Loading AI tools
দীর্ঘস্থায়ী রোগ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাইপারটেনশন (ইংরেজি: Hypertension), যার আরেক নাম উচ্চ রক্তচাপ, HTN , বা HPN, হল একটি রোগ যখন কোন ব্যক্তির রক্তের চাপ সব সময়েই স্বাভাবিকের চেয়ে ঊর্ধ্বে। হাইপারটেনশনকে প্রাথমিক (আবশ্যিক) হাইপারটেনশন অথবা গৌণ হাইপারটেনশনে শ্রেণীভুক্ত করা হয়। প্রায় ৯০–৯৫% ভাগ ক্ষেত্রেই "প্রাথমিক হাইপারটেনশন" বলে চিহ্নিত করা হয়।বাকি ৫-১০% বিভিন্ন রোগের কারণে হয়।[1]
শ্রেণিবিভাগ | হৃদ-সংকোচন চাপ | হৃদ-প্রসারণ চাপ | ||
---|---|---|---|---|
mmHg | kPa | mmHg | kPa | |
সাধারণ | ৯০–১১৯ | ১২–১৫.৯ | ৬০–৭৯ | ৮.০–১০.৫ |
প্রিহাইপারটেনশন | ১২০–১৩৯ | ১৬.০–১৮.৫ | ৮০–৮৯ | ১০.৭–১১.৯ |
পর্যায় ১ | ১৪০–১৫৯ | ১৮.৭–২১.২ | ৯০–৯৯ | ১২.০–১৩.২ |
পর্যায় ২ | ≥১৬০ | ≥২১.৩ | ≥১০০ | ≥১৩.৩ |
বিচ্ছিন্ন হৃদ-সংকোচন হাইপারটেনশন |
≥১৪০ | ≥১৮.৭ | <৯০ | <১২.০ |
উৎস: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (২০০৩).[2] |
সাধারনভাবে, যদি কোনও একজনের হৃদ-সংকোচন বা সিস্টোলিক রক্ত চাপ উভয় বাহুতে ১৪০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে (চাপের একটি একক) কিংবা হৃদ-প্রসারণ বা ডায়াস্টলিক চাপ ৯০ মি.মি পারদ অথবা উপরে থাকে,তাহলে তার উচ্চ রক্ত চাপ বলা যেতে পারে। একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের হিসেবে ১৩৯/৮৯ টর রক্ত চাপ থেকে ১২০/৮০ টর সংজ্ঞায়িত করেছে "প্রিহাইপারটেনশন"। প্রিহাইপারটেনশন একটি রোগ নয়, কিন্তু আশঙ্কা করে যে একটি ব্যক্তির উচ্চরক্তচাপে বিকশিত করার একটি যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ডায়াবেটিস মেলিটাস অথবা কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, ১৩০/৮০ টরের অধিক রক্তচাপকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা উচিত এবং এর দ্রুত চিকিৎসা হওয়া উচিত।
যে সকল কারণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে সেগুলো হল: বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মেদ, কাজের চাপ, মদ্যপান, পরিবারের আকার, অতিরিক্ত আওয়াজ এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা। উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ধারণা করা হয় প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী লবণের ব্যবহার দ্বারা প্রভাবিত হন।
উচ্চরক্তচাপ সর্বাপেক্ষা সাধারণ জটিল উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত অসুস্থতার একটি। এখন পর্যন্ত ৫০ টির অধিক জিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে উচ্চ রক্তচাপের গবেষণার জন্য এবং এই সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে চলেছে। উচ্চরক্তচাপ বৃক্কজনিতঅসুস্থতার কারণেও ঘটে থাকে। এক্ষেত্রে যা হয় তা হল , বৃক্কের কলাসমূহের মাঝে রক্তসঞ্চালন কমিয়ে দেয়, কারণ রেনিন-এনজিওটেন্সেন সিস্টেমের প্রধান অথবা শাখা ধমনী সমূহ সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়ে।
যদিও উচ্চ রক্তচাপ আলাদাভাবে কোন অসুস্থতা নয়, কিন্তু প্রায়ই এর চিকিৎসা প্রয়োজন হয় কারণ শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ওপর এর স্বল্প থেকে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ে। বিশেষত স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিউর, হৃদক্রিয়া বন্ধ, চোখের ক্ষতি এবং বৃক্কের বিকলতা ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
যদিও খুব সামান্য গর্ভবতী মহিলাই উচ্চ রক্তচাপ অনুভব করেন, কিন্তু শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত গর্ভধারণের কারণে উচ্চ রক্তচাপের স্বীকার হন।
হাইপারটেনশনের অবস্থা নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি হলে ধরে নেয়া হয়। সাধারণত এক সপ্তাহের বিরতিতে কমপক্ষে তিনবার মাপা লাগে। সঠিক চাপ মাপার জন্য কয়েকটি নিয়ম মানা জরুরী এবং অন্যান্য যেসকল বিষয় রক্তচাপকে প্রভাবিত করে সেগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন। যেমন, রক্তচাপ মাপার কমপক্ষে আধা ঘণ্টা আগে থেকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে এবং ক্যাফেইন গ্রহণের কমপক্ষে একঘণ্টা পরে মাপতে হবে, দুশ্চিন্তামুক্ত অবস্থায় মাপা জরুরী। আস্তিনের আকারও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। আস্তিনের ওপরের বাহুর দুই তৃতীয়াংশ ঘিরে ফেলা উচিত। কমপক্ষে পাঁচ মিনিট সময় বসা অবস্থায় থাকা উচিত।
মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের রক্তচাপের জন্য চিকিৎসকেরা ওজন কমানো এবং নিয়মিত ব্যায়ামকে চিকিৎসার প্রথম ধাপ হিসেবে ধরেন। যদিও এই পদ্ধতিগুলি রক্তচাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ, কিন্তু এইগুলি বলার চেয়ে করা প্রকৃতপক্ষে সহজ নয়। বেশিরভাগ রুগীই মাঝারি থেকে উচ্চ রক্তচাপে যারা ভূগছেন, তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য ঔষধের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তাদের রক্তচাপ নিরাপদ মাত্রায় নিয়ে আসার জন্য। যদিও ধূমপান ছেড়ে দেয়া সরাসরি রক্তচাপ কমায় না, কিন্তু উচ্চ রক্তচাপের সাথে এটি অত্যন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ফলে উচ্চ রক্তচাপের বেশকিছু উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আসে যেমন স্ট্রোক অথবা হার্ট এটাক। মৃদু উচ্চরক্তচাপ সাধারণত খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম এবং শারিরীক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সারিয়ে তোলা যায়। ফল, শাক সব্জি, স্নেহ বিহীন দুগ্ধজাত খাদ্য এবং নিম্নমাত্রার লবণ ও তেলের খাদ্য উচ্চ রক্তচাপ বিশিষ্ট রোগীর রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম রক্ত চলাচলের উন্নতি করে, এবং রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও পরিবেশগত চাপ যেমন উঁচু মাত্রার শব্দের পরিবেশ বা অতিরিক্ত আলো পরিহার করাও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য উপকারী হতে পারে।
বাজারে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বহু রকমের ঔষধের ব্যবস্থা রয়েছে যেগুলো অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ নামে পরিচিত যা রক্তচাপ কমিয়ে আনে। রক্তচাপ ৫-৬ টর কমালে তা স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ৪০%, করোনারী হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় ১৫-২০% কমিয়ে আনে এবং হার্ট ফেইলিউরের সম্ভাবনাও কমে আসে। সাধারণভাবে প্রচলিত ঔষধসমূহের মধ্যে রয়েছে, বিটা ব্লকার যেমনঃ metoprolol, atenolol, labetalol, carvedilol, এসিই নিরোধক যেমনঃ lisinopril, quinapril, fosinopril, captopril, enalapril, ramipril; এনজিওটেসটিন রিসিপটর ব্লকার (এআরবি) যেমনঃ losartan, valsartan, irbesartan; ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার যেমনঃ amlodipine, verapamil; ডাইইউরেটিকস, যেমন chlortalidone, hydrochlorothiazide (এইচসিটিজেট), মিশ্র ঔষধ (সাধারণত এইচসিটিজেট এবং অন্য একটি ঔষধ একত্রে), এবং আলফা ব্লকার যেমন terazosin এবং prazosin.
চিকিৎসার মূল লক্ষ হওয়া উচিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ১৪০/৯০ টরের নিচে আর কিছু ক্ষেত্রে আরো নিচে নিয়ে আসা যেমন ডায়বেটিস বা কিডনীর রুগীদের ক্ষেত্রে। প্রতিটি ঔষধ আলাদাভাবে সিস্টোলিক চাপ ৫-১০ টর কমিয়ে নিতে পারে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য একাধিক ঔষধের প্রয়োজন হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.