Loading AI tools
হুমায়ুন আজাদ রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অলৌকিক ইস্টিমার হুমায়ুন আজাদ রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ।[1] ১৯৭৩ সালে খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং কর্তৃক ঢাকা থেকে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।[2] পরবর্তীতে আগামী প্রকাশনী থেকে এর পুনসংস্করণ প্রকাশিত হয়।[1] এই গ্রন্থের কবিতাগুলি আজাদের পরবর্তী জীবনের কবিতায় বিস্তৃত ভাবনার প্রধান স্রোত এবং শৈলীর পূর্বভাস দিতে সক্ষম।[3]
লেখক | হুমায়ুন আজাদ |
---|---|
মূল শিরোনাম | অলৌকিক ইস্টিমার |
দেশ | বাংলাদেশ |
ভাষা | বাংলা |
বিষয় | কবিতা |
ধরন | আধুনিক |
প্রকাশক | খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং (১৯৭৩), আগামী প্রকাশনী |
প্রকাশনার তারিখ | ১৯৭৩ |
মিডিয়া ধরন | মুদ্রিত (শক্তমলাট) |
আইএসবিএন | ৯-৮৪৪-০১৭৯৯-৮ |
পরবর্তী বই | জ্বলো চিতাবাঘ |
অলৌকিক ইস্টিমার হুমায়ুন আজাদের লেখা অভিষেক গ্রন্থ। আজাদ এই কাব্যে অনেক কবিতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় লিখেছিলেন এবং কিছু কবিতা লিখেছিলেন ছাত্রাবস্থা শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর। ইস্টিমারের অলৌকিকতা বলতে তিনি নিজের বাল্যজীবনের স্মৃতিচারণকে বুঝিয়েছিলেন। তার গ্রাম ছিলো বিক্রমপুর (বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলা), যেখানে পদ্মা নদীতে স্টিমার আসতো, রাতের বেলাতেও আজাদ স্টিমারের শব্দে ঘুম ভেঙে উঠে পড়তেন, নিজের বাল্যজীবন এবং ষাটের দশকের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতির প্রতি নিবেদিতই ছিলো তার প্রথম কবিতার এই বইটি।[বিদ্র 1]
১৯৭০ সালে হুমায়ুন আজাদ 'যদি তুমি আসো' নামের এক আবেগ-কাতরতাসম্পন্ন একতরফা প্রেমের কবিতা লিখেছিলেন যেটার সঙ্গে শামসুর রহমানের 'যদি তুমি না আসো' কবিতার অনেক মিল পাওয়া যায়।[বিদ্র 2]
হুমায়ুন আজাদ তার এই কবিতার বইয়ের অনেক কবিতাই বুদ্ধদেব বসু এবং সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রচনা করেছিলেন।[বিদ্র 3]
এই কাব্যগ্রন্থে মোট ৪৯টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
এই কবিতার বইটি হুমায়ুন আজাদ তার নিজের জীবনের কাটানো ১৯৬৮ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত সময়কালকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন; বইটির অনেক কবিতাই তার ঐ সময়গুলোতে লিখা।[7] "স্নানের জন্য" শিরোনামে গ্রন্থের প্রথম কবিতায় তার উক্তি: "আমি কি ক'রে ভাসাই নৌকো জলে নামি স্নান করি …… পেছনে স্বভাব কবির কন্ঠনিঃসৃত পদ্যের মতোন ধুঁয়ো ওঠে কারখানার চিমনি চিরে …বড্ডো ময়লা জমে গেছে এ-শরীরে স্নান তাই অতি আবশ্যক…" বাক্যদ্বয় দ্বারা মূলত প্রতীকী স্নানের মাধ্যমে সে সময়ের প্রচলিত কবিতার প্রতি আজাদের কটুক্তির প্রকাশ পেয়েছে।[3] কাব্যগ্রন্থে এই ভাবধারার একাধিক কবিতা রয়েছে। স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের জীবনের মধ্যেকার সামাজিক সমস্যা, অনিরাপত্তা, ভবিষ্যৎ সংকটের প্রেক্ষাপটে তিনি রচনা করেছেন "জল দাও বাতাস", যার অধীনে "জননী", "আমার সন্তান", এবং "আমার কন্যার জন্য প্রার্থনা" শিরোনামে স্বতন্ত্র তিনটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।[3] "জননী" কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত সনেট, অন্যদিকে "আমার সন্তান", এবং "আমার কন্যার জন্য প্রার্থনা" দুইটি গদ্যছন্দে রচিত।[3]
কাব্যগ্রন্থে কিছু পরাবাস্তব ধরনের কবিতা রয়েছে যার কিছুটা আবদুল মান্নান সৈয়দের কাব্যধারার সঙ্গে সামজ্ঞস্য রয়েছে বলে মনে করা হয়।[3] আজাদের "আজ রাতে", "টয়লেট", "মধ্যরাতে অত্যাচার", "রাত্রি", "জ্যাোস্নার অত্যাচার", "বিবস্ত্র চাঁদ", "চিত্রিত শহর" এ ঘরনার কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। পুনরাবৃত্তি গাথুনির কয়েকটি কবিতা হলো "যদি তুমি আসো", "আমার ছাত্র ও তার প্রেমিকার জন্য এলিজি", "বৃষ্টি নামে" প্রভৃতি। এ কবিতাগুলোর একাধিক শব্দ এবং বাক্যের পুনরাবৃত্তি রয়েছে।[3]
কবি হুমায়ুন আজাদ তার কবিতার মাধ্যমে অতৃপ্ত প্রেমের কথা উল্লেখ করেছেন; প্রেমের যন্ত্রণায় ভোগা প্রেমীদের আত্মহত্যার চেষ্টার কথা উঠে এসেছে তার কবিতায়, যেমন তিনি ‘যদি তুমি আসো’ শিরোনামের কবিতায় লিখেন, ‘এ শহরে প্রতিদিন ছাদের উপর থেকে/কেউ কেউ লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে’ আবার ‘আত্মহত্যার অস্ত্রাবলি’ শিরোনামেও তিনি কবিতা লিখেন, যে কবিতায় আত্মহত্যার বিভিন্ন পন্থা উল্লেখ করেন তিনি; তার মধ্যেও ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার পদ্ধতির কথা বলেছেন, ‘তাজা বৈদ্যুতিক তার ছুঁয়ে’ আত্মহত্যার কথা বলেছেন; প্রেমীদের মনের কষ্ট কবিতার মাধ্যমে নিজস্ব ভঙ্গীতে প্রকাশ করেছিলেন তিনি।[8]
তার "ছাদআরোহীর কাসিদা" এবং "সেই এক বেহালা-বেহালা" কবিতায় লোরকার কবিতার ছাপ রয়েছে। যেখানে 'বেহালা' কবিতাটি আধুনিক স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম কবি ফেদেরিকো গারসিয়া লোরকার "গিটার" শিরোনামের কবিতার আদলে গঠিত যার বিষয়বস্তুও প্রায় সমার্থক।[3]
কাব্যগ্রন্থে আজাদের তিরিশের দশকের কবিদের অধ্যয়ন, কিছু বিদেশী কবিদের পাঠ, পাশাপাশি সমকালীন কবিদের কবিতা সম্পর্কে অবগতি প্রকাশ পায়। পাকা ছন্দের ব্যবহার রয়েছে একাধিক কবিতায়। এবং ২২ মাত্রার অক্ষরবৃত্ত ছন্দে লিখেছেন:
নাচো, নাচো, হে নর্তকী, এই বক্ষে, এই স্টেজে, নাচো চিরদিন।
বাজাও নুপূর ঘন, আবর্তিত হও, শব্দ তোল উদ্ভিদবিদ্যার,
পায়ের আঘাতে হোক রক্তবীথি ছিন্নভিন্ন, মাংসরা মলিন,
নাচো, নাচো, হে নর্তকী, এই বক্ষ, এই স্টেজ সর্বদা তোমার।— স্টেজ
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.