মাদ্রিদ
স্পেনের রাজধানী শহর / From Wikipedia, the free encyclopedia
মাদ্রিদ (স্পেনীয় ভাষায়: Madrid, আ-ধ্ব-ব: [maˈðɾið]) ইউরোপ মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমভাগের রাষ্ট্র স্পেনের রাজধানী। শহরটি স্পেনের মধ্যভাগের মাদ্রিদ নামক প্রদেশের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং একই সাথে প্রাদেশিক ও জাতীয় রাজধানী। মাদ্রিদ ও তাকে ঘিরে রাখা মাদ্রিদ প্রদেশটিকে স্পেনের একটি আংশিক-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যার নাম মাদ্রিদ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। নগরীটির ভৌগোলিক আয়তন প্রায় ৬০৪ বর্গকিলোমিটার। মূল শহরের জনসংখ্যা ৩৩ লক্ষ এবং মহানগর এলাকার জনসংখ্যা ৬৫ লক্ষ, ফলশ্রুতিতে এটি স্পেনের সবচেয়ে জনবহুল শহর। শুধু তাই নয়, মূল শহরের জনসংখ্যার বিচারে মাদ্রিদ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির মধ্যে ৩য় বৃহত্তম শহর (লন্ডন ও বার্লিনের পরে) এবং মহানগর এলাকার জনসংখ্যার বিচারেও এটি অঞ্চলটির ৩য় বৃহত্তম শহর (লন্ডন ও প্যারিসের পরে)। মাদ্রিদে স্পেনের রাজার বাসভবন ও কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয়সমূহ অবস্থিত; ফলে এটি স্পেনের রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। হোসে লুইস মার্তিনেস-আলমেইদা মাদ্রিদ নগরীর বর্তমান নগরপাল।
মাদ্রিদ | |
---|---|
স্পেনের অবস্থান##ইউরোপের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ৪০°২৩′ উত্তর ৩°৪৩′ পশ্চিম | |
দেশ | স্পেন |
অঞ্চল | মাদ্রিদ সম্প্রদায় |
Founded | IX Century[1] |
সরকার | |
• ধরন | Mayor-council |
• শাসক | Ayuntamiento de Madrid |
• Mayor | Manuela Carmena Castrillo (Ahora Madrid) |
আয়তন | |
• স্থলভাগ | ৬০৭ বর্গকিমি (২৩৪ বর্গমাইল) |
• মহানগর | ১০,৫০৬ বর্গকিমি (৪,০৫৭ বর্গমাইল) |
উচ্চতা | ৬৬৭ মিটার (২,১৮৮ ফুট) |
জনসংখ্যা (2010) | |
• শহর | ৩২,৭৩,০৪৯ |
• ক্রম | 1st |
• জনঘনত্ব | ৫,৪০৩/বর্গকিমি (১৩,৯৯০/বর্গমাইল) |
• মহানগর | ৬৪,৫৮,৬৮৪ |
বিশেষণ | Madrilenian madrileño (m) madrileña (f) matritense |
সময় অঞ্চল | সিইট (ইউটিসি+১) |
• গ্রীষ্মকালীন (দিসস) | সিইসিট (ইউটিসি+২) |
Postal code | 28001–28080 |
এলাকা কোড | 34 (Spain) + 91 (Madrid) |
Patron Saints | Isidore the Laborer Virgin of Almudena |
ওয়েবসাইট | www.munimadrid.es |
মাদ্রিদ শহরটি ইবেরীয় উপদ্বীপের কেন্দ্রীয় মালভূমি “মেসেতা সেন্ত্রাল”-এর উপরে সমুদ্র সমতল থেকে ৬৩৫ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত; তাই এটি ইউরোপের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত রাজধানীগুলির একটি। শহরটি পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে মানসানারেস নদী দ্বারা বেষ্টিত। শহরের উত্তরে পাইন বৃক্ষে আবৃত গুয়াদাররামা পর্বতশ্রেণী অবস্থিত।
মাদ্রিদে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত বহু ভবন থাকলেও শহরটি তার বিভিন্ন ঐতিহাসিক এলাকা ও সড়কগুলির অবয়ব ও সামগ্রিক অনুভূতি আজও ধরে রেখেছে। পুয়ের্তা দেল সোল (Puerta del Sol, "সূর্যের প্রবেশদ্বার") নামক চত্বর বা “প্লাসা”টি মাদ্রিদের হৃৎকেন্দ্র। এই চত্বরটি থেকে শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলি চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। পুয়ের্তা দেল সোল চত্বরের কাছেই মাদ্রিদের প্রাচীন এলাকাটি অবস্থিত। পুরাতন মাদ্রিদ এলাকাটি বহু সরু অলিগলি ও ছোট-বড় চত্বরে পূর্ণ। এখানে অনেক রাজকীয় প্রাসাদ, গির্জা, মঠ ও সরকারী ভবন আছে, যেগুলির বয়স ৪ শত বছরেরও বেশি (১৬শ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত)। এগুলি সব ১৭শ শতকের প্রারম্ভে নির্মিত প্লাসা মাইয়োর (Plaza Mayor) নামক চত্বরটিকে কেন্দ্র করে ঘিরে আছে। ১৬শ শতকের পূর্বে নির্মিত ভবনগুলির খুবই কমই এখনও টিকে আছে। মাদ্রিদে ৪০টিরও বেশি নগর উদ্যান ও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত সরকারি বাগিচা আছে। প্রাক্তন রাজপ্রাসাদ এলাকাতে নির্মিত বুয়েন রেতিরো (Buen Retiro) নামক উদ্যানটি মাদ্রিদের বৃহত্তম উদ্যান। মাদ্রিদের উদ্ভিদবিদ্যা উদ্যানে ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ আছে।
মাদ্রিদের প্রাদো জাদুঘরে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ চিত্রকলা প্রদর্শনীগুলির একটি অবস্থিত। প্রাদো জাদুঘরে চিত্রশিল্পী এল গ্রেকো, দিয়েগো বেলাসকেস এবং ফ্রান্সিসকো দে গোইয়া-র চিত্রকর্মগুলির সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ সংগ্রহগুলি অবস্থিত। এছাড়া রেইনা সোফিয়া জাদুঘরে আধুনিক শিল্পকলার সংগ্রহ এবং তিসেন-বোর্নেমিসা জাদুঘরে অন্যান্য সম্পূরক শিল্পকর্মের সংগ্রহ আছে। উপর্যুক্ত তিনটি প্রধান জাদুঘরই পাসেও দেল প্রাদো নামক সড়কের কাছে অবস্থিত, ফলে এগুলিকে একত্রে "শিল্পকলার স্বর্ণালী ত্রিভুজ" ডাকনাম দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও স্পেনের জাতীয় পুরাতাত্ত্বিক জাদুঘর এবং মঞ্চনাটক, রেলপথ ও ষাঁড়ের সাথে লড়াইয়ের উপরে জাদুঘরসহ বেশ কিছু শিল্পকলা সংগ্রহ ও জাদুঘর আছে এই শহরে। জাতীয় প্রাসাদ ভবনে যোদ্ধাদের বর্ম ও তরবারির একটি বিশ্বসেরা সংগ্রহ আছে। নব্য-ধ্রুপদী ঘরানায় নির্মিত প্লাসা সিবেলেস (Plaza Cibeles) চত্বর ও এর ফোয়ারাটিকে মাদ্রিদের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। মাদ্রিদে প্রতি বছর পোষাকশৈলী সপ্তাহ উদ্যাপন করা হয়, যা বিশ্বখ্যাত।
মাদ্রিদ স্পেনের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান কেন্দ্র। এখানে স্পেনের বেশ কিছু সেরা বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, বিখ্যাত ও মর্যাদাবাহী হল ১৩শ শতকে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রিদ কোমপ্লুতেনসে বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে ৮৬ হাজার ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করে। মাদ্রিদে বহু গ্রন্থাগার আছে, যাদের মধ্যে স্পেনের জাতীয় গ্রন্থাগার ও স্পেনের রাজপ্রাসাদের গ্রন্থাগার দুইটি উল্লেখযোগ্য। মাদ্রিদে স্পেনীয় ভাষাভাষী বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রকাশনা শিল্পগুলির একটি অবস্থিত। এখানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্পেনীয় ভাষাকে প্রচারকারী ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলির প্রধান কার্যালয়গুলিও অবস্থিত, যাদের মধ্যে রাজকীয় স্পেনীয় ভাষা অ্যাকাডেমি ও সের্ভান্তেস ইন্সটিটিউটের নাম উল্লেখ করার মত।
মাদ্রিদ স্পেনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও শিল্পকেন্দ্র। বার্সেলোনা শহরের পরে মাদ্রিদ স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিল্পশহর। স্পেনের বৃহত্তম সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধান কার্যালয় মাদ্রিদে অবস্থিত, যাদের মধ্যে তেলেফোনিকা, আইএজি ও রেপসলের নাম উল্লেখযোগ্য। এখানে মোটরযান নির্মাণ ও বিমান নির্মাণের কারখানা আছে। এছাড়া এখানে বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম, আলোকীয় সরঞ্জাম, প্লাস্টিক ও রবার উৎপাদন করা হয়। এটি স্পেনের ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থার কেন্দ্র। মাদ্রিদ স্পেনের আভ্যন্তরীণ প্রদেশগুলির জন্য প্রধান পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। মাদ্রিদের পর্যটন শিল্পও উল্লেখযোগ্য; এখানে বহু পর্যটক বেড়াতে আসে। এখানে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। বৃহত্তর মাদ্রিদ মহানগর এলাকাটির স্থুল অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ৩য় সর্বোচ্চ। ২০১৭ সালে মাদ্রিদ বিশ্বের সেরা ১০টি বাসযোগ্য নগরীর একটি হিসেবে মর্যাদা পায়।
খ্রিস্টীয় ১০ম শতক থেকে মাদ্রিদের উপর লিখিত ইতিহাস পাওয়া গেছে। সে সময় এখানে মাহেরিত নামের একটি শহর ছিল, যা তৎকালীন স্পেনীয়-বার্বার-মুসলমান শাসক মুরদের নির্মিত একটি আলকাসার বা প্রাসাদকে ঘিরে মানসানারেস নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল। কাস্তিলে ও লেওনের খ্রিস্টান রাজা ৬ষ্ঠ আলফোনসো মুসলমানদের কাছ থেকে ১০৮৩ সালে শহরটি দখল করেন। ১৫৬১ সালে স্পেনের রাজা ২য় ফিলিপ স্পেনের রাজদরবার মাদ্রিদে স্থানান্তরিত করেন এবং ১৬০৭ সালে রাজা ৩য় ফিলিপ মাদ্রিদকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পেনের স্থায়ী রাজধানীর মর্যাদা দেন। ১৯শ শতকের শুরুতে নেপোলিওনীয় যুদ্ধসমূহের সময় ফরাসি সেনারা শহরটি নিয়ন্ত্রণ করত। ১৮০৮ সালের ২রা মে মাদ্রিদের অধিবাসীরা ফরাসি সেনাদের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। পরে ১৮১২ সালে এটিকে স্পেনের নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৩৬-১৯৩৯) প্রজাতন্ত্রপন্থীরা মাদ্রিদ দখল করে রেখেছিল; সেসময় শহরটিতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ হয়। ১৯৫০-এর দশক ও ১৯৬০-এর দশকে শহরটি ব্যাপক বিস্তার লাভ করে।