Loading AI tools
বাংলাদেশী সঙ্গীত রচয়িতা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
আবদুল গফুর হালী (জন্ম: ৬ আগস্ট, ১৯২৯- মৃত্যু: ২১ ডিসেম্বর, ২০১৬) একজন বাংলাদেশী গীতিকার, সুরকার ও লোকশিল্পী। তিনি চট্টগ্রামের চাটগাঁইয়া ভাষায় মাইজভাণ্ডারী, মুর্শিদি, মারফতি প্রভৃতি ধারায় প্রায় দুই হাজারের অধিক গান রচনা করেছেন। ২০১০ সালে তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মেঠোপথের গান।[1]
হালী নিজের রচিত অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। এছাড়াও রচনা করেছেন একাধিক চাটগাঁইয়া নাটক। আস্কর আলী পণ্ডিতের ভাবশিষ্য হালী যদিও নাটক রচনা ও সুর সৃষ্টি করেন। তার গান নিয়ে দুটি গ্রন্থ তত্ত্ববিধি ও জ্ঞানজ্যোতি।[2]
আবদুল গফুর হালী ১৯২৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার রশিদাবাদে জন্ম নেন। তার পিতা আবদুস সোবহান এবং মাতা গুলতাজ খাতুন। রশিদাবাদ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জোয়ারা বিশ্বম্বর চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয় থেকে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন।[3][4][5] তবে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত একাডেমিক শিক্ষা অর্জনের পর ইস্তফা দেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
শৈশবকালে তিনি ঐতিহাসিক উল্লেখযোগ্য গায়ক-গীতিকার আসকার আলী পণ্ডিতের কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। পরে মওলানা বজলুল করিম কাঞ্চনপুরী, মাওলানা আবদুল হাদি এবং রমেশ শীলের মতো মাইজভান্ডারী সুফি গায়কদের দ্বারা প্রভাবিত হন। তিনি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কীভাবে হারমোনিয়াম শিখেননি, তবে তাদের কাজ অনুসরণ করতেন।
অল্প বয়সেই, তিনি আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রের অডিশনে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। নিবন্ধিত না হওয়ায় ১৯৬৩ সাল থেকে, তার গানগুলি নিয়মিতভাবে রেডিওতে সরাসরিতে প্রচারিত হত। ৭ বছর পরে, তিনি পূর্ব পাকিস্তান রেডিওতে গায়ক-গীতিকার-সুরকার হিসেবে নিবন্ধ করেন। তারপর থেকে তিনি একজন পেশাদার গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক হিসাবে তাঁর জীবন পার করছেন। তিনি বাংলাদেশের টেলিভিশন এবং রেডিও চ্যানেলগুলির জন্য নিয়মিত গান লিখতেন এবং সুর করতেন।
তিনি ১,৫০০-এরও বেশি গান লিখেছেন এবং সুর দিয়েছেন । তাঁর জনপ্রিয় কিছু সুফি গান হল:
তার কয়েকটি জনপ্রিয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক গান হল:
তিনি ছয়টি চাটগাঁইয়া নাটক রচনা করেছেন। এর মধ্যে গুলবাহার গীতিনাট্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে মঞ্চায়িত ও বেতার-টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। নাটকটিতে আস্কর আলী পণ্ডিতের কালজয়ী গান ডালেতে লড়িচড়ি বৈও চাতকি ময়নারে সহ অন্যান্য গান অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি আজব সুন্দরী নামেও একটি নাটক রচনা করেছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চাটগাঁইয়া নাটকগুলো হল:[3]
জার্মানির হালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতবর্ষ বিষয়ক দর্শন শাস্ত্রের সহকারী অধ্যাপক হানস হারডার (বর্তমানে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক) ১৯৮৯ সালের দিকে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের মাইজভান্ডারসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন। পরে শিল্পী কল্যাণী ঘোষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে। তার জীবন ও গান নিয়ে ২০০৪ ডার ফেরুকটে গফুর, স্প্রিখট (পাগলা গফুর, বলে) নামে একটি গবেষণা গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এতে হালীর ৭৬টি গান অন্তর্ভুক্ত হয়। এগুলোকে আবদুল গফুর হালী রচিত পূর্ববাংলার মরমি গান বলে উল্লেখ করেছেন হানস হারডার। তিনি আবদুল গফুর হালী সম্পর্কে লেখেন, ‘আবদুল গফুর হালীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি বা উপাধি না থাকলেও নিজের চেষ্টায় তিনি অসাধারণ জ্ঞানের অধিকারী হতে সক্ষম হয়েছেন।[4]
তিনি বেশ কয়েকটি জাতীয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি হ'ল:
তিনি ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের মাউন্টেন হাসপাতালে মারা যান।[12] তিনি ফুসফুসের ক্যানসার ও বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন।