গোপালপুর উপজেলা
টাঙ্গাইল জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
টাঙ্গাইল জেলার একটি উপজেলা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গোপালপুর বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি ঢাকা বিভাগের অধীন টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে একটি এবং টাঙ্গাইল জেলার উত্তরে অবস্থিত। গোপালপুর উপজেলার উত্তরে ধনবাড়ী উপজেলা, মধুপুর উপজেলা পূর্বে মধুপুর ও ঘাটাইল উপজেলা, দক্ষিণে ঘাটাইল উপজেলা এবং ভূঞাপুর উপজেলা, পশ্চিমে যমুনা নদী ও জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা অবস্থিত।[2] এ উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে গেছে দুইটি নদী। একটির নাম ঝিনাই নদী অন্যটি বৈরাণ নদী, গোপালপুর শহরের উপর দিয়ে প্রবাহিত।[3][4]
গোপালপুর | |
---|---|
উপজেলা | |
মানচিত্রে গোপালপুর উপজেলা | |
স্থানাঙ্ক: ২৪°৩৩′৪৭″ উত্তর ৮৯°৫৫′০″ পূর্ব | |
দেশ | বাংলাদেশ |
বিভাগ | ঢাকা বিভাগ |
জেলা | টাঙ্গাইল জেলা |
আয়তন | |
• মোট | ১৯৩.৩৭ বর্গকিমি (৭৪.৬৬ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,৫২,৩৩১জন[1] |
সাক্ষরতার হার | |
• মোট | ৪৩% |
সময় অঞ্চল | বিএসটি (ইউটিসি+৬) |
প্রশাসনিক বিভাগের কোড | ৩০ ৯৩ ৩৮ |
ওয়েবসাইট | দাপ্তরিক ওয়েবসাইট |
গোপালপুর থানা গঠিত হয় ১৯২০ সালে, থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে এবং গোপালপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৭৪ সালে।[5]
এটি একটি কৃষিপ্রধান অঞ্চল। উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তনের পূর্বে এ উপজেলাটি গোপালপুর থানা নামে পরিচিত ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এ থানাকে উপজেলায় রুপান্তরিত করা হয়। ঢাকার মহাখালি থেকে গোপালপুরের দূরত্ব ১৩৫ কিমি[6][7] এবং জেলা সদর থেকে ৪৫ কিমি[7] উত্তরে এর অবস্থান।
পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গম্বুজ এবং দ্বিতীয় উচ্চতম মিনার বিশিষ্ট ২০১ গম্বুজ মসজিদ এই উপজেলার পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত।[8]
এই উপজেলাটি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-২। গোপালপুর ও ভূঞাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ১৩১ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত।[9]
ঐতিহাসিকদের মতে প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি আসামের কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। মধ্যযুগে ১৪শ শতাব্দীর শেষভাবে অঞ্চলটি খেন্ রাজবংশের অন্তর্গত ছিল।[10] পরবর্তীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহ কামতা রাজ্য জয় করার পর অঞ্চলটি মুসলমানদের দখলে চলে আসে। হোসেকামতা রাজ্যন শাহর পুত্র নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ পরবর্তীতে এ অঞ্চলটি শাসন করেন এবং সে সময় এটি নাসিরাবাদের (বর্তমান ময়মনসিংহ) অন্তর্ভুক্ত ছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে নাসিরাবাদের নাম পরিবর্তন করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ রাখা হয়। ১৮৬৯ সালের ১লা ডিসেম্বর ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইলেকে আলাদা জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়[11] এবং গোপালপুর টাঙ্গাইল জেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে টাঙ্গাইল ১৯তম জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯০৪ সাল পর্যন্ত গোপালপুর মৌজা হিন্দু অধ্যুষিত ছিল এবং হিন্দু মহাজনরা বৈরান নদীর তীরে গেপালপুর মৌজার নন্দনপুর এলাকায় পাটের কারখানা গড়ে তুলেন।
টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ কর্তৃক ২০০৮ সালে প্রকাশিত ‘ টাঙ্গাইল জেলায় স্থাননাম বিচিত্রা’ নামক গ্রন্থে গোপালপুরের নামকরণ নিয়ে দুই ধরনের মতামতের উল্লেখ আছে। কারো মতে মুঘল শাসনামলে গোপাল শাহ নামক একআফগান দরবেশ এখানে এসে আস্তানা গেড়েছিলেন। তার নামুনুসারে গোপালপুরের নামকরণ হয়েছে। অন্য মতে চট্রগ্রাম থেকে আগত গোপাল জমিদার রাণীভবানীর নিকট হতে এ মৌজা পত্তনি নেন এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তার নামানুসারে নাম হয় গোপালপুর। এখানে পুর বলতে বাড়ী বা আস্তানা বুঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় অভিমত অধিকতর সঠিক গণ্য করা হয়। ১৯০৪ সাল অবধি গোপালপুর মৌজা হিন্দু অধ্যুষিত ছিল এবং হিন্দু মহাজনরা বৈরান নদীর তীরে গোপালপুর মৌজার নন্দনপুর এলাকায় পাটের কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। হিন্দু ব্যবসায়ীরা এখানকার কারখানায় পাট বেলিং করে বৈরান নদী পথে কোলকাতায় চালান দিত।[2]
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থান গোপালপুর থানায় আক্রমণ করেন। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের চারদিক থেকে অবরোধ করেন। এই সময় একদিন শহীদুল ইসলাম ছদ্মবেশে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে যান। তাদের বিভিন্ন ফাই-ফরমাশ খেটে আস্থা অর্জন করেন। পরে গ্রেনেডসহ ঘাঁটিতে প্রবেশ করে সেখানে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিরাপদে ফিরে আসেন। এতে পাকিস্তানি সেনারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা থানা দখল করে, অস্ত্র ও গোলাবারুদ হাতিয়ে নেয় ও থানায় ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।[12] নভেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিযোদ্ধারা আবার গোপালপুর আক্রমণ করেন। দু-তিন দিন যুদ্ধ চলে। এরপর পাকিস্তানি সেনারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধেও শহীদুল ইসলাম অংশ নেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বকনিষ্ঠ বীরমুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ‘বীরবিচ্ছু’[13] হলেন গোপালপুর উপজেলার পৌর এলাকার সূতীপলাশ পাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম লালু। তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সে মহান স্বাধনীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ন অবদান রেখে বীর প্রতীক খেতাব পেয়ে ছিলেন।[14]
১৯৭২ সালে গোপালপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ভূঞাপুর উপজেলা গঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে গোপালপুর উপজেলার মুশুদ্দী ইউনিয়নকে মধুপুর উপজেলার অমর্ত্মভূক্তকরা হয়। পরবর্তীতে মুশুদ্দী ইউনিয়ন ধনবাড়ি উপজেলার অমর্ত্মভূক্ত হয়।[15]
এই উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২৪°৩৩′২৯.৮৮″ উত্তর ৮৯°৫৫′০.১২″ পূর্ব। গোপালপুর উপজেলা টাঙ্গাইল জেলা সদর থেকে ৪৫ কিঃ মিঃ উত্তরে অবস্থিত।[7]
একটি পৌরসভা এবং ৭টি ইউনিয়ন নিয়ে এ উপজেলা গঠিত।[16] ইউনিয়নগুলো হলো- হাদিরা ইউনিয়ন, নগদা শিমলা ইউনিয়ন, ঝাওয়াইল ইউনিয়ন, হেমনগর ইউনিয়ন, আলমনগর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন এবং ধোপাকান্দি ইউনিয়ন।
এর আয়তন ১৯৩.৩৭ বর্গ কিমি। ২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী লোক সংখ্যা ২,৫২,৩৩১ জন।[17] এর মধ্যে ১,২৩,৫০৪ জন পুরুষ ও ১,২৮,৮২৭ জন মহিলা। শিক্ষার হার শহরে ৪২.৬% ও গ্রামে ৪১.১%।
গোপালপুর মূলত কৃষিপ্রধান অঞ্চল। একসময় পাট ব্যবসায় বিশেষ প্রসিদ্ধ ছিল। প্রধান শস্য ধানের পাশাপাশি প্রচুর পাট উৎপাদন করত স্থানীয় কৃষকরা। নদীপথে দূর দুরান্তের বিভিন্ন স্থানে নৌকা বোঝাই পাট যেত। কিন্তু পাট ব্যবসা ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে যায়। ২০০১ সালের ভূমিজরিপ অনুসারে গোপালপুরের জনগণের আয়ের প্রধান উৎস ছিল কৃষি ৬৬.৯৩%। বর্তমানে প্রধান কৃষিজ ফসল হল ধান, গম, পাট, আলু, শাকসবজি। ফলমূলের মধ্যে কাঁঠাল, আম, কলা, পেঁপে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত হয়। উপজেলার অনেক ইউনিয়নে গবাদি পশু পালন, গরু মোটা তাজাকরণ, মৎস চাষ ও পোলট্রিশিল্প[18] রয়েছে।
এ উপজেলায় টেক্সটাইল মিল, টুপি ফ্যাক্টরি,[19] চাল কল, ইট ভাটা, ওয়েল্ডিং, তেল কল, স্টিল ও কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা রয়েছে। এছাড়া বাঁশ ও বেতের কাজ, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্পের কাজও হয় এ উপজেলায়।[12]
হেমচন্দ্র চৌধুরী ১৯০০ সালে হেমনগরে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ স্কুলের জন্য তিনি কোন সরকারি সাহায্য নেননি। স্কুলটি এখন শশীমুখি উচ্চবিদ্যালয় নামে পরিচিত। এটি সেই সময়কার গোপালপুর থানার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেদারনাথ মজুমদারের ‘ময়মনসিংহের বিবরণ’ গ্রন্থে দেখা যায়, ১৯০৪ সালে হেমনগর হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ছিল ২০১ জন। ১৯০৪ সালে গোপালপুর উপজেলায় ইংরেজি জানা লোকের সংখ্যা ছিল ৬৯৯ জন। এরপর ব্রিটিশ শাসনামলেই ঝাওয়াইল হেমন্তকুমারী হাইস্কুল, নন্দনপুর গার্লস হাইস্কুল, সূতি ভিএম হাইস্কুল এবং ভুটিয়া প্রাইমারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে এই উপজেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ১. গোপালপুর সরকারি কলেজ (প্রতিষ্ঠা- ১৯৬৮), ২.গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা,৩. হেমনগর কলেজ(প্রতিষ্ঠা-১৯৭৯) ৪. হেমনগর শশীমুখী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠা-১৯০০) ৫.হেমনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠা-১৯৯৩) ৬. মেহেরুন্নেছা মহিলা কলেজ (প্রতিষ্ঠা- ১৯৯৫), ৭. রাধারাণী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠা- ১৯০২), ৮. সূতী ভি.এম. পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (প্রতিষ্ঠা- ১৯২০)।৯. কাহেতা উচ্চ বিদ্যালয় ।[20]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.