Loading AI tools
কল্পকাহিনিতে বুধের বর্ণনা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
কল্পকাহিনিতে সৌরজগতের সর্বপ্রথম[lower-alpha 1] গ্রহ বুধের চিত্রায়ণ তিনটি স্বতন্ত্র পর্যায় অতিক্রম করেছে। গ্রহটির বিস্তারিত তথ্য আবিষ্কারের পূর্বে এটি মানুষের খুব কম মনোযোগ পেয়েছিল। পরবর্তীতে এক পর্যায়ে, ভ্রান্ত বিশ্বাস ছিল যে এটি সর্বদা স্থিরবস্থায় সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে এবং গ্রহটির এক গোলার্ধে সর্বদা দিন ও অন্য অর্ধে চির-অন্ধকার থাকে। কাহিনিগুলিতে বুধের উভয় গোলার্ধের অবস্থা এবং স্থায়ী গোধূলির মধ্যবর্তী সংকীর্ণ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে রচিত। ১৯৬৫ সালে এই ভুল ধারণাটি দূরীভূত হওয়ার পড় গ্রহটি কথাসাহিত্যিকদের আগ্রহ হারিয়েছে। পরবর্তীতে গল্পগুলি সূর্যের নিকটে থাকার কারণে কঠোর পরিবেশগত অবস্থাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে।[1]
সূর্যের কাছাকাছি থাকার কারণে বুধের জ্যোতির্বিদ্যা বিষয়ক পর্যবেক্ষণ করা কঠিন ছিল। ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় গ্রহটি সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। গ্রহটি সম্পর্কে কম তথ্যের প্রভাব কল্পকাহিনীতে প্রতিফলিত হয়।[2][3][4] কথাসাহিত্যের অংশ হিসেবে গিয়ামবাটিস্তা মারিনোর ১৬২২ সালের এল'এদন গ্রন্থে গ্রহটি গল্পের বিষয় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।[5] শেভালিয়ে দে বেথুনের ১৭৫০ সালের উপন্যাস রিলেশন ডু মন্ডে দে মার্কিউর (ইংরেজি শিরোনাম: দা ওয়ার্ল্ড অফ মার্কারি) হল আরেকটি প্রাথমিক উদাহরণ। এটি মূলত ব্যঙ্গের উদ্দেশ্যে কাল্পনিক বহির্জাগতিক সমাজকে ব্যবহার করে রচিত।[2][3][6] ডব্লিউএস ল্যাচ-যাইরমার ১৮৮৩ সালের এলারিয়েল ,অর এ ভয়েজ টু আদার ওয়ার্ল্ডস) উপন্যাসে বুধগ্রহবাসীদেরকে গ্রহের বায়ুমণ্ডলে বসবাসকারী হিসেবে চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[3][7] জন মুনরোর ১৮৯৭ সালের এ ট্রিপ টু ভেনাস উপন্যাসে বুধ এবং শুক্র গ্রহের একটি সংক্ষিপ্ত পরিদর্শন চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[2][8][lower-alpha 2] বুধকে কেন্দ্র করে রচিত উইলিয়াম ওয়ালেস কুকের ১৯০৫ সালের উপন্যাস এড্রিফ্ট ইন দ্য আননোন বা অ্যাডভেঞ্চারস ইন আ কুইয়ার রিয়ম হলো ইংরেজি ভাষার প্রথম কথাসাহিত্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদের উপর একটি ব্যাঙ্গাত্মক রচনা।[2][9][lower-alpha 3] হোমার ইয়ন ফ্লিন্ট তাঁর ১৯১৯ সালের "লর্ড অফ ডেথ" ছোট গল্পে বুধ গ্রহে বর্তমানে বিলুপ্ত একটি সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ চিত্রায়ণ করেছেন।[3][7][lower-alpha 4]
১৮৯৩ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত, বিশ্বাস করা হতো যে বুধ সূর্যের সাথে ১:১ ঘুর্ণনে আবদ্ধ ছিল। এখানে বলা হয়েছে যে, বুধের এক দিক সর্বদা সূর্যের আলোতে আলোকিত এবং অপর দিকে চিরঅন্ধকারে বিরাজ করে এবং এই আলোকময় ও তিমির অংশের মাঝখানে চিরস্থায়ী গোধূলির একটি প্রচ্ছন্ন অঞ্চল থাকে। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে এই যুগে রচিত অনেক কথাসাহিত্যেও বুধকে এভাবে চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[3][4][7] যেমন: রে কামিংসের ১৯৩০ সালের টামা অফ দ্য লাইট কান্ট্রি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে যে বুধের বাসিন্দারা একটি অচল সূর্যের নিচে তাদের জীবনযাপন করে।[2] ক্লার্ক অ্যাশটন স্মিথের ১৯৩২ সালের ছোট গল্প দ্য ইমমর্টালস অফ মার্কারি-তে বলা হয়েছে, এই গ্রহে দুটি ভিন্ন প্রতিকূল প্রজাতি আছে।[3][7][10] আইজ্যাক আসিমভের ১৯৪২ সালের ছোটগল্প রান এরাউন্ড-এর গল্পে একটি রোবটকে বুধের অবাসযোগ্য দিবাংশ হতে জটিল বস্তুর সরবরাহ পুনরুদ্ধার করার জন্য পাঠানো হয়, যা ত্রুটিগ্রস্থ হয়।[4][7] হ্যাল ক্লিমেন্টের ১৯৫৩ সালের আইস ওয়ার্ল্ড উপন্যাসের বর্ণনায় এসেছে বহির্জাগতিক প্রাণীরা পৃথিবীর তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি তাপমাত্রায় অভ্যস্ত ছিল বলে বুধের উত্তপ্ত আবহাওয়া সম্পন্ন দিবাংশে শিবির স্থাপন করেছিল।[11] আসিমভের ১৯৫৬ সালের ছোট গল্প দ্য ডাইং নাইটে একটি চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে যে গ্রহটির চিরঅন্ধকার এলাকাতে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছে।[4] অ্যালান ই. নার্সের ১৯৫৬ সালের ছোট গল্প ব্রাইটসাইড ক্রসিং যেখানে গ্রহের আলোকিত দিকটি অতিক্রম করার একটি প্রচেষ্টাকে চিত্রায়ণ করা হয়েছে। এটিকে এভারেস্ট পর্বতে প্রথম আরোহনের অনুরূপ কৃতিত্ব হিসাবে দেখা হয়।[3][7] পল অ্যান্ডারসনের ১৯৫৭ সালের লাইফ সাইকেল অনুসারে বুধে এমন একটি প্রজাতি আছে যেটি রাতের সীমানা থেকে দিবাময় অংশের দিকে গেলে নারী থেকে পুরুষে লিঙ্গান্তরিত হয়।[4] কার্ট ভননেগুটের ১৯৫৯ সালের দ্য সাইরেন্স অফ টাইটান উপন্যাসে রাতের অংশের গুহাগুলিতে প্রাণের জীবনরূপ চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[2][3][12] এলি সাগির ১৯৬৩ সালের উপন্যাস হারপাটকোটাভ শেলের ক্যাপ্টেন ইউনো আল হাকোচাভ হামিস্টোরি (অনু. রহস্যময় গ্রহে ক্যাপ্টেন ইউনোর রোমাঞ্চকর অভিযান) দেখানো হয়েছে দুই গোলার্ধের বাসিন্দারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত।[3][4][7] ল্যারি নিভেনের ১৯৬৪ সালের ছোট গল্প দ্য কোল্ডেস্ট প্লেস বুধের রাতের চিত্রায়ণ তুলে ধরেছে এবং তিনি বলেছেন এটি একই দিক হতে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। এটিকে বুধের কল্পকাহিনীভিত্তিক শেষ গল্প বলে ধারণা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে,৩:২ কক্ষপথ ঘূর্ণন অনুসারে গ্রহের সবঅংশে নিয়মিত দিনের আলো দেখতে পায়। এই কক্ষপথ আবিষ্কারের পর সকলের একটি ভুল ধারণা দূরীভূত হয়।[3][4][7]
বুধ সর্বদা স্থিরবস্থায় সূর্যকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে না- এটি আবিষ্কৃত হওয়ার পরেও কিছু গল্প গ্রহটির একার্ধে সর্বদা দিন ও অন্য অর্ধাংশে চির অন্ধকারে থাকার ধারণা ব্যবহার করেছে। গ্রান্ট ক্যালিন তাঁর ১৯৮২ সালের "দ্য টর্টোইজ এবং ও'হেয়ার" ছোটগল্পে একজন নভোচারীকে চিত্রায়ণ করেন, যিনি দিনের তাপদাহ থেকে বাঁচতে গোধূলি অঞ্চলের রাতের দিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করেন।[4] কিম স্ট্যানলি রবিনসনের ১৯৮৫ সালের উপন্যাস দ্য মেমরি অফ হোয়াইটনেস এবং চার্লস স্ট্রসের ২০০৮ সালের স্যাটার্নস চিলড্রেন উপন্যাস দুটিতে এমন শহরের বর্ণনা করা হয়েছে যেগুলি সূর্যোলোকিত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার সেখানকার জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ।[2][7][12][13] তবে ১৯৬৫ সালের পরবর্তী বেশিরভাগ গল্পগুলোতে বুধের রুক্ষ পরিবেশগত অবস্থার উপর আলোকপাত করা হয়।[7]
আধুনিক বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে বুধগ্রহ সম্পর্কিত বর্ণ্নাগুলির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো সূর্য সম্পর্কে অধ্যয়ন করা। যেমন: ১৯৮০ সালে ডেভিড ব্রিনের 'সানডাইভার' উপন্যাসের চিত্রায়ণ অনুযায়ী মানুষ সূর্যের অভ্যন্তরে বহির্জাগতিক প্রাণ আছে কিনা তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করে।[2][3][14] একইভাবে, ২০০৫ সালে বেন বোভা রচিত মার্কারি উপন্যাসে বুধকে সৌরশক্তি কেন্দ্র হিসাবে বর্ণনা করা হয়।[12] অনেক কল্পকাহিনীতে খনিজ পদার্থ খনন করার চিত্রায়ণ লক্ষণীয়। যেমন: ১৯৯২ সালের ভিডিও গেম স্টার কন্ট্রোল II এবং স্টিফেন ব্যাক্সটারের ১৯৯৪ সালের "সিলিয়া-অফ-গোল্ড" ছোট গল্পে বুধগ্রহের মেরুর কাছে স্থায়ীভাবে ছায়াযুক্ত অঞ্চলে বরফের নীচের অংশের চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[3][4][15] আর্থার সি ক্লার্কের ১৯৭৩ সালের উপন্যাস রঁদেভু উইথ রামায় বুধ গ্রহে হার্মিয়ান নামে পরিচিত মানবসমাজের ঔপনিবেশিক বংশধরদের কঠিন এবং পাগলাটে আচরণ বর্ণিত হয়েছে।[7][12] বেশ কয়েকটি গল্পে আমলাতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে চিত্রায়ণ করা হয়েছে। যেমন: ১৯৭৬ সালের এরিক ভিনিকফ এবং মার্সিয়া মার্টিনের "রেন্ডার টু সিজার" ছোটগল্পে যেখানে বুধ গ্রহের একটি ছোট উপনিবেশ গ্রহটির স্বাধীনতা বজায় রাখার জন্য জাতিসংঘের প্রভাবকে প্রতিহত করে।[4][7] টম পারডোম রচিত ২০০০ সালের ছোটগল্প "রোম্যান্স ইন এক্সটেন্ডেড টাইম" এ একটি বিশাল মনুষ্যসৃষ্ট কাঠামোর মধ্যে আবদ্ধ বুধ গ্রহের পৃথিবীর মত আবহাওয়াগত রুপান্তর বা 'টেরাফর্মিং' চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[3] বুধের টেরাফর্মিং ডেলট্রন ৩০৩০ সঙ্গীতদল দ্বারা ২০০০ সালের ডেলট্রন ৩০৩০ সঙ্গীত অ্যালবামে চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[16] ল্যারি নিভেন এবং ব্রেন্ডা কুপারের ২০০৫ সালের কাথ অ্যান্ড কুইকসিলভার ছোট গল্পে দেখানো হয়েছে যে, বুধগ্রহ সূর্যের আকৃতি সম্প্রসারণের কারণে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।[3] ২০০০-এর দশকের গোড়ার দিকে অ্যানিমেটেড টেলিভিশন সিরিজ এনভেডার জিম-এ বুধকে একটি বিশাল মহাকাশযানে রূপান্তরিত করা হয়েছে।[17][18] এটি ২০০৭ সালের সানশাইন চলচ্চিত্রের একটি পটভূমি হিসাবে কাজ করে। এই চলচ্চিত্রে দুটি মহাকাশযানের একটি অন্যটির সাথে মিলিত হওয়ার আগে বুধের চারপাশে কক্ষপথে চলে যাওয়ার চিত্রায়ণ করা হয়েছে।[17][18]
আর্বেই লে ভেরিয়ার সূর্যের চারপাশে বুধের কক্ষপথের অসঙ্গতিগুলিকে কেন্দ্র করে ১৮৫৯ সালে বুধের কক্ষপথের অভ্যন্তরে একটি অদৃশ্য গ্রহের অস্তিত্বের প্রস্তাব দেয়। এর পূর্বে ১৮৪৬ সালে ইউরেনাসের কক্ষপথের অনিয়মের কারণে নেপচুন আবিষ্কারের নজির রয়েছে। এই অনুমিত গ্রহটিকে "ভলকান" নামে অভিহিত করা হয়েছিল, এবং লেসলি এফ স্টোনের ১৯৩২ সালের ছোট গল্প "দ্য হেল প্ল্যানেট" সহ কল্পকাহিনীর বেশ কয়েকটি গ্রন্থে উল্লেখিত হয়েছিল। "দ্য হেল প্ল্যানেট" ছোট গল্পে বুধগ্রহে সম্পদের জন্য খনন করার কাহিনি রয়েছে। ১৯৩৬ সালের রস রকলিনের "অ্যাট দা সেন্টার অফ গ্রাভিটি" ছোট গল্পে বুধের ফাঁপা অভ্যন্তর চিত্রায়ণ করা হয় এবং ১৯৪১ সালের লি ব্র্যাকেটের ছোট গল্প "চাইল্ড অফ দা সান"-এ বুধে বুদ্ধিমান জীব বাস করার কাহিনি বর্ণিত হয়েছে। বুধের কক্ষপথের অসঙ্গতি সাধারণ আপেক্ষিকতার প্রভাবের ফলে সৃষ্ট বলে বর্তমানে বোঝা যায়।[4][7][19]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.