ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অসামরিক পরমাণু চুক্তি
From Wikipedia, the free encyclopedia
ভারত-মার্কিন অসামরিক পরমাণু চুক্তি (ইংরেজি: Indo-U.S. civilian nuclear agreement বা Indo-U.S. nuclear deal) ভারতীয় প্রজাতন্ত্র ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সাক্ষরিত একটি দ্বিপাক্ষিক অসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা সম্মতিপত্র। মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই চুক্তির রূপরেখা রচনা করেন। এই চুক্তি অনুযায়ী ভারত তার সামরিক ও অসামরিক পারমাণবিক দ্রবসম্ভারের পৃথকীকরণ ও অসামরিক পারমাণবিক দ্রব্যসম্ভার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর নিরাপত্তায় স্থাপন করতে সম্মত হয়; বিনিময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ভারতকে সম্পূর্ণ অসামরিক পারমাণবিক সহায়তাদানে সম্মত হয়।[1] এই ভারত-মার্কিন চুক্তিটি রূপায়িত হতে তিন বছরেরও অধিক সময় লাগে; কারণ এটিকে বিভিন্ন বাধা ও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতিগুলির মধ্যে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইনের সংশোধন, ভারতে সামরিক-অসামরিক পরমাণু পৃথকীকরণ পরিকল্পনা, একটি ভারত-আইএইএ নিরাপত্তা (পরিদর্শনমূলক) চুক্তি, এবং পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী কর্তৃক ভারতের জন্য একটি কর ছাড় মঞ্জুরি। উল্লেখ্য, এই সংস্থাটি ১৯৭৪ সালে ভারতের প্রথম পারমাণবিক অস্ত্রপরীক্ষার প্রেক্ষিতে স্থাপিত হয়। সর্বোচ্চ স্তরে, যেসকল দ্রব্যসম্ভারকে ভারত অসামরিক হিসেবে চিহ্নিত করে তা চুক্তির চিরস্থায়ী নিরাপত্তার অধীনে রাখা হয় এবং বিস্তারিত অসামরিক পরমাণু সহযোগিতার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। স্পর্শকাতর যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিকে এই চুক্তির আওতার বাইরে রাখা হয় এবং অসামরিক সমৃদ্ধিকরণ ও প্রক্রিয়াকরণের উপাদানগুলি আইএইএ-এর নিরাপত্তাধীন করা হয়। আইএইএ-এর বোর্ড অফ গভর্নরস ২০০৮ সালের ১৮ অগস্ট এটি অনুমোদন করেন[2], এবং ২০০৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারত আইএইএ-এর সঙ্গে একটি ভারত-বিশেষায়িত নিরাপত্তা চুক্তি সাক্ষর করে।[3] ভারত এই চুক্তি কার্যকর করলেই পৃথকীকরণ পরিকল্পনা অনুযায়ী ভারতের ৩৫টি অসামরিক পরমাণু প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের কাজ শুরু হয়।[4]
মার্কিন কংগ্রেসে দুবার চুক্তিটিকে বাধার সম্মুখিন হতে হয়। প্রথম বার, ২০০৬ সালের শেষদিকে যখন হাইড অ্যাক্ট পাস হয় এবং শেষবার, ২০০৮ সালের অক্টোবরে সর্বশেষ চুক্তি-সংক্রান্ত প্যাকেজ রূপায়নে মার্কিন অভ্যন্তরীণ আইন সংশোধনের সময়। মনমোহন সিংহ ভারতীয় সংসদকে এই চুক্তিটির পর্যবেক্ষণ থেকে নিরত করেন। চুক্তিটি ভারতে অভ্যন্তরীণ জটিল পরিস্থিতির জন্ম দেয়। বামপন্থীরা চুক্তির বিরোধিতা করলে সরকার অন্যান্য আঞ্চলিক দলের সাহায্যে ২০০৮ সালের জুলাই মাসে আস্থাভোটে জয়ী হয়।
২০০৮ সালের ১ অগস্ট আইএইএ ভারতের সঙ্গে নিরাপত্তা চুক্তিতে ঐকমত্যে সম্মতি জানায়।[5] এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী (এনএসজি)-এর কাছে ভারতকে অসামরিক পরমাণু বাণিজ্য শুরু করার ছাড়পত্র দিতে বলে।[6] ২০০৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ৪৫-রাষ্ট্রের এনএসজি ভারতকে অসামরিক পরমাণু প্রযুক্তি ও জ্বালানি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করার ছাড়পত্র দেয়।[7] এই অনুমতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি-এর অংশ নয় অথচ বহির্বিশ্বের সঙ্গে পরমাণু বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অধিকারী এমন একমাত্র পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয়।[8]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ২০০৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বিলটি পাস করে।[9] দুদিন বাদে ভারত ও ফ্রান্স একই প্রকারের আরেকটি পরমাণু চুক্তি সাক্ষর করে। ভারতের সঙ্গে এইরূপ চুক্তিসম্পাদনকারী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে ফ্রান্সই প্রথম।[10] ২০০৮ সালের ১ অক্টোবর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেনেট অসামরিক পরমাণু চুক্তিটি অনুমোদন করে ভারতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরমাণু জ্বালানি ও প্রযুক্তি ক্রয়ের ছাড়পত্র দান করে।[11][12] ২০০৮ সালের ৮ অক্টোবর মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ লেজিশলেশনে সই করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তিটিকে আইনে পরিণত করেন এবং এটি পরিচিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভারত পরমাণু সহযোগিতা অনুমোদন ও অস্ত্রনিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি আইন (ইংরেজি: United States-India Nuclear Cooperation Approval and Non-proliferation Enhancement Act) নামে।[13] ১০ অক্টোবর ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ও মার্কিন বিদেশসচিব কন্ডোলিজা রাইস এই চুক্তিপত্রে সাক্ষর করেন।[14][15]