আশ্রম

হিন্দু ধর্মের আধ্যাত্মিক ধর্মারণ্য অথবা মঠ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ

আশ্রম

ঐতিহ্যগতভাবে, আশ্রম[] (সংস্কৃত: আশ্রম অথবা আশ্রমম্) হলো ভারতীয় ধর্মের আধ্যাত্মিক ধর্মারণ্য অথবা মঠ[][][]

Thumb
শিবানন্দ আশ্রম, ঋষিকেশ[], ডিভাইন লাইফ সোসাইটির সদর দপ্তর, ১৯৩৬ সালে শিবানন্দ সরস্বতী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত
Thumb
সবরমতী আশ্রম, যেখানে মহাত্মা গান্ধী অবস্থান করেছিলেন

ব্যুৎপত্তি

আশ্রম (সংস্কৃত: आश्रम, সংস্কৃত উচ্চারণ: [aːɕɽɐmɐ]) শব্দটি সংস্কৃত মূল শ্রম (श्रम्) ('to toil') থেকে এসেছে।[] এস. এস. চন্দ্রের মতে, এই শব্দটির অর্থ "জীবন যাত্রার একটি পদক্ষেপ"।[] বিপরীতে জর্জ ওয়েকম্যানের মতে, আশ্রম শব্দটি এমন একটি স্থানকে বোঝায় যেখানে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে লক্ষ্য অর্জনের জন্য চেষ্টা করা হয়। এই জাতীয় লক্ষ্য তপস্বী, আধ্যাত্মিক, যোগিক বা অন্য কিছু হতে পারে।[]

অবশ্য প্রাচীনকালে ‘আশ্রম’ শব্দের আরও ব্যাপক অর্থ ছিল। সে সময় ‘আশ্রম’ বলতে সংসার-ত্যাগীদের আবাসস্থল এবং সাধনা বা শাস্ত্রচর্চার কেন্দ্রকেও বোঝাত। সেখানে সপরিবারে মুনি-ঋষিরা বসবাস করতেন। তখন আশ্রমগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহূত হতো। যেখানে এক বা একাধিক গুরু থাকতেন। তারা ছাত্রদের রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, শাস্ত্র, সাহিত্য, ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। সে সময় ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থাই ছিল আশ্রমভিত্তিক। পিতা-মাতা নির্দিষ্ট একটি বয়সে সন্তানদের আশ্রমে পাঠিয়ে দিতেন। তারা সেখানে থেকেই অধ্যয়ন করত। বিদ্যার্জন শেষ হলে ছাত্ররা স্নান করে এসে গুরুকে প্রণাম করত। তখন গুরু তাদের আশীর্বাদ করে অধীত বিদ্যা যথার্থভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিতেন। ছাত্ররা এ বিশেষ দিনে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান করে আসার পর তাদের বলা হতো স্নাতক, আর গুরু কর্তৃক ছাত্রদের এ বিশেষ আশীর্বাদ অনুষ্ঠানের নাম ছিল সমাবর্তন[]

সংক্ষিপ্ত বিবরণ

Thumb
কৈলাশ আশ্রম, মুনি কি রেতি, ঋষিকেশ, ধনরাজ গিরি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত

একটি আশ্রম ঐতিহ্যগতভাবে হবে, তবে সমসাময়িক সময়ে বিশেষ করে বন বা পাহাড়ি অঞ্চলে মানুষের বাসস্থান থেকে অনেক দূরে অবস্থান, আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও ধ্যানের পক্ষে উপযুক্ত সতেজ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে থাকা আবশ্যক নয়। আশ্রমের বাসিন্দারা নিয়মিত আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক অনুশীলন করতেন, যেমন: বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়াম। যজ্ঞের মতো অন্যান্য ত্যাগ ও তপস্যাও করা হত।[] অনেক আশ্রম গুরু-শিষ্য ঐতিহ্যের অধীনে শিশুদের জন্য গুরুকুল, আবাসিক বিদ্যালয় হিসাবেও কাজ করতো।[]

কখনও কখনও আশ্রমে তীর্থযাত্রার লক্ষ্য প্রশান্তি ছাড়াও যুদ্ধে কলাকৌশল নির্দেশনা গ্রহণও ছিলো। রামায়ণে প্রাচীন অযোধ্যার রাজকুমারগণ রাম এবং লক্ষ্মণ বিশ্বামিত্রর যজ্ঞকে রাবণের রাক্ষসদূতদের দ্বারা বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে তার আশ্রমে যান। রাজকুমাররা তাদের দক্ষতা প্রমাণ করার পর ঋষিদের কাছ থেকে যুদ্ধবিষয়ক শিক্ষা, বিশেষ করে ঐশ্বরিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামরিক নির্দেশনা পান। মহাভারতে কৃষ্ণ তার যুবক বয়সে অধ্যাত্মিক ও আধ্যাত্মিক উভয় বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য সন্দিপানির আশ্রমে গিয়েছিলেন।

মহারাষ্ট্রে বিদ্যালয়

বিশেষত ভারতের মহারাষ্ট্রে উপজাতি অঞ্চল এবং ভারতের অন্য কোথাও বোর্ডিং বিদ্যালয়গুলিকে আশ্রমশালা বা আশ্রম বিদ্যালয় বলা হয়।[] তেমনি একটি বিদ্যালয় হলো "লোক বিরদারি প্রকল্প আশ্রমশালা"।[১০][১১]

পশ্চিমে আশ্রম

ভারতের বাইরেও বেশ কয়েকটি আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণত, এই আশ্রমগুলি ভারতীয় বংশাবলীর সাথে যুক্ত[১২], যোগ-সম্পর্কিত শিক্ষার উপর তারা মনোনিবেশ করে, প্রায়ই যোগ ব্যায়াম[১৩] ভ্রমণ করে, এবং এসবে নেতৃত্বে থাকেন আধ্যাত্মিক শিক্ষক (ভারতীয় বা পাশ্চাত্য)।

তথ্যসূত্র

Loading related searches...

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.