Loading AI tools
ভারতীয় বাঙালি মৎসবিজ্ঞানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
অধ্যাপক ড. হীরালাল চৌধুরী (২১ নভেম্বর ১৯২১ - ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪) কার্প জাতীয় মাছের ‘প্রণোদিত প্রজননের জনক’ খ্যাতনামা ভারতীয় বাঙালি মৎসবিজ্ঞানী।[1] তিন দশকের বেশি সময় ধরে প্রাণিবিজ্ঞান তথা মৎস্যবিজ্ঞানের উন্নতিসাধনের ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগে অসামান্য অবদানের জন্য দেশে-বিদেশে এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব। [2]
হীরালাল চৌধুরী | |
---|---|
জন্ম | ২১ নভেম্বর ১৯২১ |
মৃত্যু | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ (বয়স ৯২) |
জাতীয়তা | ভারতীয় |
মাতৃশিক্ষায়তন | বঙ্গবাসী কলেজ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | মৎস্যবিজ্ঞানী |
দাম্পত্য সঙ্গী | মুকুল চৌধুরী |
সন্তান | সোমা চৌধুরী (কন্যা) শুভম চৌধুরী(পুত্র) |
হীরালাল চৌধুরীর জন্ম ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ২১ নভেম্বর বৃটিশ ভারতের অধুনা বাংলাদেশের সিলেটের (তৎকালীন শ্রীহট্টের) সুরমা ভ্যালি সংলগ্ন কুবাজপুর গ্রামে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন হীরালাল। চারটি বিষয়ে লেটার নিয়ে সিলেটের গোমস্ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে। মেধাবী ছাত্র হওয়ার সুবাদে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের অধ্যক্ষের মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তিতে আই.এসসিতে ভর্তি হন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে অনার্স সহ বি.এসসিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর্গত বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজ থেকে প্রাণিবিদ্যায় এমএসসি পাশ করেন ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে। কর্মক্ষেত্রে থেকে প্রবন্ধন ও গবেষণালব্ধ ডিগ্রী লাভ করেন। যেমন ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ফিশারি পরিচালনে দক্ষতাস্বরূপ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অলাবামাস্থিত অবার্ণ বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এস ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে পিএইচ.ডি ডিগ্রী লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল মৎস্য প্রজননে পিটুইটারি ইনজেকশনের প্রভাব। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে সেন্ট্রাল ফিশারিজ ইনস্টিটিউট (বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য) ডি.এসসি ডিগ্রী প্রদান করে।[3]
এম.এসসি পাশের পর সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজে জীববিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে নিজের জন্মভূমি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর পাঁচজন সহকর্মীর সাথে কাজ হারালেন। চলে আসলেন ভারতে। কোনক্রমে ব্যারাকপুরে কাছে মণিরামপুর সেন্ট্রাল ফিসারিজ স্টেশনে বর্তমানে ইনস্টিটিউশনে ১লা জুন ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কনিষ্ঠ গবেষণা সহকারী হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অধিকর্তা হিসাবে অবসরের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন পদে থেকেছেন। কটকের অনুগুলে জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহকারী (১৯৫০-৫৫), ফিশারি সম্প্রসারণ আধিকারিক (১৯৫৯-৬০), বৈজ্ঞানিক আধিকারিক (১৯৬০-৬৩) সহ মৎস্য গবেষণা প্রধান হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
ব্যারাকপুরের কেন্দ্রে থাকার সময়ই তিনি লক্ষ্য করেন - গঙ্গার ধারে ইটভাটায় জোয়ারের জলে ভেসে আসা পেটফোলা মাছ ধরে টিপে দিতেই ডিম্বাকৃতি স্বচ্ছ ডিম বেরিয়ে আসছে এবং কয়েক ঘণ্টা এক পাত্রে রাখার পর জীবনের সঞ্চার প্রত্যক্ষ হচ্ছে - এই লক্ষ্যটিই – হীরালালকে ‘প্রণোদিত প্রজনন প্রক্রিয়া’সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনার দিকে আকৃষ্ট করে। কটকের মৎস্য গবেষণাগারে সিনিয়ার রিসার্চ অ্যাসিস্টান্ট হিসাবে মাছের এন্ডোক্রাইনোলজি ও ফিজিওলজির উপর দীর্ঘ নয় বৎসর গবেষণা করার পর ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ই জুলাই কার্প প্রজাতির মাছের প্রণোদিত প্রজনন পদ্ধতিতে সাফল্য লাভ করেন যা প্রাণীবিজ্ঞানে প্রথম সারির এক মৌলিক কাজ হিসাবে পরিগণিত হয়। এর আগে পর্যন্ত বিশ্বের কোথাও এই প্রক্রিয়ায় মৎস্য প্রজনন সম্ভব হয় নি। আজ যেমন রুই, কাতলা, মৃগেল, বাটাখয়র ও গ্রাসকাপ প্রজাতির মাছের প্রজনন সম্ভব হয়েছে, তেমনই কই, পাবদা, মাগুরসহ বহু মাছের প্রণোদিত প্রজননও করা সম্ভব হয়েছে। তার এই গবেষণার ফলস্বরূপ আজকে মাছচাষি এক সঙ্গে সমবয়সী সুস্থ ডিমপোনা তার প্রয়োজনমতো যে কোনো সময়ে চাষের জন্য পেয়ে যাচ্ছেন। জাপানের খ্যাতনামা মৎস্যবিজ্ঞানী ডাঃ কে. কুরোনুমা হীরালালকে ‘প্রণোদিত প্রজননের জনক’ বলে অভিহিত করেন। হীরালাল কেবল প্রণোদিত প্রজননেরই জনক নন, পরবর্তীতে তিনি পুকুরে মৎস্যোৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবিড় মিশ্রচাষের (মিশ্রচাষ হল একই পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির পৃথক পৃথক জলস্তরে পৃথক পৃথক খাদ্যাভ্যাসে থাকা মাছের বহুগুণ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া) দিশা প্রদর্শক।
এ ছাড়াও তিনি কার্প প্রজাতির বারো রকমের নতুন শঙ্করীকরণ, আঁতুড় পুকুরের ডিমপোনা কোন কোন পোকার দ্বারা আক্রান্ত ও তার প্রতিকার এবং বিজ্ঞানসম্মত ভাবে আঁতুড় পুকুর পালনের পদ্ধতির উপায় বিশদে দেখিয়েছেন।[1] ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে অবসর পর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার উপদেষ্টা হয়ে সুদান, নাইজেরিয়া, ফিজি, লাওস, ফিলিপাইন, মিয়ানমারসহ বহু বিশ্বের দেশে কাজ করেছেন, তার তিন দশকের অভিন্নতা ও প্রযুক্তিগত বুদ্ধিমত্তা মৎস্য উৎপাদনে ও জলজ পালন বিষয়ে সম্যক জ্ঞান সেদেশের মানুষদের সামনে পরিস্ফুট করেছেন। হীরালাল চৌধুরী ফিলিপিনসে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ফিশারিজ উন্নয়ন কেন্দ্রের বা এসইএফডিইসি-র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও সহকারী অধিকর্তা (১৯৭৬-৭৯), ফিলিপাইনের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব অ্যাকোয়াকালচারের পরিদর্শক বিজ্ঞানী (১৯৮৫-৮৮) ছিলেন।[4]
হীরালাল চৌধুরী ভারতে “প্রণোদিত প্রজননের জনক” হিসাবে আখ্যা লাভ ছাড়াও দেশে-বিদেশের বহু সম্মানে ভূষিত হয়েছেন নিজের কর্মসাফল্যে।
ভারত সরকার তার যুগান্তকামী ‘প্রণোদিত প্রজনন পদ্ধতি’ উদ্ভাবনের দিনটি স্মরণে রেখে ১০ জুলাইকে ‘জাতীয় মৎস্যচাষী দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় তার মৎস্যবিজ্ঞানে সারাজীবনের অবদান ও সেবার জন্য সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।[5]
ডঃ হীরালাল চৌধুরী ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১২ ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় ৯৩ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.