১৮৫৭ সিপাহি বিদ্রোহ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ব্রিটিশ ক্রাউনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ ও ভারতের রাজ্যগুলির স্বাধীনত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এবং ব্রিটিশ ক্রাউনের বিরুদ্ধে ভারতের জনগণ ও ভারতের রাজ্যগুলির স্বাধীনত উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সিপাহি বিদ্রোহ বা সৈনিক বিদ্রোহ ১৮৫৭ সালের ১০ মে অধুনা পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরে শুরু হওয়া ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর সিপাহিদের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ। ক্রমশ এই বিদ্রোহ গোটা উত্তর ও মধ্য ভারতে (অধুনা উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ ও দিল্লি অঞ্চল ) ছড়িয়ে পড়েছিল।[২] এই সব অঞ্চলে বিদ্রোহীদের দমন করতে কোম্পানিকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।[৩] সিপাহি বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, ভারতীয় বিদ্রোহ, ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহ ও ১৮৫৮ সালের গণ-অভ্যুত্থান নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই বিদ্রোহ দমন করা হয় নির্মমভাবে। বহু নিরপরাধ নরনারী, শিশু বৃদ্ধদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়।
মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭ | |||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন | |||||||||
0 ১৯১২ সালের একটি মানচিত্রে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহী অঞ্চলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রধান স্থানসমূহ হল, মিরাট, দিল্লী, কানপুর, লক্ষ্নৌ, ঝাঁসি এবং গোয়ালিয়র। | |||||||||
| |||||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||||
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি rebel sepoys
|
ব্রিটিশ সাম্রাজ্য
Kingdom of Nepal | ||||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||||
বাহাদুর শাহ জাফর নানা সাহেব Mirza Mughal Bakht Khan লক্ষ্মী বাঈ তাতিয়া টোপি Begum Hazrat Mahal |
Commander-in-Chief, India: George Anson (to May 1857) Sir Patrick Grant Sir Colin Campbell from (August 1857) Jang Bahadur[১] |
কোম্পানি-শাসিত অন্যান্য অঞ্চলগুলি (বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, বোম্বে প্রেসিডেন্সি ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি) শান্তই ছিল।[২] পাঞ্জাবের শিখ রাজ্যগুলি ব্রিটিশদের সৈন্য সরবরাহ করে সমর্থন জোগায়।[২] বড় দেশীয় রাজ্যগুলির (হায়দ্রাবাদ, মহীশূর, ত্রিবাঙ্কুর ও কাশ্মীর) পাশাপাশি রাজপুতানার মতো ছোট রাজ্যগুলিও বিদ্রোহ থেকে দূরে থাকে।[৪] অযোধ্যার মতো কোনো কোনো অঞ্চলে বিদ্রোহীরা ইউরোপীয়দের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চূড়ান্ত দেশপ্রেমের নিদর্শন স্থাপন করে।[৫] ঝাঁসির রানি লক্ষ্মী বাঈ, তুলসীপুরের রানি ঈশ্বরী কুমারী দেবী প্রমুখেরা ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে লোকনায়কে পরিণত হন।[২] অন্যান্য প্রধান নেতৃবর্গের মধ্যে ছিলেন নানা সাহেব, তাঁতিয়া তোপী, কুনওয়ার সিং ইত্যাদি সামন্ত রাজা ও সৈনিকেরা। যদিও অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন তারা কোনো উচ্চ আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হননি।[৬] সিপাহি বিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালে ভারতে কোম্পানি-শাসনের অবসান ঘটে, ব্রিটিশরা সেনাবাহিনী, অর্থব্যবস্থা ও ভারতীয় প্রশাসন পুনর্গঠনে বাধ্য হয়।[৭] ভারত প্রত্যক্ষভাবে ব্রিটেনের রানির শাসনের অধীনে আসে।[৪]
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে শুধুমাত্র তাদের বাণিজ্যকুঠি-সংলগ্ন অঞ্চলগুলির প্রশাসন পরিচালনা করত। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের পর পূর্ব ভারতে কোম্পানির শাসনের ভিত্তি দৃঢ় হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধে (বিহারে) জয়লাভের পর পরাজিত মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি (রাজস্ব আদায়ের অধিকার) প্রদান করতে বাধ্য হন।[৮] ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৬-১৭৯৯) ও ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের (১৭৭২-১৮১৮) পর নর্মদা নদীর দক্ষিণে দাক্ষিণাত্যের সুবিশাল অঞ্চল ইংরেজদের অধীনে আসে। কোম্পানির এলাকা বোম্বাই ও মাদ্রাজকে কেন্দ্র করে বর্ধিত হয়।
কোম্পানির এলাকা প্রসারণ করতে গিয়ে কোম্পানিকে কম বাধার মুখে পড়তে হয়নি। ১৮০৬ সালে বাহিনীতে নতুন উর্দি চালুকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলমান সিপাহিরা বিদ্রোহী হয়। এই ঘটনা ভেলোর বিদ্রোহ নামে পরিচিত।[৯]
উনিশ শতকের প্রথম ভাগে গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি যে রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন, তার ফলে পরবর্তী দুই দশক ধরে ইংরেজরা ভারতে একের পর এক এলাকা দখল করতে থাকে।[১০] কোম্পানির প্রতি ভারতীয় শাসকবর্গের অধীনতামূলক মিত্রতা বা প্রত্যক্ষ সামরিক অভিযানের মাধ্যমে এই রাজ্যবিস্তার চলে। অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিতে সম্মত রাজ্যগুলি দেশীয় রাজ্য নামে পরিচিত হয়। এই সব রাজ্যের শাসক ছিলেন হিন্দু মহারাজা বা মুসলমান নবাবেরা। ১৮৪৯ সালে দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধের পর পাঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ও কাশ্মীর অধিকৃত হয়। যদিও কাশ্মীর কিছুদিনের মধ্যেই জম্মুর ডোগরা রাজবংশের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এটিও হয়ে যায় দেশীয় রাজ্য। ১৮০১ সালের পর থেকে ব্রিটিশ ভারত ও নেপালের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ১৮১৪-১৬ সাল নাগাদ ইঙ্গ-নেপাল যুদ্ধ সংগঠিত হয় এবং গোর্খারা ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। ১৮৫৪ সালে বেরার এবং দুই বছর পর অযোধ্যা অধিকৃত হয়। এইভাবে কোম্পানিই কার্যত ভারতের সরকারে পরিণত হয়।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.