Loading AI tools
পারসিক কবি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
হাকিম আবুল কাশেম ফেরদৌসী তুসি (ফার্সি: حکیم ابوالقاسم فردوسی توسی, ফেরদৌসী (فردوسی) নামে অধিক পরিচিত (৯৪০-১০২০ খ্রিস্টাব্দ) পারস্যের (বর্তমান ইরান) একজন বিখ্যাত কবি। তিনি বিখ্যাত মহাকাব্য শাহনামার রচয়িতা। শাহনামা একইসাথে ইরানের ও সারা বিশ্বের ফার্সি ভাষাভাষী লোকজনের জাতীয় মহাকাব্য। সপ্তম শতাব্দীতে ফেরদৌসী মূলত সামানীয় সাম্রাজ্যের রানির জন্য লিখেছিলেন। কিন্তু পারস্যে মুসলিম বিপ্লবের পর যখন সামানীয় সাম্রাজ্যের পতন হয় তখন ফেরদৌসী নতুন শাসক মাহমুদ গজনবিকে তার লেখা উৎসর্গ করেন। মাহমুদ ছিলেন পারস্যের শিল্প ও সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ফেরদৌসী ৩০ বছরের (৯৭৭-১০১০) অধিক সময় নিয়ে তিনি এই মহাকাব্য রচনা করেন যা ইরানের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে ব্যাপক সমৃদ্ধ করেছে।
হাকিম আবুল কাশেম ফেরদৌসী তুসি حکیم ابوالقاسم فردوسی توسی | |
---|---|
জন্ম | ৯৪০ খ্রিস্টাব্দ তুস, ইরান |
মৃত্যু | ১০২০ (বয়স ৭৯–৮০) তুস, ইরান |
পেশা | কবি |
সময়কাল | সামানীয় এবং গজনবী |
ধরন | ফার্সি সাহিত্য, জাতীয় মহাকাব্য |
ফেরদৌসী উত্তর-পূর্ব ইরানের তুস শহরের পাশে পাজ নামে একটি গ্রামে ৯৪০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।[1] ফেরদৌসীর প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায় এবং তার নাম নিয়েও সন্দেহ আছে। তের শতাব্দীতে বান্দোরী নামে শাহনামার একজন আরব অনুবাদকের মতে, ফেরদৌসীর আসল নাম “আল-আমির আল-হাকিম আবুল কাশেম মনসুর ইবনে আল হাসান আল-ফেরদৌসী আল-তুসি”। এটা জানা যায় না কখন বা কেন তিনি শাহনামায় তার লেখক নাম ফেরদৌসী ব্যবহার করেছেন। তার স্ত্রী একটি শিল্প পরিবার থেকে এসেছিল। ফেরদৌসীর এক পুত্র ছিল যে ৩৭ বছর বয়সে মারা যায় এবং ফেরদৌসী শাহনামায় তার পুত্র সম্পর্কে শোক প্রকাশ করেছেন।[2]
মনে করা হয় শাহনামার আগেও ফেরদৌসী কিছু কবিতা লিখেছিলেন কিন্তু সেগুলো খুঁজে পাওয়া যায় নি। ৯৭৭-এর দিকে তিনি শাহনামা লেখা শুরু করেন এবং দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে তিনি ইরানের বিভিন্ন শাসক ও শাহদের কাহিনী তুলে ধরেন।[3][4] এসময় সামানীয় রাজার কাছ থেকে গভীর পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে তিনি ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে শাহনামার প্রথম শ্লোক লেখার কাজ সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে যখন তুর্কি গজনবী সুলতান মাহমুদ সামানীয় রাজা মনসুরকে ক্ষমতাচ্যুত করে তখন ফেরদৌসী মাহমুদকে গুণগান করে তার লেখা চালিয়ে যান। যাইহোক সেসময় কবিদের কীভাবে সমাদর করা হত সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে ইরানের সাহিত্য সম্পর্কে সামানীয় রাজার চেয়ে মাহমুদের আগ্রহ কম ছিল বলে ধারণা করা হয়।[5] ফলে শাহনামার পরবর্তী শ্লোক গুলোতে রাজাদের গুণগানের পরিবর্তে ফেরদৌসীর নিজস্ব আবেগ, অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অবশেষে ফেরদৌসী ৮ মার্চ, ১০১০ খ্ৰিস্টাব্দে তার মহাকাব্য লেখার কাজ শেষ করেন। কিন্তু তার শেষ জীবন সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় নি।[2]
শাহনামা হচ্ছে প্রাচীন ইরানের ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগাথা। এতে আছে ৯৯০টি অধ্যায়, ৬২টি কাহিনি। পুরো মহাকাব্যে ৬০ হাজার বার আছে অন্ত্যমিল। এটি হোমারের ইলিয়ড-এর চেয়ে সাত গুণ ও জার্মান মহাকাব্য নিবেলুঙগেনলিয়েড-এর (Nibelungenlied) চেয়ে ১২ গুণ বড়। ইংরেজিতে এ পর্যন্ত শাহনামার যতগুলো অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে, সবগুলোই প্রায় সংক্ষেপিত। ১৯২৫ সালে বিখ্যাত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আর্থার অ্যান্ড এডমন্ড ব্রাদার্স পুরো শাহনামার একটি ইংরেজি অনুবাদ নয় খণ্ডে প্রকাশ করেছিলেন। সেই ইংরেজি অনুবাদের কোনো পুনর্মুদ্রণ এখন আর পাওয়া যায় না। এছাড়া রাশিয়া থেকেও এর অনুবাদ প্রকাশিত হয়।
পারস্য সম্রাট সুলতান মাহমুদ যখন ফেরদৌসীকে শাহনামা লেখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন তখন তিনি ফেরদৌসীর কাছে ওয়াদা করেছিলেন, মহাকাব্যে যতগুলো শব্দ থাকবে তার বিনিময়ে প্রত্যেক শব্দের জন্য একটি করে স্বর্ণ মুদ্রা কবিকে দেওয়া হবে। এরপর ফেরদৌসী ৬০০০০ শব্দে মহাকাব্য লেখার কাজ শেষ করেন। কিন্তু সম্রাট তার প্রিয় ভাজন মন্ত্রীর পরামর্শে কবিকে ৬০০০০ হাজার রৌপ্য মুদ্রা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ফেরদৌসী রৌপ্য মুদ্রা গ্রহণ না করে সেগুলো তার চাকরদের মাঝে ভাগ করে দেন। রাজার কানে এ খবর যাওয়া মাত্র রাজা রাগান্বিত হন ও ফেরদৌসীকে ধরে আনার নির্দেশ দেন। রাজার ভয়ে কবি পালিয়ে যান কিন্তু পরে রাজা তার ভুল বুঝতে পারে এবং তাকে স্বর্ণমুদ্রা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ততদিনে কবি মৃত্যুবরণ করেছেন। তার কন্যা এ মুদ্রা গ্রহণ করেন নি। পরবর্তীতে কিছু মুদ্রা দিয়ে কবির কবর সংস্কার করা হয় এবং কিছু গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়।[6]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.