Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের প্রস্তাবিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির তালিকা দেওয়া হল। বর্তমানে ভারতে ২৮টি রাজ্য ও নয়টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আছে। এগুলি বিভাজিত করেই প্রস্তাবিত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।[1] ভারতের সংবিধান অনুসারে, একমাত্র সংসদই নতুন রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠন করতে পারে। দুটি রাজ্যকে সংযুক্ত করে বা একটি রাজ্যকে বিভাজিত করে অথবা এক বা একাধিক রাজ্যের কিছু অঞ্চল পৃথক করে নতুন রাজ্য গঠন করা যায়।[2]
স্বাধীনতার আগে ভারত একাধিক ব্রিটিশ-শাসিত প্রদেশ ও নামমাত্র স্বায়ত্ত্বশাসিত দেশীয় রাজ্যে বিভক্ত ছিল। দেশীয় রাজ্যগুলিও ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শক্রমে শাসিত হত। ভারত বিভাগের পর এই প্রশাসনিক বিভাগগুলির কয়েকটি পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। অবশিষ্ট প্রদেশ ও রাজ্যগুলি ভারত অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ব্রিটিশ যুগের প্রশাসনিক বিভাগগুলি ১৯৫৬ সাল অবধি বজায় ছিল। ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন পাস হলে প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলি অবলুপ্ত হয় এবং ভাষা ও জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে রাজ্য গঠিত হয়।
১৯৫৬ সালের পরও রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ভেঙে নতুন নতুন রাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৯৬০ সালের ১ মে ভাষার ভিত্তিতে বোম্বাই রাজ্যকে ভেঙে গুজরাত ও মহারাষ্ট্র রাজ্য দুটি গঠন করা হয়।[3] ১৯৬৩ সালের ১ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ড রাজ্য গঠিত হয়।[4] পাঞ্জাব রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের হিন্দিভাষী জেলাগুলিকে নিয়ে ১৯৬৬ সালে হরিয়াণা রাজ্য গঠিত হয়।[5] পাঞ্জাবের উত্তরাঞ্চলের হিন্দিভাষী জেলাগুলি হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পাঞ্জাব ও হরিয়াণার যৌথ রাজধানী হিসেবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড় গঠিত হয়।[6]
১৯৭১ সালের ২৫ জানুয়ারি হিমাচল প্রদেশ পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি পায়।[7] এই বছর মণিপুর, মেঘালয় ও ত্রিপুরাও পূর্ণ রাজ্য ঘোষিত হয়।[8] ১৯৭২ সালের ২১ জানুয়ারি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সিক্কিম ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিল তা ভারতের রাজ্যের মর্যাদা পায়।[9] ১৯৮৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অরুণাচল প্রদেশ ও মিজোরাম রাজ্য ঘোষিত হয়। ওই বছরই ৩০ মে গোয়া রাজ্য ঘোষিত হয় এবং গোয়ার উত্তরে দমন ও দিউ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষিত হয়।[10]
২০০০ সালে তিনটি নতুন রাজ্য গঠিত হয়: মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তীসগঢ় (১ নভেম্বর, ২০০০),[11] উত্তরপ্রদেশ ভেঙে উত্তরাঞ্চল (৯ নভেম্বর, ২০০০) (২০০৭ সালে এই রাজ্যের নাম বদলে হয় উত্তরাখণ্ড;[12][13] এবং বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড (১৫ নভেম্বর, ২০০০)[14]
পশ্চিম বিহার ও পূর্ব উত্তর প্রদেশের ভোজপুরি ভাষী জেলাগুলো নিয়ে একটি পৃথক ভোজপুর রাজ্যের দাবি রয়েছে।[15][16][17]
মিথিলা একটি প্রস্তাবিত রাজ্য যা বিহার ও ঝাড়খণ্ডের মৈথিলী ভাষাভাষী অঞ্চলগুলিকে নিয়ে গঠন করা হবে। রাজধানীর বিষয়ে কোনো ঐকমত্য নেই, যদিও বেগুসরাই, দরভাঙ্গা, মুজাফফরপুর ও পূর্ণিয়াকে প্রার্থী শহর হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে [18]
জাতীয় রাজধানী অঞ্চল দিল্লি হল একটি মহানগরীয় অঞ্চল। জাতীয় রাজধানী নতুন দিল্লি ও পার্শ্ববর্তী বাগপত, গুরগাঁও, সোনিপত, ফরিদাবাদ, গাজিয়াবাদ, নইডা, বৃহত্তর নইডা নিয়ে ভারতের রাজধানী।[19][20] দিল্লি একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হলেও এর প্রশাসনিক গঠনতন্ত্র অনেকটা রাজ্যের সমতুল্য। দিল্লির নিজস্ব বিধানসভা, হাইকোর্ট এবং মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন একটি মন্ত্রিসভা আছে। কেন্দ্রীয় সরকার ও দিল্লি সরকার যৌথভাবে নতুন দিল্লি শাসন করে। ২০০৩ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সংসদে একটি বিল আনে। তবে এটি পাস করা হয়নি।[21]
গোর্খাল্যান্ড (নেপালি: गोर्खाल्याण्ड) হল পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের দার্জিলিং জেলা ও ডুয়ার্সের গোর্খা (নেপালি) জাতি অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে প্রস্তাবিত একটি রাজ্য।[22] গোর্খা জাতির জাতিগত, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন শুরু হলে এই রাজ্য গঠনের দাবি জোরদার হয়।[23]
১৯০৭ সালে দার্জিলিঙের হিলমেন’স অ্যাসোশিয়েসন মর্লে-মিন্টো সংস্কার কমিটিকে একটি রিপোর্ট দিয়ে প্রথম এই অঞ্চলের জন্য একটি পৃথক প্রশাসনের দাবি জানায়।[24] ভারতের স্বাধীনতার পর অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ প্রথম রাজনৈতিক দল প্রথম জাতিসত্ত্বা ও আর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের খাতিরে গোর্খাদের জন্য আলাদা রাজ্যের দাবি জানায়। ১৯৮০ সালে দার্জিলিঙের প্রান্ত পরিষদ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি দিয়ে গোর্খাদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি জানায়।
১৯৮০-এর দশকে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলন বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই সময় সুভাষ ঘিসিঙের নেতৃত্বে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে জঙ্গি-আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের ফলে ১৯৮৮ সালে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ নামে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য অঞ্চলে একটি স্বশাসিত সংস্থা তৈরি হয়। ২০০৮ সালের পর থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু করে।[25] ২০১১ সালে মোর্চা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য পরিষদের পরিবর্তে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন নামে একটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গঠন করে।[26]
পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবি করা হয়েছে।[27] কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি আসামের গোয়ালপাড়া, দার্জিলিং, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিনদিনাজপুর, মালদা ও দার্জিলিং শিলিগুড়ি মহকুমা নিয়ে এই রাজ্য গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
কার্বি আংলং হল অসম রাজ্যের দুটি পার্বত্য জেলার একটি। এই জেলার আগেকার নাম ছিল মিকির হিলস। ব্রিটিশ আমলে এটি ছিল বহির্ভূত অঞ্চল ও আংশিক বহির্ভূত অঞ্চলের (অধুনা উত্তর-পূর্ব ভারত) অংশ। ব্রিটিশ সরকার এই অঞ্চলটিকে কখনই তাদের এক্তিয়ারভুক্ত করেনি। তাই কার্বি আংলং সহ এই অঞ্চলে কোনো সরকারি উন্নয়ন কাজ যেমন কখনও হয়নি, তেমনই এখানে কখনও করও আরোপ করা হয়নি। ১৯৪০ সালের ২৮ অক্টোবর মিকির হিলসের মোহোঙ্গদিজুয়ায় সেমসোনিং ইঙ্গতি ও খোরসিং তেরাং প্রথম কার্বি জাতির নিজস্ব বাসভূমির জন্য গভর্নর রেইডের কাছে একটি দাবি সনদ পেশ করেন।[28] তারপর ১৯৬০ সালের ৬ জুলাই কার্বি নেতারা অল পার্টি হিল লিডারস' কনফারেন্স (এপিএইচএলসি) গঠন করেন। কার্বি জাতীয় একাধিক নেতা এই দলে যোগ দেন।[29] ১৯৮১ সালে কার্বি আংলং জেলা পরিষদ পৃথক রাজ্যের জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে। ১৯৮৬ সালে অটোনমাস স্টেট ডিম্যান্ড কমিটির (এএসডিসি) মাধ্যমে সংবিধানের ২৪৪ ক ধারার অধীনে কার্বি আংলং ও ডিমা হাসাও জেলা নিয়ে স্বায়ত্ত্বশাসিত রাজ্য গঠনের দাবি জানানো হয়। ২০০২ সালে কার্বি আংলং স্বায়ত্তশাসন পরিষদ আবার পৃথক রাজ্যের জন্য একটি দাবিসনদ পাস করে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে একাধিক দাবিসদন পেশ করা হয়। ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই পৃথক রাজ্যে দাবিতে কার্বি ছাত্ররা প্রায় প্রাতিটি সরকারি ভবনে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপরই কার্বি আংলঙ্গের প্রত্যেক নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতারা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে একটি সনদ পেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।
বিদর্ভ (মারাঠি: विदर्भ) হল মহারাষ্ট্র রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের অমরাবতী ও নাগপুর বিভাগ নিয়ে গঠিত একটি অঞ্চল। ১৯৫৬ সালের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুসারে বিদর্ভ অঞ্চলটি বোম্বাই রাজ্যের অন্তর্গত হয়। এর কিছুদিন পরে রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন নাগপুরকে রাজধানী করে পৃথক বিদর্ভ রাজ্যের প্রস্তাবনা দেয়। যদিও ১৯৬০ সালের ১ মে মহারাষ্ট্র রাজ্য গঠিত হলে বিদর্ভ মহারাষ্ট্রের অন্তর্গত হয়।
লোকনায়ক বাপুজি আনে ও ব্রিজলাল বিয়ানি বিদর্ভ পৃথক বিদর্ভ রাজ্যের দাবি জানান। মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে এই অঞ্চলকে অবহেলা করারও অভিযোগ ওঠে। জাম্বুওয়ান্তরাও ধোতে ১৯৭০-এর দশকে পৃথক বিদর্ভ রাজ্যের দাবিতে একটি আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। রাজনীতিবিদ এন. কে. পি. সালভে ও বসন্ত সাথে একবিংশ শতাব্দীতে পৃথক বিদর্ভ রাজ্যের জন্য আন্দোলন করেন।
হরিৎপ্রদেশ (হিন্দি: हरित प्रदेश, উর্দু: ہرِت پردیش) পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের ২২টি জেলা নিয়ে গঠিত একটি প্রস্তাবিত রাজ্য। এই প্রস্তাবিত রাজ্যের মধ্যে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের ছয়টি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত। যথা: আগ্রা, আলিগড়, বরেলি, মিরাট, মোরাদাবাদ ও সাহারানপুর। এই রাজ্যের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য দাবিদার হলেন রাষ্ট্রীয় লোক দল নেতা অজিত সিং। ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মায়াবতী এই রাজ্যের দাবি সমর্থন করেন।
প্রস্তাবিত রাজ্যের অপর নাম হল ব্রজপ্রদেশ বা পশ্চিমাঞ্চল। উত্তরপ্রদেশের আগ্রা ও আলিগড় বিভাগ এবং রাজস্থানের ভরতপুর জেলা ও মধ্যপ্রদেশের নিয়ে ব্রজ অঞ্চলটি গঠিত। প্রস্তাবিত রাজধানী আগ্রা।[30][31] ব্রজ বর্তমানে একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অঞ্চল। এই অঞ্চলের ভাষা ব্রজ ভাষা।
প্রস্তাবিত অবধ রাজ্যটি মধ্য উত্তরপ্রদেশের অবধি ভাষী অঞ্চলটি নিয়ে গঠিত। প্রস্তাবিত এই রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৫ কোটি এবং আয়তন প্রায় ৭৫,০০০ বর্গকিলোমিটার। লখনউ এই রাজ্যের প্রস্তাবিত রাজধানী।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.