Loading AI tools
শারীরিক সমস্যার আরোগ্যমূলক, প্রতিরোধমূলক বা উপশমমূলক সমাধানের উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
চিকিৎসা বলতে শারীরিক (বা মানসিক) রোগ, বিকার বা বৈকল্যে আক্রান্ত কিংবা শারীরিক আঘাতপ্রাপ্ত রোগীর স্বাস্থ্যের অবস্থা উন্নতি করা, রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, কিংবা ভবিষ্যৎ রোগ প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে প্রণালীবদ্ধ সেবা, শুশ্রূষা ও ব্যবস্থাপনাকে বোঝায়। ইংরেজিতে একে "মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট" (Medical treatment) বলা হয়।[1][2]
চিকিৎসা | |
---|---|
মেশ | D013812 |
শুধুমাত্র চিকিৎসক বা পেশাদার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা রোগ পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ প্রদানকে চিকিৎসা বলা হয় না। রোগনির্ণয়কারী পরীক্ষা (যেমন রক্ত পরীক্ষা, রঞ্জনরশ্মিচিত্র গ্রহণ, কিংবা রোগ নির্ণয়ের উদ্দেশ্যে কোনও ঔষধ প্রদান, ইত্যাদি) সম্পাদন করাকেও চিকিৎসার সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। প্রাথমিক চিকিৎসা-ও (ইংরেজিতে ফার্স্ট এইড) সংকীর্ণ অর্থে চিকিৎসার মধ্যে পড়ে না।[1]
উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য অনুযায়ী চিকিৎসাকে মূলত তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। এগুলি হল আরোগ্যমূলক (বা নিরাময়মূলক বা প্রতিকারমূলক বা সক্রিয়) চিকিৎসা (Curative বা Therapeutic), প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা (Prophylactic) এবং প্রশমনমূলক (উপশমমূলক) চিকিৎসা (Palliative)।[2] এছাড়া রোগ ব্যবস্থাপনা ও মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসাও প্রসঙ্গত উল্লেখ্য। অনেকসময় একই সাথে একাধিক শ্রেণীর চিকিৎসা রোগীর উপরে প্রয়োগ করা যায়। সেক্ষেত্রে একটিকে মূল চিকিৎসা (Primary treatement) এবং অন্যগুলিকে সহায়ক চিকিৎসা (Adjuvant treatment) বলা হয়।
আবার পন্থা বা পদ্ধতি অনুযায়ী চিকিৎসাকে কয়েকটি প্রকারে ভাগ করা যায়। যেমন - ঔষধভিত্তিক চিকিৎসা (Pharmaceutic), শল্যচিকিৎসা (Surgical) এবং সহায়ক চিকিৎসা (Supportive)।
অধিকন্তু, দর্শন বা প্রচলন অনুযায়ী চিকিৎসাকে দুইটি প্রধান ধারায় ভাগ করা যায়। এগুলি হল মূলধারার বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা এবং বিকল্প ধারার চিকিৎসা। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সর্বত্র প্রচলিত মূলধারার আদর্শ চিকিৎসাপদ্ধতি হল বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণভিত্তিক চিকিৎসা। একে অনেক সময় "অ্যালোপ্যাথি" (Allopathy) নামেও ডাকা হয়। যারা এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ লাভ করেন, তাদেরকে ডক্টর অভ মেডিসিন বা এমডি উপাধির অধিকারী বলা হয়। কাছাকাছি আরেকটি দর্শন হল অস্থিসন্ধি সঞ্চালন চিকিৎসা (Osteopathy), যেখানে কোনও রোগকে বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণভিত্তিক চিকিৎসার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার পাশাপাশি দেহের অস্থি, অস্থিসন্ধি, পেশী, স্নায়ু, ইত্যাদির সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যারা এ-সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ লাভ করেন, তাদেরকে ডক্টর অভ অস্টিওপ্যাথি বা ডিও উপাধির অধিকারী বলা হয়।
২০শ শতক থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক চিকিৎসার বিকাশ ঘটে। এর সম্পূরক হিসেবে কিছু বিকল্প ধারার চিকিৎসাপদ্ধতিও বিদ্যমান, যেমন হোমিও চিকিৎসা, আয়ুর্বেদী চিকিৎসা, ইউনানি চিকিৎসা, ভেষজ চিকিৎসা, যোগব্যায়াম, ঐতিহ্যবাহী চৈনিক চিকিৎসা (আকুপাংচার, আকুপ্রেশার, ইত্যাদি), মেরুদণ্ড সঞ্চালন চিকিৎসা (Chiropractic কাইরোপ্র্যাকটিক), অবগাহন চিকিৎসা (Balneotherapy), ইত্যাদি। তবে বিকল্প ধারার চিকিৎসাপদ্ধতিগুলির কার্যকারিতার নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক প্রমাণ তেমন নেই।
রোগ বা বিকার নির্ণয়ের পরে রোগীর লক্ষ্য থাকে হৃতস্বাস্থ্য শতভাগ ফেরত পাওয়া অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে সেরে ওঠা। অনেক ধরনের রোগের ক্ষেত্রেই চিকিৎসার মাধ্যমে এ ব্যাপারে সফল হওয়া সম্ভব। এই ধরনের চিকিৎসাকে আরোগ্যমূলক চিকিৎসা বলে। সমার্থকভাবে এটি প্রতিকারমূলক চিকিৎসা, নিরাময়িক (বা নিরাময়মূলক), বা সক্রিয় চিকিৎসা বলা হয়। ইংরেজিতে একে "থেরাপিউটিক ট্রিটমেন্ট" (Therapeutic treatment) বা সংক্ষেপে "থেরাপি" (Therapy), "কিউরেটিভ ট্রিটমেন্ট" (Curative treatment) বা সংক্ষেপে "কিউর" (Cure), অথবা "অ্যাক্টিভ ট্রিটমেন্ট" (Active treatment) বলা হয়। মূলত তিন ধরনের আরোগ্যমূলক চিকিৎসা বিদ্যমান। এগুলি হল ঔষধ সেবন বা গ্রহণ, শল্যচিকিৎসা এবং অঙ্গসঞ্চালন চিকিৎসা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আরোগ্যমূলক চিকিৎসাতে ঔষধকে সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটলে ব্যাকটেরিয়ারোধক ঔষধ বা অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করা হয়। অতিপ্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জি হলে সেই প্রতিক্রিয়াকে দূর করতে হিস্টামিনরোধক (অ্যান্টিহিস্টামিন) রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। এইসব ঔষধ মুখ দিয়ে গলধকরণ করা হয়, বা দৃশ্যমান দেহ এলাকার উপরে প্রলেপের মত প্রয়োগ করা হয় অথবা সূচিপ্রয়োগের মাধ্যমে রক্তে বা পেশীতে প্রবেশ করানো হয়।
শল্যচিকিৎসা রোগ থেকে সরাসরি আরোগ্য প্রদান করে না। সাধারণত শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে দেহের নির্দিষ্ট অসুস্থ বা আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটিকে মেরামত করা হয় কিংবা সম্পূর্ণ প্রতিস্থাপন করা হয়। এরপর দেহ নিজে নিজেই আরোগ্যলাভ করে। একারণে শল্যচিকিৎসাকে এক ধরনের আরোগ্যমূলক চিকিৎসা বলা হয়। দেহের কোনও অবাঞ্ছিত কলা কেটে ফেলা (যেমন টিউমার বা অ্যাপেন্ডিক্স), কোলেস্টেরল জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া হ্রৎপেশী-ধমনীতে ঢুকে সেটির আয়তন বৃদ্ধি করা, ভেঙে যাওয়া হাড় একই রেখায় নিয়ে আসা, ইত্যাদি কিছু মেরামতমূলক শল্যচিকিৎসার উদাহরণ।
দেহের পেশী বা অন্যান্য অংশ যদি পীড়নের শিকার হয় বা ক্ষতিগস্ত হয়, তাহলে সেগুলিকে শারীরিক অনুশীলন ও নড়াচড়ার মাধ্যমে ধীরে ধীরে আরোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। এক্ষেত্রে ধৈর্য ও সময়ের ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার উদ্দেশ্য হল ভবিষ্যতে কোনও রোগ থেকে ব্যক্তিকে সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা প্রদান করা। একে ইংরেজিতে "প্রিভেন্টিভ ট্রিটমেন্ট" (Preventive treatment) বা "প্রোফাইল্যাক্টিক ট্রিটমেন্ট" (Prophylactic treatment) বলে। যেমন টিকা, বংশাণুভিত্তিক চিকিৎসা, দৈনন্দিন স্বাস্থ্যবিধি পালন, নির্দিষ্ট পথ্য গ্রহণ বা খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ, ইত্যাদি।
টিকার মাধ্যমে দেহে অনেকগুলি ঘাতক বা গুরুতর ক্ষতি সৃষ্টিকারী রোগব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। টিকাতে সাধারণত মৃত বা দুর্বল জীবাণু দেহে প্রবেশ করানো হয়, যাতে দেহের অনাক্রম্যতন্ত্র সেগুলির সাথে পরিচিত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে ঐ একই জীবাণু দেহকে আক্রমণ করলে সেগুলির বিরুদ্ধে বিধ্বংসী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
আধুনিক যুগে ব্যক্তিমাফিক চিকিৎসাতে একজন ব্যক্তি তাঁর বংশগতীয় সঙ্কেত পর্যালোচনা করতে পারেন এবং বিশেষ কোনও বংশাণু বা জিনের কারএ তাঁর মধ্যে কোনও বংশবাহিত রোগ হবার জোরালো সম্ভাবনা থাকলে সে ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারেন। যেমন কিছু মহিলার দেহে স্তন ক্যান্সার হবার বংশাণু উপস্থিত থাকে এবং তারা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্তনের সভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ দেহকলা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে কেটে ফেলে দিতে পারেন।
দৈনন্দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা (যেমন গোসল করা, দাঁত মাজা), পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ (যেমন অস্থি সুস্থ রাখার জন্য ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার গ্রহণ), ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য পরিহার (যেমন বৃহদান্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধের জন্য গবাদি পশুর মাংস না খাওয়া), নিয়মিত শরীরচর্চা করা, সঠিক সময়ে পরীক্ষার মাধ্যমে রোগনির্ণয়, ইত্যাদিও প্রতিরোধমূলক চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য করা যায়।
প্রশমনমূলক চিকিৎসা বা উপশমমূলক চিকিৎসা বলতে রোগের উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসাকে বোঝায়। এটি রোগের মূল কারণ দূর করে না, অর্থাৎ রোগের নিরাময় করে না, বরং রোগের বাহ্যিক উপসর্গগুলিকে প্রশমন বা উপশম করে বা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে রোগীর জীবনযাপন অধিকতর সহজ ও আরামদায়ক হয়। ব্যথানাশক ঔষধ, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে স্নায়ুতে ব্যথা উদ্রেককারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা অর্বুদ (টিউমার) অপসারণ, পথ্য, মালিশ, মানসিক সাহচর্য, ইত্যাদি বিভিন্ন উপায়ে প্রশমনমূলক চিকিৎসা ও সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে।
রোগ ব্যবস্থাপনা বলতে কোনও দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভোগা রোগীদের জীবনের মান উন্নয়নের জন্য ও সামগ্রিকভাবে তাদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমানোর জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে, দ্রুততার সাথে ও কার্যকরভাবে কোনও ঝুঁকিপূর্ণ জনসমষ্টির মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী রোগগুলিকে শুরুতেই শনাক্ত করা এবং এরপর প্রতিরোধমূলক, নিরাময়মূলক ও প্রশমনমূলক চিকিৎসার সম্মিলন ঘটিয়ে এইসব রোগের বিরূপ প্রভাবগুলিকে প্রতিরোধ করা বা নিয়ন্ত্রণে রাখাকে বোঝায়। চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাতে কর্মরত বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদারী ব্যক্তির একটি দল সম্মিলিতভাবে রোগ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এছাড়া রোগী যাতে নিজেই নিজের সেবা নিশ্চিত করতে পারে, সে ব্যাপারে তাকে উৎসাহ ও সমর্থন দেওয়া হয়।
মুমূর্ষু রোগীর সেবা বলতে এমন এক ধরনের স্বাস্থ্যসেবাকে বোঝায় যেখানে একজন অন্তিম দশার রোগী তথা মরণাপন্ন রোগীর ব্যথা ও উপসর্গ প্রশমন করা এবং জীবন সায়াহ্নে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক চাহিদার দেখভাল করার ব্যাপারগুলিই মুখ্য থাকে। মুমূর্ষু রোগীর সেবাতে ব্যথা ও যন্ত্রণা হ্রাস করার মাধ্যমে আরাম ও জীবনের মান বৃদ্ধি করাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
চিকিৎসা সেবাকে সাধারণত চারটি স্তরে ভাগ করা হয়। প্রথম স্তরের চিকিৎসা সেবা, দ্বিতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবা, তৃতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবা এবং চতুর্থ স্তরের চিকিৎসা সেবা।[3][4][5]
সিংহভাগ ব্যক্তি প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবার সাথে পরিচিত। রোগের লক্ষণ বা স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা হলে মানুষ প্রথমে প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীর দ্বারস্থ হন।
যেমন সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা বা অন্যান্য কোনও ভাইরাসঘটিত বা ব্যাকটেরিয়াঘটিত রোগ হলে, হাড় ভেঙে গেলে, পেশীতে ব্যথা করলে, ত্বকে ফুসকুড়ি হলে বা অন্য যেকোনও ধরনের তীব্র ও স্বল্পমেয়াদী অসুখের জন্য মানুষ সাধারণ প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসকের সাক্ষাৎ নেন। প্রাথমিক সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক সাধারণত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে রোগীর সেবার সমন্বয় সাধন করে থাকেন। প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবাতে চিকিৎসকের পাশাপাশি শুশ্রুষাকারী (নার্স) এবং চিকিৎসকের সহকারীরাও কাজ করে থাকেন। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবার কিছু বিশেষায়িত ক্ষেত্রও আছে, যেমন ধাত্রী-স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, জরারোগ বিশেষজ্ঞ, এবং শিশুচিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। তারা বিশেষ বিশেষ বয়স বা দলের ব্যক্তিদের (যেমন-নারী, শিশু, বৃদ্ধ) প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।
প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীরা সামগ্রিকভাবে একটি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবার সুলভ্যতা নিশ্চিত করেন, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত ফলাফলের মান বৃদ্ধি করেন, হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা এবং জরুরী বিভাগে সাক্ষাতের সংখ্যা হ্রাস করেন।
সিংহভাগ স্বাস্থ্য বীমাপত্রে একজন নির্দিষ্ট প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীকে নির্বাচন করতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন ধাত্রী-স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, জরারোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশু চিকিৎসা বিশেষজ্ঞকে এই ভূমিকায় নির্বাচন করা হয়।
যখন প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক রোগীকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রতি নির্দেশনা প্রদান করেন, তখন সেই রোগী দ্বিতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবায় প্রবেশ করেন। দ্বিতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবার অর্থ হল রোগীর রোগ বা অসুখের উপরে বিশেষ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রাখেন এমন একজনকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ভার দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা দেহের নির্দিষ্ট অঙ্গ বা তন্ত্রের উপরে জোর দিতে পারেন কিংবা বিশেষ রোগ বা অসুস্থতার উপরে জোর দিতে পারেন। যেমন হৃদ্বিজ্ঞানী বা হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা হৃৎপিণ্ড ও এর রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থার উপরে জোর দেন। অন্তঃক্ষরাবিজ্ঞানী বা অন্তঃক্ষরা রোগ বিশেষজ্ঞরা হরমোন (উদ্বোধক গ্রন্থিরস) ব্যবস্থার উপর জোর দেন, এবং তাদের কেউ কেউ বহুমূত্র বা মহুমেহ রোগ (ডায়াবেটিস) কিংবা থাইরয়েড রোগের উপর বিশেষ জ্ঞান রাখেন। কর্কটবিজ্ঞানী তথা কর্কটরোগ (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞরা কর্কটরোগ নিরাময়ের উপরে বিশেষ জ্ঞান রাখেন এবং তাদের অনেকেই বিশেষ প্রকারের কর্কটরোগের উপরে জোর দেন।
চিকিৎসা সেবার প্রাথমিক স্তরে কোনও অসুস্থতার নিরাময় না হলে দ্বিতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবার দ্বারস্থ হতে হয়। সাধারণত স্বাস্থ্যবীমা প্রতিষ্ঠানগুলি সরাসরি বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে যাওয়া অনুমোদন করে না। তার আগে রোগীকে প্রাথমিক পর্যায়ের সেবা দানকারী চিকিৎসকের নির্দেশনাপত্র নিয়ে আসতে হয়।
কখনও কখনও বিশেষায়িত সেবাতে সমস্যার উদ্ভব হতে পারে। কোনও রোগীকে ভুল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করা হতে পারে। এমন হতে পারে যে প্রাথমিক রোগলক্ষণগুলি যে রোগটির প্রতি নির্দেশ করতে পারে, তা হয়ত অন্য কোনও রোগের লক্ষণ, যার জন্য ভিন্ন একজন বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎ আবশ্যক। আবার এমনও হতে পারে যে দুইটি ভিন্ন রোগের জন্য দুইজন ভিন্ন ভিন্ন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যেতে হতে পারে। এক্ষেত্রে রোগীর সেবার সম্পূর্ণ সমন্বয় সাধন না-ও হতে পারে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী চিকিৎসক ও তার দলের সাথে একত্রে কাজ করতে হয়, যাতে সবাই জানতে পারে অন্য চিকিৎসকেরা কী ধরনের চিকিৎসা প্রদান করছেন।
যখন কোনও রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাকে হাসপাতালে রেখে উচ্চ স্তরের বিশেষায়িত সেবা প্রদান করতে হয়, তখন তাকে তৃতীয়-স্তরের সেবার জন্য নির্দেশ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে অত্যন্ত বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। যেমন হৃদ-ধমনী বাইপাস অস্ত্রোপচার, বৃক্ক বা রক্ত পরিশোধন বা ডায়ালাইসিস, কিছু রূপকারক বা প্লাস্টিক অস্ত্রোপচার, স্নায়ুশল্যচিকিৎসা, ইত্যাদি। এছাড়া গুরুতরভাবে দগ্ধ ক্ষতের চিকিৎসা এবং অন্য যেকোনও ধরনের অতি-জটিল চিকিৎসা বা পদ্ধতিগুলিও তৃতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবার অন্তর্ভুক্ত।
স্থানীয়, ছোট কলেবরের হাসপাতালের এইসব তৃতীয় স্তরের সেবা প্রদান না-ও করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীকে উচ্চস্তরের বিশেষায়িত সেবা তথা তৃতীয় স্তরের সেবা প্রদানকারী হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রে স্থানান্তর করা হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন মধুমেহ বা বহুমূত্র রোগ (ডায়াবেটিস) এবং দীর্ঘস্থায়ী বৃক্ক রোগের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে রোগী যখন তৃতীয় স্তরের সেবাতে প্রবেশ করে, তখনও তার প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীর সংস্পর্শে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিক স্তরের চিকিৎসা প্রদানকারী ব্যক্তি রোগীর দীর্ঘমেয়াদী আত্ম-ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করতে সহায়তা করতে পারেন।
তৃতীয় স্তরের চিকিৎসা সেবার একটি সম্প্রসারিত রূপ হল চতুর্থ স্তরের চিকিৎসা সেবা। এটি সবচেয়ে বেশি বিশেষায়িত এবং অত্যন্ত অস্বাভাবিক ধরনের চিকিৎসা সেবা। যেহেতু এই স্তরের চিকিৎসা অত্যন্ত বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য, তাই সব হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে এগুলি প্রদান করা হয় না। কিছু কিছু হাসপাতালে বিশেষ কিছু রোগের জন্য বা দেহের বিশেষ কিছু তন্ত্রের জন্য চতুর্থ স্তরের সেবা প্রদান করা হয়। চতুর্থ স্তরের চিকিৎসা সেবাতে পরীক্ষামূলক ঔষধ ব্যবহার করা হতে পারে এবং অত্যন্ত বিশেষ ও অসাধারণ রকমের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হতে পারে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.