Loading AI tools
মহাকাশে পরিভ্রমণরত পাথর বা ধাতু দ্বারা গঠিত ছোট মহাজাগতিক বস্তু উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উল্কা (ইংরেজি: meteoroid) হল একটি ছোট পাথুরে বা ধাতব বস্তু যা কিনা ধূমকেতুর অংশবিশেষ। কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে ঘর্ষণে জ্বলে উঠলে তাকে উল্কা বলা হয়।
এটি মহাকাশে পরিভ্রমণরত পাথর বা ধাতু দ্বারা গঠিত ছোট মহাজাগতিক বস্তু যা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করলে বায়ুর সংঘর্ষে জ্বলে উঠে। তখন একে উল্কাপাত (ইংরেজি: meteor) বলে। এই উল্কাপাতের জন্য দায়ী বস্তুগুলোকে উল্কা বলে। উল্কাপিণ্ড গ্রহাণুর তুলানায় আকারে অনেক ক্ষুদ্র। আকারে এরা ছোট ধূলিকনা থেকে ১ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে। এর চেয়ে ছোট বস্তুকে মহাজাগতিক ধূলিকণা বলে।[1][2]
এসব উল্কার বেশীরভাগই গ্রহাণুর বা ধূমকেতুর অংশবিশেষ। বাকী অংশ মহাজাগতিক বস্তুর সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষ।[3] যখন কোন উল্কা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে তখন এর গতীবেগ প্রতি সেকেন্ডে ২০ কিমি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় (৭২,০০০ কিমি/ঘণ্টা; ৪৫,০০০ মাইল/ঘণ্টা।)। এসময়ে এ্যারোডাইনামিক্স তাপের কারণে উজ্জ্বল আলোক ছটার সৃষ্টি হয়। এই বাহ্যমূর্তীর কারণে উল্কাপাতকে "তারা-খসা" বা "নক্ষত্র-খসা" বলে। কিছু কিছু উল্কা একই উৎস হতে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে ভেঙে প্রজ্জ্বলিত হয় যাকে উল্কা বৃষ্টি বলা হয়।
প্রায় ১৫,০০০ টন পরিমাণ উল্কা, ক্ষুদ্র উল্কাকণা এবং মহাজাগতিক ধূলিকনা প্রতি বছর পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে।[4]
উল্কার আকার নিয়ে বেশ অনেকদিন ধরে নানা ব্যাখ্যা ও সংজ্ঞা দেয়া হচ্ছে। ১৯৬১ সালে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন উল্কাকে সংজ্ঞায়িত করেন এইভাবে যে, "মহাশূন্যে চলমান একটি কঠিন বস্তু, যার আকার একটি গ্রহাণুর থেকে যথেষ্ট ছোট এবং একটি পরমাণুর থেকে যথেষ্ট বড়"।[5] ১৯৯৫ সালে, মারটিন বিচ ও ড্যানিয়েল স্টিল একত্রে রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ত্রিমাসিক জার্নালে একটি লিখা প্রকাশ করেন।[6] যেখানে তারা উল্কার একটি নতুন সংজ্ঞা প্রস্তাব করেন যে, উল্কার আকার ১০০ µm থেকে ১০ m (৩৩ ফুট) এরমধ্যে হতে হবে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে, ১০ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের গ্রহাণু আবিষ্কারের পর, আলান রুবেন ও জেফরী গ্রসমান গ্রহাণু ও উল্কার পার্থক্য বজায় রাখার জন্যে ১০ µm এবং ১ মিটার (৩ ফুট ৩ ইঞ্চি) ব্যাসের মধ্যে বস্তুর জন্য উল্কাপিণ্ডের পূর্ববর্তী সংজ্ঞার সংশোধনের প্রস্তাব করেছিলেন কারণ গ্রহাণুর সর্বনিন্ম আকার যাতে পৃথিবী-প্রদক্ষিণকারী টেলিস্কোপ দিয়ে সনাক্ত হতে পারে।[7] ২০০৮ ও ২০১১ সালে যথাক্রমে TS26 ও CQ1 গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয় যাদের আকার ১ মিটারের (৩ ফুট ৩ ইঞ্চি) কম ছিল।[8] ২০১৭ সালের এপ্রিলে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন আনুষ্ঠানিকভাবে উল্কার আকার ৩০ µm থেকে ১ মিটারের (৩ ফুট ৩ ইঞ্চি) মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়।[9]
প্রায় সব উল্কা বহিঃবিশ্বের নিকেল আর লোহা দিয়ে গঠিত। প্রধানত উল্কার উপাদানকে তিন ধরনে ভাগ করা যায়, যথাঃ লোহা, পাথর, পাথর-লোহা। কিছু পাথর উল্কায় কন্ড্রুল নামের ক্ষুদ্র কণা থাকে, যাদের কন্ড্রাইট বলা হয়। এই বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়া পাথুরে উল্কাকে অ্যাকনড্রাইট বলা হয়, যা সাধারণত বহিঃবিশ্বের আগ্নেয় ক্রিয়াকলাপ থেকে তৈরি হয়; তারা সামান্য বহিঃবিশ্বের লোহা ধারণ করে আবার অনেকসময় করে না।[10] উল্কাপাতের সময় উল্কার আলোর বর্ণালী এবং গতিপথ যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যায়, তখন উল্কার গঠন অনুমান করা যেতে পারে। রেডিও সিগনালের উপর এদের প্রভাবের ফলে এদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়, বিশেষত দিনের বেলায় যে উল্কাপাতগুলো হয় ঐগুলো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন। উল্কার গতিপথ পরিমাপ, উল্কাগুচ্ছের ভিন্ন ভিন্ন গতিপথ, উল্কাবৃষ্টি প্রায়শ মূল ধূমকেতুর সাথে সম্পর্কিত। উল্কাবৃষ্টির ধ্বংসাবশেষ শেষ পর্যন্ত অন্য কক্ষপথে ছড়িয়ে পড়তে পারে। উল্কার গতিপথ ও হালকা বক্ররেখার পরিমাপের সাথে আলোর বর্ণালী মিলিত হয়ে বিভিন্ন কম্পোজিশন ও ঘনত্ব তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে বরফের এক চতুর্থাংশ ঘনত্বের ভঙ্গুর তুষারগোলকের[11] মতো বস্তু থেকে শুরু করে নিকেল-লোহা সমৃদ্ধ ঘন শিলা। উল্কাপিণ্ডের গঠন অনুসন্ধান করে অ-ক্ষণস্থায়ী উল্কাগুলির গঠন সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
অধিকাংশ উল্কা গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ বল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে গ্রহাণু বেষ্টনী থেকে আসে, তবে বাকিরা আসে ধূমকেতুর কণা থেকে যা উল্কাবৃষ্টি তৈরি করে। কিছু উল্কাপিণ্ড মঙ্গলগ্রহ বা চাঁদের টুকরা, যারা কিনা কোন মহাকর্ষীয় আঘাতের কারণে মহাকাশে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
বিভিন্ন কক্ষপথে ও বিভিন্ন বেগে উল্কাগুলো সূর্যের চারদিকে ছুটে বেড়ায়। সবচেয়ে গতিশীল উল্কাটি পৃথিবীর কক্ষপথের আশেপাশে মহাকাশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪২ কিমি/সেকেন্ড (৯৪,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) বেগে ছুটে বেড়ায়। এটি সূর্য থেকে পালানোর বেগ, পৃথিবীর গতির দুই গুণের বর্গমূলের সমান এবং পৃথিবীর আশেপাশে থাকা বস্তুর উচ্চ গতির সীমা, যদি না তারা আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থান থেকে আসে। পৃথিবী প্রায় ২৯.৬ কিমি/সেকেন্ড (৬৬,০০০ মাইল) বেগে ঘুরে, সুতরাং যখন উল্কাগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে মিলিত হয় (যা শুধুমাত্র তখনই ঘটে যখন উল্কাগুলি একটি বিপরীতমুখী কক্ষপথে থাকে যেমন ইটা অ্যাকুয়ারিডস, যা বিপরীতমুখী হ্যালির ধূমকেতুর সাথে যুক্ত) গতি প্রায় ৭১ কিমি/সেকেন্ড (১৬০,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীর কক্ষপথের মধ্য দিয়ে উল্কাপিন্ড চলমান গতি গড় প্রায় ২০ কিমি/সেকেন্ড (৪৫,০০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা)।
জানুয়ারী ১৭, ২০১৩ সালের, ০৫:২১ PST এ, ওর্ট ক্লাউড থেকে একটি এক মিটার আকারের ধূমকেতু ক্যালিফোর্নিয়া এবং নেভাডার উপর দিয়ে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিল।[12] বস্তুটির ০.৯৮ ± ০.০৩ AU এ পেরিহিলিয়ন সহ একটি বিপরীতমুখী কক্ষপথ ছিল। এটি কন্যা (তারামণ্ডল)-এর দিক থেকে আসছিলো (যা সেই সময়ে দিগন্তের প্রায় ৫০° উপরে দক্ষিণে ছিল), এবং ৭২ ± ৬ কি.মি./সে.(১৬১,০০০ ± ১৩,০০০ মাইল/ঘণ্টা) বেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।[12] উল্কাটি কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে ভূমি থেকে ১০০ কি.মি. (৩৩০,০০০ ফুট) উপরে বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
রাতের আকাশে উল্কাগুলো যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে তখন উল্কাপাত দেখা যায়। যদি উল্কাগুলি বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে টিকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে পৌঁছায়, তবে তাদের উল্কাপিণ্ড বলা হয়। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় উল্কাপিণ্ডগুলো প্রবেশের তাপ এবং প্রভাব বল দ্বারা গঠিত হয়। 2008 TC3 একটি উল্লেখযোগ্য ৪-মিটার (১৩ ফুট) দৈর্ঘ্যের গ্রহাণু, যা ৬ অক্টোবর ২০০৮ সালে পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের সময় মহাকাশে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এবং পরের দিন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে উত্তর সুদানের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে আঘাত করেছিল। এটিই প্রথম উল্কাপিণ্ড যেটা কিনা মহাকাশে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো এবং পৃথিবীতে আঘাত করার আগ পর্যন্ত সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল।[14] নাসা এমন একটি ম্যাপ বানিয়েছে যাতে ১৯৯৪ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবী এবং এর বায়ুমণ্ডলের সাথে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রহাণুর সংঘর্ষগুলো দেখানো হয়েছে যেগুলা সংগ্রহ করা হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারী সেন্সরগুলোর মাধ্যমে (পাশে দেখুন)।
যখন খসে পরা উল্কা, ক্ষুদ্র উল্কাপিণ্ড, ধূমকেতু বা গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে দ্রুতগটিতে প্রবেশ করে বায়ুর অণুর সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে উত্তপ্ত হওয়ার পরে জ্বলে উঠে, তাকে উল্কাপাত বলে যা কিনা "তারা-খসা" বা "নক্ষত্র-খসা" নামেও পরিচিত।[5][16] যদিও একটি উল্কা পৃথিবী থেকে কয়েক হাজার ফুট দূরে বলে মনে হতে পারে, উল্কা সাধারণত ৭৬ থেকে ১০০ কিমি (২৫০,০০০ থেকে ৩৩০,০০০ ফুট) উচ্চতায় মেসোস্ফিয়ারে দেখা যায়।[17] উল্কা মূল শব্দটি এসেছে গ্রীক meteōros থেকে, যার অর্থ "উঁচু বাতাসে"।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ উল্কাপাত ঘটে। উল্কা সৃষ্টিকারী বেশিরভাগ উল্কাই প্রায় বালির দানার আকারের হয়, অর্থাৎ তারা সাধারণত কয়েক মিলিমিটার আকারের বা ছোট হয়। উল্কাপিণ্ডের আকারগুলি তাদের ভর এবং ঘনত্ব থেকে গণনা করা যেতে পারে যা ঘুরে, উপরের বায়ুমণ্ডলে পর্যবেক্ষণ করা উল্কা গতিপথ থেকে অনুমান করা যেতে পারে।[18] উল্কাপাত বৃষ্টির মতো হতে পারে যদি পৃথিবী কোন একটি ধূমকেতুর ফেলে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের স্রোতের মধ্য দিয়ে যায়, অথবা মহাকাশের ধ্বংসাবশেষের একটি "এলোমেলো" বা "বিক্ষিপ্ত" উল্কার পাশ দিয়ে যায়। মূলত সাধারণ জনগণ ইচ্ছাকৃত বা দুর্ঘটনার মাধ্যমে অনেকগুলি নির্দিষ্ট উল্কাকে পর্যবেক্ষণ করেছেন, যা কিনা যথেষ্ট বিশদ তথ্যসহ উল্কাগুলির কক্ষপথ গণনা করা হয়েছে। সূর্যের চারদিকে ঘূর্ণায়মান পৃথিবী থেকে উল্কার বায়ুমণ্ডলীয় বেগ হল প্রায় ৩০ কিমি/সেকেন্ড (৬৭,০০০ মাইল/ঘণ্টা) যা কিনা উল্কার কক্ষপথ ও পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলের ফলে হয়।
উল্কাগুলি পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৭৫ থেকে ১২০ কিমি (২,৫০,০০০ থেকে ৩,৯০,০০০ ফুট) এর মধ্যে দৃশ্যমান হয়। তারা সাধারণত ৫০ থেকে ৯৫ কিমি (১,৬০,০০০ থেকে ৩,১০,০০০ ফুট) উচ্চতায় নিঃশেষ হয়ে যায়।[19] দিনের আলোতে (বা দিনের আলোর কাছাকাছি) উল্কাগুলির পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষে হওয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে। তবে বেশিরভাগ উল্কাপাত রাতে দেখা যায়, যখন অন্ধকারে ক্ষীণ বস্তুকেও দেখে চিনা যায়। বায়ুমণ্ডলীয় রাম চাপ (ঘর্ষণ নয়) এর কারণে উল্কাগুলো উত্তপ্ত হয়ে জ্বলে উঠে যার ফলে ১০ সেমি (৩.৯ ইঞ্চি) থেকে কয়েক মিটার পর্যন্ত বড় আকারের উল্কাগুলো দৃশ্যমান হয়, এবং তা গ্যাস ও গলিত উল্কাকনা দিয়ে উজ্জ্বল পথ তৈরি করে জ্বলতে থাকে। গ্যাসগুলির মধ্যে রয়েছে বাষ্পীভূত উল্কাপিণ্ডের উপাদান এবং বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস যা উল্কা বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় উত্তপ্ত হয়। বেশিরভাগ উল্কা প্রায় এক সেকেন্ডের জন্য জ্বলে।
যদিও উল্কাপাত প্রাচীনকাল থেকে সবার কাছে পরিচিত ছিল, তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত এগুলি একটি জ্যোতির্বিদ্যাগত ঘটনা হিসাবে পরিচিত ছিল না। তারও আগে, পশ্চিমা দেশগুলোতে তারা একে বজ্রপাতের মতো একটি বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা হিসাবে দেখত, এবং আকাশ থেকে পাথর পড়ার বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত না বলে মনে করত। ১৮০৭ সালে, ইয়েল ইউনিভার্সিটির রসায়নের অধ্যাপক বেঞ্জামিন সিলিম্যান কানেকটিকাটের ওয়েস্টনে পড়ে যাওয়া একটি উল্কাপিণ্ডের তদন্ত করেন।[20] সিলিম্যান বিশ্বাস করতেন যে উল্কার মহাজাগতিক উৎপত্তি ছিল, কিন্তু ১৮৩৩ সালের নভেম্বরের দর্শনীয় উল্কাঝড়ের আগ পর্যন্ত উল্কা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে খুব বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করেনি।[21] সমস্ত পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে লোকেরা হাজার হাজার উল্কাপাত দেখেছে, আকাশের একটি বিন্দু থেকে বিকিরণ করছে। সতর্ক পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করেছেন যে দীপ্তিমান উল্কা,যে বিন্দুটিকে এখন বলা হয়, তা তারার সাথে সরে গেছে, লিও নক্ষত্রে অবস্থান করছে।[22]
জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডেনিসন ওলমস্টেড এই ঝড়ের একটি বিস্তৃত অধ্যয়ন করেছিলেন এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন যে এর একটি মহাজাগতিক উৎস ছিল। ঐতিহাসিক রেকর্ড পর্যালোচনা করার পর, হেনরিক উইলহেম ম্যাথিয়াস ওলবার্স ১৮৬৭ সালে ঝড়ের প্রত্যাবর্তনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, যা অন্যান্য জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। হুবার্ট এ. নিউটনের আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ ঐতিহাসিক কাজ ১৮৬৬ সালের একটি পরিমার্জিত ভবিষ্যদ্বাণীর দিকে ধাবিত করেছিল, যা পরে সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছিল।[21] টেম্পেল-টাটলে ধূমকেতুর সাথে লিওনিডদের (যেমন এখন বলা হয়) সংযোগে জিওভান্নি শিয়াপারেলির সাফল্যের সাথে, উল্কার মহাজাগতিক উৎস এখন দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। তবুও, তারা একটি বায়ুমণ্ডলীয় ঘটনা হিসেবেই রয়ে গেছে এবং তাদের নাম "উল্কা" ধরে রেখেছে যার গ্রীক শব্দ "বায়ুমণ্ডলীয়"।[23]
একটি অগ্নিগোলক/ ফায়ারবল হল একটি স্বাভাবিকের চেয়ে উজ্জ্বল উল্কা যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উপরে দৃশ্যমান হয়। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন একটি অগ্নিগোলককে "যে কোনো গ্রহের চেয়ে উজ্জ্বল উল্কা" (আপাত মাত্রা -৪ বা তার বেশি) হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে।[24] আন্তর্জাতিক উল্কা সংস্থা(একটি অপেশাদার সংস্থা যা উল্কা নিয়ে গবেষণা করে) এর আরও কঠোর সংজ্ঞা রয়েছে।এটি একটি অগ্নিগোলককে একটি উল্কা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে যার মাত্রা -৩ বা পর্যবেক্ষকের শীর্ষে দেখা গেলে উজ্জ্বল হবে। এই সংজ্ঞা একটি পর্যবেক্ষক এবং দিগন্তের কাছাকাছি একটি উল্কা মধ্যে বৃহত্তর দূরত্ব জন্য সংশোধন করে। উদাহরণস্বরূপ, দিগন্তের ৫ ডিগ্রি উপরে -১ মাত্রার একটি উল্কাকে আগুনের গোলা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হবে কারণ, যদি পর্যবেক্ষক সরাসরি উল্কার নীচে থাকত, তবে এটি -৬ মাত্রা হিসাবে দেখা যেত।[25]
আপাত মাত্রায় ১৪ বা তার চেয়ে বেশি উজ্জ্বল হওয়া অগ্নিগোলককে বলা হয় বোলাইড।[26] ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের বোলাইড নিয়ে কোন সংজ্ঞা নেই, তারা একে সাধারণত "অগ্নিগোলক" এর সমার্থক শব্দ হিসাবে বিবেচনা করে।জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা প্রায়ই "বোলাইড" ব্যবহার করে একটি ব্যতিক্রমী উজ্জ্বল অগ্নিগোলক সনাক্ত করতে, বিশেষ করে যেটি একটি উল্কা বায়ু বিস্ফোরণে বিস্ফোরিত হয়।[27]এগুলিকে কখনও কখনও "বিস্ফোরণকারী ফায়ারবল"ও বলা হয়। যেসব অগ্নিগোলক বিস্ফোরণের শব্দ তৈরি করে তাদেরকেও বুঝায়। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে, বোলাইড বলতে বোঝানো হয়েছে যে কোনো বস্তু যা পৃথিবীতে আঘাত করে এবং বিস্ফোরিত হয়, তার গঠন (গ্রহাণু বা ধূমকেতু) বিবেচনা না করেই।[28] বোলিড শব্দটি এসেছে গ্রীক βολίς (বলিস)[29] থেকে যার অর্থ হতে পারে ক্ষেপণাস্ত্র বা ঝলকানি। যদি একটি বোলাইডের মাত্রা -১৭ বা তার চেয়ে বেশি হয় তবে এটি সুপারবোলাইড নামে পরিচিত।[30][31] তুলনামূলকভাবে অল্প শতাংশ অগ্নিগোলক পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে আঘাত করে এবং তারপর আবার বেরিয়ে যায়: এগুলোকে পৃথিবী-চারণকারী ফায়ারবল বলা হয়। এই ধরনের একটি ঘটনা ১৯৭২ সালে উত্তর আমেরিকায় দিনের আলোতে ঘটেছিল। আরেকটি বিরল ঘটনা হল একটি উল্কামিছিল, যেখানে উল্কাটি পৃথিবীর পৃষ্ঠের প্রায় সমান্তরালে ভ্রমণ করে বেশ কয়েকটি ফায়ারবলে বিভক্ত হয়ে যায়।
আমেরিকান উল্কা সোসাইটিতে প্রতি বছর ফায়ারবলের একটি ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান সংখ্যা রেকর্ড করা হয়।[32] বছরে সম্ভবত ৫,০০,০০০ টিরও বেশি ফায়ারবল হয়,[33] তবে বেশিরভাগই অলক্ষিত হয় কারণ বেশিরভাগই সমুদ্রের উপরে ঘটে এবং অর্ধেক দিনের বেলায় ঘটে। একটি ইউরোপীয় ফায়ারবল নেটওয়ার্ক এবং একটি নাসা অল-স্কাই ফায়ারবল নেটওয়ার্ক অনেক ফায়ারবল সনাক্ত করে এবং ট্র্যাক করে।[34]
বছর | ২০০৮ | ২০০৯ | ২০১০ | ২০১১ | ২০১২ | ২০১৩ | ২০১৪ | ২০১৫ | ২০১৬ | ২০১৭ | ২০১৮ | ২০১৯ | ২০২০ | ২০২১ |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
সংখ্যা | ৭৩৪ | ৬৭৬ | ৯৫৩ | ১,৬৬০ | ২.১৮৩ | ৩,৫৯৯ | ৩,৭৮৯ | ৪,২৫০ | ৫,৩৯১ | ৫,৫১০ | ৫,৯৯৩ | ৬,৯৭৮ | ৮,২৫৯ | ৯,৬২৯ |
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে উল্কাপিণ্ডের প্রবেশ তিনটি প্রধান প্রভাব সৃষ্টি করে: বায়ুমণ্ডলীয় অণুর আয়নকরণ, উল্কাপাতের ধূলিকণা এবং উত্তরণের শব্দ। উপরের বায়ুমণ্ডলে একটি উল্কা বা গ্রহাণুর প্রবেশের সময়, একটি আয়নিকরণের পথ তৈরি হয়, যেখানে বায়ুর অণুগুলি উল্কার পথ দ্বারা আয়নিত হয়। এই ধরনের আয়নিকরণের ফলে সৃষ্ট পথ একবাড়ে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ছোট শস্যকণা আকারের উল্কাগুলি প্রতিনিয়ত বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে, মূলত প্রতি কয়েক সেকেন্ডে বায়ুমণ্ডলের যে কোনও অঞ্চলে, এবং এইভাবে আয়নকরণের পথগুলি উপরের বায়ুমণ্ডলে কমবেশি ক্রমাগতভাবে দেখতে পাওয়া যায়। যখন রেডিও তরঙ্গগুলি এই পথগুলি থেকে ধাক্কা খেয়ে ফেরত আসে, তখন একে বলা হয় উল্কা বিস্ফোরণ যোগাযোগ। উল্কা সনাক্তকরণ রাডার ক্ষয় হার এবং একটি উল্কা পথের ডপলার স্থানান্তর পরিমাপ করে বায়ুমণ্ডলীয় ঘনত্ব এবং বায়ু পরিমাপ করতে পারে। বেশিরভাগ উল্কা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে পুড়ে যায়। অবশিষ্ট ধ্বংসাবশেষকে বলা হয় মেটেওরিক ডাস্ট বা শুধু উল্কা ধূলিকণা। উল্কা ধূলিকণা কয়েক মাস পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে থাকতে পারে। এই কণাগুলি জলবায়ুকে প্রভাবিত করতে পারে, উভয় ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ বিক্ষিপ্ত করে এবং উপরের বায়ুমণ্ডলে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে অনুঘটক করে।[36] উল্কাপিণ্ডগুলো বা তাদের টুকরাগুলোর প্রান্তিক বেগ হ্রাস পেয়ে অন্ধকার ফ্লাইট অর্জন করে। অন্ধকার ফ্লাইট শুরু হয় যখন তারা প্রায় ২-৪ কিমি/সেকেন্ড (৪,৫০০-৮,৯০০ মাইল প্রতি ঘণ্টা) গতিতে কমতে থাকে। বৃহত্তর খণ্ডগুলো বিচ্ছুরিতভাবে মাঠে পড়ে।
উল্কা দ্বারা সৃষ্ট দৃশ্যমান আলো বিভিন্ন বর্ণ ধারণ করতে পারে, উল্কার রাসায়নিক সংমিশ্রণ এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে এর চলাচলের গতির উপর নির্ভর করে। উল্কাপিণ্ডের স্তরগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত এবং আয়নিত হওয়ার কারণে, নির্গত আলোর রঙ খনিজগুলির স্তর অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। উল্কার রঙ নির্ভর করে উল্কাপিণ্ডের ধাতব বিষয়বস্তুর আপেক্ষিক প্রভাব বনাম সুপারহিটেড এয়ার প্লাজমা, যা এর উত্তরণ সৃষ্টি করে: [37]
উপরের বায়ুমণ্ডলে একটি উল্কা দ্বারা সৃষ্ট শব্দ, যেমন একটি সোনিক বুম, সাধারণত একটি উল্কা থেকে সরাসরি আলো অদৃশ্য হওয়ার অনেক সেকেন্ড পরে আসে। মাঝে মাঝে, ২০০১ সালের লিওনিড উল্কা ঝরনার মতো, "কড়কড়", "সপাং" বা "হিসিং" শব্দ পাওয়া যায়,[38] উল্কা মিছিলের মতো একই মুহূর্তে ঘটেছিল। পৃথিবীর অরোরার তীব্র প্রদর্শনের সময়ও একই ধরনের শব্দ পাওয়া গেছে।[39][40][41][42]
এই শব্দগুলির প্রজন্ম আংশিকভাবে তাদের তত্ত্বগুলিকে ব্যাখ্যা করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নাসার বিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছেন যে একটি উল্কার অশান্ত আয়নিত অংশ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে, রেডিও তরঙ্গের স্পন্দন তৈরি করে। উল্কার পথটি বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথে, শব্দ তরঙ্গতে পাওয়ার স্পেকট্রামের শীর্ষ সহ ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তির মেগাওয়াট মুক্তি হতে পারে। ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইমপালস দ্বারা প্ররোচিত শারীরিক কম্পনগুলি তখন শোনা যাবে যদি তারা ঘাস, গাছপালা, চশমার ফ্রেম, শ্রোতার নিজের শরীর, এবং অন্যান্য পরিবাহী পদার্থ কম্পন করতে যথেষ্ট শক্তিশালী হয়।[43][44][45][46] এই প্রস্তাবিত প্রক্রিয়া, যদিও পরীক্ষাগারে প্রমাণিত হয়েছে, তবে বাস্তবে অসমর্থিত রয়ে গেছে। ১৯৯৮ সালে মঙ্গোলিয়ায় নিয়ন্ত্রিত অবস্থার অধীনে করা শব্দ রেকর্ডিং এই যুক্তিকে সমর্থন করে যে শব্দগুলি বাস্তব।[47]
একটি উল্কা ঝরনা হল একটি গ্রহের, যেমন পৃথিবীর, এবং একটি ধূমকেতু বা অন্য উৎসের সাথে সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ধ্বংসাবশেষের স্রোতের ফলাফল। ধূমকেতু এবং অন্যান্য উৎস থেকে মহাজাগতিক ধ্বংসাবশেষের মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ অনেক ক্ষেত্রে একটি পুনরাবৃত্তিমূলক ঘটনা। ধূমকেতু জলীয় বাষ্প টেনে ধ্বংসাবশেষ তৈরি করতে পারে, যেমনটি ১৯৫১ সালে ফ্রেড হুইপল দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছিল,[48] এবং বিচ্ছেদের মাধ্যমে। প্রতিবার যখন একটি ধূমকেতু সূর্যের কক্ষপথে দোলা দেয়, তখন এর কিছু বরফ বাষ্প হয়ে যায় এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্কাপাত হয়। ধূমকেতুর পুরো কক্ষপথে উল্কাপিণ্ডগুলি ছড়িয়ে পড়ে একটি উল্কা প্রবাহ তৈরি করে, যা "ধুলো পথ" নামেও পরিচিত (ধূমকেতুর "ধুলোর লেজ" এর বিপরীতে যা খুব ছোট কণার কারণে ঘটে যা সৌর বিকিরণের চাপে দ্রুত উড়ে যায়।)
অগ্নিগোলক দেখার প্রবণতা ভার্নাল ইকুইনক্সের সপ্তাহগুলিতে প্রায় ১০-৩০% বৃদ্ধি পায়।[49] এমনকি উত্তর গোলার্ধের বসন্ত ঋতুতেও উল্কাপাত বেশি দেখা যায়। যদিও এই ঘটনাটি বেশ কিছুদিন ধরেই জানা গেছে, তবে এই অসঙ্গতির পেছনের কারণ বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। কিছু গবেষক এটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে উল্কাপিণ্ডের সংখ্যার একটি অন্তর্নিহিত পরিবর্তনের জন্য দায়ী করেছেন, যেখানে বসন্ত এবং গ্রীষ্মের শুরুতে বড় অগ্নিগোলক-উৎপাদনকারী ধ্বংসাবশেষের শিখর রয়েছে। অন্যরা উল্লেখ করেছেন যে এই সময়ের মধ্যে গ্রহনটি (উত্তর গোলার্ধে) শেষ বিকেলে এবং সন্ধ্যার প্রথম দিকে আকাশে থাকে। এর মানে হল যে একটি গ্রহাণুর উৎস সহ অগ্নিগোলক রেডিয়েন্টগুলি আকাশে উচ্চ (অপেক্ষাকৃত উচ্চ হার সহজতর করে) এই মুহূর্তে উল্কাগুলি পৃথিবীর নাগাল করে, পিছন থেকে পৃথিবীর একই দিকে যাচ্ছে। এটি তুলনামূলকভাবে কম আপেক্ষিক গতির কারণ হয় এবং এই নিম্ন প্রবেশের গতি থেকে, যা উল্কাপিণ্ডের টিকে থাকার সুবিধা দেয়।[50] এটি সন্ধ্যার প্রথমদিকে উচ্চ অগ্নিগোলক মাত্রা তৈরি করে, প্রত্যক্ষদর্শীদের রিপোর্টের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে। এটি একটি অংশ ব্যাখ্যা করে মাত্র, সমস্ত ঋতু পরিবর্তন নয়। ঘটনাটি সম্পর্কে আরও ভালভাবে বোঝার জন্য উল্কার কক্ষপথের ম্যাপিংয়ের জন্য গবেষণা চলছে।[51]
একটি উল্কাপিণ্ড হল একটি উল্কা বা গ্রহাণুর একটি অংশ যা বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করার সময় বেঁচে থাকে এবং ধ্বংস না হয়ে মাটিতে আঘাত করে।[63] উল্কাপিণ্ডগুলি কখনও কখনও, কিন্তু সবসময় নয়, হাইপারবেলসিটি ইমপ্যাক্ট ক্রেটারগুলির সাথে মিলিত হয়; শক্তিশালী সংঘর্ষের সময়, সম্পূর্ণ প্রভাবকটি বাষ্পীভূত হতে পারে, কোন উল্কাপাত না করে। ভূতাত্ত্বিকরা একটি খুব বড় প্রভাবককে নির্দেশ করতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের থেকে ভিন্ন অর্থে "বোলাইড" শব্দটি ব্যবহার করেন। উদাহরণ স্বরূপ, ইউএসজিএস শব্দটি একটি সাধারণ বড় গর্ত-গঠনকারী প্রজেক্টাইল বোঝানোর জন্য একটি পদ্ধতিতে ব্যবহার করে "ইঙ্গিত করার জন্য যে আমরা প্রভাবিত দেহের সুনির্দিষ্ট প্রকৃতি জানি না... এটি একটি পাথুরে বা ধাতব গ্রহাণু, বা একটি বরফ; যেমন ধূমকেতু"[64]
উল্কাপিণ্ডগুলি সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুগুলিতেও আঘাত করে। চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহের মতো পাথুরে গ্রহে যেখানে বায়ুমণ্ডল কম বা নেই, তারা স্থায়ী গর্ত করে ফেলে।
যে কোনো দিনে পৃথিবীতে আঘাত করার জন্য সবচেয়ে বড় প্রভাবকের ব্যাস প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার (১৬ ইঞ্চি), একটি নির্দিষ্ট বছরে প্রায় চার মিটার (১৩ ফুট) এবং একটি প্রদত্ত শতাব্দীতে প্রায় ২০ মিটার (৬৬ ফুট) হতে পারে। এই পরিসংখ্যানটি নিম্নলিখিত দ্বারা প্রাপ্ত:
কমপক্ষে পাঁচ সেন্টিমিটার (২.০ ইঞ্চি) থেকে মোটামুটি ৩০০ মিটার (৯৮০ ফুট) পর্যন্ত, পৃথিবী যে হারে উল্কা গ্রহণ করে তা নিম্নরূপ একটি শক্তি-নীতি বন্টন মেনে চলে:
যেখানে N (>D) হল এক বছরে পৃথিবীতে আঘাত করার জন্য D মিটার ব্যাসের চেয়ে বড় বস্তুর প্রত্যাশিত সংখ্যা।[65] এটি ভূমি এবং মহাকাশ থেকে দেখা উজ্জ্বল উল্কাগুলির পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে, কাছাকাছি-পৃথিবী গ্রহাণুর সমীক্ষার সাথে মিলিত। ৩০০ মিটার (৯৮০ ফুট) ব্যাসের উপরে, ভবিষ্যদ্বাণী করা হার কিছুটা বেশি, একটি দুই কিলোমিটার (এক পয়েন্ট দুই মাইল) গ্রহাণু (এক টেরাটন টিএনটি সমতুল্য) প্রতি কয়েক মিলিয়ন বছরে – প্রায় ১০ গুণ প্রায়ই শক্তি-নীতি বহির্পাতন ভবিষ্যদ্বাণী করবে।
চাঁদ, বুধ, ক্যালিস্টো, গ্যানিমিড এবং বেশিরভাগ ছোট চাঁদ এবং গ্রহাণু সহ সৌরজগতের বস্তুর সাথে উল্কাপিণ্ডের সংঘর্ষের ফলে ইমপ্যাক্ট ক্রেটার / বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়, যা এই মহাকাশীয় বস্তুগুলির অনেকগুলির প্রধান ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য। পৃথিবী, শুক্র, মঙ্গল, ইউরোপা, আইও এবং টাইটানের মতো সক্রিয় পৃষ্ঠের ভূতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া সহ অন্যান্য গ্রহ এবং চাঁদগুলিতে, দৃশ্যমান প্রভাবের গর্তগুলি সময়ের সাথে সাথে টেকটোনিক্স দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত, সমাহিত বা রূপান্তরিত হতে পারে। শুরুর দিকে ইমপ্যাক্ট ক্রেটারিং/ উল্কাপিণ্ড দ্বারা সৃষ্ট গর্তের তাৎপর্য ব্যাপকভাবে স্বীকৃত হওয়ার আগে, ক্রিপ্টো এক্সপ্লোশন বা ক্রিপ্টোভলক্যানিক স্ট্রাকচার শব্দগুলো প্রায়ই ব্যবহার করা হত যা বর্তমানে পৃথিবীতে উল্কাপিণ্ড দ্বারা প্রভাব-সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্য হিসাবে স্বীকৃত।[66] উল্কাপিণ্ডের প্রভাবের গর্ত থেকে বের হওয়া গলিত স্থলজ উপাদান টেকটাইট নামে পরিচিত একটি বস্তুতে শীতল ও দৃঢ় হতে পারে। এগুলি প্রায়শই উল্কাপিণ্ড বলে ভুল হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.