Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বুকজ্বালা বা হার্টবার্ন (ইংরেজি: heartburn) যাকে এসিডের বদহজমও বলা যায়,[2] তা হলো বুকের মাঝখানে বা এপিগ্যাস্ট্রিয়াম বা পেটের মাঝ বরাবর উপরের দিকে জ্বালার অনুভূতি [3][4][5] ব্যথা প্রথমে বুকে আরম্ভ হয়ে ঘাড়, গলা বা চিবুক বা থুতনিতে পৌছে যেতে পারে। হার্টবার্ন এর সাথে গ্যাস্ট্রিক এসিড উদগিরণের (gastric reflux) সম্পর্ক আছে যা গ্যাস্ট্রইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) এর প্রধান লক্ষণ। [6] যা ০.৬% বুকজ্বালা রোগীর ক্ষেত্রে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ এর অন্যতম লক্ষণ হতে পারে। [7] মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪২% ব্যক্তি বুকজ্বালার সমস্যায় ভুগে। [8]
বুকজ্বালা | |
---|---|
প্রতিশব্দ | pyrosis,[1] cardialgia |
বুকজ্বালার সাথে অন্যান্য কিছু লক্ষণকে একসাথে বদহজম নামে অভিহিত করা হয়, যেমন বুকজ্বালা ও এপিগ্যাস্ট্রিয়ামে ব্যথা ইত্যাদি। [9][10] হার্টবার্ন এরই আরেক নাম গ্যাস্ট্রইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ। [11]
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা হার্ট অ্যাটাক এর লক্ষণ ও ইসোফ্যাগাস বা খাদ্যনালীর রোগের লক্ষণসমুহের মধ্যে খুব মিল রয়েছে কারণ হার্ট ও ইসোফ্যাগাসের নার্ভ সাপ্লাই একই। [7] বুক ব্যথার ক্ষেত্রে তাই সর্বদা কার্ডিয়াক ডিজিজের কথাও চিন্তা করা উচিত। হার্টের অসুখের জন্য বুক ব্যথা ও খাদ্যনালীয় বুক ব্যথার মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন, প্রায়শই ল্যাব পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।
মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন বা অ্যাঞ্জাইনার রোগীদের হার্টবার্ন বা বুকজ্বালা হতে পারে। বুকজ্বালা উপসর্গটি অ্যাকিউট করোনারি সিনড্রোম এর ঝুঁকি কিছুটা বাড়ালেও তা খুব বেশি তাৎপর্য বহন করে না। [12][13] যত রোগী হাসপাতালে বুকজ্বালা সমস্যা নিয়ে আসে তার মধ্যে ০.৬% ক্ষেত্রে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ পাওয়া যায়। [7]
গবেষণায় দেখা গেছে যেসকল বুকব্যথার রোগীদের কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন করা হয়েছে তার প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে বুক ব্যথার গ্রহণযোগ্য কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি, এক্ষেত্রে এটাকে অ্যাটিপিক্যাল চেস্ট পেইন বলে যার উৎস অজানা। [14]
এটাই বুকজ্বালার সবচেয়ে বড় কারণ। এই রোগে এসিড উদগিরণ হয়ে খাদ্যনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। [4]
বুকজ্বালার কোন কারণ উদ্ঘাটন করা না গেলে সেটাকে ফাংশনাল হার্টবার্ন হিসাবে অভিহিত করা হয়। [15] এটা পেটের অন্যান্য ফাংশনাল অসুখ যেমন ইরিট্যাবল বাউয়েল সিনড্রোম এর সাথে সম্পর্কিত এবং এটা প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর দিয়ে চিকিৎসা করে ফল না পাওয়ার অন্যতম একটা কারণ। [15] তাসত্ত্বেও প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর এর প্রাথমিক চিকিৎসা যা প্রায় ৫০% ক্ষেত্রে কাজ করে। [15] রোম-III ক্রাইটেরিয়ার উপর ভিত্তি করে এই অসুখ নির্ণয় করা হয়: ১)স্টার্নামের নিচে জ্বালা অনুভূতি। ২)হার্ট অ্যাটাক বা GERD এর কারণে ব্যথা হচ্ছেনা তা নিশ্চিত হওয়া। 3)খাদ্যনালীর মটিলিটিসংক্রান্ত কোন সমস্যা নেই তা নিশ্চিত হওয়া। [15] এক গবেষণায় পাওয়া গেছে প্রায় ২২.৩% কানাডীয় এই সমস্যায় ভুগছে। [15]
GERD এর ফলে সৃষ্ট বুকের ব্যথায় বুকে বিশেষ জ্বলন অনুভূতি হয় যা সাধারণত খাওয়ার পর বা রাতে এবং শয়নরত অবস্থায় বা সামনের দিকে ঝুঁকে থাকা অবস্থায় তীব্র আকার ধারণ করে। [16] এটা গর্ভবতী মহিলার ক্ষেত্রে খুবই লক্ষণীয় একটি বিষয়। একসাথে বেশি খাবার খাওয়া বা বিশেষ মশলাযুক্ত খাবার, অতি চর্বিযুক্ত বা অত্যধিক অম্লীয় খাবার এই সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। [16][17][18] খাবার খাওয়া বা পান করার পর বুকজ্বালা হলে এবং এর সাথে খাবার গিলায় সমস্যা থাকলে সেটা ইসোফ্যাজিয়াল স্প্যাজম বলে মনে করা হয়। [19]
আঠালো লিডোকেইন ও একটি এন্টাসিড প্রদানের ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে ব্যথা উপশম পেলে তা খাদ্যনালীয় ব্যথা বলে মনে করা হয়। [20] কিন্তু তাসত্ত্বেও এটা কার্ডিয়াক ব্যথা হবার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেয়না। [21] কারণ ১০% ক্ষেত্রে এন্টাসিড সেবনের পর কার্ডিয়াক ব্যথা উপশম হতে পারে। [22]
ইসোফ্যাজিয়াল pH মনিটরিং: নাসারন্ধ্রের ভিতর দিয়ে খাদ্যনালীতে একটি প্রোব ঢুকিয়ে খাদ্যনালীর নিম্নভাগে অম্লতার মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
ম্যানোমেট্রি: ম্যানোমিটার মুখের ভিতর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করানো হয় এবং সরাসরি খাদ্যনালীর নিম্নপ্রান্তে অবস্থিত স্ফিংটারের চাপ পরিমাপ করা হয়।
এন্ডোস্কপি: মুখের ভিতর দিয়ে এন্ডোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে খাদ্যনালি ও পাকস্থলীর মিউকোজা অবলোকন করা যায়। এভাবে খাদ্যনালীর প্রদাহ শনাক্ত করা যায়, প্রয়োজনবোধে বায়োপসি ( কিছু পরিমাণ টিস্যু কেটে নিয়ে আসা) নেয়া যায়। যেহেতু এর মাধ্যমে ঊর্ধ্ব গ্যাস্ট্রইন্টেস্টিনাল ট্র্যাক্ট দেখা যায় তাই উক্ত পথে অবস্থিত যে কোন সমস্যা খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
বায়োপসি: খাদ্যনালী থেকে কিছু পরিমাণ নমুনা টিস্যু কেটে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় এতে প্রদাহ, ক্যান্সার বা অন্য কোন সমস্যা আছে কিনা।
তাৎক্ষণিক ফল লাভের জন্য এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। [23] এছাড়া এর কারণ নির্ণয়ের উপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা পদ্ধতি। H2 রিসেপ্টর অ্যান্টাগনিস্ট যেমন রেনিটিডিন ও প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর যেমন প্যানটোপ্রাজল গ্যাস্ট্রাইটিস বা পাকস্থলীর প্রদাহ এবং GERD এর চিকিৎসায় খুব কার্যকর যা বুকজ্বালার প্রধান দুটি কারণ। হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি দ্বারা সংক্রমণ হলে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। ওষুধের পাশাপাশি জীবনধারণ পদ্ধতি ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা বাঞ্ছনীয়; যেমন শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার অভ্যাস করা, একসাথে বেশি খাবার না খেয়ে ছোট ছোট ভাগে খাবার খাওয়া,চকলেট ও মিন্ট জাতীয় খাবার পরিহার করা, অতিরিক্ত ভাজাপোড়া ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, অতিরিক্ত কফি ও চা পান থেকে বিরত থাকা, ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কম খাওয়া, কোমল পানীয় পরিহার করা, রাতে ঘুমাতে যাবার ২-৩ ঘণ্টা পূর্বে খাবার খাওয়া, ঘুমানোর সময় উঁচু (৪-৬ ইঞ্চি) বালিশ ব্যবহার করা, পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করা। এছাড়া কিছু খাবার যেমন কলা, ঠাণ্ডা দুধ, এলোভেরার জুস, সবুজ শাক-সবজি ও সালাদ, আদা, ফুলকপি, ব্রকলি, ধনিয়া পাতা ইত্যাদি বুকজ্বালা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.