কার্লাইল অ্যালোঞ্জা বেস্ট (ইংরেজি: Carlisle Best; জন্ম: ১৪ মে, ১৯৫৯) সেন্ট মাইকেলের রিচমন্ড গ্যাপ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বার্বাডীয় বংশোদ্ভূত সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৮৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে খেলেছিলেন তিনি।

দ্রুত তথ্য ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ণ নাম ...
কার্লাইল বেস্ট
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
কার্লাইল অ্যালোঞ্জা বেস্ট
জন্ম (1959-05-14) ১৪ মে ১৯৫৯ (বয়স ৬৫)
রিচমন্ড গ্যাপ, সেন্ট মাইকেল, বার্বাডোস
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি অফ ব্রেক
ডানহাতি মিডিয়াম পেস
ভূমিকাব্যাটসম্যান
সম্পর্কটিনো বেস্ট (দৌহিত্র)[১]
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৮৫)
২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৩ নভেম্বর ১৯৯০ বনাম পাকিস্তান
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ৪৮)
৪ মার্চ ১৯৮৬ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ ওডিআই১৬ জানুয়ারি ১৯৯২ বনাম ভারত
ঘরোয়া দলের তথ্য
বছরদল
১৯৭৯ - ১৯৯৪বার্বাডোস
১৯৯৩ - ১৯৯৪ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই এফসি এলএ
ম্যাচ সংখ্যা ২৪ ৯০ ৭৯
রানের সংখ্যা ৩৪২ ৪৭৩ ৫,৪৩৯ ১,৯৪২
ব্যাটিং গড় ২৮.৫০ ২৪.৮৯ ৩৮.৮৫ ২৯.৮৭
১০০/৫০ ১/১ ১/২ ১৩/২৪ ২/১২
সর্বোচ্চ রান ১৬৪ ১০০ ১৭৯ ১৩৭*
বল করেছে ৩০ ১৯ ১,৬৪২ ৬৮২
উইকেট ২৪ ১৪
বোলিং গড় ৩২.১৬ ৪০.৭৮
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ০/২ ০/৪ ৩/২৯ ২/২২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৮/– ৫/– ১০৭/– ২১/–
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২০ মার্চ ২০২০
বন্ধ

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোস ও দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওয়েস্টার্ন প্রভিন্স দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ ব্রেক কিংবা মিডিয়াম পেস বোলিং করতেন কার্লাইল বেস্ট

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট

১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুম পর্যন্ত কার্লাইল বেস্টের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৭৬ সালে বিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। বার্বাডোস লীগে অংশ নেন। অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয় বিভাগের খেলায় আট শতাধিক রান তুলে সকলের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে উপনীত হন।[২] বার্বাডোসের পক্ষে খেলার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় তার। এরফলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ যুব চ্যাম্পিয়নশীপে খেলার জন্যে মনোনীত হন। বার্বাডোসের সদস্যরূপে গায়ানার বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি।[২]

পরবর্তীতে ১৯৭৮ সালে ইংল্যান্ড গমনার্থে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যুব দলের সদস্যরূপে মনোনীত হন।[২] জিম্বাবুয়ে সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বি-দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বিদ্রোহী দলের সফরের ফলে দলে নিয়মিতভাবে খেলতে থাকেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট

সারাংশ
প্রসঙ্গ

কার্লাইল বেস্টের টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন সত্যিকার অর্থেই ক্যালিপ্সো ঘরানার ছিল। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে আটটিমাত্র টেস্ট ও চব্বিশটি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণ করেছেন কার্লাইল বেস্ট। ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৬ তারিখে কিংস্টনে সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৩ নভেম্বর, ১৯৯০ তারিখে ফয়সালাবাদে স্বাগতিক পাকিস্তান দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি।

বার্বাডোস দলের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ মৌসুমে দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী উপস্থাপনে সচেষ্ট হন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৫-৮৬ মৌসুমে সফরকারী ইংরেজ দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলার জন্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সদস্য হন। জ্যামাইকার কিংস্টনে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।[৩] প্রথম দুই বলে কোন রান নিতে পারেননি। ইয়ান বোথামের বাউন্সার থেকে তৃতীয় বলে হুক করে ছক্কা মারেন। এভাবেই তিনি প্রথম রান সংগ্রহ করেছিলেন।[৪] টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ছক্কা মেরে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন।[৫] ওয়েস্ট ইন্ডিজের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে অদ্যাবধি তিনি এ সাফল্যের অধিকারী।[৬][৭] ঐ ইনিংসে তিনি ৩৫ রান সংগ্রহ করেছিলেন।[৩]

নিম্নমূখী রান সংগ্রহের সিরিজ খেলার পর মাত্র তিন টেস্টের পরই কার্লাইল বেস্টকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। তিনি বেশ মুষড়ে পড়েন। তার ভাষায়, ‘আমি সর্বাপেক্ষা আশাহত হয়েছি ও বিশ্বের দুঃখিত ব্যক্তি। আমরা ৩-০ ব্যবধানে জয় পেয়েছি। আমাদের উপর কোন চাপই ছিল না ও আমাকে অযথা বাদ দেয়া হয়েছে। আমাকে ভালোভাবে খেলার কোন সুযোগ দেয়া হয়নি।][৪]

একদিনের আন্তর্জাতিক

সারাংশ
প্রসঙ্গ

টেস্ট ক্রিকেট অভিষেক পর্ব শেষে একই দলের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে কার্লাইল বেস্টের। খেলায় তিনি ১০ রান তুলেন।[৮] ১৯৮৬ সালের শেষদিকে অধিনায়কের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বি-দলের নেতৃত্বে থেকে জিম্বাবুয়ে গমন করেন।[২]

১৯৮৭ সালেে ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে খেলার জন্যে মনোনীত হন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয় খেলার মধ্যে তিনি দুইটি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন। ১১.৫০ গড়ে ২৩ রান করেন। সর্বোচ্চ করেন ১৮।[৯] ১৯৮৯ সালের শেষদিকে একদিনের দলে নিজের স্থান পাকাপোক্ত করে নেন। এক বছরের অল্প বেশি দিনে ১৫ খেলায় অংশ নেন। এ সময়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক ১০০ রান তুলেন। এরজন্যে তিনি ১১৯ বল ব্যয় করেন।[৮]

১৯৯০ সালে নিজ দেশে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অংশগ্রহণের পূর্ব-পর্যন্ত তাকে টেস্ট দলে রাখা হয়নি।[৩][৪] নিজ মাঠ বার্বাডোসে ৩০ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করেন।[৪] উইজডেনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, টেস্টের প্রথম দিনে স্থানীয় বীর কার্লাইল বেস্ট তার অনিয়মিত টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনে প্রথম সেঞ্চুরির সন্ধান পেয়েছেন।[১০] ইএসপিএনক্রিকইনফো’র মতে, ১৬৪ রান সংগ্রহে তিনি চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছেন।[১১] এছাড়াও, গায়ানায় একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে একটি সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।[৪] এ সেঞ্চুরির কল্যাণে ১৯৯০-৯১ মৌসুমে পাকিস্তান সফরের জন্যে তাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে মনোনীত করা হয়।[৩][১২] এভাবেই তার টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে।[১৩]

দলে প্রত্যাখ্যান

অভিষেক টেস্টের চার বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজস্ব সেরা খেলা উপহার দেন। নিজ শহরে দূর্দান্ত ১৬৪ রানের ইনিংস খেলে সিরিজে সমতা আনেন। তবে, পরবর্তী চার ইনিংসে বেশ তথৈবাচৈ খেলেন। ১৯৯০-৯১ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১, ৮, ৬ ও ৪ রান তুলেন। এরপর আর তাকে টেস্ট দলে রাখা হয়নি।

এরপর কার্লাইল বেস্ট অল্প কয়েকটি একদিনের খেলায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব সিরিজের চারটি খেলায় অংশ নেন। তবে, স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে কোন ইনিংসেই ৩০-এর অধিক রান তুলতে পারেননি।[৮] এরপরও বার্বাডোসে ঠিকই নিজেকে জনপ্রিয় তারকাখ্যাতি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। ১৯৯১-৯২ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে তার পরিবর্তে ব্রায়ান লারা’র অন্তর্ভূক্তি ঘটে। বার্বাডোস টেস্টে বেস্টসহ অ্যান্ডারসন কামিন্স, ম্যালকম মার্শালডেসমন্ড হেইন্সের ন্যায় তারকাদের দলে না রাখার প্রতিবাদে দর্শকেরা খেলায় উপস্থিত হয়নি। কেবলমাত্র কয়েকশ দর্শকদের উপস্থিতিতে পাঁচ দিনের খেলাটি সম্পন্ন হয়। এরফলে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডের আনুমানিক £১,০০,০০০ পাউন্ড-স্টার্লিংয়ের ক্ষতি হয়।[১৪] অবশ্য, ব্রায়ান লারাকে তার অভিষেক টেস্টে তাৎক্ষণিক সফলতার স্বাক্ষর রাখেন।[১৩]

খেলার ধরন

ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। ব্যাটিংকালে অযথা বকবকানির কারণে পরিচিতি পেয়েছেন। ছক্কার মাধ্যমে টেস্ট অভিষেক পর্বে রান সংগ্রহ করেন। এরফলে টেস্টে ক্রিকেটের ইতিহাসে ঐ সময়ের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এ কৃতিত্বের অধিকারী হন। পরবর্তীকালে কিথ দাবেঙ্গা (২০০৫), মার্ক ক্রেগ (২০১৪) ও ধনঞ্জয় ডি সিলভা (২০১৬) এ তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে প্রত্যেক আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি করেছেন। উভয়টিই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন তিনি।

কার্লাইল বেস্টের দৌহিত্র টিনো বেস্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেছেন। বয়সের কারণে তাদের সম্পর্ককে অনেকেই কাকা/ভাইপো’র সম্পর্ক হিসেবে চিত্রিত হয়ে থাকে।[১] টিনো বেস্ট তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন যে, ‘সকলের চেয়ে সেরা তিনি। আমার প্রথম ক্রিকেট তারকা, আমার রক, আমার ছায়া-প্রভু ও আমার পিতা। আমার কাছে তিনি সর্বাপেক্ষা সেরা জীবিত ক্রিকেটার ও সেরা বক্তা।’[১৫]

ব্যক্তিগত জীবন

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর বর্তমানে তিনি ব্যাংকে কাজ করছেন ও গণমাধ্যমে সক্রিয় রয়েছেন। বার্বাডোস সেন্ট্রাল ব্যাংকে জনসংযোগ বিভাগে কাজ করছেন।[১][১৬] এছাড়াও, ন্যাশননিউজে মাঝে-মধ্যেই ক্রিকেটবিষয়ক লেখনি লিখে থাকেন।[১৭] ১৯৯৫ থেকে ২০১০ সময়কালে ক্যারিবিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে ‘বেস্ট ও ম্যাসন’ শীর্ষক বেতার অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ছিলেন।[১৮]

পরিসংখ্যান

টেস্ট শতক
আরও তথ্য কার্লাইল বেস্টের টেস্ট শতক, ক্রমিক ...
কার্লাইল বেস্টের টেস্ট শতক
ক্রমিকরানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠশুরুর তারিখফলাফল
[১]১৬৪ ইংল্যান্ডবার্বাডোস ব্রিজটাউন, বার্বাডোসকেনসিংটন ওভাল৫ এপ্রিল, ১৯৯০জয়
বন্ধ
ওডিআই শতক
আরও তথ্য কার্লাইল বেস্টের ওডিআই শতক, ক্রমিক ...
কার্লাইল বেস্টের ওডিআই শতক
ক্রমিকরানখেলাপ্রতিপক্ষশহর/দেশমাঠতারিখফলাফল
[১]১০০১৫ ইংল্যান্ডগায়ানা জর্জটাউন, গায়ানাবোর্দা৭ মার্চ, ১৯৯০জয়
বন্ধ
ওডিআইয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ
আরও তথ্য ক্রমিক, প্রতিপক্ষ ...
ক্রমিক প্রতিপক্ষ মাঠ তারিখ অবদান ফলাফল
ইংল্যান্ড বোর্দা, জর্জটাউন ৭ মার্চ, ১৯৯০ ১০০ (১১৯ বল, ১২x৪, ১x৬)  ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৬ উইকেটে বিজয়ী।[১৯]
বন্ধ

তথ্যসূত্র

আরও দেখুন

বহিঃসংযোগ

Wikiwand - on

Seamless Wikipedia browsing. On steroids.