মোংলা বন্দর
বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা মহানগরীর দক্ষিণ-পূর্বে পশুর নদীর তীরে অবস্থিত। বন্দরটি ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বন্দরের আদি নাম চালনা বন্দর। এটি প্রথমে খুলনার চালনাতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থান গত সুবিধার কারণে চালনা থেকে কিছুদুর সামনে খুলনা-বাগেরহাট জেলার সীমান্তে মংলায় স্থানান্তরিত হয়। খুলনা মহানগরীর খালিশপুরে বন্দরটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। এছাড়া পরিচালনা পরিষদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কার্যালয় এবং বাসভবনসহ যাবতীয় প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান বেশিরভাগই খুলনা মহানগরীতে অবস্থিত।
মোংলা বন্দর | |
---|---|
অবস্থান | |
দেশ | বাংলাদেশ |
অবস্থান | খুলনা বিভাগ |
স্থানাঙ্ক | ২২°২৯′২০″ উত্তর ৮৯°৩৫′৪৩″ পূর্ব |
বিস্তারিত | |
চালু | ১৯৫০ |
পরিচালনা করে | মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ |
মালিক | বাংলাদেশ সরকার |
পোতাশ্রয়ের ধরন | কৃত্রিম/প্রাকৃতিক |
উপলব্ধ নোঙরের স্থান | ১১ |
পরিসংখ্যান | |
জলযানের আগমন | ৯১০টি (২০১৮–১৯)[1] |
বার্ষিক কন্টেইনারের আয়তন | ৫৬,৮৩৮ টিইউ (২০১৮–১৯)[1] |
কার্গো মূল্য | ১০.২ মিলিয়ন টন (২০১৮-১৯)[1] |
ওয়েবসাইট mpa |
বন্দরটি পশুর নদী ও মংলা নদীর বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী সংযোগস্থলে অবস্থিত। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পরেই বাংলাদেশের সব থেকে বড় এবং ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর হলো এটি। পশুর নদীর গভীরতা এবং নাব্যতা অনেক বেশি থাকায় বিশাল আকারের মালবাহী সহ যে কোনো ভেসিল জাহাজ সহজে প্রবেশ করতে পারে। এটি অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহ খুলনা নগরীর মাধ্যমে সারাদেশের সাথে রেলপথে সংযুক্ত। এছাড়া মংলা ও খুলনা নগরীর সুবিধার্তে নির্মাণাধীন রয়েছে খান জাহান আলী বিমানবন্দর।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রামের উপর চাপ বেড়ে যাওয়ায়, অনেক আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানি বিকল্প রুট হিসেবে মোংলা বন্দরকে বেঁছে নিয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত নেপাল ভুটানের সরকার মোংলা বন্দরকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করছে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক পণ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে। এছাড়া মোংলার কাছেই খান জাহান আলী বিমানবন্দর এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিভাগীয় নগরী খুলনা, বাগেরহাট, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল, স্থলবন্দর ভোমরা। খুলনার মোংলা বন্দর থেকে সুন্দরবন বা সুন্দরবন লাগোয়া নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকতে জাহাজ, পিকনিক লঞ্চ, প্রাইভেট নৌযান কিংবা অন্য যেকোনো নৌযানে করে ভ্রমণের জন্য একটি অন্যতম ট্রানজিট। মোংলা বন্দরে মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (মংলা ইপিজেড) এরও অবস্থান।
পূর্ব বাংলার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে সেবা দেয়ার জন্য ১৯৫০ সালে এই বন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুর দিকে এটি চালনা বন্দর নামে পরিচিত ছিল।[2] ১৯৫০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ নামে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসাবে যাত্রা শুরু করে এবং মে ১৯৭৭ সালে, চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ নামক একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে যা পুনঃরায় ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে নাম পরিবর্তনপূর্বক "মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ” হিসেবে যাত্রা শুরু করে।[3]
এই বন্দরটি চালনা থেকে পশুর নদীর ১১ মাইল (১৮ কিলোমিটার) উজানে গড়ে উঠে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত হলে একটি ব্রিটিশ বণিক জাহাজ বন্দরে প্রথম নোঙ্গর করে। সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মোংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তরিত হয়।[2] তখন মোংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। পাকিস্তান আমলে একজন বন্দর পরিচালকের ওপর মোংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল, যার প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে।[2] সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো, এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো
এই বন্দরে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ রয়েছে। নদীর গভীরে রয়েছে ১২টি ভাসমান নোঙরস্থান। হিরণ পয়েন্টে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে। এই বন্দরটি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে খুলনা মেট্রোপলিটন এলাকার সাথে সংযুক্ত।
২০২০-২১ অর্থবছরে ৯৭০টি বাণিজ্যিক জাহাজ এ বন্দরে নোঙর করে। যা বন্দরটিতে বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের নতুন রেকর্ড।[4] প্রায় সকল প্রধান বন্দরের সাথে এই বন্দরের সংযোগ আছে, যদিও এখানে বেশিরভাগ জাহাজ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা থেকে আসে। মাঝে মাঝে কিছু জাহাজ লাতিন আমেরিকা বা আফ্রিকার দেশগুলি থেকে আসে।[2] শতশত জাহাজ প্রতি বছর এই বন্দর ব্যবহার করে, যেগুলোর বেশিরভাগ সিঙ্গাপুর, হংকং এবং কলম্বো দিয়ে আসে। ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জ বন্দর সহ বাংলাদেশের বেশিরভাগ নদীবন্দরকে এটি সংযুক্ত করেছে।
ভারতের সাথে একটি উপকূলীয় জাহাজ চুক্তির মাধ্যমে, মোংলা প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্যের সাথে জাহাজ রুটে সরাসরি কলকাতা বন্দরকে সংযোগ করেছে। থাইল্যান্ডের সাথেও একটি উপকূলীয় জাহাজ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।[5][6]
বর্তমানে বন্দরটি ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে, পণ্য খালাসের জন্য ২২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। নোঙরের জন্য একটি বাধ্যতামূলক খোলামেলা দীর্ঘ চ্যানেল রয়েছে এবং উভয় পার্শ্বে ৩৩টি জাহাজ একই সাথে পণ্য খালাস বা বোঝাইয়ের জন্য সুবিধা পায়। প্রতিবছর এই বন্দরে প্রায় ৪০০টি জাহাজ এই বন্দরে নোঙর করে এবং বছরে গড়ে ৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্যের আমদানি-রপ্তানি সম্পন্ন হয়।
মোংলা বন্দরের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিকল্পে বাংলাদেশ সরকার খনন কর্মসূচী এবং জেটি নির্মাণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।[4]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.