আল বদর ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তা দানকারী নিন্দিত আধা-সামরিক বাহিনী।[1] যার সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রকে অখণ্ড রাখার উদ্দেশ্যে জনমত গঠন করার জন্য। পূর্বাঞ্চলীয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজীর পৃষ্ঠপোষকতায় এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। ইসলামি ইতিহাসের বদর যুদ্ধকে আদর্শ করে এই বাহিনী গঠিত হলেও এদের মূলকাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া । মে মাসে রাজাকার বাহিনী গঠনের আগেই এপ্রিল মাসে গঠিত হয় আল বদর বাহিনী। রাজাকার বাহিনী সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে তারা একতা ও অখণ্ডতায় বিশ্বাস করত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর পতনের পর এই বাহিনীর বিলুপ্তি ঘটে।
আল বদর বাহিনী | |
---|---|
আলবদর | |
নেতা | মুহম্মদ আশরাফ হোসাইন, মতিউর রহমান নিজামী |
অপারেশনের তারিখ | ২২ এপ্রিল - ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
সক্রিয়তার অঞ্চল | বাংলাদেশ |
মতাদর্শ | পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ পাকিস্তানের অখন্ডতা বাংলাদেশের বিরোধীতা |
মিত্র | পাকিস্তান |
বিপক্ষ | ভারত মুক্তিবাহিনী |
খণ্ডযুদ্ধ ও যুদ্ধ | বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ |
প্রতিষ্ঠা
সাংবাদিক ও গবেষক আজাদুর রহমান চন্দন তার এক বইয়ে লিখেছেন, একাত্তরে ইসলামী ছাত্রসংঘকে আল-বদর বাহিনীতে রূপান্তর করা হয়েছিল। এ বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয় ২২ এপ্রিল জামালপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর পদার্পণের পরপর ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে। অন্যদিকে আল-শামস বাহিনীতে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাড়াও মুসলিম লীগপন্থী বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও মাদ্রাসা ছাত্রদের সংগঠন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার নেতা-কর্মীরা ছিল। আল-বদর ও আল-শামস বাহিনীর কর্মকাণ্ড ছিল অনেকটা একই রকম। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে এদের ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। [2] ১৯৭১ সালে দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে আজাদুর রহমান চন্দন লিখেছেন, সে বছরের সেপ্টেম্বরের প্রথম ভাগ পর্যন্ত জামালপুরে আলবদর বাহিনী সাতটিরও বেশি ক্যাম্প স্থাপন করে। [3]
২২ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে ময়মনসিংহ জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি মুহম্মদ আশরাফ হোসাইনের নেতৃত্বে জামালপুর শহরে আল বদর বাহিনী গঠিত হয়।
দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ পত্রিকায় ২৩ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে আল বদর বাহিনী নিজেদের সম্পর্কে বলে,
"আলবদর একটি নাম! একটি বিস্ময়। আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী আলবদর সেখানেই! যেখানেই দোষ্কৃতকারী, আলবদর সেখানেই। ভারতীয় চর বা দুষ্কৃতকারীদের কাছে আলবদর সাক্ষাৎ আজরাইল।"
দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত সংবাদে ইসলামি ছাত্রসংঘের নেতা মতিউর রহমান নিজামী বলে,
"আমাদের পরম সৌভাগ্যই বলতে হবে। পাকসেনাদের এ দেশের ইসলাম প্রিয় তরুন ছাত্র সমাজ বদর যুদ্ধের স্মৃতিকে সামনে রেখে আল-বদর বাহিনী গঠন করেছে। বদর যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৩১৩। এই স্মৃতিকে অবলম্বন করে ৩১৩ জন যুবকের সমন্বয়ে এক একটি ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
ইরানি বংশোদ্ভূত গবেষক সাইয়েদ ওয়ালি রেজা নাসের তার 'দ্য ভ্যানগার্ড অব দি ইসলামিক রিভলিউশন : দ্য জামায়াতে ইসলামী অব পাকিস্তান' শীর্ষক বইয়ে লিখেছেন, 'একাত্তরে সরকারের অণুপ্রেরণায় ইসলামী ছাত্রসংঘ (আইজেটি) হয়ে ওঠে জামায়াতে ইসলামীর মূল শক্তি। আর্মির সহায়তায় এরা আলবদর ও আলশামস নামে দুটি প্যারামিলিটারি ইউনিট গঠন করে বাঙালি গেরিলাদের সঙ্গে লড়াই করার জন্য। ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার নাজিম-ই আলা (প্রধান) মতিউর রহমান নিজামী আলবদর ও আলশামস বাহিনী গঠন করেন।'[4][5]
তালিকা
- মতিউর রহমান নিজামী : যুদ্ধাপরাধের দায়ে ১১ মে ২০১৬ সালে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
- মীর কাসেম আলী : যুদ্ধাপরাধের দায়ে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।
- আশরাফুজ্জামান খান
- চৌধুরী মুঈনুদ্দীন
- আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ
আরো দেখুন
তথ্যসূত্র
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.