Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইউয়েন রেন চাও (চীনা: 趙元任; ফিনিন: Zhào Yuánrèn; ৩ নভেম্বর ১৮৯২- ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২), ছিলেন একজন চীনা-আমেরিকান ভাষাবিদ, শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, কবি এবং রচনাকার যিনি চীনা ধ্বনিবিজ্ঞান ও ব্যাকরণের আধুনিক গবেষণায় অবদানের জন্য বিখ্যাত। চাও এর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চীন দেশে, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য চীন যান যেখানে তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জন করেন। একজন স্বাভাবিক ভাবেই বহুভাষী এবং ভাষাবিদ। চাও সবচেয়ে বেশি পরিচিত মান্দারিন প্রাইমা-এর জন্য যা বিংশ শতাব্দীতে সর্বাধিক ব্যবহার হওয়া চীনা পাঠ্যবই গুলোর একটি এবং তার গ্বয়েউ রোমাটযিহ রোমানাইজেশন (চীনা বর্ণকে ল্যাটিন বর্ণে উপস্থাপন) পদ্ধতি, যা পিনয়িন ও অন্যান্য রোমানাইজেশন পদ্ধতির মত নয় বরং শব্দের সুর বোঝানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডায়াক্রিটিক ছাড়াই মান্দারিন চাইনিজ উচ্চারণের লিখিত রূপ দিতে পারে।
ইউয়েন রেন চাও | |||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
趙元任 | |||||||||||||||||||||||||||||
জন্ম | তিয়াঞ্জিন, কিউইং সাম্রাজ্য | ৩ নভেম্বর ১৮৯২||||||||||||||||||||||||||||
মৃত্যু | ২৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮২ ৮৯) ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটস, যুক্তরাষ্ট্র | (বয়স||||||||||||||||||||||||||||
জাতীয়তা | চীনা | ||||||||||||||||||||||||||||
নাগরিকত্ব | আমেরিকান (১৯৫৪ থেকে) | ||||||||||||||||||||||||||||
শিক্ষা | হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় (পিএইচডি) কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় (বি.এ.) | ||||||||||||||||||||||||||||
পরিচিতির কারণ | গ্বয়েউ রোমাটযিহ সিস্টেম, মান্দারিন প্রাইমার , চীনা উপভাষা অধ্যয়ন | ||||||||||||||||||||||||||||
দাম্পত্য সঙ্গী | বুয়েই ইয়াং চাও (বি. ১৯২১–১৯৮১) | ||||||||||||||||||||||||||||
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |||||||||||||||||||||||||||||
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় টিসিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয় | ||||||||||||||||||||||||||||
উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী | জেরি নরমান Anne O. Yue-Hashimoto | ||||||||||||||||||||||||||||
চীনা নাম | |||||||||||||||||||||||||||||
ঐতিহ্যবাহী চীনা | 趙元任 | ||||||||||||||||||||||||||||
সরলীকৃত চীনা | 赵元任 | ||||||||||||||||||||||||||||
|
চাও এর পূর্বপুরুষরা ছিলেন চিয়াংসু প্রদেশের ছাংচৌ অঞ্চলে এবং তার জন্ম হয়েছিল তিয়াঞ্জিনে। বক্সার ইনডেমনিটি স্কলারশিপ পেয়ে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় হতে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান অধ্যয়নের জন্য চাও ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র যান যেখানে তিনি নতুন সংস্কৃতি আন্দোলনের নেতা হু শিহ এর সহপাঠী ও আজীবন বন্ধু হন। ফলে তিনি দর্শন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “চলমানতাঃ কৌশলের অধ্যয়ন” শিরোনামে গবেষণা পত্রের ভিত্তিতে ১৯১৮ সালে পিএইচডি অর্জন করে।[1]
কলেজে লেখাপড়া করার সময় থেকেই সঙ্গীত এবং ভাষার প্রতি তার আগ্রহ ছিল। তিনি স্পষ্টভাবে জার্মান ও ফরাসি ভাষায় কথা বলতে পারতেন এবং অল্প অল্প জাপানী বলতে পারতেন। তিনি প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন সম্পর্কেও কিছু পুথিগত ধারণা রাখেন। ১৯২০ সালে বিখ্যাত ইংরেজ দার্শনিক বারট্রানড রাসেল চীনে আসলে চাও তার অনুবাদকের দায়িত্ব পালন করেন। চাও তার আমার ভাষাবিদ আত্মজীবনী গ্রন্থে লিখেন যে তিনি খুব বেশি প্রচেষ্টা ব্যতীতই একটি চীনা উপভাষা দ্রুত আত্মস্থ করতে সক্ষম ছিলেন। চাও স্বাভাবিকভাবেই উচ্চারণের সূক্ষ্ম পার্থক্য শনাক্ত করতে পারতেন যা ছিল "এর শুদ্ধতার জন্য অসাধারণ ",[2] যার ফলে তিনি বিভিন্ন উপভাষার শব্দ অতি মাত্রায় নির্ভুলতার সাথে সংরক্ষণ করতে পারতেন।
১৯২০ সালে তিনি চীনে ফিরে এসে টিসিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত শেখাতে থাকেন। একবছর পর তিনি আমেরিকা ফিরে গিয়ে হার্ভার্ডে শিক্ষকতা চালিয়ে যান। ১৯২৫ সালে তিনি আবার চীনে ফিরে এসে টিসিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা চালিয়ে যান এবং ১৯২৬ সালে উ ডায়ালেক্টের উপর জরিপ শুরু করেন।[3] ১৯২৮ সাল থেকে একাডেমিয়া সিনিকা এর ইতিহাস ও দর্শনবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের জন্য তিনি সারা চীনজুড়ে ভাষা সংক্রান্ত মাঠ পর্যায়ের কাজ করতে থাকেন। এই সময়ে তিনি সেই সময়কার আরও দুই জন খ্যাতনামা ভাষাবিদ লুও ছাংপেই এবং লি ফাং কুয়েই এর সহযোগিতায় বার্নার্ড কার্লগ্রেনের স্মারক Études sur la Phonologie Chinoise-এ (১৯৪০-এ প্রকাশিত) সম্পাদনা এবং অনুবাদে যুক্ত হয়। ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং পরে সেখানেই স্থায়ী হন। ১৯৪৫ সালে তিনি লিংগুইস্টিক সোসাইটি অফ আমেরিকার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ১৯৬৬ সালে সোসাইটির জার্নাল ‘’ল্যাংগুয়েজ’’-এ তাঁকে উৎসর্গ করে বিশেষ সংখ্যা বের হয়। ১৯৫৪ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব লাভ করেন। ১৯৫০-এর দিকে তিনি সোসাইটি ফর জেনারেল সিস্টেমস রিসার্চের প্রথম দিককার সদস্যদের মধ্যে একজন ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এট বারকেলেই অধ্যাপনা করেন এবং সেখানেই ১৯৫২ সালে ওরিয়েন্ট ভাষাসমূহের আগাসসিজ অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯২০ সালে তিনি শারীরতত্ত্ববিদ ইয়াং বুয়েইকে বিয়ে করেন। প্রথাগত জাঁকজমকের পরিবর্তে এই বিয়ের অনুষ্ঠান খুব সাধারণ হয়েছিল যাতে শুধু হু শি এবং তাঁর আরেক বন্ধু উপস্থিত ছিলেন। হু এর উপস্থিতি এই দম্পতিকে সংবাদপত্রে নব সংস্কৃতি প্রজন্মের জন্য আদর্শ হিসেবে তুলে ধরা হয়।[4]
মিসেস চাও হাও টু কুক অ্যান্ড ইট ইন চাইনিজ (চীনে কীভাবে রান্না করতে এবং খেতে হয়) বই রচনার জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেন যার জন্য চাও তাঁর স্ত্রীর তৈরি রেসিপি এবং অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে বই লিখেন। তিনি অথবা তাঁর মেয়ে বইটির জন্য "পট স্টিকার" এবং "স্টির ফ্রাই" নামের প্রচলন করেন যা বর্তমানে ব্যাপকভাবে গৃহীত।[5] “স্টিরড এগস” (অধ্যায় ১৩) অর্থাৎ উজ্জীবিত ডিম সংক্রান্ত তার রেসিপি হচ্ছে একটি ক্লাসিক আমেরিকান রম্য রচনা (কমিক)।
এই দম্পতি তাদের কোমল ব্যবহার বিশেষ করে চাও ভদ্র কৌতুক এবং ভাষা সংক্রান্ত রসিকতার প্রতি তার আগ্রহের জন্য বিখ্যাত। তারা ‘’ Life with Chaos: the autobiography of a Chinese family (জীবন এবং শোরগোলঃ একটি চীনা পরিবারের আত্মজীবনী)’’ শিরোনামে তাদের পারিবারিক ইতিহাস প্রকাশ করেন। পরবর্তী জীবনে, ১৯৮১ সালে দেং জিয়াওপিং তাঁকে চীনে ফিরে আসতে আমন্ত্রণ জানান। এর আগে প্রিমিয়ার চৌ এনলাই ১৯৪০ এর পর চাও প্রথমবারের মত চীন দেশে আসেন। ১৯৮১ সালের মার্চ মাসে তাঁর স্ত্রী মারা গেলে একই বছর মে এবং জুনের মধ্যে তিনি চীনে আসেন। তিনি ক্যামব্রিজ, ম্যাসাচুসেটসে মারা যান। তাঁর প্রথম মেয়ে রুলান চাও পিয়ান (赵如兰/趙如蘭) (১৯২২-২০১৩) হার্ভার্ডে পূর্ব এশিয়ান স্টাডিজ এবং সঙ্গীতের প্রফেসর ছিলেন। তাঁর তৃতীয় মেয়ে লেন্সি নামিওকা (赵来思/趙來思), ১৯২৯-এ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিশুতোষ গ্রন্থের রচয়িতা এবং গণিতজ্ঞ।
যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে উচ্চারণের একীভূতকরণ সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবে ১৯২১ সালে চাও ঐতিহ্যবাহী চীনা অক্ষর উচ্চারন গ্রামোফোনে সংরক্ষণ করেন যা দেশব্যাপী বিতরণ করা হয়। তিনি চীনা ব্যাকরণের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ গ্রন্থ ‘’এ গ্রামার অফ স্পোকেন চাইনিজ’’ (বার্কলেঃ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া প্রেস, ১৯৬৮) এর রচয়িতা যা চীনা ভাষায় পৃথকভাবে অনুবাদ করেন লু শুজিয়াং (吕叔湘) ১৯৭৯ সালে এবং টিং প্যাং-হসিন (丁邦新) ১৯৮০ সালে। এটি তাঁর দ্বারা পূর্বে রচিত পাঠ্যবই ‘’মান্দারিন প্রাইমার’’ এবং ‘’ক্যান্টনিজ প্রাইমারের’’ ব্যাকরণ অধ্যায়গুলোর বর্ধিত রূপ। তিনি ‘’কনসাইজ ডিকশনারি অফ স্পোকেন চাইনিজ’’ এর সহকারী লেখক যা ছিল প্রথম শব্দকোষ (ডিকশনারি) যাতে ‘’বদ্ধ’’ (কেবল অন্য শব্দের সাথে থাকে) ও ‘’মুক্ত’’ (একটি স্বতন্ত্র শব্দ হিসেবে গ্রহণযোগ্য) বর্ণ চিহ্নিত করা হয়। সরলীকৃত চীনা অক্ষর (通字) হচ্ছে তাঁর উদ্ভাবিত একটি ধ্বনিবিজ্ঞান ব্যবস্থা যা সবগুলো প্রধান প্রধান চীনা অক্ষর বৈচিত্র্যের উচ্চারণ উপস্থাপন করে। এটি সরাসরি একটি রোমানাইজেশন পদ্ধতি নয় বরং দুইটি ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিঃ একটি চীনা বর্ণগুলোকে ধ্বনি হিসেবে শব্দগুচ্ছ আকারে ব্যবহার করে এবং অপরটি হচ্ছে বর্ণমালা রোমানাইজেশন পদ্ধতি যার শব্দ বিশ্লেষণ ও স্বরের বানান গ্বয়েউ রোমাটজিহ এর অনুরূপ। চাও ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেটে ও অবদান রাখেন চাও টোন লেটার্সের মাধ্যমে।[6]
তিনি লুইস ক্যারলের এলিস’স অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড এর অনুবাদ করেন যেখানে তিনি মূল গ্রন্থের প্রতিটি শব্দের ভূমিকা অটুট রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেন এবং এটিকে ‘’কথ্য শিল্পের একটি ক্লাসিক’’ হিসেবে গণ্য করা হয়। [7]
তিনি দা লায়ন-ইটিং পোয়েট ইন দা স্টোন ডেন ও লিখেন। এই চীনা লেখাটি ৯২ টি শব্দ রয়েছে যেগুলো উচ্চারণে সর্বদা shī, shí, shǐ এবং shì আওয়াজ হয় (এই ডায়াক্রিটিক মান্দারিনের ৪টি স্বর নির্দেশ করছে)।লেখার সময় চীনা শব্দ ব্যবহার করে লেখাটি বোঝা যায় কিন্তু এটি আদর্শ চীনায় পড়া সহজ নয় এবং একই সাথে কাগজে রোমানাইজড আকারে লেখা থাকলে কাগজেও সহজসাধ্য নয়। এই উদাহরণটি চীনা অক্ষরের রোমানাইজেশনের বিরুদ্ধে যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়। বাস্তবিকই লেখাটি ক্লাসিকাল চীনা অক্ষরের বিপক্ষে একটি যুক্তি ছিল এবং চাও আসলেই আধুনিক চীনা লেখ্য উপভাষার রোমানাইজেশনের পক্ষে ছিলেন; তিনি গ্বয়েউ রোমাটজিহ এর নির্মাতাদের একজন ছিলেন।
তাঁর গান (কম্পোজিশন) How could I help thinking of her (教我如何不想她 jiāo wǒ rúhé bù xiǎng tā) ১৯৩০-এর দিকে চীনে "পপ হিট " ছিল, এর শব্দগুলো রচনা করেছিলেন আরেক জন ভাষাবিদ লিউ ব্যান্নং।
চীনা ভাষায় জাব্বেরৌকি অনুবাদ করেন।[8] এর জন্য তিনি শব্দ উদ্ভাবন করেন যাতে রব গিফোর্ড এর বর্ণনার অনুরূপ সৃষ্টি করতে পারেন যা ছিল "slithy toves that gyred and gimbled in the wabe of Carroll's original."[9]
হাও টু কুক অ্যান্ড ইট ইন চাইনিজ ১৯৪৫ সালে প্রকাশিত একটি রান্নার বই যার কৃতিত্ব ছিল চাও এর স্ত্রী বুয়েই ইয়াং চাও এর। দা নিউ ইয়র্ক টাইমসের জেসন এপ্সটাইন উদ্ধৃত করেন "এটা সুস্পষ্ট যে প্রফেসরই তাঁর স্ত্রীর বই এর লেখার কাজটি করেন।"[10] বুয়েই ইয়াং চাও বলেছিলেন যে তিনি ইংরেজিতে লিখতে অথবা পড়তে প্রায় একদমই পারতেন না।[10]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.