Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইসমাইল পাশা (আরবি: إسماعيل باشا Turkish: İsmail Paşa) (৩১ ডিসেম্বর ১৮৩০ – ২ মার্চ ১৮৯৫) ছিলেন মিশর ও সুদানের খেদিভ। ১৮৬৩ থেকে ১৮৭৯ পর্যন্ত তিনি এই পদে ছিলেন। তিনি তার দাদা মুহাম্মদ আলি পাশার মত উচ্চাভিলাষী ছিলেন এবং তার শাসনামলে মিশর ও সুদানে অনেক আধুনিকায়ন করা হয়। এসময় শিল্প ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ, নগরায়ন এবং আফ্রিকায় সীমানা বিস্তার করা হয়।
ইসমাইল পাশা | |
---|---|
মিশর ও সুদানের খেদিভ | |
রাজত্ব | ১৯ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ২৬ জুন ১৮৭৯ |
পূর্বসূরি | সাইদ পাশা |
উত্তরসূরি | তাওফিক পাশা |
জন্ম | কায়রো | ৩১ ডিসেম্বর ১৮৩০
মৃত্যু | ২ মার্চ ১৮৯৫ ৬৪) ইস্তানবুল | (বয়স
সমাধি | |
দাম্পত্য সঙ্গী | শেহরেত ফেজা হানিমেফেন্দি জানানিয়ার হানিমেফেন্দি জেশম আফেত হানিমেফেন্দি শাফাক নুর হানিমেফেন্দি নুর ফেলেক কাদিনেফেন্দি মিশল মেলেক কাদিনেফেন্দি জিহান শাহ কাদিনেফেন্দি বেজমি আলেম কাদিনেফেন্দি হুর জেনান কাদিনেফেন্দি জামাল নুর কদিনেফেন্দি ফেরিয়াল কাদিনেফেন্দি মিশল জিহান কাদিনেফেন্দি নেশেদিল কাদিনেফেন্দি ফেলেক নাজ কাদিনেফেন্দি |
বংশধর | তাওফিক পাশা আলি জামালউদ্দিন পাশা এমিনা আজিজা নিমেতউল্লাহ |
রাজবংশ | মুহাম্মদ আলি রাজবংশ |
পিতা | ইবরাহিম পাশা |
মাতা | হোশিয়ার কাদিনেফেন্দি |
১৮৭৯ সালের একটি বক্তব্যে তার দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠে: "আমার দেশ এখন আর আফ্রিকার অংশ নয়; আমরা এখন ইউরোপের অংশ। তাই এটা স্বাভাবিক যে আমরা আমাদের পুরনো রীতিনীতি ত্যাগ করব এবং আমাদের সামাজিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন রীতিনীতি গ্রহণ করব"।
১৮৬৭ সালে তিনি খেদিভ (ভাইসরয়) হিসেবে উসমানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করতে সক্ষম হন। ইতিপূর্বে ১৫১৭ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত তার পূর্বসুরিরা ওয়ালি (গভর্নর) হিসেবে পরিচিত হতেন। তবে ইসমাইলের নীতির কারণে মিশর ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। ফলে সুয়েজ খাল কোম্পানিতে মিশরের শেয়ার যুক্তরাজ্যের কাছে বিক্রি করতে হয়।
ইসমাইল পাশা ছিলেন ইবরাহিম পাশার তিন পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয় এবং মুহাম্মদ আলি পাশার নাতি। তিনি কায়রোর আল মুসাফির খানা প্রাসাদে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[1] তার মা হোশিয়ার ছিলেন তার পিতার তৃতীয় স্ত্রী। বলা হয়ে থাকে যে হুশিয়ার ছিলেন উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদের স্ত্রী ও প্রথম আবদুল আজিজের মা পেরতেভনিয়ালের বোন।[2][3][4][5]
ইসমাইল পাশা প্যারিসে ইউরোপীয় শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। শিক্ষাসমাপ্তির পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ফলে তিনি তার চাচা সাইদ পাশার উত্তরসুরি হন। সাইদ তাকে পরের কয়েক বছর বিদেশি মিশনের দায়িত্ব দেন। ১৮৬১ সালে সুদানে একটি বিদ্রোহ দমনের জন্য তাকে পাঠানো হয়।
সাইদের মৃত্যুর পর ১৮৬৩ সালের ১৯ জানুয়ারি ইসমাইল খেদিভ ঘোষিত হন। তবে উসমানীয় সাম্রাজ্য ও অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলো তাকে একজন ওয়ালি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। উসমানীয়রা তেকে খেদিভ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। শেষপর্যন্ত ১৮৬৭ সালে সুলতান আবদুল আজিজের কাছ থেকে একটি ফরমান আদায় করতে সক্ষম হন। এতে পূর্বের চেয়ে বেশি কর প্রদানের বিনিময়ে তাকে খেদিভ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। আরেকটি ফরমানের মাধ্যমে উত্তরাধিকার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পিতা থেকে পুত্রের বদলে ভাই থেকে ভাইয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আইন অনুমোদন করে। ১৮৭৩ সালের একটি ফরমানে কার্যত মিশর খেদিভাতের স্বাধীনতা স্বীকার করে নেয়া হয়।
ইসমাইল পাশা ব্যাপক আকারে অভ্যন্তরীণ সংস্কার শুরু করেন। তিনি শুল্ক ব্যবস্থা, ডাকঘর সংস্কার করেন, বাণিজ্যিক অগ্রগতি বেগবান করেন। দেশে চিনি শিল্প গড়ে তোলা হয়। এসময় প্রাসাদ, বিলাসবহুল বিনোদন ব্যবস্থা, অপেরা ও থিয়েটার গড়ে উঠে। তিনি কায়রোর আকার অনেক বৃদ্ধি করেন। প্যারিসের মডেলে শহরের পশ্চিম প্রান্তে একটি নতুন মহল্লা গড়ে তোলা হয়। আলেক্সান্দ্রিয়ারও উন্নতি হয়। তিনি মিশরে ব্যাপক আকারে রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প চালু করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
১৮৬৬ সালের নভেম্বরে তিনি একটি প্রতিনিধি পরিষদ গঠন করেন যা তার অন্যতম উল্লেখযোগ্য অর্জন হিসেবে ধরা হয়। এই পরিষদ শুধুমাত্র উপদেষ্টার ভূমিকা পালন করবে ধরে নেয়া হলেও সদস্যরা সরকারি কাজের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিলেন। পরিষদে গ্রাম প্রধানদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য ছিল।
ইসমাইল দাস প্রথা হ্রাসের প্রচেষ্টা করেছিলেন। তিনি আফ্রিকায় মিশরের শাসন বর্ধিত করেছেন। ১৮৭৪ সালে তিনি দারফুরকে নিজ শাসনের আওতাভুক্ত করেন। তবে ইথিওপিয়ার সম্রাট চতুর্থ ইয়োহান্নেস কর্তৃক কয়েকবার পরাজিত হওয়ার ফলে ইথিওপিয়ায় শাসন বিস্তৃত করা সম্ভব হয়নি, প্রথমে ১৮৭৫ সালের ১৬ নভেম্বর গুনদাত এবং পরের বছর মার্চে গুরার যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন।
ইসমাইল পাশা সমগ্র নীল নদ অঞ্চল এবং লোহিত সাগরের সমগ্র আফ্রিকান উপকূল নিজ শাসনের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন।[6] এসকল কারণ এবং উক্ত অঞ্চলের সমৃদ্ধ কাঁচামাল ও উর্বর মাটির কারণে ইসমাইল ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন। এসময় ইথিওপিয়ার শাসক ছিলেন সম্রাট চতুর্থ ইয়োহান্নেস। ১৮৬৫ সালে উসমানীয়রা হাবেশ প্রদেশকে ইসমাইলের কাছে সমর্পণ করে। এই প্রদেশ ইথিওপিয়ার প্রতিবেশী ছিল। প্রথমে প্রদেশটি শুধু উপকূলীয় অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। পরে ইথিওপীয় শাসকের অঞ্চলে এর সীমানা বৃদ্ধি করা হয়। বারকা বদ্বীপে বৃহৎ তুলা উৎপাদন ক্ষেত্রসহ নতুন অর্থনৈতিক প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৮৭২ সালে পূর্ব সুদান ও লোহিত সাগর উপকূল প্রদেশের গভর্নর ওয়ার্নার মানজিঙ্গার পাশা কর্তৃক বোগোস একীভূত হয়। ১৮৭৫ সালের অক্টোবর ইসমাইল পাশার সেনাবাহিনী পার্শ্ববর্তী হামাশিনের উচ্চভূমি অধিকার করে যা এসময় ইথিওপীয় সম্রাটের করদ অঞ্চল ছিল। ১৮৭৬ সালের মার্চে ইসমাইলের সেনাবাহিনী গুরার যুদ্ধে ইয়োহান্নেসের সেনাবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। ইসমাইলের পুত্র হাসান ইথিওপীয়দের হাতে বন্দী হন এবং মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দেয়ার পর ছাড়া পান। এরপর দীর্ঘ স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয় যা ১৮৮৪ সালে ইঙ্গ-মিশরীয়-ইথিওপীয় হেয়েট চুক্তির পর সমাপ্ত হয়েছে। এসময় বোগোস ইথিওপিয়াকে ফিরে দেয়া হয়। লোহিত সাগর প্রদেশ এর অল্প কিছুকাল পরে ইতালীয়রা দখল করে নেয়.
ইসমাইলের খেদিভাত সুয়েজ খাল খননের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিল। তিনি খাল খননের মিশরীয় অংশ তত্ত্বাবধান করতে রাজি হন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি সাইদের দেয়া সুবিধা অনুমোদন দিতে রাজি হননি। এই বিষয় ১৮৬৪ সালে তৃতীয় নেপোলিয়নের কাছে উত্থাপিত হলে তিনি ইসমাইলের পদক্ষেপের ফলে সৃষ্ট ক্ষতিপূরণের জন্য ৩৮,০০,০০০ পাউন্ড প্রদান করেন। এরপর ইসমাইল বৈদেশিক পক্ষগুলোর কাছে নিজেকে প্রতিষ্ঠার জন্য পদক্ষেপ নেন এবং অনেকাংশে সফল হন। ১৮৬৭ সালে তিনি প্যারিস ও লন্ডন সফর করেন। লন্ডনে রাণী ভিক্টোরিয়া ও লর্ড মেয়র তাকে স্বাগত জানান। ব্রিটেনে তিনি উসমানীয় সুলতানের সাথে ব্রিটিশ নৌবহরের প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছিলেন। ১৮৬৯ সালে তিনি পুনরায় ব্রিটেন সফর করেন। সুয়েজ খাল চালু হওয়ার পর ইসমাইল উৎসবের আয়োজন করেন এবং এতে বিশ্বের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দাওয়াত দেয়া হয়।
ইসমাইল পাশার কর্মকাণ্ড এবং ইথিওপিয়ার সাথে যুদ্ধের ফলে মিশর ইউরোপীয় শক্তিগুলোর কাছে ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়ে। তারা এই অবস্থাকে ইসমাইলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। গৃহীত পদক্ষেপের মধ্যে মিশ্র আদালত ব্যবস্থা মিশরীয় ও সুদানিজদের কাছে অজনপ্রিয় পদক্ষেপের অন্যতম ছিল। এই ব্যবথায় ইউরোপীয়দেরকে মিশরীয় বা সুদানিজ আদালতের পরিবর্তে শুধুমাত্র তাদের নিজেদের দেশের বিচারকদের সামনে বিচার করা যেত। শেষপর্যন্ত অর্থনৈতিক সংকট তৈরী হয়। ঋণজনিত সংকটের ফলে শেষপর্যন্ত ১৮৭৫ সালে সুয়েজ খাল কোম্পানির মিশরীয় ও সুদানিজ শেয়ার ৩৯,৭৬,৫৮২ পাউন্ডের বিনিময়ে ব্রিটেনের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। এরপর থেকে মিশর ও সুদানে বৃহৎ শক্তিগুলোর সরাসরি হস্তক্ষেপ শুরু হয়।
১৮৭৫ সালের ডিসেম্বরে মিশরের অর্থনৈতিক অবস্থায় যাচাইয়ের জন্য ব্রিটিশ সরকার স্টিফেন কেভ ও জন স্টক্সকে পাঠায়।[7] পরের বছর ১৮৭৬ সালের এপ্রিলে তাদের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে বিদেশি শক্তিগুলোকে হস্তক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। এর ফলশ্রুতিতে কেইস দে লা ডেটে প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্টোবরে জর্জ গুশচেন ও জুবার্ট আরো তদন্ত চালান। এর ফলে অর্থনীতি ও সরকারের উপর ইঙ্গ-ফরাসি নিয়ন্ত্রণ স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে মেজর বেরিঙের অধীনে আরেকটি কমিশন ১৮৭৮ সালে অধিকতর অনুসন্ধান করে। এরপর ইসমাইল পাশা সাংবিধানিক প্রধান, নুবার পাশা প্রধানমন্ত্রী, চার্লস রিভার্স উইলসন অর্থমন্ত্রী ও দা ব্লিগণিয়ার্স গণপূর্ত মন্ত্রী হন।
ইউরোপীয়দের আধিপত্য অধিকাংশ মিশরীয় মেনে নিতে পারেনি। তারা কর্নেল আহমেদ উরাবির নেতৃত্বে সংগঠিত হতে শুরু করে। বিদ্রোহের ফলে ইউরোপীয়দের কাছ থেকে মুক্তি সম্ভব আশা করে ইসমাইল উরাবিকে প্রতিরোধ করার জন্য বেশি চেষ্টা করেননি। তিনি দাবিমত সরকার বিলুপ্ত করেন। ব্রিটেন ও ফ্রান্স এই ঘটনাকে গুরুতর বিবেচনা করে। ১৮৭৯ সালের মে মাসে তারা ব্রিটিশ ও ফরাসি মন্ত্রীদের পুনর্বহালের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এসময় উরাবির হাতে দেশের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং ইসমাইলেরও এতে সম্মতি ছিল না। ফলে ইসমাইল পাশাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ব্রিটিশ ও ফরাসিরা উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদকে চাপ দেয়। ১৮৭৯ সালের ২৬ জুন ইসমাইল পাশা পদচ্যুত হন। ইসমাইলের জ্যেষ্ঠ পুত্র তাওফিক পাশা অনেক নমনীয় ছিলেন এবং তাকে ইসমাইলের উত্তরসুরি করা হয়। ইসমাইল পাশা রেসিনায় নির্বাসনে যান যা বর্তমানে নেপলসের কাছে এরকোলানোতে অবস্থিত। ১৮৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি নির্বাসনে ছিলেন। এরপর সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ কর্তৃক তিনি ইস্তানবুলের এমিরগান প্রাসাদে ফিরে আসার অনুমতি পান।[8] এখানে তিনি অনেকটা বন্দী জীবন কাটান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে ছিলেন। মৃত্যুর পর তাকে কায়রোতে দাফন করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.