Loading AI tools
১৩তম বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য প্রণীত কমিটি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অনুসন্ধান কমিটি, ২০২২ হলো বাংলাদেশের ১৩তম নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে যোগ্য ব্যক্তি বাছাইয়ের জন্য ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ কর্তৃক গঠিত একটি কমিটি। ওবায়দুল হাসানকে সভাপতি করে এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ৬ জন। ইতিপূর্বে বাংলাদেশে এই ধরনের দুটি কমিটি গঠিত হলেও আইনের মাধ্যমে গঠিত হওয়া কমিটি এটিই প্রথম। এই কমিটি গঠনের সপ্তাহখানেক পূর্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ পাস করা হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই কমিটিকে স্বাগত জানালেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহ ১৫টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকার প্রশ্ন তুলে কমিটির যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। ২৪ ফেব্রুয়ারি কমিটি রাষ্ট্রপতিকে তাদের সুপারিশ জমা দেয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি হাবিবুল আউয়াল কমিশন গঠন করেন।
গঠিত | ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ |
---|---|
বিলুপ্ত | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ |
ধরন | সরকারি |
উদ্দেশ্য | প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২–এর ধারা ৩ মোতাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগদানের জন্য আইনে বর্ণিত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম সুপারিশ করা |
যে অঞ্চলে কাজ করে | বাংলাদেশ |
সদস্যপদ | ৬ |
সভাপতি | ওবায়দুল হাসান |
সদস্য | |
সম্পৃক্ত সংগঠন | বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি |
২০১২ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটি নামে একটি মধ্যস্থ ফোরাম তৈরি করেন। তার গঠিত ৪ সদস্যবিশিষ্ট প্রথম অনুসন্ধান কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের তৎকালীন বিচারক সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এই কমিটির সুপারিশে গঠিত হয় রকিবুদ্দিন কমিশন। ২০১৭ সালে একই প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। প্রথম কমিটির সভাপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন পুনরায় এই কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৬ জন। এই কমিটির সুপারিশে গঠিত হয় নুরুল হুদা কমিশন। দুটি কমিশনই নিয়োগদাতা আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসাবে পরিচিতি পায়।[1][2]
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নুরুল হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। তার পূর্বে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রস্তুতি শুরু করে সরকার।[3] ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপে অংশগ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। প্রধান বিরোধীদল সহ কয়েকটি দল রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করে। সংলাপে অংশগ্রহণকারী প্রায় রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়। শুরুতে আইন প্রণয়নে সরকারের আগ্রহ ছিল না।[4] অবশেষে ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ পাস করা হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতিলাভের পর ২৯ জানুয়ারি বিলের গেজেট প্রকাশিত হয়। আইন মোতাবেক রাষ্ট্রপতি ৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে ৬ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন।[5]
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী এই কমিটির মোট ৬ সদস্যের মধ্যে ৪ জন পদাধিকারবলে নিয়োগপ্রাপ্ত এবং দুইজন রাষ্ট্রপতির মনোনীত বিশিষ্ট নাগরিক যাদের একজন নারী। কমিটির সদস্যবৃন্দ:[6]
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২ অনুযায়ী কমিটি গঠনের ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাবের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুসারে কমিটির মেয়াদ ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অনুসন্ধান কমিটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনারদের প্রতিটি পদের জন্য ২ জন করে ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এ ১০ জনের মধ্য থেকে সিইসিসহ পাঁচজনকে দিয়ে ইসি গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। অনুসন্ধান কমিটির কাজ সম্পর্কে আইনে বলা হয়েছে, "এই কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেওয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করা হবে।"[7]
কমিটির গঠনের পরদিন ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে কমিটির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[8] এই বৈঠকের পর অনুসন্ধান কমিটি ১০ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫টার মধ্যে দেশের সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের সুপারিশের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নাম প্রস্তাব করতে বলে।[9] ৮ ফেব্রুয়ারি কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[10] ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে মতামত নিতে দেশের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী কমিটি ৬০ বিশিষ্টজনকে চিঠি দেয়।[11] ১২ ফেব্রুয়ারি দুই দফায় বিশিষ্টজনদের মতামত নেয় সার্চ কমিটি।[12] প্রথম দফার আমন্ত্রিত ২২ জনের মধ্যে উপস্থিত হন ১৪ জন। দ্বিতীয় দফায় আমন্ত্রিত ১৫ জনের মধ্যে উপস্থিত হন ১১ জন।[13] ১৩ ফেব্রুয়ারি বিশিষ্টজনদের সাথে শেষ ধাপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ দফায় ২৩ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও ১৮ জন সাড়া দেন।[14]
কমিটির নাম প্রস্তাবের সময়সীমার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মোট ২৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে। এ ছাড়া ৬টি পেশাজীবী সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায় থেকে নামের বিষয়ে প্রায় ২০০ প্রস্তাব এসেছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশ নাম জমা পড়ে। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সহ ১৫টি রাজনৈতিক দল ইসি গঠনে কোনো নাম জমা দেয়নি। কারণ হিসেবে তারা নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে।[15][16] দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা অনুসন্ধান কমিটির কাছে আসা সব নাম প্রকাশের দাবি জানায়।[17] এরই পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধান কমিটি ১৪ ফেব্রুয়ারি ৩২২ জনের নাম প্রকাশ করে, যার মধ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সাবেক আমলা।[18] তবে কারা এসব ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করেছে তা প্রকাশ করা হয়নি।[19] ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় ছিল অনুসন্ধান কমিটির। নাম প্রকাশের পর কমিটি জানায় যে, উক্ত সময়কালের মধ্যে যেসব রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নাম প্রস্তাব করেনি তাদের মধ্যে কেউ প্রস্তাবনা জমা দিলে তা বিবেচনায় নেওয়া হবে।[20] ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিটির তৃতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।[21] ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটির চতুর্থ বৈঠকে তিন শতাধিক নাম থেকে ২০ জনকে বাছাই করা হয়।[22] ২০ ফেব্রুয়ারি কমিটির পঞ্চম বৈঠকে সেই ২০ জন থেকে ১২–১৩ জনকে বাছাই করা হয় এবং নির্বাচিত ১০ জনের নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত হয়।[23] ২২ ফেব্রুয়ারি কমিটির ষষ্ঠ বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে সিলগালা করা হয়। তবে পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নামগুলো প্রকাশ করা হয় নি। ২৪ ফেব্রুয়ারি কমিটি রাষ্ট্রপতিকে নামগুলো জমা দেয়।[24] সেখান থেকে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ২৬ ফেব্রুয়ারি হাবিবুল আউয়াল কমিশন গঠন করেন।[25]
কমিটি গঠনের পর প্রতিক্রিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এটিকে সুন্দর ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে উল্লেখ করে।[26] জাতীয় পার্টি কমিটির উপর আস্থা জ্ঞাপন করে বলেন, "নির্বাচন কমিশন গঠনে তাঁরা কাদের নাম প্রস্তাব করেন, সেটিই দেখার বিষয়।"[27] তবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কমিটি নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখায়নি। তারা এটাকে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানায়।[26][28] নবগঠিত কমিটিকে আইন অনুযায়ী স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।[29] সুশাসনের জন্য নাগরিক নবগঠিত কমিটির কর্মপদ্ধতির নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে।[30] এই কমিটি দিয়ে জনআকাঙ্খা পূরণ সম্ভব নয় বলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম মন্তব্য করেন। তিনি নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট দূর করার আহ্বান জানান।[31]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.