![cover image](https://wikiwandv2-19431.kxcdn.com/_next/image?url=https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/5f/Map_of_Arabic_speaking_localities_in_Israel.png/640px-Map_of_Arabic_speaking_localities_in_Israel.png&w=640&q=50)
ইসরায়েলের আরব নাগরিকগণ
ইসরায়েলের নাগরিকত্ব লাভকারী (মূলত ইসলাম ধর্মাবলম্বী) আরব জাতির ব্যক্তিগণ / From Wikipedia, the free encyclopedia
ইসরায়েলের আরব নাগরিকগণ,[3] বা আরব ইসরায়েলি বলতে সেইসব ইসরায়েলি নাগরিকদেরকে বোঝায়, যারা আরব জাতির লোক। ইসরায়েলের অনেক আরব নাগরিক নিজেদেরকে ফিলিস্তিনি বলে পরিচয় দেয় এবং নিজেদেরকে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি নাগরিক বা ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হিসেবে ডেকে থাকে।[4][5] ২০১৭ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী ইসরায়েলের মাত্র ১৬% আরব নাগরিক নিজেদেরকে ইসরায়েলি আরব হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করে, এবং এর বিপরীতে সিংহভাগই "ইসরায়েলে বাসরত ফিলিস্তিনি" পরিভাষাটি এবং ইসরায়েলের ১৭% আরব নাগরিক ("ইসরায়েলি" পরিচয়টি সম্পূর্ণ পরিহার করে) "ফিলিস্তিনি আরব" পরিভাষাটি পছন্দ করে।[6] আরবি ভাষাতে এই নাগরিকদেরকে নির্দেশ করতে বিভিন্ন পরিভাষা করা হয়, যেমন ৪৮-এর ফিলিস্তিনি বা ৪৮-এর আরব (আরবি: فلسطينيو 48، عرب 48)। ১৯৪৮ সালের ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের বলপূর্বক উচ্ছেদ বা নাক্ববা-র পরে যেসব ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের ১৯৪৮ সালের সীমানার ভেতরে থেকে যায়, তাদেরকে "৪৮-এর আরব" বলে ডাকা হয়।[7]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
১৮,৯০,০০০ ২,৭৮,০০০-এর অধিক পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান উচ্চভূমির অধিবাসী (২০১২) ইসরায়েলি জনসংখ্যার ২০.৯৫% (2019)[1][2] | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
![]() | |
ভাষা | |
লেভান্তীয় আরবি (ফিলিস্তিনি আরবি, লেবাননি আরবি, বেদুইন উপভাষাসমূহ) ও হিব্রু | |
ধর্ম | |
ইসলাম ৮৪% (সিংহভাগ সুন্নি মতাবলম্বী), খ্রিস্টধর্ম ৮% ও দ্রুজ ৮%[1] |
![](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/5/5f/Map_of_Arabic_speaking_localities_in_Israel.png/640px-Map_of_Arabic_speaking_localities_in_Israel.png)
![Thumb image](http://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/thumb/7/7e/Arab_population_israel_2000_en.png/640px-Arab_population_israel_2000_en.png)
ধর্মনির্বিশেষে ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের মাতৃভাষা হল লেভান্তীয় আরবি ভাষা, যার মধ্যে উত্তর ইসরায়েলের লেবাননি আরবি ভাষা, মধ্য ইসরায়েলের ফিলিস্তিনি আরবি ভাষা এবং নেগেভ মরুভূমির সর্বত্র প্রচলিত বেদুইন উপভাষাগুলি অন্তর্ভুক্ত। তবে ইসরায়েলের আরবরা তাদের ভাষাতে প্রচুর আধুনিক হিব্রু শব্দ ও পদগুচ্ছ আত্মীকৃত করে নিয়েছে, ফলে কেউ কেউ তাদের ভাষাকে "ইসরায়েলি আরবি উপভাষা" নাম দিয়েছেন।[8] ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের বেশিরভাগই কার্যত দ্বিভাষী, তারা মাতৃভাষা আরবি-র পাশাপাশি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে হিব্রুতেও স্বচ্ছন্দ। ধর্মীয়ভাবে ইসরায়েলি আরবদেরক বেশিরভাগই মুসলমান, বিশেষত সুন্নি মতাবলম্বী। এছাড়া এদের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যায় আরব খ্রিস্টান ও দ্রুজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় আছে।[9]
ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সালে ইসরায়েলে জাতিগতভাবে আরব নাগরিকদের সংখ্যা আনুমানিক ১৮ লক্ষ ৯০ হাজার ছিল, যা ইসরায়েলের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২১ শতাংশ।[1] এদের সিংহভাগই নিজেদেরকে জাতিগতভাবে আরব বা ফিলিস্তিনি এবং নাগরিকত্বের নিরিখে ইসরায়েলি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেয়।[10][11][12] ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের বেশিরভাগই দেশটির আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ও নগরগুলিতে বাস করে। কিছু কিছু আরব শহর ও নগরী দেশটির সবচেয়ে দরিদ্র কিছু লোকালয়। আরব শিশুরা সাধারণত ইহুদি ইসরায়েলি নাগরিকদের সাথে একই বিদ্যালয়ে নয়, বরং ভিন্ন বিদ্যালয়ে গমন করে।[13] ইসরায়েলের আরব নাগরিকরা অন্তঃকোন্দলের কারণে কখনোই রাজনৈতিকভাবে একতাবদ্ধ ছিল না। ২০২১ সালের আগ পর্যন্ত আরব রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণত কখনোই ইসরায়েলের সম্মিলিত শাসক দলের (কোয়ালিশন) অংশীদার হয়নি; ঐ বছর সম্মিলিত আরব তালিকা দলটি ইসরায়েলের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে এরূপ একটি সম্মিলিত সরকার তথা কোয়ালিশন সরকারে যোগ দেয়।[14] বেশির ভাগ আরব ইসরায়েলির সাথে পশ্চিম তীর ও গাজা ভূখণ্ডে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের এবং জর্দান, সিরিয়া ও লেবাননে নির্বাসিত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের পারিবারিক সম্পর্ক বিদ্যমান।[15] গালীলের বেদুইন, নেগেভের বেদুইন ও দ্রুজ গোত্রীয় আরবেরা নিজেদেরকে ইসরায়েলি পরিচয় দিতে বেশি পছন্দ করে।[16][17][18][19]
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল জয়ী হয়ে পূর্ব জেরুসালেম ও গোলান উচ্চভূমি সামরিকভাবে দখল করার পরে পূর্ব জেরুসালেমের আরব ও গোলান উচ্চভূমির দ্রুজ জাতির লোকদেরকে ইসরায়েলের নাগরিক হবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের সিংহভাগই ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে না বলে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তারা ফলত ইসরায়েলের অধিকৃত ভূখণ্ডের স্থায়ী অধিবাসীতে পরিণত হয়।[20] তবে তাদের ইসরায়েলের নাগরিকত্বের আবেদন, পৌর সেবা গ্রহণ ও পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার আছে।[21]
২০১৬ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্স সাময়িকীতে প্রকশিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ও একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে এসে ইসরায়েলের আরব নাগরিকেরা ক্রমাগতভাবে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটায় ও সুশীল সমাজে তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে, কিন্তু ২০০৯ সালে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দ্বিতীয়বার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবার পর থেকে তাদের অধিকার খর্ব হতে শুরু করে এবং ইসরায়েলের সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ তাদেরকে অধিকারবঞ্চিত করে, ফলে তারা কার্যত ২০১০-এর দশকের মধ্যভাগে এসে ইসরায়েলের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়।[22] ব্রিটিশ অর্থনীতি বিষয়ক সাপ্তাহিক সাময়িকী দি ইকোনমিস্ট-এ ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলের আরব নাগরিকেরা তাত্ত্বিকভাবে আইনের দৃষ্টিতে ইহুদি নাগরিকদের সমান গণ্য হলেও তাদের অনেকেই দৈনিক ভিত্তিতে বিভিন্ন রকমের বৈষম্যের শিকার হয়।[23] একই বছরের মে মাসে ইন্টারনেটভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসরায়েলের আরব নাগরিকদের ৪০% দারিদ্র্যে বসবাস করে, যার কারণ দুর্বল শিক্ষাব্যবস্থা ও মৌলিক অবকাঠামোর সহজলভ্যতার অভাব। ২০১০-এর দশকের শেষে এসে ইসরায়েলি আরবদের মধ্যে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে ও আন্তঃগোত্রীয় সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে খুনের হার ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে আরব এলাকাগুলিতে ইসরায়েলি পুলিশি প্রহরার অভাব রয়েছে।[24]