Loading AI tools
প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের শাখা যা পদার্থের ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করে উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পদার্থবিজ্ঞান পদার্থ ও তার গতির বিজ্ঞান।[1] বাংলায় "পদার্থবিজ্ঞান" শব্দটি একটি সমাসবদ্ধ পদ। "পদার্থ" ও "বিজ্ঞান" দুটি সংস্কৃত শব্দ নিয়ে এটি গঠিত। এর ইংরেজি পরিভাষা Physics শব্দটি গ্রিক φύσις (ফুঁসিস) অর্থাৎ "প্রকৃতি", এবং φυσικῆ (ফুঁসিকে) অর্থাৎ "প্রকৃতি সম্পর্কিত জ্ঞান" থেকে এসেছে। পদার্থবিজ্ঞান বলতে বলা যেতে পারে এটা হলো গণিতের বাস্তব রূপ। এখানে বিভিন্ন গাণিতিক হিসাব নিকাশ দ্বারা প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে বর্ণনা করা হয়। অত্যন্ত বিমূর্তভাবে বলতে গেলে, পদার্থবিজ্ঞান হল সেই বিজ্ঞান যার লক্ষ্য আমাদের চারপাশের বিশ্বকে বোঝার চেষ্টা করা।[2]
পাশ্চাত্যের ভাষাগুলোতে পদার্থবিজ্ঞানকে "ফিজিক্স" বা এই জাতীয় শব্দ দিয়ে নির্দেশ করা হয়। এই শব্দটি প্রাচীন গ্রিক φυσική (ἐπιστήμη) বা রোমান Physikḗ (epistḗmē), φύσις physis "প্রকৃতি"[3][4][5]) থেকে এসেছে যার অর্থ "প্রকৃতির জ্ঞান"।[6] যেখানে পদার্থ, পদার্থের গতি এবং স্থান ও সময় মাধ্যমে তার আচরণ এবং শক্তি এবং বল সংক্রান্ত রাশি নিয়ে অধ্যয়ন করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের সবচেয়ে মৌলিক শাখাগুলোর মধ্যে একটি। পদার্থবিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো মহাবিশ্বের আচরণ সম্পর্কে অনুধাবন করা ।[lower-alpha 1][7][8][9]
পদার্থবিজ্ঞান প্রাচীনতম একাডেমিক বিষয়ের মধ্যে অন্যতম, সম্ভবত জ্যোতির্বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে প্রাচীনতম।[10] শেষ দুই সহস্রাব্দে, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান এবং গণিতের কিছু শাখার পাশাপাশি প্রাকৃতিক দর্শনের অংশ ছিল, কিন্তু ১৭দশ শতকের বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের সময় প্রাকৃতিক বিজ্ঞান তাদের নিজস্ব অধিকার হিসাবে অনন্য গবেষণা কর্মসূচিতে পরিণত হয়।[lower-alpha 2] পদার্থবিদ্যা গবেষণার অনেক আন্তঃসম্পর্কিত এলাকায়, যেমন জৈববিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম রসায়ন হিসাবে ছেদ করে, এবং পদার্থবিজ্ঞানের সীমারেখা কঠোরভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় না পদার্থবিজ্ঞানে নতুন ধারণাগুলি প্রায়ই অন্যান্য বিজ্ঞানগুলির মৌলিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করে[7] যখন গণিত এবং দর্শনের ক্ষেত্রে গবেষণার নতুন নতুন উপায়গুলি খোলার সময়।
পদার্থবিজ্ঞান তাত্ত্বিক সাফল্য থেকে উদ্ভূত নতুন প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য অবদানও করে। উদাহরণস্বরূপ, তড়িচ্চুম্বকত্ব বা পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশের অগ্রগতিগুলি সরাসরি নতুন পণ্যগুলির উন্নয়নে পরিচালিত হয়েছে যা নাটকীয়ভাবে একটি আধুনিককালের সমাজ যেমন টেলিভিশন, কম্পিউটার, গার্হস্থ্য যন্ত্রপাতি এবং পারমাণবিক অস্ত্রকে রূপান্তরিত করেছে;[7] তাপবিদ্যায় অগ্রগতি ঘটেছে শিল্পায়ন উন্নয়ন, এবং মেকানিক্স মধ্যে অগ্রগতি ক্যালকুলাসের (calculus) উন্নয়ন অনুপ্রাণিত করেছেন।
পদার্থবিজ্ঞান জ্ঞানের প্রাচীনতম শাখাগুলির একটি এবং এটির সবচেয়ে প্রাচীন উপশাখার আধুনিক নাম জ্যোতির্বিজ্ঞান।[12] প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা মানুষের আদিমতম কাজের একটি, তবে পদার্থবিজ্ঞান বলতে বর্তমানে যাকে বোঝানো হয় তার জন্ম ১৬শ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক বিপ্লবোত্তর-কালে, যখন এটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণকারী একটি বিজ্ঞানে পরিণত হয়[13] তার আগে প্রকৃতি নিয়ে গবেষণার সাধারণ নাম ছিল প্রাকৃতিক দর্শন, যাকে ঠিক বিজ্ঞান বলা যায় না।
জড়পদার্থের ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞানদায়ক বিদ্যা বা শাস্ত্র হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান গবেষণার সাথে জড়িত ব্যক্তি পদার্থবিজ্ঞানী-রূপে পরিচিত। পদার্থবিজ্ঞানীরা আমাদের চারপাশের বস্তুজগৎ কি আচরণ করে আর কেনই বা সেইসব আচরণ করে, তা বোঝার চেষ্টা করেন। তাঁরা এ উদ্দেশ্যে অনুকল্প প্রস্তাব করেন, এবং সেগুলি বাস্তবে পর্যবেক্ষণসম্ভব উপাত্তের সাথে মিলিয়ে দেখেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে পদার্থবিজ্ঞান রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের সাথে সম্পর্কিত। আবার শাস্ত্রটি দর্শন ও গণিতের সাথেও সম্পর্কিত। উল্লিখিত সমস্ত শাস্ত্রগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা সুসংজ্ঞায়িত নয়, বরং জটিল। প্রকৃতিকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান এই তিনটি প্রধান বিজ্ঞানে ভাগ করে নেয়া হয়েছে। রসায়নে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ আলোচিত হয়, জীববিজ্ঞানে জীবন ও জীবিত বস্তুসমূহ নিয়ে আলোচনা করা হয়, আর বাকী সব কিছু আলোচনা করা হয় পদার্থবিজ্ঞানে। দর্শন ও গণিতের সাথে পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক আরও জটিল। আধুনিক বিজ্ঞান হিসেবে জন্মলাভের আগ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু দর্শনশাস্ত্রে আলোচিত হত এবং বর্তমান দর্শনের নানা শাখায় অধীত বিষয়সমূহ পদার্থবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে ব্যাখ্যা করার ইচ্ছা রাখেন (যেমন - অস্তিত্বের মত অধিবিদ্যামূলক ধারণাসমূহ), যদিও তা সম্ভব না-ও হতে পারে। পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা ও তত্ত্বগুলি প্রায় সার্বজনীনভাবে গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা হয়। তাই গণিতকে প্রায়ই পদার্থবিজ্ঞানের ভাষা বলে অভিহিত করা হয়।[14] আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে উপরের সবগুলি শাস্ত্রের মধ্যে গণিতের সাথেই পদার্থবিজ্ঞানের সম্পর্ক সবচেয়ে নিবিড়। পদার্থবিজ্ঞান গণিতের কিছু শাখার উন্নয়নে সরাসরি সহায়তা করেছে, যেমন - ভেক্টর বিশ্লেষণ। আবার বিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম অনেক ব্যক্তি আছেন যারা গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান উভয়ক্ষেত্রেই পারদর্শী ছিলেন, যেমন - নিউটন, অয়লার, গাউস, পোয়াঁকারে প্রমুখ। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের আন্তঃসম্পর্ক পদার্থবিজ্ঞানকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ও পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞান নামের দুইটি প্রধান শাখায় ভাগ করেছে।
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান এবং এর সংশ্লিষ্ট শাস্ত্র গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে সাধারণত অনুকল্পসমূহ প্রস্তাব করা হয়, আর পরীক্ষামূলক পদার্থবিজ্ঞানে এই অনুকল্পগুলিকে প্রকৃতির সাথে পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই দুই শাখা একে-অপরের পরিপূরক: তত্ত্বসমূহ পরীক্ষা করা হয় ও পরীক্ষাশেষে উন্নততর তত্ত্ব প্রস্তাব করা হয়, যেগুলো আবার পরীক্ষা করা হয় এবং এভাবেই ক্রমশ চলতে থাকে। পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা পেশাদারী পরীক্ষাগারে সম্পন্ন করা হয় এবং আধুনিক যুগে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গবেষণা হয় না বললেই চলে। তাত্ত্বিক কাজকর্ম মূলত ব্যক্তিগত হলেও তা অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতেই ঘটে।[15] বর্তমান আধুনিক যুগে পদার্থবিজ্ঞানীরা সাধারণত পদার্থবিজ্ঞানের যে-কোন একটি বিশেষ ক্ষেত্রের উপর দক্ষতা অর্জন করেন, যা অতীতের পদার্থবিজ্ঞানীদের কর্মপন্থার বিপরীত।[16] অন্যদিকে নিউটন, অয়লার বা গাউসের মত পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন আলাদা শাখার প্রতিটিতে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন, এরকম আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
প্রযুক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে পদার্থবিজ্ঞান একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের শাখা। পদার্থবিজ্ঞানীদের কাজ বিদ্যুৎ, মোটর পরিবহন, চিকিৎসা (বিশেষ করে এক্স-রশ্মির ব্যবহার), ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে কাজে লেগেছে। তবে অনেক সময় পদার্থবিজ্ঞানকে পারমাণবিক বোমা তৈরির মত অনৈতিক কাজেও ব্যবহার করা হয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞানীরা যদিও গত প্রায় ৪০০ বছর যাবৎ প্রকৃতিকে বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সত্ত্বেও প্রকৃতিতে এখনও অনেক সমস্যা রয়ে গেছে যেগুলোর যথাযথ ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে পদার্থবিজ্ঞান এখনও একটি সক্রিয় শাস্ত্র; বিশ্ব জুড়ে হাজার হাজার গবেষক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় রত। অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণার পরিমাণ ও পরিসর দুই-ই অনেক বেশি। পদার্থবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বগুলো কেবল প্রকৃতির আরও গভীরতর বর্ণনাই দেয়নি, এর অনন্য ও রহস্যময় রূপ আমাদের কাছে আরও পরিষ্কার করে তুলেছে।
বর্তমানে পদার্থবিজ্ঞান বলতে আমরা যে বিষয়টিকে বােঝাই প্রাচীনকালে সেটি শুরু হয়েছিল জ্যোতির্বিদ্যা,আলােকবিজ্ঞান, গতিবিদ্যা এবং গণিতের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যামিতিরতির সমন্বয়ে!
গ্রিক বিজ্ঞানী থেলিসের (খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৫৮৬-৬২৪) নাম আলাদাভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, কারণ তিনিই প্রথম কার্যকারণ এবং যুক্তি ছাড়া শুধু ধর্ম, অতীন্দ্রিয় এবং পৌরাণিক কাহিনিভিত্তিক ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন থেলিস, সূর্যগ্রহণের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং লােডস্টোনের চৌম্বক ধর্ম সম্পর্কে জানতেন। সেই সময়ের গণিতবিদ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে পিথাগােরাস (৫২৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) একটি স্মরণীয় নাম। জ্যামিতি ছাড়াও কম্পমান তারের ওপর তার মৌলিক কাজ ছিল। গ্রিক দার্শনিক ডেমােক্রিটাস (৪৬০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম ধারণা দেন যে পদার্থের অবিভাজ্য একক আছে, যার নাম দেওয়া হয়েছিল এটম (এই নামটি আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে থাকে)। তবে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় তার ধারণাটি প্রমাণের কোনাে সুযােগ ছিল না বলে সেটি সবার কাছে গ্রহণযােগ্য ছিল না। সেই সময়কার সবচেয়ে বড় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এরিস্টটলের মাটি, পানি, বাতাস ও আগুন দিয়ে সবকিছু তৈরি হওয়ার মতবাদটিই অনেক বেশি গ্রহণযােগ্য ছিল। (আরিস্তারাকস (৩১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথমে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের ধারণা দিয়েছিলেন এবং তার অনুসারী সেলেউকাস যুক্তিতর্ক দিয়ে সেটি প্রমাণ করেছিলেন, যদিও সেই যুক্তিগুলাে এখন কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে .গ্রিক বিজ্ঞান এবং গণিত তার সর্বোচ্চ শিখরে উঠেছিল সর্বকালের একজন শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের (২৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময় । তরল পদার্থে উধ্বমুখী বলের বিষয়টি এখনাে বিজ্ঞান বইয়ের পঠনসূচিতে থাকে। গােলীয় আয়নায় সূর্যরশ্মিকে কেন্দ্রীভূত করে দূর থেকে শত্রুর যুদ্ধজাহাজে আগুন ধরিয়ে তিনি যুদ্ধে সহায়তা করেছিলেন। গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতেস্থিনিস (২৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।
ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে একটি বিস্ময়কর বিপ্লবের শুরু হয়, সময়টা ছিল ইউরোপীয় রেঁনেসার যুগ। ১৫৪৩ সালে কোপার্নিকাস তার একটি বইয়ে সূর্যকেন্দ্রিক একটি সৌরজগতের ব্যাখ্যা দেন (বইয়ের প্রকাশক ধর্মযাজকদের ভয়ে লিখেছিলেন যে এটি সত্যিকারের ব্যাখ্যা নয়, শুধু একটি গাণিতিক সমাধান মাত্র!) ।কোপার্নিকাসের তত্ত্বটি দীর্ঘাদন লোকচক্ষুর আড়ালে পড়ে ছিল, গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২) সেটিকে সবার সামনে নিয়ে আসেন। তিনি গাণিতিক সূত্র দেওয়ার পর পরীক্ষা করে সেই সূত্রটি প্রমাণ করার বৈজ্ঞানিক ধারার সূচনা করেন। গ্যালিলিওকে অনেক সময় আধুনিক বিজ্ঞানের জনক বলা হয়। তবে সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের প্রবন্তা হওয়ার কারণে তিনি চার্চের কোপানলে পড়েছিলেন এবং শেষ জীবনে তাঁকে গৃহবন্দী হয়ে কাটাতে হয়। ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আইজাক নিউটন বলবিদ্যার তিনটি এবং মহাকর্ষ বলের সূত্র প্রকাশ করেন, যেটি বল এবং গতিবিদ্যার ভিত্তি তৈরি করে দেয়। আলোকবিজ্ঞান এবং অন্য আরো কাজের সাথে সাথে বিজ্ঞানী নিউটন লিবনিজের সাথে গণিতের নতুন একটি শাখা ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন. অষ্টাদশ শতাব্দীর আগে তাপকে ভরহীন এক ধরনের তরল হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ১৭৯৮ সাল কাউন্ট রামফোর্ড দেখান,তাপ এক ধরনের শক্তি এবং যান্ত্রিক শক্তিকে তাপশক্তিতে রুপান্তুর করা যায়। আরও অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণার ওপর ভিত্তি করে লর্ড কেলভিন ১৮৫০ সালে তাপ গতিবিজ্ঞানের (থার্মোডিনামিক্সের) দুটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ ও চুষকের ওপরেও এই সময় ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়। ১৭৭৮ সালে কুলম্ব বৈদ্যুতিক চার্জের ভেতরকার বলের জন্য সূত্র আবিষ্কার করেন। ১৮০০ সালে ভোল্টা বৈদ্যুতিক ব্যাটারি আবিষ্কার করার পর বিদ্যুৎ নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা শুরু হয়। ১৮২০ সালে অরস্টেড দেখান বিদ্যুৎ প্রবাহ দিয়ে চুম্বক তৈরি করা যায়। ১৮৩১ সালে ফ্যারাডে এবং হেনরি ঠিক তার বিপরীত প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। তারা দেখান চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন করে বিদ্যুৎ তৈরি করা যায়। ১৮৬৪ সালে ম্যাক্সওয়েল তার বিখ্যাত ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ দিয়ে পরিবর্তনশীল বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে একই সূত্রের মাঝে নিয়ে এসে দেখান যে আলো আসলে একটি বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। বিদ্যুৎ ও চুম্বক আলাদা কিছু নয়, আসলে এ দুটি একই শক্তি দুটি ভিন্ন রূপ। এটি সময়োপযোগী একটি আবিষ্কার ছিল,কারণ ১৮০১ সালে ইয়ং পরীক্ষার মাধ্যমে আলোর তরঙ্গ ধর্মের প্রমাণ করে রেখেছিলেন।
মাইকেল ফ্যারাডে (১৭৯১-১৮৬৭) বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া নিয়ে কাজ করেন। তিনিই প্রথম উদ্ভাবন করেন যে, বিদুত্যের চৌম্বক ক্রিয়া রয়েছে। এরপর পদার্থবিজ্ঞানের মঞ্চে আবির্ভূত হন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (১৮৩১-১৮৭৯)। তিনি বিদ্যুৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রকে একীভূত করে চারটি অসাধারণ সূত্র প্রদান করে। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানে ম্যাক্সওয়েলের সূত্র নামে পরিচিত। এ সূত্রগুলোকে পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম সেরা আবিষ্কার হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় বেতার তরঙ্গ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় ও এর উপর গবেষণা চলে। বাঙালি বিজ্ঞানী আচার্য স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭) বেতার তরঙ্গ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম। তিনিই প্রথম বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণে সক্ষম হন। তবে তার এ আবিষ্কারের পেটেন্ট না করানোর কারণে তিনি নোবেল প্রাইজ থেকে বঞ্চিত হন। প্রায় একই সময় ইতালিয়ান বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো মার্কনিও বিনা তারে একস্থান থেকে অন্যস্থানে বার্তা প্রেরণ করেন। তিনি তার কাজের পেটেন্ট করানোর ফলে প্রথম স্বীকৃতভাবে রেডিও আবিষ্কার হিসেবে গণ্য হন। তাকে ১৯০৯ সালে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়। এছাড়া ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে উইলহেলম রন্টজেন (১৮৪৫-১৯২৩) এক্স রে আবিষ্কার করেন। এ কাজের জন্য তিনি ১৯০১ সালে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়া হেনরি বেকেরেল ও কুরি দম্পতি এ সময় তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করেন। প্রমুখ বিজ্ঞানীদের হাত ধরেই এ সময় পদার্থবিজ্ঞান এগোতে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞান শাস্ত্রের পরিপক্বতার সাথে সাথে প্রকৃতিতে পর্যবেক্ষণযোগ্য ভৌত ঘটনাগুলিকে এর কতগুলি বিশেষ বিশেষ শাখার অধীনে বণ্টন করে নেওয়া হয়েছে। যদিও পদার্থবিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রগুলিকে একত্রে একক একটি তত্ত্বের অধীন হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে, এ ধারণাটি এখনও প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। পদার্থবিজ্ঞানের মূল শাখাগুলি এরকম:
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.