গেরার্টেট হোফ্ট
পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী (১৯৯৯) ওলন্দাজ পদার্থবিজ্ঞানী উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
গেরার্টেট (গেরার্ট) হোফ্ট ( ওলন্দাজ: [ˈɣeːrɑrt ət ˈɦoːft] ; জন্ম ৫ জুলাই, ১৯৪৬) একজন ওলন্দাজ তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী এবং ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। হোফ্ট এবং তার থিসিস উপদেষ্টা মার্টিনুস ভেল্টমান "তড়িৎদুর্বল মিথষ্ক্রিয়ার কোয়ান্টাম কাঠামোর ব্যাখ্যা" করার জন্য ১৯৯৯ সালে দ্বৈতভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
গেরার্টেট হোফ্ট | |
---|---|
![]() নভেম্বর ২০০৮ | |
জন্ম | ডেন হেল্ডার, নেদারল্যান্ডস | ৫ জুলাই ১৯৪৬
জাতীয়তা | ওলন্দাজ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব, কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ, হোফ্ট–পলিয়াকভ মোনোপোল, হোফ্ট প্রতীক, হোফ্ট অপারেটর, হলোগ্রাফিক তত্ত্ব, স্বাভাবিকীকরণ, মাত্রিক নিয়মিতকরণ |
পুরস্কার | হেইনম্যান পুরস্কার (১৯৭৯) ওল্ফ পুরস্কার (১৯৮১) লরেঞ্জ পদক (১৯৮৬) স্পিনোজা পুরস্কার (১৯৯৫) ফ্র্যাংকলিন পদক (১৯৯৫) পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৯৯) লমনোসভ পুরস্কার (২০১০) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | মার্টিনুস জে. জি. ভেল্টমান |
ডক্টরেট শিক্ষার্থী | রবার্তুস ডেইকগ্রাফ হারমান ভারলিন্দ |
হোফ্ট বিশেষত গেজ তত্ত্ব, কৃষ্ণগহ্বর, কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ এবং কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গবেষণা করেন। পদার্থবিদ্যায় তার অবদানের ভিতর রয়েছে গেজ তত্ত্বের স্বাভাবিকীকরণযোগ্যতার প্রমাণ, মাত্রিক নিয়মিতকরণ, হলোগ্রাফিক তত্ত্ব ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবন
হোফ্ট আলবার্থা স্কিকের (বিটকে) সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে, সাস্কিয়া এবং এলেন।
জীবনী
সারাংশ
প্রসঙ্গ
প্রারম্ভিক জীবন
গেরার্টেট হোফ্টের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৫ জুলাই ডেন হেলডারে, তবে বেড়ে ওঠা নেদারল্যান্ডস সরকারের আসন দ্য হ্যাগ শহরে। তিনি পরিবারের তিন সন্তানের মধ্য দ্বিতীয় ছিলেন। তার দাদী ছিলেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ফ্রিৎস জের্নিকের বোন এবং তার দাদা পিটার নিকোলাস ভ্যান কাম্পেন ছিলেন লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একজন সুপরিচিত প্রফেসর। তার চাচা নিকো ভ্যান কাম্পেন ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রফেসর ইমেরেটাস ছিলেন। হোফ্টের মা সেসময় নারী অধিকার উন্নত না থাকার কারণে[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বিজ্ঞানবিষয়ক পেশায় যেতে পারেন নি,[১] তবে একজন সামুদ্রিক প্রকৌশলীকে বিয়ে করেছিলেন[১]। পরিবারের পদাঙ্ক অনুসরণ করে হোফ্টও অল্প বয়সে বিজ্ঞানে আগ্রহী হন। তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক যখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তিনি বড় হয়ে কি হতে চান, তখন কিশোর গেরার্ট সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, "একজন মানুষ যে সবকিছু জানে।" [১]
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে গেরার্ট হোফ্ট ডাল্টন লাইসিয়াম বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। বিদ্যালয়টি ডাল্টন শিক্ষা পদ্ধতি অনুসারে পরিচালিত হত, যা হোফ্টের জন্য উপকারী হয়েছিল। তিনি সহজেই বিজ্ঞান এবং গণিত কোর্সে উত্তীর্ণ হন, তবে ভাষাশিক্ষা কোর্সে উত্তীর্ণ হতে কষ্ট করতে হয়। অবশ্য তিনি ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, শাস্ত্রীয় গ্রিক এবং লাতিন ভাষার কোর্সে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিলেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি দ্বিতীয় ওলন্দাজ গণিত অলিম্পিয়াডে রৌপ্য পদক অর্জন করেন। [১]
শিক্ষাজীবন
১৯৬৪ সালে উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর গেরার্টেট হোফ্ট ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান কোর্সে ভর্তি হন। লাইডেন নিকটবর্তী হওয়া সত্ত্বেও তিনি ইউট্রেখ্টকে বেছে নেন, কারণ সেখানে তার চাচা অধ্যাপনা করতেন, এবং হোফ্ট তার বক্তৃতাগুলিতে উপস্থিত থাকতে চেয়েছিলেন। হোফ্ট বিজ্ঞানের পড়াশোনায় এত মনোযোগী ছিলেন, যে তার বাবা জোর করে তাকে ইউট্রেচ্স্ট স্টুডেন্টেন কর্পস ছাত্র সংঘে যোগ দিতে বাধ্য করেন, যেন হোফ্ট পড়াশোনার বাইরেও অন্য কিছু করতে পারেন। তার বাবার ভাবনা সামান্য বাস্তবায়িত হয়েছিল; হোফ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌকা বাইচ ক্লাব "ট্রিটন"-এ যোগ দেন এবং নৌকার কাণ্ডারী হতে সক্ষম হন। এছাড়া হোফ্ট তাদের বিজ্ঞান ক্লাব "ক্রিস্টিয়ান হাইগেনস" এর মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষার্থীদের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠান করেন।
পড়াশোনা চলাকালে হোফ্ট সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার মূল বিষয়, তার মতে মৌলিক কণা, এর ওপর গবেষণা করবেন। তবে তার চাচা এই বিষয়টি এবং বিশেষ করে এর অনুশীলনকারীদের কোন কারণে পছন্দ করতেন না। তাই ১৯৬৮ সালে যখন তার doctoraalscriptie (মাস্টার্স সন্দর্ভের ওলন্দাজ সমতুল্য) রচনার সময় আসে, তখন হোফ্ট নবনিযুক্ত অধ্যাপক মার্টিনুস ভেল্টমানের অধীনে কাজ শুরু করেন। ভেল্টমান ইয়াং-মিলস তত্ত্বের অভিজ্ঞ গবেষক ছিলেন, যা সেসময় একটি প্রান্তীয় বিষয় ছিল, কারণ ধারণা করা হত যে এর পুন:স্বাভাবিকীকরণ করা যায় না। ভেল্টমান হোফ্টকে দায়িত্ব দেন অ্যাডলার-বেল-জ্যাকিভ অ্যানোমালি নিয়ে গবেষণা করার, যার মূল বিষয় ছিল নিরপেক্ষ পাই মেসনের অবক্ষয় তত্ত্বের একটি অসংগতি; প্রচলিত যুক্তিমতে এদের ফোটনে ক্ষয় হয়ে যাওয়া অসম্ভব, কিন্তু বাস্তব পর্যবেক্ষণে দেখা যায় পাই মেসনের অবক্ষয়ের প্রধান পথই হচ্ছে ফোটন ক্ষয়। এই অসংগতি সমাধানের কোন উপায় সেসময় জানা ছিল না, এবং হোফ্টও কোন সমাধান দিতে ব্যর্থ হন।
১৯৬৯ সালে মার্টিনুস ভেল্টমানকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়ে হোফ্ট ডক্টরেটের গবেষণা শুরু করেন। ভেল্টমান যে বিষয়ে কাজ করছিলেন হোফ্টও সেই কাজে অংশ নেন, অর্থাৎ ইয়াং-মিলস তত্ত্বের স্বাভাবিকীকরণ। ১৯৭১ সালে তার প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়।[২] এতে তিনি দেখান কীভাবে ভরবিহীন ইয়াং-মিলস ক্ষেত্রগুলিকে স্বাভাবিক করা যায়, এবং এর বিস্তারসমূহের আন্তসম্পর্ক প্রতিপাদন করেন (যা পরবর্তীতে আন্দ্রেই স্লাভনভ এবং জন সি. টেইলর দ্বারা সরলীকৃত হয়ে স্লাভনভ-টেইলর আইডেনটিটি হিসাবে পরিচিত হয়েছে)।
এই গবেষণা বিশ্বব্যপী সুবিদিত হয়নি, তবে ভেল্টমান বুঝতে পারেন যে তিনি যে সমস্যাটি নিয়ে কাজ করছিলেন সেটির সমাধান হয়ে গিয়েছে। ভেল্টমান এবং হোফ্ট সম্মিলিত নিবিড় প্রচেষ্টায় মাত্রিক নিয়মিতকরণ কৌশল গঠন করেন। দ্রুতই হোফ্টের দ্বিতীয় গবেষণা প্রকাশযোগ্য হয়ে ওঠে,[৩] যেখানে তিনি দেখিয়েছেন যে স্বত:স্ফূর্ত প্রতিসাম্য ভাঙনের ফলে উৎপন্ন বিরাটাকার ক্ষেত্রের ইয়ং-মিলস তত্ত্বের স্বাভাবিকীকরণ সম্ভব। এই গবেষণা তাদের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি দেয়, এবং শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়।
হোফ্ট এই দুটি গবেষণার ভিত্তিতে তার পিএইচডি প্রবন্ধ ইয়াং-মিলস ফিল্ডগুলির স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়া রচনা করে ১৯৭২ সালে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছরে তিনি ইউট্রেখ্টের ঔষধের ছাত্রী আলবার্থা স্কিককে বিয়ে করেন। [১]
পেশাগত জীবন

ডক্টরেট অর্জনের পর গেরার্টেট হোফ্ট ফেলোশীপ নিয়ে জেনেভার সার্নে যান। সেখানে তিনি ভেল্টমানের সঙ্গে ইয়াং-মিলস তত্ত্বগুলির জন্য তাদের পদ্ধতিসমূহে আরও পরিমার্জন করেন। এই সময়ে সবল মিথষ্ক্রিয়াকে ভরহীন ইয়াং-মিলস তত্ত্ব হিসাবে বর্ণনা করার সম্ভাবনা নিয়ে হোফ্টের মনে আগ্রহ জন্মায় যেতে পারে। এভাবে তিনি নিজের আবিষ্কৃত স্বাভাবিকীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে সবল মিথষ্ক্রিয়ার বিস্তারিত পরিমাপ ও পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছিলেন।
টি হোফ্টের গণনা অনুসারে, এই ধরনের তত্ত্বের স্কেলিং বৈশিষ্ট্য (অ্যাসিম্পটোটিক স্বাধীনতা), গভীর অনমনীয় বিক্ষেপণ পরীক্ষণের উপযুক্ত মাত্রার হওয়া উচিত ছিল। এই ধারণা ছিল ইয়ং-মিলস তত্ত্বের তৎকালীন প্রচলিত ধারণার বিপরীতমুখী, যেখানে ধরে নেয়া হত যে মহাকর্ষ এবং তড়িচ্চুম্বকীয়তার মত ইয়ং-মিলস ক্ষেত্রের তীব্রতা পারস্পরিক-ক্রিয়াশীল কণাগুলির মধ্যে ক্রমবর্ধমান দূরত্বের সাথে হ্রাস হওয়া উচিত। এই প্রচলিত ধারণা দূরত্ব সাপেক্ষে গভীর অনমনীয় বিক্ষেপণের ফলাফল ব্যাখ্যা করতে অক্ষম ছিল, যেখানে টি হোফ্টের গণনা তা ব্যাখ্যা করতে পারত।
১৯৭২ সালে মার্সেই শহরে একটি ছোট সম্মেলনে হোফ্ট তার এই তত্ত্বের কথা উল্লেখ করলে কুর্ট সাইমানজিক তাকে তার ফলাফল প্রকাশ করার আহবান জানান,[১] তবে হোফ্ট প্রকাশ করেননি। পরে ১৯৭৩ সালে এইচ ডেভিড পলিতজার, ডেভিড জোনাথন গ্রস এবং ফ্রাঙ্ক অ্যান্থনি উইলচেক গবেষকবর্গ অনুরূপ ফলাফল পুনরাবিষ্কার করে প্রকাশ করেন, যার জন্য তারা ২০০৪ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[৪][৫]
১৯৭৪ সালে গেরার্ট হোফ্ট ইউট্রেখ্ট-এ ফিরে যান, এবং সেখানকার সহকারী অধ্যাপকের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৬ সালে স্ট্যানফোর্ডে অতিথি পদে এবং হার্ভার্ডের স্থায়ী মরিস লোয়েব প্রভাষক পদে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এসময় বোস্টনে তার বড় মেয়ে সাস্কিয়া আনা জন্মগ্রহণ করে, এবং ১৯৭৮ সালে ইউট্রেখ্ট-এ ফিরে আসার পর তার দ্বিতীয় মেয়ে এলেন মার্গা জন্মগ্রহণ করে। এবার ইউট্রেখ্ট-এ তাকে পূর্ণ প্রফেসরের পদে আসীন করা হয়।[১] ১৯৮৭-৮৮ একাডেমিক বর্ষে হোফ্ট, হাওয়ার্ড জর্জি, রবার্ট জাফে এবং আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বিশ্রামমূলক ছুটি কাটাতে যান, যার ব্যবস্থা করেছিলেন এই বিভাগের নতুন চেয়ারম্যান লরেন্স সুলাক।
২০০৭ সালে হোফ্ট ফাউন্ডেশনস অফ ফিজিক্স জার্নালের প্রধান সম্পাদক হিসাবে নিযুক্ত হন, এবং এসময় তিনি ইসিই তত্ত্বের বিতর্ক থেকে জার্নালটিকে মুক্ত করতে সচেষ্ট ছিলেন।[৬] ২০১৬ পর্যন্ত হোফ্ট এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
২০১১ সালের ১ জুলাই গেরার্টেট হোফ্ট ইউট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক হিসাবে নিযুক্ত হন।[৭]
সম্মাননা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৯৯ সালে গেরার্ট হোফ্ট এবং তার থিসিস উপদেষ্টা মার্টিনুস জে. জি. ভেল্টমান "তড়িৎদুর্বল মিথষ্ক্রিয়ার কোয়ান্টাম কাঠামোর ব্যাখ্যা" করার জন্য দ্বৈতভাবে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।[৮] তবে এর আগেও অন্যান্য সম্মাননা দ্বারা তার গবেষণা স্বীকৃতি পেয়েছে।১৯৮১ সালে তিনি ওল্ফ পুরস্কার জয় করেন,[৯] যা কিনা নোবেলের পরেই পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে সম্ভবত সবচে সম্মানের পুরস্কার। এর পাঁচ বছর পর গেরার্ট লরেঞ্জ পদক অর্জন করেন, যা প্রতি চার বছর অন্তর তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেয়া হয়।[১০] ১৯৯৫ সালে স্পিনোজা পুরস্কারের একদম প্রারম্ভিক একজন গ্রহীতা ছিলেন হোফ্ট। এটি নেদারল্যান্ডে বিজ্ঞানক্ষেত্রে অবদানের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান।[১১] একই বছরে তিনি ফ্রাংকলিন পদকও অর্জন করেন।[১২]
নোবেল পুরস্কারের পর হোফ্ট আরও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন, এবং সম্মানজনক ডক্টরেট ও সম্মানজনক অধ্যাপনার পদ গ্রহণ করেছেন।[১৩] এছাড়া হোফ্ট নেদারল্যান্ডের সিংহ পদমর্যাদায় কমান্ডার হিসেবে নাইট উপাধি পেয়েছেন, এবং ফরাসি লেজিওঁ দনরের অফিসার পদাধিকার অর্জন করেছেন। ৯৪৯১ ট্হোফ্ট গ্রহাণুটির নামকরণ তার নামেই করা হয়েছে,[১৪], এমনকি তিনি গ্রহাণুটির ভবিষ্যত বসবাসকারীদের জন্য একটি সংবিধানও রচনা করে দিয়েছেন।[১৫]
হোফ্ট ১৯৮২ সাল থেকে নেদারল্যান্ডের রাজকীয় শিল্প ও বিজ্ঞান একাডেমি (KNAW) এর সদস্য।[১৬] ২০০৩ সালে তিনি এই একাডেমির অধ্যাপক পদ গ্রহণ করেন।[১৭] হোফ্ট বিভিন্ন বিজ্ঞান একাডেমির বৈদেশিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার ভিতর রয়েছে ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমি, মার্কিন জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমি এবং মার্কিন শিল্প ও বিজ্ঞান একাডেমি, ব্রিটেন ও আয়ারল্যান্ড ভিত্তিক পদার্থবিদ্যা ইনস্টিটিউট।[১৩]
গবেষণা
সারাংশ
প্রসঙ্গ
হোফ্টের গবেষণাক্ষেত্রকে নিম্নোলিখিত তিনটি মূল পর্যায়ে ভাগ করা যায়।[১৮]
মৌলিক কণা পদার্থবিদ্যায় গেজ তত্ত্ব
কণা পদার্থবিজ্ঞানে গেজ তত্ত্বের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য গেরার্টেট হোফ্ট সুপরিচিত। এর মধ্যে সর্বাধিক পরিচিত হল তার পিএইচডি গবেষণা, তথা ইয়াং-মিলস তত্ত্বগুলির স্বাভাবিকীকরণযোগ্যতার প্রমাণ। এই প্রমাণের জন্য তিনি তার উপদেষ্টা ভেল্টমানের সাথে মাত্রিক নিয়মিতকরণ কৌশল তৈরি করেছিলেন।
পিএইচডি পর হোফ্ট শক্তিশালী মিথস্ক্রিয়ায় গেজ তত্ত্বগুলির ভূমিকা পরীক্ষায় আগ্রহী হন,[১] যার মধ্যে সর্বপ্রধান তত্ত্বটি কোয়ান্টাম ক্রোমোডাইনামিকস বা QCD নামে পরিচিত। তার গবেষণার বৃহদাংশ দৃষ্টি নিবদ্ধ করে QCD-এর রঙ সীমাবদ্ধতা সমস্যাটির দিকে, যে জন্য নিম্নশক্তি পর্যবেক্ষণে কেবল রঙ-নিরপেক্ষ কণাগুলিকে পাওয়া যায়। এ গবেষণাকালে হোফ্ট আবিষ্কার করেন যে SU(N) গেজ তত্ত্বগুলি N এর বৃহত্তর সীমাকে সরল করে আনতে পারে।[১৯] এক-অধ:স্থন মাত্রায় কনফর্মাল ক্ষেত্র তত্ত্বের সঙ্গে অ্যান্টি-ডি সিটার স্পেসে স্ট্রিং তত্ত্বের মধ্যে অনুমিত সামঞ্জস্য পরীক্ষায় হোফ্টের ওই আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। একক স্থান এবং একক সময় মাত্রায় এ তত্ত্বের সমাধান করে হোফ্ট মেসন কণার ভর নির্ণয়ের একটি সূত্র আবিষ্কার করতে সক্ষম হন।[২০]
তাছাড়া হোফ্ট QCD-তে তথাকথিত instanton অবদানের ভূমিকা অধ্যয়ন করেছেন। তার গণনায় দেখা যায় যে এরূপ অবদানগুলি নিম্নশক্তিতে আলোক কোয়ার্কগুলির মধ্যে এমন একটি মিথস্ক্রিয়ার দিকে অগ্রসর হয় যার আভাস সমকালীন প্রচলিত তত্ত্বগুলিতে ছিল না।[২১] ইয়াং-মিলস তত্ত্বগুলির instanton সমাধান পরীক্ষাকালে হোফ্ট আবিষ্কার করেন যে SU(N) প্রতিসাম্যসম্পন্ন একটি তত্ত্বকে U(1) প্রতিসাম্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পর্যবসিত করলে তা চুম্বকীয় মোনোপোল অস্তিত্ব তৈরি করে।[২২] পরবর্তীতে আলেকজান্ডার পলিয়াকভ স্বাধীনভাবে একইধরনের ফলাফল অর্জন করেন, এবং এখন এই মোনোপোলগুলি "হোফ্ট-পলিয়াকভ মোনোপোল" নামে পরিচিত।[২৩]
রঙ-সীমাবদ্ধতার সমাধানের আরেকটি অংশ হিসেবে গেরার্ট হোফ্ট "হোফ্ট অপারেটর" প্রণয়ন করেন, যা উইলসন লুপের চৌম্বকীয় দ্বৈত।[২৪] এধরনের অপারেটরগুলো ব্যবহার করে তিনি QCD এর বিভিন্ন দশার শ্রেণিবিন্যাস করতে সক্ষম হন, যা QCD দশাচিত্রের মূলভিত্তি।
গেরার্ট হোফ্ট ১৯৮৬ সালে অবশেষে অ্যাডলার-বেল-জ্যাকিভ অ্যানোমালির সমাধান উদ্ঘাটন হন, যা তার মাস্টার্স থিসিসের প্রারম্ভিক বিষয় ছিল।[২৫]
কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ এবং কৃষ্ণগহ্বর
হোফ্ট এর পিএইচডি অর্জনের পর যখন তিনি এবং ভেল্টমান সার্নে চলে যান, সেসময় ভেল্টমান মহাকর্ষের কোয়ান্টায়নে মাত্রিক নিয়মিতকরণ কৌশল ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। যদিও জানা ছিল যে যদিও এটি জানা ছিল যে বিচলিতকোয়ান্টাম মহাকর্ষ পুরোপুরি নিয়মিতকরণ যোগ্য না, তবু তারা ধারণা করেন এক্ষেত্রে কৌশলটির আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল পাওয়া যেতে পারে। পরবর্তীতে স্ট্যানলি ডেসার এবং ভেল্টমানের অধীন অন্য একজন পিএইচডি ছাত্র পিটার ভ্যান নিউয়েনহুইজেন এই ধারণাটি নিয়ে অগ্রসর হন, এবং তাদের কাজ অধি-মহাকর্ষ (সুপারগ্র্যাভিটি) আবিষ্কারে পর্যবসিত হয়। [১]
১৯৮০ দশকে হোফ্টের মনোযোগ চলে যায় ৩-মাত্রার স্থানকালে মহাকর্ষের বৈশিষ্ট্যের দিকে। ১৯৮৪ সালে ডেসার এবং জ্যাকিভ-এর সঙ্গে তিনি একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার আলোচ্য বিষয় ছিল, সমতল স্পেসের গতিবৈশিষ্ট্য যেখানে স্থানীয় স্বাধীনতার মাত্রা ছিল কেবল বিস্তাররত বিন্দুর খুঁতসমূহ।[২৬] পরবর্তীতে বিভিন্ন গবেষণাকালে হোফ্টের মনোযোগ এই সমতল মডেলে ফিরে ফিরে এসেছে; যখন তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে গট জুটিসমূহ কারণিকতা লঙ্ঘনকারী সময়-জাতীয় চক্র তৈরি করে না[২৭], এবং যখন ওই মডেলটির কোয়ান্টায়ন পরীক্ষা করছিলেন।[২৮] সম্প্রতি তিনি মহাকর্ষের এই সমতল মডেলটিকে ৪-মাত্রার স্থানকালের জন্য সম্পাদনার প্রস্তাব করেছেন।[২৯]
স্টিভেন হকিং যখন কৃষ্ণগহ্বরের হকিং বিকিরণ আবিষ্কার করেন, তখন দেখা যায় এই ধরনের বিকিরণ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এক মৌলিক শর্ত লঙ্ঘন করছে, ইউনিটারিটি। সমস্যাটি কৃষ্ণগহ্বর তথ্য প্যারাডক্স নামে পরিচিত। হোফ্ট এই সমস্যাটি গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। তিনি মনে করেছিলেন যে এটি হকিংয়ের ব্যবহৃত আধা-শাস্ত্রীয় পদ্ধতির ফল, এবং সমস্যাটি কোয়ান্টাম মহাকর্ষের পরিপূর্ণ তত্ত্বে সম্ভবত উপস্থিত থাকবে না। তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে ইউনিটারিটিকে স্বীকার্য ধরে নিয়ে ওইরকম সম্ভাব্য পরিপূর্ণ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করা যেতে পারে।
এই পদ্ধতি ব্যবহার করে হোফ্ট যুক্তি দিয়েছিলেন যে একটি কৃষ্ণগহ্বরের কাছাকাছি এলাকায় কোয়ান্টাম ক্ষেত্রগুলিকে এক মাত্রা অধ:স্থ তত্ত্ব দ্বারা বর্ণনা করা যেতে পারে।[৩০] এই আলোচনা থেকে গেরার্টেট হোফ্ট এবং লেনার্ড সাসকাইন্ড হলোগ্রাফিক তত্ত্বের সূচনা করেন।[৩১]
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মৌলিক বৈশিষ্ট্য
কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পদার্থবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সম্পর্কে হোফ্টের মতামত "মূলধারা থেকে বিচ্যুত"[১৮]। তিনি মনে করেন কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মৌলিক ব্যাখ্যা আপেক্ষিক না হয়ে সুনির্দিষ্ট হতে পারে।[৩২] একটি আনুমানিক মডেল ব্যবহার করে তিনি যুক্তি প্রদান করেছেন যে এমন একটি তত্ত্ব গতানুগতিক বেল বৈষম্য এড়িয়ে যেতে পারে যা স্থানীয় গোপন চলক তত্ত্বকে প্রতিহত করে।[৩৩] ২০১৬ সালে তিনি তার ধারণাগুলির একটি বই-সমান দৈর্ঘ্যের পর্যালোচনা প্রকাশ করেন, দ্যা সেলুলার অটোমেশন ইন্টারপ্রিটেশন অফ কোয়ান্টাম মেকানিক্স[৩৪] যা, হোফ্টের মতে, মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছে।[৩৫]
জনপ্রিয় প্রকাশনা
- প্লেয়িং উইথ প্ল্যানেটস, অক্টোবর ৩০, ২০০৮, ডিওআই:10.1142/6702
- ইন সার্চ অফ দ্যা আলটিমেট বিল্ডিং ব্লকস, নভেম্বর ২৮, ১৯৯৬, ডিওআই:10.1017/CBO9781107340855
- টাইম ইন পাওয়ার্স অফ টেন। ন্যাচারাল ফেনোমেনা অ্যান্ড দেয়ার টাইমস্কেলস, মে ১৯, ২০১৪, ডিওআই:10.1142/8786
আরও দেখুন
- বিপর্যয় ম্যাচিং শর্ত
- ফাইনম্যান-হোফ্ট গেজ
- ন্যূনতম বিযোজন পরিকল্পনা
- প্রাকৃতিকতা (পদার্থবিদ্যা)
- রিনরমালন
- হোফ্ট প্রতীক
- মার্স ওয়ান (জেরার্ডাস হোফ্ট প্রকল্পটির একজন প্রধান সমর্থক)
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.