Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
১৯৬৯ সালে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ প্রবল রূপ ধারণ করে। ১৯৬৯ সালের ৪ঠা জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচী পেশ করেন।
এই নিবন্ধটির একটা বড়সড় অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশই একটিমাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীল। (সেপ্টেম্বর ২০১৫) |
পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে এ দেশের ছাত্রসমাজ রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের ভূমিকা শুরু হয় যা ছিল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালের হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তাদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়। অতঃপর তারা ১৯৬৮ সালের ডিসেম্বর হতে ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছাত্ররা যে এক সুসংবদ্ধ ও সফল আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তা ইতিহাসে বিরল যা তারা ঐতিহাসিক ১১ দফা দাবি পেশ করে তার সূচনা করেছিল।
ছাত্রদের ১১ দফা ভিত্তিক আন্দোলন গড়ে উঠার পিছনে দীর্ঘ সময়ের বাঙালি জাতির ক্ষোভ, অধিকার বঞ্চনা, অবহেলা।
১। হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন
১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান যে শিক্ষা কমিশন প্রনয়ণ করা হয়েছিল তাতে বাংলা শিক্ষাকে অত্যন্ত খাটো করে দেখা হয়।
১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করার পর তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ৮ মে,১৯৬৬ সালে দেশ রক্ষা আইন অনুযায়ী গ্রেফতার করা হয়। এরপর ৭ জুন,১৯৬৬ সালে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ সারা দেশে ধর্মঘট ডাকে ও "ছয়দফা দাবি দিবস" পালন করে। ৭ জুন যে ধর্মঘট ও হরতাল ডাকা হয় সেইদিন আন্দোলনকারীদের উপর পাকিস্তানি সরকার নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচার চালায়। ওইদিন পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে সিলেটের মনু মিয়াসহ ১২ জন নিহত হয়। এরপর কয়েকদিনে আওয়ামী লীগের প্রায় ৯৩৩০ জন কর্মী গ্রেফতার হন। ১৫ জুন ইত্তেফাক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া গ্রেফতার হন এবং ১৬ জুন ইত্তেফাককে নিষিদ্ধ করা হয়। তাছাড়া ১৯৬৭ সালের আগস্ট মাসে রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এসব ঘটনা ছাত্রদেরকে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৩। আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা
শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করার পর ১৮ই জানুয়ারি, ১৯৬৮ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হলেও ঐদিন তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার জন্য তিনি পুনরায় গ্রেফতার হন। বঙ্গবন্ধুসহ মোট ৩৫ জনকে এ মামলার আসামি করা হয়। এদের ভিতর প্রায় সকলে বাঙ্গালি সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। এতে করে পূর্ব পাকিস্তানের সকল প্রভাবশালী লোকদের পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী আটক করে বাঙ্গালিদের একদম নিস্তেজ করে ফেলে।
৪। জাতীয় নেতৃত্বের বিকল্প ছাত্র নেতৃত্ব সৃষ্টি
সারা দেশে যখন অসংখ্য রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আটক হতে থাকে তখন আন্দোলন একেবারে স্তিমিত হয়ে আসছিল। এমতাবস্থায় এদেশের ছাত্রগণ এই চিন্তাভাবনা শুরু করল যে,দেশকে এই নাজুক পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ছাত্র আন্দোলনের বিকল্প আর কোন পথ থাকতে পারে না। ছাত্রলীগের দুটি অংশ এবং ছাত্র ইউনিয়নের দুটি অংশ (মতিয়া ও মেনন) ডাকসুর উদ্যোগে একত্রিত হয়। অর্থাৎ,ডাকসুসহ মোট ৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে ৫ই জানুয়ারি, ১৯৬৯ সালে ডাকসু কার্যালয়ে “সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” (SAC)গঠিত হয়। তোফায়েল আহমেদ, কামরান নাজিম চৌধুরীসহ আরও অনেকে এর নেতৃত্বে ছিলেন। এখানে তারা সকল ছাত্রনেতারা ১১টি বিষয়ে কর্মসূচী স্বাক্ষর করেন।
১. শিক্ষা সমস্যার আশু সমাধান। অর্থাৎ, হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত আইন বাতিল বিশেষ করে কুখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল করা এবং ছাত্রদের সকল মাসিক ফি কমিয়ে আনা।
২. প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং পত্রিকাগুলোর স্বাধীনতা দেওয়া এবং দৈনিক ইত্তেফাকের প্রকাশনার নিষেধাজ্ঞা তুলে ফেলা।
৩. ছয় দফা দাবির প্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা।
৪. পশ্চিম পাকিস্তানের সকল প্রদেশগুলোকে (অর্থাৎ খাইবার পাখতুনখোয়া, বেলুচিস্তান, পাঞ্জাব, সিন্ধু ইত্যাদি) স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একটি ফেডারেল সরকার গঠন করা।
৫. ব্যাংক, বীমা, পাটকলসহ সকল বৃহৎ শিল্প জাতীয়করণ।
৬. কৃষকদের উপর থেকে কর ও খাজনা হ্রাস এবং পাটের সর্বনিম্নমূল্য ৪০ টাকা (স্বাধীনতার দলিলপত্রে উল্লেখ রয়েছে) ধার্য করা।
৭. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিক আন্দোলনের অধিকার দান করা।
৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদের সার্বিক ব্যবহারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৯. জরুরী আইন, নিরাপত্তা আইন এবং অন্যান্য নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহার করা।
১০. সিয়াটো (SEATO), সেন্টো (CENTO)-সহ সকল পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল এবং জোট বহির্ভূত নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করা।
১১. আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীদের মুক্তি ও অন্যান্যদের উপর থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা।[1]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.