Loading AI tools
গাজর জাতীয় সবজি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পার্সনিপ হল গাজর ও পার্সলে জাতীয় একটি কন্দমূল। এটি দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ যেটি বর্ষজীবী উদ্ভিদের ন্যায় বড় হয়। এর লম্বা, কন্দাল মূলের বহির্ভাগ ও অন্তর্ভাগ ক্রিম বর্ণযুক্ত; পুষ্ট হওয়ার জন্য একে মাটিতে ফেলে রাখা হয়, শীতের তুষারপাতের পর এটি স্বাদে আরো মিষ্টি হয়ে ওঠে। বৃদ্ধির প্রথম ঋতুতে, গাছটির অক্ষের উভয় দিকে, মাঝারি সবুজ পাতার গোলাপাকৃতি বিন্যাস তৈরী হয়। দ্বিতীয় ঋতুতে, যদি কর্ষণ না করা হয়, তবে এর কাণ্ড থেকে পুষ্পোদ্গম হয়, যার শীর্ষে থাকে ছোট ছোট হলুদ ফুলের ছত্রবিন্যাস। এই সময়ে কাণ্ডটি কাষ্ঠল ও কন্দাল মূলটি অভক্ষ্য হয়ে ওঠে। বীজগুলি হয়ে ওঠে ম্লান বাদামী, চ্যাপ্টা ও পক্ষল।
পার্সনিপ | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Plantae |
বিভাগ: | অ্যাঞ্জিওস্পার্মস |
শ্রেণী: | ইউডিকটস |
বর্গ: | অ্যাপিয়ালিস |
পরিবার: | অ্যাপিয়াসি |
গণ: | প্যাস্টিনাকা |
প্রজাতি: | পি. স্যাটিভা |
দ্বিপদী নাম | |
প্যাস্টিনাকা স্যাটিভা | |
পার্সনিপের উৎস ইউরেশিয়া। অনাদিকাল ধরে এটি সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং রোমানরা এর চাষ করত; তবে বিভিন্ন সময়ের রচনায় গাজর ও পার্সনিপের মধ্যে ধন্দ দেখা গেছে। ইওরোপে আখ ও চিনি আসবার আগে একে মিষ্টি হিসেবে ব্যবহার করা হত। ১৯শ শতকে এটি আমেরিকায় পৌঁছোয়।
পার্সনিপ সাধারণত রান্না করা হয়, তবে এটি কাঁচাও খাওয়া যায়। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ, বিশেষত পটাশিয়াম থাকে। এছাড়াও এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং দ্রব ও অদ্রব উভয় প্রকার ভোজ্য তন্তু। একে গভীর ও পাথরবিহীন মাটিতে চাষ করা হয়। গাজর মাছি ও অন্যান্য পতঙ্গ কীট, ভাইরাস, ছত্রাকঘটিত রোগ দ্বারা ইহা আক্রান্ত হয়, এদের মধ্যে সবথেকে মারাত্মক হল ক্যাঙ্কার। এর কাণ্ড ও পাতা নিয়ে কাজ করার পরে, সেই চামড়া সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে চামড়ায় ফুসকুড়ি হয়।
পার্সনিপ একটি দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ; ইহার রোমযুক্ত কর্কশ পাতা গোলাপাকৃতি বিন্যাস নিয়ে সজ্জিত থাকে, পাতাগুলি চূর্ণ করলে তীব্র কটূ গন্ধ বেরোয়। পার্সনিপের মাংসল, ভোজ্য ও ক্রীম বর্ণযুক্ত শিকড়টির জন্য একে কর্ষণ করা হয়। এর মূল সাধারণত মসৃণ হয়, তবে পার্শ্বমূলও দেখা যায়। এর বেশিরভাগই চোঙাকৃতি, তবে কিছু কিছু প্রজাতির মধ্যে অধিক পরিমাণে কন্দাল আকৃতি দেখা যায় - এইগুলিই খাদ্য প্রকরণকারীরা পছন্দ করেন, কারণ কন্দাল মূলগুলি সহজে বিদারিত হয় না। এই উদ্ভিদটির শীর্ষস্থ ভাজক কলা এর অক্ষের উভয় দিকে পাতার একটি গোলাপাকৃতি বিন্যাস তৈরী করে; যা প্রতিটি পার্শ্বকাঁটাযুক্ত কিছু যুগ্মপত্রের সমন্বয়ে গঠিত হয়। নিচের পাতাগুলির দিকে ছোট কাণ্ড থাকে, ওপরের পাতাগুলি কাণ্ডবিহীন অংশে থাকে এবং প্রান্তবর্তী পাতাগুলির তিনটি বিভাগ/লোব থাকে। পাতাগুলি এক- এবং দ্বি-বিন্যাসযুক্ত বৃহৎ, ডিম্বাকৃতি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এগুলি কাঁটা সমন্বিত বিভাগযুক্ত/লোবযুক্ত হয়ে থাকে; ইহারা লম্বায় ৪০ সেমি (১০ ইঞ্চি) পর্যন্ত বড় হয়। পত্রবৃন্তগুলি খাঁজকাটা ও এর ভূমি (Base) আবরণযুক্ত। পুষ্পযুক্ত কাণ্ডটি দ্বিতীয় বছরে তৈরী হয় এবং এটি ১৫০ সেমি (৬০ ইঞ্চি) -রও অধিক লম্বা হতে পারে। এটি রোমযুক্ত, খাঁজকাটা, ফাঁপা (পর্ব বাদে), এবং অনিয়মিত শাখাপ্রশাখাযুক্ত। এটির কিছু বৃন্তবিহীন, একক বিভাগ/লোবযুক্ত পাতা থাকে যেগুলি ৫ থেকে ১০ সেমি (২ থেকে ৪ ইঞ্চি) লম্বা, এগুলি জোড়ায় জোড়ায় বিপরীত পার্শ্বে সজ্জিত থাকে।[1]
হলুদ ফুলগুলি আলগা, যৌগিক ছত্রবিন্যাসযুক্ত হয়ে থাকে; এগুলির ব্যাস ১০ থেকে ২০ সেমি (৪ থেকে ৮ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। ছত্রবিন্যাসটিকে (গৌণ ছত্রবিন্যাস) ধরে রাখার জন্য ২ থেকে ৫ সেমি (১ থেকে ২ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যযুক্ত ৬ থেকে ২৫টি ঋজু পুষ্পবৃন্ত এতে রয়েছে। ছত্রবিন্যাস ও গৌণ ছত্রবিন্যাসের ওপরে অথবা নিচের দিকে কোন পুষ্পমঞ্জরী থাকে না। ফুলগুলিতে ক্ষুদ্রাকৃতি বৃত্যংশ থাকে অথবা থাকে না, বৃত্যংশ ৩.৫ মিমি (০.১৪ ইঞ্চি) হয়ে থাকে। ফুলগুলি পাঁচটি পাঁপড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয় যেগুলি ভিতরের দিকে কুঞ্চিত থাকে, এছাড়াও এতে থাকে পাঁচটি পুংকেশর ও একটি গর্ভকেশর। এর ফলগুলি (যেগুলি স্কিজোকার্প নামেও পরিচিত) ডিম্বাকৃতি ও চ্যাপ্টা; এগুলি সরু পক্ষযুক্ত এবং ছোট, ছড়ানো গর্ভদণ্ডযুক্ত। এগুলি ফ্যাকাশে হলুদ থেকে হাল্কা বাদামী হয়ে থাকে; দৈর্ঘ্যে ৪ থেকে ৮ মিমি (০.১৬ থেকে ০.৩১ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়।[2]
অঙ্গসংস্থানগত সামান্য পার্থক্য সত্ত্বেও, বুনো পার্সনিপ আর কর্ষণযোগ্য পার্সনিপের মধ্যে ট্যাক্সনগত কোন প্রভেদ নেই, এবং উভয়ের মধ্যে আন্তঃ-নিষেক (ক্রস-পলিনেশান) চলে। পার্সনিপের ক্রোমোজম সংখ্যা ২n = ২২।[3]
গাজরের মত, পার্সনিপেরও উৎস ইউরেশিয়ায় এবং প্রাচীনকাল থেকেই একে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। জোহারি ও হফ্ উল্লেখ করেছেন যে পার্সনিপ চাষের প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ 'এখনও সীমিত' এবং গ্রীক ও রোমান সাহিত্যের উপাদান পার্সনিপের আদি ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ উৎস।[4] তারা সতর্ক করেছেন যে "যেহেতু মনে করা হয়, পার্সনিপ আর গাজর (যেগুলি রোমান আমলে ছিল সাদা অথবা হাল্কা বেগুনি রঙের) উভয় সব্জিই একসময় পাস্টিনাকা নামে পরিচিত ছিল, তাই ধ্রুপদী সাহিত্যে এদের স্বতন্ত্রভাবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে"।[4] পার্সনিপের অনেক বেশি মর্যাদা ছিল, রোমকে প্রদত্ত জার্মানির শ্রদ্ধার্ঘ হিসেবে সম্রাট টিবেরিয়াস পার্সনিপ গ্রহণ করেছিলেন। ইওরোপে আখ এবং বিট চিনি আসার আগে এই সব্জিটি মিষ্টির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হত।[5] বনভেসিন ডে লা রিভা তার মার্ভেলস্ অফ মিলান - এ (১২৮৮) মিলানের অধিবাসীদের দ্বারা ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্যের দীর্ঘ তালিকায় 'সাধারণ' পাস্টিনাকাকে পাস্টিনেশ কমিউনি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।[6]
উত্তর আমেরিকায় কানাডার ফরাসী ঔপনিবেশিক ও একই সাথে ব্রিটিশ ত্রয়োদশ উপনিবেশ দ্বারা কন্দজাতীয় সবজির ব্যবহারের প্রয়োজনে এই উদ্ভিদটির আগমন ঘটে। কিন্তু ১৯শ শতকে, আলুর শর্করা স্টার্চের প্রধান উৎসরূপে একে প্রতিস্থাপন করে এবং এর ফলশ্রুতিতে পার্সনিপের চাষ কমে যায়।[7][8]
১৮৫৯ সালে, ইংল্যাণ্ডের রয়্যাল এগ্রিকালচারাল কলেজ - এ জেমস বাকম্যান "স্টুডেন্ট" নামে একটি নতুন প্রজাতির উদ্ভিদ চাষ করেন। বাছাই প্রজননের মাধ্যমে কীভাবে দেশীয় উদ্ভিদগুলির উন্নতি ঘটানো যায় তারই প্রমাণ দেখাবার জন্য তিনি বুনো উদ্ভিদের সাথে কর্ষণযোগ্য উদ্ভিদের ব্যাক-ক্রসিং নিষেক ঘটিয়েছিলেন। পরীক্ষাটি এতটাই সফল হয়েছিল যে ১৯শ শতকের শেষার্দ্ধে 'স্টুডেন্ট' চাষআবাদের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্ব পূর্ণ প্রজাতি হিসেবে গণ্য হয়।[9]
ক্যারোলাস লিনিয়াস তার ১৭৫৩ খ্রীষ্টাব্দে রচিত বই স্পিসিজ প্লান্টারাম - এ সর্বপ্রথম পার্সনিপের উল্লেখ করেন।[10] ট্যাক্সোনমির ইতিহাসে এর আরও কতকগুলি সমার্থক আছে।[11]
কর্ষণযোগ্য বেশিরভাগ উদ্ভিদের মতই পি. স্যাটিভা - এরও কতকগুলি উপপ্রজাতি ও বৈচিত্র্য আছে, কিন্তু এগুলিকে আর স্বতন্ত্র ট্যাক্সা হিসেবে বিচার না করে,[11] একই ট্যাক্সনের অঙ্গসংস্থানগত বৈচিত্র্য হিসেবে বিচার করা হয়।[2]
ইউরেশিয়ায়, কিছু পণ্ডিত কর্ষণযোগ্য ও বন্য প্রজাতির পার্সনিপের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য শেষোক্তটির নাম ব্যবহারের সময় তার উপপ্রজাতি পি. এস. সিলভেসট্রিস ব্যবহার করেন, অথবা এটিকে প্রজাতি হিসেবে গণ্য করে প্যাস্টানিকা সিলভেস্ট্রিস হিসেবে উল্লেখ করেন। পাতার রোমশ প্রকৃতি, কাণ্ডের কৌণিক অথবা গোল আকৃতি, এবং প্রান্তীয় ছত্রবিন্যাসের আকার ও আকৃতির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন উপপ্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে।[2]
গণনাম প্যাস্টিনাকার ব্যুৎপত্তি সম্বন্ধে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি, তবে সম্ভবত এটি হয় ল্যাটিন 'প্যাস্টিনো" থেকে এসেছে যার অর্থ "আঙুরগাছ রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করা" অথবা "প্যাস্টাস" শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ খাদ্য। স্যাটিভা নামক অভিধাটির অর্থ হল রোপিত।[12]
পার্সনিপ গাজরের মতই এবং এদের একইভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে পার্সনিপ স্বাদে বেশি মিষ্টি, বিশেষত এটিকে যখন রান্না করা হয়।[13] এগুলিকে সেঁকা যায়, সেদ্ধ করা যায়, ঘ্যাঁট করা যায়, আগুনে ঝলসে নেওয়া যায়, ভাজা যায়, অথবা ভাঁপানো যায়। যখন সিদ্ধ করে ভেঁপে অথবা সুপ হিসেবে ক্যাসারোল জাতীয় পাত্রে গরম অবস্থায় রাখা হয়, তখন এটি থেকে অপূর্ব গন্ধ বের হয়।[5] কিছু ক্ষেত্রে, পার্সনিপগুলিকে সেদ্ধ করে এর সুপ অথবা সিদ্ধ-ভাঁপা থেকে শক্ত অংশগুলিকে বাদ দেওয়া হয়, এর ফলে সম্পূর্ণ শিকড়টির থেকেও এটি আরো বেশি মৃদু গন্ধযুক্ত ও স্বাদু হয়ে ওঠে এবং এর স্টার্চ ডিশের ওপর পুরু আস্তরণ তৈরী করে। কিছু কিছু ইংরেজিভাষী দেশে আগুনে ঝলসে নেওয়া (Roasted) পার্সনিপ ক্রিসমাস ডিনারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বলে পরিগণিত হয় এবং প্রায়শই এটি চিরাচরিত রবিবার রোস্ট হিসেবে বিশিষ্টতা লাভ করে।[14] পার্সনিপগুলিকে ভাজাও যায় অথবা সরু সরু করে কেটে খাস্তা হিসেবে বানানো যায়। এগুলি থেকে মদিরা জাতীয় মদ প্রস্তুত করা যায়।[15]
রোমান আমলে, পার্সনিপকে কামোদ্দীপক মনে করা হত।[16] যদিও, পার্সনিপ আধুনিক ইতালীয় রান্নায় বিশেষ একটা ব্যবহার করা হয় না। বরঞ্চ এগুলিকে এখন পার্মা হ্যামের জন্য প্রজননকৃত শূকরদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।[17] প্রাচীন চৈনিক ওষুধে, চীনা পার্সনিপের শিকড় ভেষজ ওষুধ প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হত।[18]
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান | |
---|---|
শক্তি | ৩১৪ কিজু (৭৫ kcal) |
১৮ g | |
চিনি | ৪.৮ |
খাদ্য আঁশ | ৪.৯ g |
০.২ g | |
১.২ g | |
ভিটামিন | পরিমাণ দৈপ%† |
থায়ামিন (বি১) | ৮% ০.০৯ মিগ্রা |
রিবোফ্লাভিন (বি২) | ৪% ০.০৫ মিগ্রা |
নায়াসিন (বি৩) | ৫% ০.৭ মিগ্রা |
প্যানটোথেনিক অ্যাসিড (বি৫) | ১২% ০.৬ মিগ্রা |
ভিটামিন বি৬ | ৭% ০.০৯ মিগ্রা |
ফোলেট (বি৯) | ১৭% ৬৭ μg |
ভিটামিন সি | ২০% ১৭ মিগ্রা |
ভিটামিন ই | ১০% ১.৪৯ মিগ্রা |
ভিটামিন কে | ২১% ২২.৫ μg |
খনিজ | পরিমাণ দৈপ%† |
ক্যালসিয়াম | ৪% ৩৬ মিগ্রা |
লৌহ | ৫% ০.৫৯ মিগ্রা |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮% ২৯ মিগ্রা |
ম্যাঙ্গানিজ | ২৭% ০.৫৬ মিগ্রা |
ফসফরাস | ১০% ৭১ মিগ্রা |
পটাশিয়াম | ৮% ৩৭৫ মিগ্রা |
সোডিয়াম | ১% ১০ মিগ্রা |
জিংক | ৬% ০.৫৯ মিগ্রা |
অন্যান্য উপাদান | পরিমাণ |
পানি | ৭৯.৫৩ g |
| |
†প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল |
পার্সনিপের ১০০ গ্রামের একটি বিশেষ নমুনায় ৭৫ ক্যালোরি (২৩০ কিলোজুল) শক্তি থাকে। বেশিরভাগ পার্সনিপের প্রজাতিতে প্রায় ৮০% জল, ৫% চিনি, ১% প্রোটিন, ০.৩% চর্বি ও ৫% ভোজ্য তন্তু থাকে। পার্সনিপে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে, এবং খনিজ লবণের মধ্যে বিশেষ করে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অনেক বেশি; এতে প্রতি ১০০ গ্রামের মধ্যে ৩৭৫ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে।[19] ভিটামিন বি-গ্রুপের কিছু কিছু এতে উপস্থিত, কিন্তু রান্নার ফলে ভিটামিন সি - এর পরিমাণ কমে আসে। যেহেতু পার্সনিপ শিকড়ের বহির্গাত্রে ভিটামিন ও খনিজ লবণ উপস্থিত থাকে, তাই এগুলিকে খুব অল্প চেঁছে অথবা গোটা হিসেবে রান্না না করলে ভিটামিন ও খনিজ লবণ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। তুষারের সময়ে, স্টার্চের কিছু অংশ চিনিতে পরিণত হয় এবং শিকড় স্বাদে আরও মিষ্টি হয়ে ওঠে।[20]
পার্সনিপ খাদ্য হিসেবে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এগুলিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিত, যেমন, ফ্যালক্যারিনল (Falcarinol), (falcarindiol), প্যানাক্সিডিঅল (panaxydiol) এবং মিথাইল-ফ্যালক্যারিনডিঅল (methyl-falcarindiol) যেগুলি ক্যানসারপ্রতিরোধী, প্রদাহবিরোধী ও ছত্রাকপ্রতিরোধী বৈশিষ্ট্যযুক্ত।[21] পার্সনিপের ভোজ্য তন্তু অংশটির কিছুটা দ্রব ও কিছুটা অদ্রব প্রকৃতির এবং এগুলি সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন দ্বারা গঠিত হয়। পার্সনিপে প্রচুর পরিমাণে তন্তুর উপস্থিতি কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করতে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।[22]
লোককথা অনুসারে পার্সনিপ নামটি পার্সলে এবং শালগমের (ইংরেজি টার্নিপ) নামের মিশ্রণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। কিন্তু এটি প্রকৃতপক্ষে মধ্য ইংরেজি প্যাসিনিপ থেকে এসেছে; এটি প্রাচীন ফরাসী প্যাসনাইএ (pasnaie) (অধুনা পানাইস) পরিবর্তিত রূপ; যেটি মূল ল্যাটিন পাস্টিনাম (pastinum), থেকে এসেছে যার অর্থ হলও একধরনের কাঠের ছোট টুকরো (fork)। শালগমের ইংরেজি টার্নিপের শেষে অবস্থিত -নিপ -এর সাথে সাদৃশ্য রাখবার কারণে পার্সনিপের শেষে 'নিপ' এসেছে; আসলে এটিকে একসময় শালগমের একটি প্রজাতি হিসেবে ধারণা করা হত।[23]
বুনো পার্সনিপ, যেগুলি থেকে আধুনিককালের আবাদযোগ্য প্রজাতি তৈরি করা হয়েছে, সেগুলি শুষ্ক রুক্ষ ঘাসজমি এবং পরিত্যক্ত জায়গায়, বিশেষত চক ও চুনাপাথরের মাটিতে গড়ে ওঠে।[24] পার্সনিপ দ্বিবর্ষজীবী উদ্ভিদ, কিন্তু এগুলি সাধারণত বর্ষজীবী উদ্ভিদের মত বেড়ে ওঠে। এই ফসল চাষ করার জন্য বেলে ও দোআঁশ মাটির চেয়ে পলি, কাদা ও পাথুরে জমিই বেশি দরকার; পাথুরে জমিতে চাষ করলে ছোট, শক্ত মূল উৎপন্ন হয়। পার্সনিপ বীজ দীর্ঘ সময় ধরে সঞ্চয় করে রাখলে এর কার্যকারিতা কমে যায়। বসন্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথে যখন ভূমি কর্ষণের উপযুক্ত হয়, তখনই গাছের বৃদ্ধির পরিসর বিবেচনা করে বীজ রোপণ করা হয়। বাড়ন্ত গাছগুলি ছেঁটে সরু করা হয় এবং জায়গাটিকে আগাছামুক্ত করা হয়। প্রথম তুষারপাতের পর শস্য গুদামজাত করা হয়, এবং এটি সারা শীতকাল জুড়ে চলতে থাকে। ফসলের সারিগুলিকে খড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া যেতে পারে যাতে তুষারের সময় শস্যগুলিকে তুলে নেওয়া যায়।[25] মাটির কম তাপমাত্রার কারণে শিকড়ে কিছু স্টার্চ সঞ্চিত হয় যেগুলি চিনিতে পরিণত হয়; এর ফলে শিকড়গুলি স্বাদে আরো মিষ্টি হয়ে ওঠে।[26]
সেলারি মাছির (Euleia heraclei) লার্ভা পার্সনিপের পাতার ভেতরে সুড়ঙ্গ বানিয়ে রাখে। পাতার ওপর এবং নিচের দিকে অনিয়মিত, হাল্কা বাদামী রঙের সরু সরু রাস্তা দেখতে পাওয়া যায়। ছোট চারাগাছের ক্ষেত্রে এর ফল হয় মারাত্মক, কারণ সমস্ত পাতা এতে কুঁচকে যেতে পারে এবং এমনকী মরেও যেতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত পাতা ছেঁটে ফেলে, সম্পূর্ণ পাতা কেটে ফেলে অথবা রাসায়নিক প্রয়োগ করে এর চিকিৎসা করা হয়।[25]
গাজর মাছির (Chamaepsila rosae) লার্ভাও ফসলের ক্ষতি করতে পারে। মূলের বহিরাবরণ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেই এই কীট বেঁচে থাকে, মরসুমের শেষে মূলের মধ্যে গর্ত খুঁড়ে ইহা বেঁচে থাকে। চারাগাছগুলি এতে মরে যেতে পারে, বড় গাছ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত অংশের মধ্যে দিয়ে ছত্রাক এবং ক্যাঙ্কার জাতীয় কীটের প্রবেশের পথে তৈরী হয়। এই মাছি গাছের আঘাতপ্রাপ্ত কলার গন্ধে আকৃষ্ট হয়।[27]
পার্সনিপ কিছু লেপিডোপটেরান প্রজাতির লার্ভার খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়, এগুলি হলও - পার্সনিপ সোয়্যালোটেইল (Papilio polyxenes) , সাধারণ দ্রুতগামী মথ (common swift moth) (Korscheltellus lupulina), হুলযুক্ত বাগান মথ (garden dart moth) (Euxoa nigricans) এবং ভুতুড়ে মথ (ghost moth) (Hepialus humuli)।[28] পার্সনিপ মথের লার্ভার উৎস ইওরোপে এবং এটি ১৮শ শতকের মাঝামাঝি দৈবক্রমে উত্তর আমেরিকায় চলে আসে; এটি গাছের ছত্রবিন্যাসের ওপর জাল বোনে এবং ফুল ও অর্ধপরিণত বীজগুলি খেয়ে থাকে।[29]
পার্সনিপ ক্যাঙ্কার এই ফসলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ। শিকড়ের শীর্ষভাগে ও স্কন্ধদেশে কালো অথবা কমলা-বাদামী বর্ণের ছোপ দেখতে পাওয়া যায় এবং তার সাথে শিকড়ের অভ্যন্তরীণ অংশ ভঙ্গুর ও শক্ত হয়ে ওঠে। খুব কম pH মাত্রাযুক্ত, কম তাপমাত্রার সিক্ত জমিতে বীজ বপন করলে এই রোগ দেখা দিতে পারে, অথবা শিকড়টি যদি ইতিমধ্যেই গাজর মাছির লার্ভা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে তাহলেও এই রোগ দেখা যায়।[30] কিছু ছত্রাক ক্যাঙ্কারের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট থাকে যেমন - ফোমা কমপ্ল্যানাটা (Phoma complanata), ইলিওনেক্ট্রিয়া র্যাডিসিকোলা (Ilyonectria radicicola), ইটারসোনিলিয়া প্যাস্টিনাসিয়া (Itersonilia pastinaceae), এবং আই. পারপ্লেক্সান্স (I. perplexans)। ইওরোপে, মাইকোসেন্ট্রোস্পোরা অ্যাসেরিনা (Mycocentrospora acerina) পচা কালো দাগ তৈরী করে, এতে গাছটি শীঘ্র মরে যায়।[31] স্ক্লেরোটিনিয়া মাইনর (Sclerotinia minor) এবং এস। স্ক্লেরোটিয়েরাম (S. sclerotiorum) গাছে জলীয় নরম ছোপ তৈরী করে, এতে গাছের শক্ত সোজা মূলটি নরম ও জলীয় হয়ে যায়। পৃষ্ঠভাগে সাদা অথবা বাফ-হলুদরঙ যুক্ত মোল্ড তৈরী হয়। নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় যেখানে ঠাণ্ডা সিক্ত ঋতু আবির্ভাব ঘটে সেখানে এই ধরনের জীবাণু বেশি মাত্রায় উপস্থিত থাকে।[32]
হেলিকোব্যাসিডিয়াম পারপারিয়াম (Helicobasidium purpureum) ছত্রাক বেগুনি বর্ণযুক্ত শিকড় পচন ঘটায় - এতে কখনো কখনো শিকড়ের ক্ষতি হয়, শিকড়টি হাল্কা বেগুনি রঙের আচ্ছাদনে ঢাকা পড়ে যায়, এই আচ্ছাদনের ওপর মাটির কণা লেগে থাকে। পাতাগুলি নষ্ট ও বিবর্ণ হয়ে যায় এবং মাইসেলিয়াম ছত্রাকগুলি মাটির মধ্যে দিয়ে অন্যান্য গাছে ছড়িয়ে পড়ে। কিছু কিছু আগাছা এই সকল ছত্রাকের আঁতুড়ঘর, বিশেষত ভিজে, অম্লযুক্ত পরিবেশেই এগুলি বেশি দেখা যায়।[25] এরাইসিফে হেরাক্লেই (Erysiphe heraclei) গাছে গুঁড়ো গুঁড়ো ছত্রাকের সৃষ্টি করে যেগুলি ফসলের অত্যন্ত ক্ষতি করে। এই কারণে পাতা হলদেটে হয়ে যায় ও সমগ্র পত্ররাশি বিনষ্ট হয়। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় ও আর্দ্র পরিবেশে এই রোগগুলির অধিক প্রাদুর্ভাব দেখা যায়।[33]
সিড-বোর্ন স্ট্রবেরি, ল্যাটেন্ট রিংস্পট ভাইরাস, পার্সনিপ ইয়েলো ফ্লেক ভাইরাস, পার্সনিপ লিফকার্ল ভাইরাস, পার্সনিপ মোজাইক পটিভাইরাস এবং পটিভাইরাস সেলেরি মোজাইক ভাইরাস প্রভৃতি ভাইরাস গাছের সমূহ ক্ষতিসাধন করে। শেষোক্ত ভাইরাসটি ক্ষতিগ্রস্ত গাছটির পত্রশিরার আশেপাশের পত্রাংশ সাফ করে দেয় অথবা একে হলদেটে করে ফেলে, পাতায় গেরুয়া রঙের মোজাইক ছাপ দেখা যায় এবং পাতার কুঞ্চন দেখা দেয়।[34]
পার্সনিপের মূল ভোজ্য, তবে কাণ্ড ও পাতার রস বিষাক্ত হওয়ার কারণে এগুলি ব্যবহারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।[35] এপিএসি (Apiaceae) গোত্রের অন্যান্য উদ্ভিদের মতই, পার্সনিপেরও ফিউরানোকিউমেরিন্স (furanocoumarins) থাকে যেটি পরজীবীদের থেকে তাকে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে,[36] এটি আলোকসংবেদী একটি রাসায়নিক যেটি ফাইটোফোটোডার্মাটাইটিস নামে একটি বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি করে।[35] এই অবস্থার ফলে অ্যালার্জির মত একধরনের রাসায়নিক প্রদাহ (Chemical burn) সৃষ্টি হয়; এগুলি বিষাক্ত আইভির (Toxicodendron radicans) দ্বারা সৃষ্ট ফুসকুড়ির মত দেখতে হয়। এর লক্ষণগুলি হল, লালচে ভাব, প্রদাহ, ফোস্কা প্রভৃতি; ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে দুবছর পর্যন্ত দাগ থেকে যায়।[37] যদিও মালীরা জানাচ্ছে যে গাছের পত্রসমূহের সংস্পর্শে এসে তাদের দেহে বিষঘটিত লক্ষণ দেখা যাচ্ছে,[38] তবে তাদের সংখ্যা
, যারা ফসল চাষ করছে, তাদের থেকে কম। যখন দিনের আলোয় পাতা সংগ্রহ করা হয় অথবা পুরোনো যেসব গাছের বীজ বেরিয়ে গেছে তাদের উপড়ে ফেলা হয় তখন সবথেকে বেশি সমস্যা হতে পারে। লক্ষণগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অল্প থেকে মাঝারি হয়ে থাকে।[39]
পার্সনিপের বিষ তাপপ্রতিরোধী এবং একে কয়েক মাস যাবৎ সংরক্ষণ করে রাখলেও তা নষ্ট হয় না। পার্সনিপ নির্যাসের বিষের লক্ষণগুলি গবাদিপশু ও পোলট্রির দেহেও ক্ষতি করতে পারে, যদি তাদের চামড়া উন্মুক্ত থাকে।[40] পার্সনিপের মত এপিএসি (Apiaceae) সবজিতে পলিয়াইন (Polyyne) পাওয়া যায়, এবং এগুলি সাইটোটক্সিক ক্রিয়াকলাপ দেখায়।[41]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.