Loading AI tools
সরীসৃপের প্রজাতি উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বৈজ্ঞানিক নাম নাজা নাজা (Naja naja), ইংরাজী নাম ইণ্ডিয়ান কোবরা। অন্য নাম স্পেক্টাকল্ড কোবরা, এশিয়ান কোবরা বা বাইনোসেলেট কোবরা। বাংলাদেশের স্থানীয় নাম খড়মপায়া বা খইয়া (খৈয়া) গোখরা। পশ্চিমবঙ্গের বাংলায় এই সাপকে গোখুরা বা গোখরো বলা হয়। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে এই সাপকে বলা হয় খড়িস। এই সাপটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বিষধর সাপ। এই প্রজাতির সাপ বৃহৎ নাজা গনের অর্ন্তভুক্ত এবং সাপে কাটার সংখ্যা বিচারে এটি অন্যতম একটি সাপ।[4][4]
স্পেকটাকল্ড কোবরা ইন্ডিয়ান কোবরা | |
---|---|
খৈয়া গোখরার ফনার পেছনের চিহ্ন | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণী জগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | সরীসৃপ |
বর্গ: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | এলাপিডি |
গণ: | নাজা |
প্রজাতি: | N. naja |
দ্বিপদী নাম | |
Naja naja (Linnaeus, 1758)[1][2] | |
Indian cobra distribution | |
প্রতিশব্দ[1][3] | |
|
স্পেকটাকল্ড কোবরার ফণার পিছনে পুরোনো দিনের ডাঁটি ছাড়া জোড়া-চোখো চশমার মত মত দাগ থাকে যার ফলে এর নাম করণ করা হয়েছে স্পেকটাকল্ড কোবরা। বিষধর এলাপিডি পরিবারের মধ্যে নাজা/কেউটে একটি বড় সর্পগোষ্ঠি। সাধারণতঃ নাজা গণের মধ্যে পড়ে গোখরা, স্পিটিং কোবরা ইত্যাদি সাপ, যাদের ফণা আছে। নাজা গণের আরেকটি সাধারণ সাপ হল মনোকলড কোবরা (বৈজ্ঞানিক নাম নাজা কাউথিয়া) বাংলায় পদ্ম গোখরা এরাও ভারতীয় উপমহাদেশে খুবই সাধারণ সাপ। সকল গোখরা প্রজাতির সাপ উত্তেজিত হলে ফণা মেলে ধরে। সাপের ঘাড়ের লম্বা হাড় স্ফীত হয়ে ওঠে, তাতে চমৎকার ফণাটি বিস্তৃত হয়।
ইংরেজি কোবরার (Cobra) বাংলা আক্ষরিক অর্থ হল কেউটে বা গোখরা। প্রকৃত পক্ষে কোবরা হল নাজা নামক বিস্তৃত ও বৃহৎ সর্প গণ/মহাজাতি (Genus)। এই গণে (Genus) সকল প্রজাতির কোবরাকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। কোবরা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও মিশর, আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, বার্মা, চীন ইত্যাদি দেশ ও অঞ্চলে দেখা যায়।
অনেকে ভুলবশত গোখরা/কেউটে বলতে শুধুমাত্র স্পেকটাকলড কোবরা বা মনোকল্ড কোবরাকে বুঝে থাকে। এটি আসলে একটি বৃহৎ সর্পগোষ্ঠির সাধারণ নাম।
এগুলো মধ্যম আকারের হয়। এদের বড় ও মনোমুগ্ধকর ফণার দ্বারা খুব সহজেই আলাদা করা যায়। হুমকির মুখোমুখি হলে এরা ফণা তোলে।
ফণার চিহ্ন অনেকক্ষেত্রেই দেখা যায়। চিহ্নটি ফণার পেছনের অংশে থাকে। চিহ্নটি দুটি ওসিলি বা চোখ সদৃশ যা একটি সরু রেখা দ্বারা যুক্ত। এরূপ চিহ্ন চশমার কথা মনে করিয়ে দেয়। যার ফলে একে স্পেকটাকলড কোবরা বলে ডাকা হয়। [5]
এগুলোর মাথা আনুভূমিক, চাপানো এবং ঘাড় থেকে আলাদা। নাসারন্ধ্র ছোট এবং গোল কিন্তু ছিদ্রগুলো বড়। চোখের মনি গোল এবং মধ্যম আকারের। বেশিরভাগ পূর্নবয়স্ক স্পেকটাকল্ড কোবরার আকার হয় ১ থেকে ১.৫ মিটার (৩.৩ থেকে ৪.৯ ফু) দৈর্ঘ্যের। কিছু কিছু সাপ যেমন শ্রীলঙ্কারগুলো প্রায় ২.১ থেকে ২.২ মিটার (৬.৯ থেকে ৭.২ ফু) লম্বা হয়, কিন্তু এত বড় হবার সম্ভবনা খুবই কম এবং পাওয়াও যায় খুব কম।[5]
ভারতীয় কোবরা তার বিচরণক্ষেত্র জুড়ে নানা রঙ এবং প্যাটার্নে দুর্দান্তভাবে পরিবর্তিত হয়। এই প্রজাতির ভেন্ট্রাল স্কেল বা আন্ডারসাইড রঙ হয় ধূসর, হলুদ, ট্যান, বাদামী, লালচে বা কালো। ভারতীয় কোবারার ডরসাল স্কেলগুলিতে হুড চিহ্ন বা রঙের নিদর্শন থাকতে পারে। সর্বাধিক প্রচলিত দৃশ্যমান প্যাটার্নটি ২০ থেকে ২৫ তম ভেন্ট্রালের স্তরে উত্তরোত্তর উত্তল হালকা ব্যান্ডের প্যাটার্ন। বিশেষত প্রাপ্তবয়স্কদের নমুনায় ফুটকি দাগগুলি পৃষ্ঠীয় আঁশগুলিতে দেখা যায়।
নাজা |
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
দক্ষিণ এশিয়ার বিস্তৃত জায়গা জুড়ে দেখা যায় বলে ইণ্ডিয়ান কোবরা/স্পেক্টাকল্ড কোবরার স্থানীয় অনেক নাম রয়েছে। তবে সবগুলো শব্দই নাগ (Naga) থেকে বিকৃত হয়ে বা সম্পর্কিত হয়ে ডাকা হয়:
প্রাচ্য ইঁদুর সাপ পটিয়াস মিউকোসাস প্রায়শই ভারতীয় কোবরার সাথে ঘুলিয়ে ফেলা হয়। যাইহোক, এই সাপটি আরও লম্বাকৃতির এবং এটির দেহের আরও বিশিষ্ট প্রতীকরূপ দ্বারা সহজেই পৃথক করা যায়। খৈয়া গোখরার অনুরূপ ব্যাণ্ডেড রেসারও হয় Argyrogena fasciolata এবং এছাড়া ভারতীয় মসৃণ সাপও Coronella brachyura দেখতে প্রায় স্পেকটাকলড কোবরার মত। এছাড়াও, মনোকলড কোবরাকেও ( নাজা কৌথিয়া ) অনেকে নাজা নাজা মনে করে বিভ্রান্ত হতে পারে। যাইহোক, মনোকলড কোবরার ফণার পিছনে একটি "ও" আকারের প্যাটার্ন রয়েছে, অন্যদিকে স্পেকটাকলড কোবরার ফণাতে একটি চশমা আকারের প্যাটার্ন রয়েছে।
ভারতীয় কোবরাটি ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয় এবং এটি ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ নেপাল জুড়ে পাওয়া যায়। ভারতে, এটি কাশ্মীরের কিছু অংশ আসাম রাজ্যে পাওয়া যেতে পারে এবং নাও যেতে পারে এবং এটি ২,০০০ মিটার (৬,৬০০ ফু) উচু এলাকায় এবং চরম প্রান্তর অঞ্চলে পাওয়া যায় না। পাকিস্তানে এটা বেলুচিস্তান প্রদেশের, অংশগুলি উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, অন্যত্র মরুভূমি এলাকায় এবং উত্তরাঞ্চল ইত্যাদি অঞ্চলে অধিকাংশ অনুপস্থিত। সর্বাধিক পশ্চিমের রেকর্ডটি আসে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের ডুকি থেকে এবং সবচেয়ে পূর্বের রেকর্ডটি বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলা থেকে। এই প্রজাতিটি চিত্রাল উপত্যকার দ্রোশে যেমন দেখা গেছে, তেমনি চরম পূর্ব আফগানিস্তানের কাবুল নদ উপত্যকায়ও এটি দেখা গিয়েছে। [6] ভুটানে এই প্রজাতির কমপক্ষে একটি প্রতিবেদন জানা গিয়েছে। [7]
ভারতীয় কোবরা ডিম পাড়ে এবং এপ্রিল থেকে জুলাই মাসের মধ্যে ডিম দেয়। স্ত্রী সাপ সাধারণত ইঁদুরের গর্ত বা উঁই ঢিবিতে ১০ থেকে ৩০টি ডিম দেয় এবং ডিমগুলি ৪৮ থেকে ৬৯ দিন ফুটে। বাচ্চাগুলি ২০ এবং ৩০ সেন্টিমিটার (৮ এবং ১২ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যের হয়। বাচ্চাগুলি জন্ম থেকে স্বাধীন এবং সম্পূর্ণরূপে কার্যকরী বিষের গ্রন্থি থাকে।
ভারতীয় কোবারার বিষ মূলত একটি শক্তিশালী পোস্ট- সিনাপটিক নিউরোটক্সিন এবং কার্ডিওটক্সিন সমৃদ্ধ বিষ। বিষটি স্নায়ুর সিনাপটিক ফাঁকগুলিতে কাজ করে , ফলে পেশী পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয় এবং গুরুতর কামড়ের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মত বিপদ দেখা দেয়। বিষ উপাদানে hyaluronidase এনজাইম অন্তর্ভুক্তির ফলে লাইসিস ঘটে এবং বিষ ছড়ানো বৃদ্ধি পায়। দংশনের পরে পনের মিনিট এবং দুই ঘন্টার মধ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলি প্রকাশিত হতে পারে।
ভারতে কোবরা সম্পর্কে প্রচুর কল্পকাহিনী রয়েছে, এরূপ একটি লোক কথা আছে যেখানে বলা হয় ইঁদুর সাপের সাথে মিলিত হবার কথা। [8]
রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের ছোট গল্প " রিক্কি-টিক্কি-তবি " -তে ভারতীয় নাগ এবং নাগিনী নামের এক যুগল কোবরার কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে যা ভারতে যথাক্রমে পুরুষ ও স্ত্রী সাপের হিন্দি স্থানীয় নাম।
ভারতীয়/খৈয়া কোবরাকে হিন্দুরা অত্যন্ত শ্রদ্ধা করে ও ভয় পায়, এমনকি একটি শক্তিশালী দেবতা হিসাবে হিন্দু পুরাণেও এর নিজস্ব স্থান রয়েছে। হিন্দু দেবতা শিবকে প্রায়শই বাসুকি নামে একটি কোবরা দিয়ে চিত্রিত করা হয়। এটি শিবে গলা পেচিয়ে ফণা ধরে থাকে। শিবের "মায়া" বা বিশ্ব-মায়ার উপর প্রভুত্বের প্রতীক হিসাবে সাপটি অবস্থান করে। বিষ্ণু সাধারণত কুণ্ডলিত সাপের শরীরের উপর শায়িত অবস্থায় থাকেন, ঐ সাপটি শীষ নাগ হিসেবে পরিচিত। এটি একাধিক কেউটের মাথা সংবলিত একটি দৈত্য সর্প দেবতা। নাগ পঞ্চমি এবং নাগুলা চাবিথির হিন্দু উত্সব চলাকালীন কোবরাকেও পূজা করা হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.