ক্লেম হিল

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

ক্লেম হিল

ক্লিমেন্ট ক্লেম হিল (ইংরেজি: Clem Hill; জন্ম: ১৮ মার্চ, ১৮৭৭ - মৃত্যু: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫) দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হিন্ডমার্শ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত অস্ট্রেলীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ও অধিনায়ক ছিলেন। ১৮৯৬ থেকে ১৯১২ সময়কালে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

দ্রুত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ণ নাম ...
ক্লেম হিল
Thumb
আনুমানিক ১৯০৫ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ক্লেম হিল
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ক্লিমেন্ট হিল
জন্ম(১৮৭৭-০৩-১৮)১৮ মার্চ ১৮৭৭
হিন্ডমার্শ, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রেলিয়া
মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫(1945-09-05) (বয়স ৬৮)
পার্কভিল, ভিক্টোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া
ডাকনামক্রুজার
উচ্চতা১.৭৫ মিটার (৫ ফুট ৯ ইঞ্চি)
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি লেগ স্পিন
ভূমিকাব্যাটসম্যান, অধিনায়ক
সম্পর্কস্ট্যানলি হিল, লেস হিল, আর্থার হিল, হেনরি হিল, পার্সিভাল হিল (ভাই), উইন্ডহাম হিল-স্মিথ (ভাইপো)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৭৪)
২২ জুন ১৮৯৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১২ বনাম ইংল্যান্ড
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৮৯২/৯৩-১৯২২/২৩সাউদার্ন রেডব্যাকস
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৪৯ ২৫২
রানের সংখ্যা ৩৪১২ ১৭২১৩
ব্যাটিং গড় ৩৯.২১ ৪৩.৫৭
১০০/৫০ ৭/১৯ ৪৫/৮৩
সর্বোচ্চ রান ১৯১ ৩৬৫*
বল করেছে   ৫১০
উইকেট   ১০
বোলিং গড়   ৩২.২০
ইনিংসে ৫ উইকেট    
ম্যাচে ১০ উইকেট    
সেরা বোলিং   ২-১০
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৩৩/– ১৬৮/১
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৮ অক্টোবর ২০১৫
বন্ধ

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে সাউদার্ন রেডব্যাকসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে ভূমিকা রাখতেন। এছাড়াও, দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘ক্রুজার’ ডাকনামে পরিচিত ক্লেম হিল। ছোট-খাঁটো গড়নের অধিকারী হিল বামহাতে ব্যাটিংয়ে সবিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন।

প্রারম্ভিক জীবন

হেনরি জন হিল ও রেবেকা দম্পতির আট পুত্র ও আট কন্যার একজন তিনি।[] পরিবারটি ক্রিকেটের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। তার বাবা নর্থ অ্যাডিলেড দলে খেলতেন। সফরকারী কেন্ট ক্লাবের বিপক্ষে অপরাজিত ১০২* তুলেন যা অ্যাডিলেড ওভালে প্রথম সেঞ্চুরি হিসেবে পরিচিতি পায়।[] তার অন্য ছয় ভাই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলেছেন। এছাড়াও, ১৯১২-১৩ মৌসুমে হিলের তিন ভাই একই দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।[]

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

নিজ জন্মদিনের নয়দিন পর ষোল বছর বয়সে বিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থাতেই সাউথ অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলার সুযোগ পান।[] ১৮৯৪-৯৫ মৌসুমে এ. ই. স্টডার্টের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ দল অস্ট্রেলিয়া গমন করে। ইংরেজ একাদশের বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসে তিনি ২০ রান তুলেছিলেন।

ঐ মৌসুমের শেষদিকে সাউথ অস্ট্রেলিয়া দলের নিয়মিত সদস্যের মর্যাদা পান। শেফিল্ড শিল্ডে ভিক্টোরিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ঘটে তার। নয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে ২১ রান তুললে অস্ট্রেলীয় টেস্ট উইকেট-রক্ষক জ্যাক ব্ল্যাকহাম আরও একজন সেরা ব্যাটসম্যানের কথা ঘোষণা করেন। ইংরেজ দল অ্যাডিলেড ওভালে খেলতে নামলে ক্লেম হিল তার প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট প্রথম শতরান করেন। টম রিচার্ডসনববি পিলের ন্যায় বোলারের আক্রমণ মোকাবেলা করে অপরাজিত ১৫০ রান তুলেন। ঐ পর্যায়ে এটিই সর্বকনিষ্ঠ অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানের দেড় শতাধিক রানের কৃতিত্ব ছিল। পরবর্তীতে ২০১০-১১ মৌসুমে মার্কাস হ্যারিস কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের ইনিংস খেলে রেকর্ডটি নিজের করে নেন।

১৯০০-০১ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে নিউ সাউথ ওয়েলসের বিপক্ষে ৩৬৫ রান করেন। বিল পন্সফোর্ড নতুন রেকর্ড গড়ার পূর্বে তার এ রেকর্ডটি ২৭ বছর টিকেছিল।[]

খেলোয়াড়ী জীবন

ঘরোয়া ক্রিকেটে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করায় জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে দল নির্বাচকমণ্ডলী দলের সদস্যরূপে ঘোষণা করে।[] ১৮৯৬ সালে ১৯ বছর বয়সে ইংল্যান্ড সফরের জন্য টেস্ট দলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। এর দুই বছর পর মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হিল তার প্রথম শতরান ১৮৮ রান তোলেন। অ্যাশেজ সিরিজে ২১ বছরের নিচে অবস্থানরত খেলোয়াড়দের মধ্যে অদ্যাবধি সর্বোচ্চ রান এটি।[]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে তিনি ৪৯ টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন। তন্মধ্যে দশ টেস্টে দলের অধিনায়ক ছিলেন। এ সময়ে দল পাঁচটি জয় পায় ও বাকী পাঁচটিতে পরাজিত হয়েছিল। সাত সেঞ্চুরি সহযোগে ৩৯.২১ গড়ে ৩,৪১২ রান তোলেন। অবসরগ্রহণকালীন সময়ে তার এ রান বিশ্বরেকর্ড ছিল। ১৯০২ সালে প্রথম ব্যাটসম্যানরূপে এক পঞ্জিকাবর্ষে হাজার রান তোলেন যা পরবর্তী ৪৫ বছরে আর কেউ করতে পারেননি। ১৯০৩-০৪ মৌসুমে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তাকে রান আউট ঘোষণা করলে দাঙ্গা-হাঙ্গামার কবলে পড়েন।[] ১৯০৭-০৮ মৌসুমে অষ্টম উইকেটে রজার হার্টিগ্যানের সাথে ২৪৩ রানের অস্ট্রেলীয় টেস্ট রেকর্ড গড়েন যা ব্রিসবেনের গাব্বায় করেছিলেন। অ্যাডিলেড ওভালের প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে তিনি ১৬০ ও রজার হার্টিগ্যান করেছিলেন ১১৬ রান। অদ্যাবধি এ জুটির সংগ্রহটি অস্ট্রেলীয় টেস্ট রেকর্ডরূপে বিবেচিত হয়ে আসছে।

অধিনায়কত্ব

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের সাথে চমৎকার সম্পর্ক বজায় রাখেন। ১৯০৯ সালে ইংল্যান্ড সফরের জন্য মনোনীত হলেও চুক্তির শর্তাবলীর কারণে তিনি বেজার হন। তাস্বত্ত্বেও ১৯১০-১১ মৌসুমে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার জন্য তাকে অধিনায়ক মনোনীত করা হয়।

১৯১২ সালে দল নির্বাচক পিটার ম্যাকালিস্টারের সাথে মতানৈক্যের কারণে তার টেস্ট জীবনের সমাপ্তি ঘটে।[] ফেব্রুয়ারি, ১৯১২ সালে নির্বাচকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। এক পর্যায়ে ক্লেম হিল ম্যাকালিস্টারের নাকে ঘুষি মারেন ও ২০ মিনিট ধরে ধ্বস্তাধ্বস্তি চলে। ১৯১২ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থানীয় ৬ জন ক্রিকেটারের অন্যতম হিসেবে সফরে যেতে অস্বীকার করেন।[]

খেলোর ধরন

ব্যাটের হাতলের নীচ দিকে ধরতেন। ব্যাটিংয়ের ধরন আকর্ষণীয় না হলেও যথেষ্ট কার্যকরী ছিল বিশেষ করে লেগ সাইডে ও কাটিং করার সময়। দলের প্রয়োজনের সময় বেশ দ্রুততার সাথে রান সংগ্রহে সক্ষমতা দেখিয়েছেন। এছাড়াও তার ধৈর্য্যশক্তি ও রক্ষণাত্মক ভঙ্গীমার জন্যও পরিচিতি পেয়েছেন। সচরাচর তিনি তিন নম্বরে ভিক্টর ট্রাম্পারের সাথে ব্যাটিংয়ে নামতেন। বিংশ শতকের শুরুতে তিনি অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপের অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন। চমৎকার আউটফিল্ডার হিসেবেও তিনি সুনাম কুড়িয়েছেন। দলীয় সঙ্গীদের কাছে তার নির্দেশনা, সততা ও উৎফুল্লতা বেশ কার্যকর ছিল।

সম্মাননা

ইংরেজ ক্রিকেট মৌসুমের অর্ধেক সময়ই অসুস্থতায় অবস্থান[] করলেও ১৮৯৯ সালে উইজডেন কর্তৃপক্ষ তাকে বর্ষসেরা ক্রিকেটাররূপে ঘোষণা করে।[]

২০০৩ সালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ তার সম্মানার্থে অ্যাডিলেড ওভালের একটি গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড নামাঙ্কিত করে।[] ২০০৫ সালে তাকে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।[১০]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর নেয়ার পর ঘোড়দৌড়ের সাথে সম্পৃক্ত হন। কলিফিল্ড কাপে হ্যান্ডক্যাপার হিসেবে জড়িত ছিলেন। ১৯৪৫ সালে ৬৮ বছর বয়সে মেলবোর্নে ট্রাম থেকে পড়ে গিয়ে দূর্ঘটনায় ক্লেম হিলের দেহাবসান ঘটে।

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

গ্রন্থপঞ্জী

বহিঃসংযোগ

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.