড়াইকে বিশ্বের প্রাচীনতম দর্শকদের ক্রীড়া হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন পারস্যে এ ক্রীড়ার উদ্ভব হয়েছিল বলে ধরানা করা হয়।[3] অন্য একজন লেখকের মতে, সিন্ধু সভ্যতায় অবসরকালীন ক্রীড়া হিসেবে জনগণ সম্পৃক্ত থাকতেন।[4]
খুব সম্ভবতঃ ভারতীয় লাল বনমোরগ ব্যবহারের মাধ্যমে এ খেলার ব্যুৎপত্তি ঘটেছে যা পরবর্তীকালে সকল ধরনের গৃহপালিত মোরগকে এ লড়াইয়ে জড়িত করা হয়। ধারণা করা হয় যে, ভারত, প্রাচীন পারস্য, চীনসহ অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় দেশে এ খেলা ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর খ্রীষ্ট-পূর্ব ৫২৪-৪৬০ সালে গ্রীসে প্রবেশ করে। এরপর তা এশিয়া মাইনর ও সিসিলির মাধ্যমে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে যায়। রোমেও গ্রীসে প্রচলিত মোরগের লড়াইয়ের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রোম থেকে তা উত্তরাঞ্চলের দিকে প্রচলিত হয়। খ্রীষ্টীয় ধর্মগুরুগণ এ উন্মত্ত লড়াইয়ের বিরোধিতা করলেও ইতালি, জার্মানি, স্পেন ও এদেশগুলোর উপনিবেশসমূহে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডেও একই দৃশ্য প্রবাহিত হয়। মাঝেমধ্যেই কর্তৃপক্ষ মোরগের লড়াইকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন। ইংল্যান্ডে ষোড়শ শতকের শুরু থেকে ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত রাজন্যবর্গ ও উচ্চ পদবীধারী ব্যক্তিদের কাছে এ প্রতিযোগিতা বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
বিশ্বের অনেক দেশেই মোরগের লড়াইসহ অন্যান্য প্রাণীদেরকে নিয়ে লড়াই আইন-বহির্ভূত বিষয় হিসেবে বিবেচিত। তারপরও জুয়া খেলা এবং প্রাণীদের রক্তাক্ততার দৃশ্য অবলোকনের জন্যে এ জাতীয় ক্রীড়ানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলোয় এর বিস্তৃতি ঘটলেও কানাডা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ অঙ্গরাজ্যে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা একটি নিষিদ্ধ ব্যাপার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৮৩৬ সালে ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে আইনের মাধ্যমে প্রাণীদের নিয়ে এ নৃশংসতা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী এলাকা এবং দক্ষিণাংশে এ ক্রীড়া জনপ্রিয়তা পায়। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক অব কলম্বিয়ায় এ জাতীয় ক্রীড়া প্রদর্শন নিষিদ্ধ। সর্বশেষ লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের সংসদ জুন, ২০০৭ সালে ভোটের মাধ্যমে এ ক্রীড়া বন্ধের অনুমোদন দেয়।[5] এ নিষিদ্ধতা আগস্ট, ২০০৮ থেকে কার্যকরী হয়।[6] প্রাণীকে সম্পৃক্ত করে ক্রীড়ার এরূপ অমানবিক দৃশ্যকে উপস্থাপনাকে বে-আইনি ঘোষণা করে ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ সংসদ প্রস্তাবনা আনে। তা সত্ত্বেও অদ্যাবধি এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে মোরগের লড়াই অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্রীড়ারূপে পরিচিত।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.