Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে কোটা ব্যবস্থা বলতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধর, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, অনগ্রসর জেলা, প্রতিবন্ধী গোষ্ঠী প্রভৃতি সম্প্রদায়ের জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে বিদ্যমান একটি কোটা ব্যবস্থা। এটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার কর্তৃক একটি ইতিবাচক কর্ম পরিকল্পনা।[১] ২০২০ সালে কোটা ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল কিন্তু ২০২৪ সালে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে এটি পুনঃস্থাপন করা হয়।[২][৩] কোটা পদ্ধতি বাতিলের হাইকোর্টের আদেশ অনুসারে বাংলাদেশ সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার সময় আপিল বিভাগ এই রায় স্থগিত করে।[৪][৫]
তবে সমস্ত প্রার্থীকে অবশ্যই প্রাথমিক পরীক্ষা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপরের ধাপ চূড়ান্ত মৌখিক সাক্ষাৎকারের সময় কোটা বিবেচনা করা হবে।[৬] বাংলাদেশে সরকারি চাকরির বেতন বেসরকারি চাকরির চেয়ে তুলনামূলক ভালো যেটা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সরকারি চাকরির চাহিদা তৈরি করে।[৭] বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময়ে কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে এবং যুক্তি দেখিয়েছে যে কোটার কারণে মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না।[৮]
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস এর উৎপত্তি হয়েছে পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসের উপর ভিক্তি করে, যেটা আবার ব্রিটিশ রাজের ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের উপর ভিত্তি তৈরি করা হয়েছিলো।[৯] উপরের উভয় পরীক্ষাতেই অনগ্রসর প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীর জন্য কোটা ছিল।[৯] ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানে থাকাকালীন সিভিল সার্ভিস এক্সামে ৪০ শতাংশ কোটা ছিল।[৯] ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা এসকল দেশেও সিভিল সার্ভিসে কোটা রয়েছে।[১০] বাংলাদেশে বিসিএস পরীক্ষায় মেধা ভিত্তিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয় মাত্র ৪৪ শতাংশ। তবে ৩৫ থেকে ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছিল। কারণ কোটা পদ্ধতির অধীনে নিয়োগের জন্য পর্যাপ্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি।[৬]
বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থার চিত্র নানা সময়ে নানাভাবে পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোটা ধীরে ধীরে কমেছে এটা বলা যায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার মন্ত্রিপরিষদ পরিষেবা মন্ত্রণালয়ের একটি আদেশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের জন্য কোটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।[৯][১১] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের আহ্বান জানান।[১১] সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ, যুদ্ধে নিহত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং নিম্ন প্রতিনিধিত্বহীন জেলার লোকদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত করেছে।[৯] এটি মেধা-ভিত্তিক প্রার্থীদের জন্য ২০ শতাংশ সংরক্ষিত করেছে।[৯]
১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়।[১২] ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার নিম্ন প্রতিনিধিত্বহীন জেলাগুলির লোকদের জন্য কোটা কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল যা মেধা-ভিত্তিক প্রার্থীদের জন্য চাকরির পরিমাণ বাড়িয়ে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়।[৯] যুদ্ধের শিকার হওয়া নারীদের চাকরি দাবিহীন থাকায় ১৯৮৫ সালে সকল নারীকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কোটা পরিবর্তন করা হয়।[৯] জেলাভিত্তিক কোটা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়[৯] এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য নতুন ৫ শতাংশ কোটা তৈরি করা হয়। ১৯৮৫ সালে এই পরিবর্তন মেধা ভিত্তিক চাকরি ৪৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়।[৯]
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ২৬ বছর পর ১৯৯৭ সালে, বয়সের কারণে মুক্তিযোদ্ধা কোটার নিয়োগ কমে যায়, এর প্রতিক্রিয়ায় সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা বাড়িয়ে দেয়।[৯]
২০০৮ সালে প্রাক্তন বেসামরিক কর্মচারী এবং মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী খান, বেসামরিক কর্মচারী কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ড. সাদাত হোসেনকে কোটা পদ্ধতির উপর একটি প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা গবেষণা করে তদন্ত হিসাবে এটিকে একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা হিসাবে বর্ণনা করে এবং সরকারকে সংস্কারের আহ্বান জানায়।[১] প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কার ছাড়াই এভাবে চললে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার অধীনে নিয়োগপ্রাপ্তদের যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেবে।[১]
২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তাদের নাতি-নাতনিদের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কোটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলো। এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন ২০১২ সালে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য এক শতাংশ কোটা যোগ করেছে।[৯] এই সিদ্ধান্তের ফলে কোটার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ শতাংশ হয় এবং মেধাভিত্তিক চাকরি কমে ৪৪ শতাংশ হয়।[৯] এটা উল্লেখ্য যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও ওই ক্যাটাগরিতে কখনোই ১০ শতাংশের বেশি নিয়োগ হয়নি।[৬]
৮ মার্চ ২০১৮, বাংলাদেশ হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একটি আবেদন খারিজ করে।[১] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ মার্চ মুক্তিযোদ্ধাদের বংশধরদের জন্য কোটা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।[১] তবে অতিরিক্ত কোটার জন্য ২০১৮ সালে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। আন্দোলনকারীরা কোটা বাতিলের পরিবর্তে, কোটা কমিয়ে সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন।[১০] এই বিক্ষোভের ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস থেকে সব কোটা অপসারণের নির্বাহী আদেশ জারি করেন।[৯] ২০২০ সালের ১ জুলাই কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।[১৩]
কোটা পদ্ধতি বাতিলের সরকারি আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে একজন মুক্তিযোদ্ধার বংশধর এবং অন্য ছয়জনের কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল করে।[১১] ফলাফল হিসাবে ৫ জুন ২০২৪-এ বাংলাদেশ হাইকোর্ট একটি রায় জারি করে যা সরকারী কোটা বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে এবং এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। এইভাবে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগে কোটা পুনরুদ্ধার হয় এবং ৫৬ শতাংশ কোটা ফিরে আসে।[৯]
সরকার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করে।[৯] বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালের বাংলাদেশ কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করেছে।[৯] আপিল বিভাগ স্থিতাবস্থার আদেশ জারি করে যা আপিল বিভাগ সরকারী আপিলের শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে।[৯] সরকারপন্থী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় ৪০০ আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে।[১৪] বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের মাত্রার প্রেক্ষাপটে এই বিক্ষোভ হয়েছে।[১৪] বিক্ষোভকারীরা নিজেদেরকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকে।[১৪]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.