শীর্ষ প্রশ্ন
সময়রেখা
চ্যাট
প্রসঙ্গ
সেম্যুর নার্স
ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
Remove ads
সেম্যুর ম্যাকডোনাল্ড নার্স (ইংরেজি: Seymour Nurse; জন্ম: ১০ নভেম্বর, ১৯৩৩ - মৃত্যু: ৬ মে, ২০১৯) বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেল এলাকার জ্যাক-মাই-ন্যানি গ্যাপে জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ও সাবেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তারকা ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৬০ থেকে ১৯৬৯ সময়কালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটে বার্বাডোসের প্রতিনিধিত্ব করেছেন ‘ক্যাসো’ ডাকনামে পরিচিত সেম্যুর নার্স। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে অফ-ব্রেক বোলিংয়ে পারদর্শীতা দেখিয়েছেন তিনি।
Remove ads
১৯৫৮ থেকে ১৯৭১-৭২ মৌসুম পর্যন্ত বার্বাডোসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। এ সময়ে ১৪১টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৪৩.৯৩ গড়ে নয় সহস্রাধিক রান সংগ্রহ করেছেন তিনি। সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ২৯টি টেস্টে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন সেম্যুর নার্স। ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সেম্যুর নার্সের।
শক্ত মজবুত দৈহিক গড়নের অধিকারী ছিলেন তিনি। মূলতঃ মাঝারিসারিতে ব্যাট করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন। প্রয়োজনে ব্যাটিং উদ্বোধনেও মাঠে নামতেন। ডানহাতি আক্রমণধর্মী ব্যাটসম্যান হিসেবে তার বেশ সুনাম ছিল। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্তরে তুলনামূলকভাবে বেশ দেরীতে প্রবেশ করেছেন। একইভাবে ১৯৬৯ সালে আকস্মিকভাবে তার টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নেয়াও ক্রিকেটবোদ্ধাদের বিস্ময়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
অতি সুপরিচিত এম্পায়ার ক্রিকেট ক্লাবের অন্যতম সদস্য ছিলেন সেম্যুর নার্স। ক্লাবের দলীয় সঙ্গী এভারটন উইকসের কাছ থেকে প্রভূতঃ সহায়তা পেয়েছেন তিনি। ১৯৫৮ সালে বার্বাডোসের পক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। পরের বছরই সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে বার্বাডোসের সদস্যরূপে দূর্দান্ত দ্বি-শতক রানের ইনিংস খেলে সকলের প্রশংসা কুড়ান। ফলশ্রুতিতে তাকে দ্রুত ওয়েস্ট ইন্ডিজের টেস্ট দলে ঠাঁই দেয়া হয়। তবে, ১৯৬৬ সালের পূর্ব-পর্যন্ত পরবর্তী পাঁচ বছর দলের নিয়মিত সদস্য হিসেবে খেলতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। ১৯৬৬ সালে দলের সাথে ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে ধারাবাহিকভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হন।
নিজের স্বর্ণালী সময়েই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণের কথা জানান দেন। এর ঠিক পূর্বেই তিন টেস্টের সিরিজে নিউজিল্যান্ডীয় বোলারদের বিপক্ষে একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করেন। নিজের শেষ টেস্ট ইনিংসে ২৫৮ রান করেছিলেন। এ সংগ্রহটি যে-কোন টেস্ট ক্রিকেটারের শেষ টেস্ট ইনিংসের মধ্যে সর্বোচ্চরূপে পরিগণিত হয়ে আসছে।
টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর ক্লাব পর্যায়ের ক্রিকেটে অংশ নিতে থাকেন। পাশাপাশি বার্বাডোসের পক্ষেও খেলা চালিয়ে যান। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর বার্বাডোস দলের ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষণের দায়িত্বভার তার ওপর বর্তায়। এছাড়াও, বার্বাডোস জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রধান কোচ হিসেবে নিযুক্তি পান। ১৯৬৭ সালে উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের সম্মাননায় ভূষিত হন সেম্যুর নার্স।[১]
Remove ads
শৈশবকাল
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১০ নভেম্বর, ১৯৩৩ তারিখে বার্বাডোসের সেন্ট মাইকেলে সেম্যুর নার্সের জন্ম। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। তার পিতা কাঠমিস্ত্রীর কাজ করতেন এবং দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তার অবস্থান ছিল সর্বকনিষ্ঠ।[১] জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সিনক্লেয়ার শুরুতে লেগ স্পিন বোলার হিসেবে ক্রিকেট খেলায় জড়িয়ে পড়লেও বেশীদূর এগুতে পারেননি। সেন্ট স্টিফেন্স বয়েজ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন সেম্যুর নার্স। ঐ সময়ে বিদ্যালয় দলের পক্ষে ফুটবল ও ক্রিকেট - উভয় ধরনের খেলায় নিজের প্রতিভা তুলে ধরেন। তবে, বেশ কয়েকবার পায়ে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় নার্সের ফুটবল খেলোয়াড়ী জীবনের সমাপ্তি ঘটে। পিতা পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘ক্রিকেটে অবস্থান কর ও ফুটবল ত্যাগ কর। অন্যথায় তুমি নিজেই দায়ী থাকবে। বার্বাডোসে ফুটবল খেলার পরিবেশ অত্যন্ত বাজে।’[১] জীবিকার তাগিদে ১৬ বছর বয়সে বিদ্যালয় জীবন ত্যাগ করেন। পরবর্তীকালে এর জন্য তিনি বেশ অনুতাপ করেন।[১]
দরিদ্র পরিবার থেকে আগত অনেক বার্বাডিয়ান ক্রিকেটারের ন্যায় নার্সও তার ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবন বার্বাডোস ক্রিকেট লীগের মাধ্যমে শুরু করেন।[২] বে স্ট্রিট বয়েজ ক্লাবের পক্ষে খেলা শুরু করেন তিনি। একই ক্লাবে তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে গারফিল্ড সোবার্স ও কনরাড হান্ট খেলেছিলেন।[১] অচিরেই তার ক্রীড়া প্রতিভা সকলের নজর আকর্ষণে সক্ষম হয়। অভিজাত বার্বাডোস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন প্রতিযোগিতার দিকে তিনি ধাবিত হন। তিনি জনপ্রিয় এম্পায়ার ক্রিকেট ক্লাবে যোগদান করেন। সেখানেই তিনি এভারটন উইকসের সান্নিধ্য লাভ করেন। তার সংস্পর্শে নার্সের ক্রিকেট খেলোয়াড়ী জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।[১][৩]
Remove ads
প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট
২৫ বছর বয়সের পূর্ব-পর্যন্ত বার্বাডোসের পক্ষে খেলার সুযোগ হয়নি তার। জুলাই, ১৯৫৮ সালে কিংস্টনের মেলবোর্ন ওভালে জ্যামাইকার বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সেম্যুর নার্সের। প্রথম ইনিংসে ২১ রান তোলার পর দ্বিতীয় ইনিংসে দলের ৯০ রানের মধ্যে ৩৫ রান তুলে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন। জ্যামাইকাকে ফলো-অনে প্রেরণ করা সত্ত্বেও বার্বাডোস ৬ রানে পরাজয়বরণ করতে বাধ্য হয়।[৪]
ঐ মাসের শেষদিকে জ্যামাইকার বিপক্ষে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় খেলায় অংশ নেন। সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত ঐ খেলায় অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস উপহার দিয়ে অভিষেক সেঞ্চুরি করেন তিনি।[৫] পরের বছর সফরকারী ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ২১৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। এ সময় গ্যারি সোবার্সের সাথে ৩০৬ রানের জুটি গড়েছিলেন তিনি।[৬]
Remove ads
টেস্ট ক্রিকেট
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৫৯-৬০ মৌসুমে জ্যামাইকার সাবিনা পার্কে সফররত ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক পর্ব সম্পন্ন হয় সেম্যুর নার্সের। ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ সালে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট শুরুর পূর্বক্ষণে ফ্রাঙ্ক ওরেলের গোড়ালীর আঘাতপ্রাপ্তিই তাকে এ সুযোগ এনে দিয়েছিল।[৭] নার্স কেবলমাত্র একবার ব্যাট হাতে মাঠে নামতে পেরেছিলেন। ইংরেজ ক্রিকেটার ট্রেভর বেইলি খেলা শুরুর পূর্বে তাকে ব্যাট দিয়েছিলেন।[৩]
প্রথম ইনিংসে ফ্রেড ট্রুম্যান ও ব্রায়ান স্ট্যাদামের পুণঃপুণঃ বাউন্সারের তোপের মুখে পড়ে ইস্টন ম্যাকমরিস রিটায়ার হার্ট হলে সেম্যুর নার্স ব্যাট হাতে মাঠে নামেন। সফরকারী দলের বিপক্ষে পূর্বের খেলায় দ্বি-শতক লাভের আত্মবিশ্বাসী অবস্থায় স্ট্যাদামের প্রথম বলটিকে বাউন্ডারি সীমানায় পাঠান তিনি।[৩] বিদ্যুৎগতিতে ৭০ রান তোলার পর ইংরেজ অফ স্পিনার রে ইলিংওয়ার্থের বলে মিড অন অঞ্চলে এম. জে. কে. স্মিথের হাতে তালুবন্দী হয়ে বিদায় নেন। এ আউট প্রসঙ্গে কয়েকবছর পর তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘শুধুমাত্র অনভিজ্ঞতার ফলেই এটি হয়েছে। আমি খুব সহজেই সেঞ্চুরি পেতাম। তবে দূর্ভাগ্যবশতঃ তা আর হয়ে উঠেনি।’[৩] দ্বিতীয় ইনিংসে ১১ রান তুলেন। তবে, সতীর্থ বার্বাডিয়ান ক্লাইড ওয়ালকটকে পরের টেস্টে নিয়ে আসা হলে তাকে দলের বাইরে থাকতে হয়।[১][৩][৮]
ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্তি ও খেলায় উজ্জ্বীবনী শক্তি না থাকায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। ১৯৬০-এর দশকের শুরুরদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে আসা-যাওয়ার পালায় থাকতে হতো সেম্যুর নার্সকে।[১] ঐ সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় ব্যাটিং শক্তিমত্তা অত্যন্ত উঁচুমানের ছিল। দলে স্থান লাভের জন্যে তার তুলনায় এগিয়ে থাকা গ্যারি সোবার্স ও রোহন কানহাইয়ের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হতে হতো তাকে। পাশাপাশি, জো সলোমন ও ব্যাসিল বুচারের ন্যায় উদীয়মান ব্যাটসম্যানকেও প্রায়শঃই অগ্রাধিকার দেয়া হতো।[৯]
অস্ট্রেলিয়া গমন, ১৯৬০-৬১
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৬০-৬১ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের সদস্যরূপে অস্ট্রেলিয়া গমনের জন্যে মনোনীত হন। এবারও তাকে খেলায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ব্রিসবেনে সিরিজের প্রথম টেস্টটি ইতিহাসের প্রথম টাই টেস্টরূপে পরিচিত টেস্টে তাকে দলে রাখা হয়নি। মেলবোর্নের চূড়ান্ত টেস্টেও তাকে একাদশের বাইরে রাখা হয়। পায়ের গোড়ালীর আঘাতপ্রাপ্তির মাধ্যমে ঐ সফর শেষ করেন তিনি।[১] অস্ট্রেলিয়া সফরের পর ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে কাটানো তিন মৌসুমের প্রথমটি র্যামসবটম দলের সদস্যরূপে ল্যাঙ্কাশায়ার লীগে খেলেন।[১]
১৯৬১-৬২ মৌসুমে ভারত দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ গমন করে। সিরিজের চতুর্থ টেস্টে খেলার জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রথম ইনিংসে তিনি মাত্র এক রান তুলতে সক্ষম হন ও দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ৪৬ রান তুলে দলকে ৭ উইকেটের জয় এনে দেন।[১০] ১৯৬৩ সালে পরবর্তী টেস্ট খেলার সুযোগ পান। ইংল্যান্ড সফরে আবারও তিনি আঘাতের কবলে পড়েন। ফলে, সফরের অধিকাংশ সময়ই মাঠের বাইরে অবস্থান করতে হয়েছিল তাকে।[১১] ঐ সফরে তিনি কোন টেস্ট খেলায় অংশ নিতে পারেননি। তবে, কয়েকটি খেলায় দর্শনীয় ইনিংস খেলেছিলেন। উইজডেন মন্তব্য করে যে, নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে তিনি বেশ সময় নিয়েছেন। তবে, আগস্টে নিজেকে সেরা মানের খেলোয়াড় হিসেবে তুলে ধরেছেন।[১২]
১৯৬৩ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে কমনওয়েলথ একাদশের সদস্যরূপে পাকিস্তান গমন করেন। ছয় খেলায় অংশ নিয়ে ৩৬৯ রান তুলেন। তন্মধ্যে, ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ খেলায় অপরাজিত ১২৬ রানের মনোরম ইনিংস খেলেছিলেন।[১৩][১৪]
Remove ads
সফলতা প্রাপ্তি
সারাংশ
প্রসঙ্গ
অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে অধিক সময় অতিবাহিত করার সুযোগ আসে তার। ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসে। সাবিনা পার্কে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ব্যাটিং উদ্বোধন করার জন্যে তাকে মাঠে নামানো হয়। ১৫ ও ১৭ রান তুলে তিনি ব্যর্থ হয়েছিলেন।[১৫] ত্রিনিদাদে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টে তাকে রাখা হয়নি। তবে সিরিজের বাদ-বাকী টেস্টগুলোয় মাঝারিসারিতে ব্যাটিং করতে নামতেন। কেনসিংটন ওভালের নিজ মাঠে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে অবশেষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির সন্ধান পান। বব সিম্পসন ও বিল লরি’র প্রথম উইকেট জুটিতে সংগৃহীত ৩৮২ রানের রেকর্ডের কল্যাণে প্রথম ইনিংসে বিশাল রান তুলে ফেলে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দল। এর জবাবে নার্স ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে জবাবদানে অগ্রসর হন। ৩০ বাউন্ডারি সহযোগে দ্রুতগতিতে ২০১ রানের দ্বি-শতক করেন। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি শূন্য রানে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাসত্ত্বেও, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং সুদৃঢ়করণে তাকে স্থায়ীভাবে রাখা হয়।[১১]
১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড গমন করেন। সেখানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। সমগ্র টেস্ট সিরিজে অংশ নিয়ে ৬২.৬২ গড়ে ৫০১ রান তুলেন তিনি। উভয়ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র দলীয় অধিনায়ক গ্যারি সোবার্স তার তুলনায় এগিয়েছিলেন।[১৬] ট্রেন্ট ব্রিজে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার দল মাত্র ২৩৫ রানে গুটিয়ে যায়। এ পর্যায়ে তিনি ৯৩ রান তুলেন। শুধুমাত্র আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণেই সেঞ্চুরি লাভ করা থেকে বঞ্চিত হন। উইজডেনের ভাষ্য মোতাবেক জানা যায়, ফাস্ট বোলারদের উপযোগী প্রকৃত পিচে পেস বোলারদেরকে রুখে দিয়ে চমৎকার ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেছিলেন তিনি।[১১][১৭] হেডিংলির চতুর্থ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। দলের ৩৬৭ রানের মধ্যে তার অবদান ছিল ১৩৭ রান। এ রান তুলতে তিনি পৌনে ছয় ঘণ্টা সময় ক্রিজে অবস্থান করেছিলেন।[১৮]
সেম্যুর নার্সের অনবদ্য ক্রীড়াশৈলী উইজডেন থেকে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা কুড়ায়। ফলশ্রুতিতে, উইজডেন কর্তৃক অন্যতম বর্ষসেরা ক্রিকেটারের মর্যাদা লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে উইজডেন মন্তব্য করে যে, বিশ্বস্ত ও ধারাবাহিক ক্রীড়াশৈলীর অধিকারী সেম্যুর নার্স ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অমূল্য সম্পদস্বরূপ। এছাড়াও, তিনি সর্বদাই আকর্ষণীয়ভাবে রান সংগ্রহে তৎপর ছিলেন।[১][১৯]
নার্স বোধহয় এক পর্যায়ে রান সংগ্রহের ক্ষেত্রে সময়কে পিছিয়ে ফেলে রেখে এসেছিলেন। সঠিক সময়ে তাঁর দৃষ্টিনন্দন স্ট্রোকগুলো শক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ততায় গড়া ছিল। নটিংহাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে তাঁর সংগৃহীত ৯৩ রানের ইনিংসটি যারা দেখেছেন তারা এর প্রমাণ পেয়েছেন।
— উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক[১]
Remove ads
ভারত গমন, ১৯৬৬-৬৭
১৯৬৬-৬৭ মৌসুমে ভারত গমন করেন তিনি। তবে, খুবই কম সুযোগ পেয়েছেন। দুই টেস্টে অংশ নিয়ে মাত্র ৮২ রান তুলেন।[২০] মোরাল রি-আর্মামেন্টে মনোনিবেশ ঘটানোর লক্ষ্যে কনরাড হান্ট ক্রিকেট থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এ পর্যায়ে তার পরিবর্তে ব্যাটিং উদ্বোধনের জন্যে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে, এ অবস্থানের উপযোগী তিনি ছিলেন না।[২১]
পোর্ট অব স্পেনে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে ৪১ ও ৪২ রান তুললেও দ্বিতীয় টেস্টে এ অবস্থান থেকে নিজেকে সড়িয়ে নিয়ে আসেন সেম্যুর নার্স।[২২] কুইন্স পার্ক ওভালে অনুষ্ঠিত চতুর্থ টেস্টে প্রথম উইকেট পতনের পর রোহন কানহাইয়ের সাথে জুটি গড়ে ২৭৩ রান তুলেন। এ পর্যায়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল জয়ের অবস্থানে থাকলেও দলীয় অধিনায়ক গ্যারি সোবার্স বিতর্কিতভাবে ইনিংস ঘোষণা করেন। ফলে স্বাগতিক দল সাত উইকেটে পরাজিত হয়। পাশাপাশি, ১-০ ব্যবধানে সিরিজ খোঁয়ায়।[২৩][২৪] উইজডেন মন্তব্য করে যে, এ সিরিজটি নার্স খুব সুন্দরভাবে উপভোগ করেছেন। তবে, উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি মোটেই খুশী নন।[২৫]
Remove ads
নিউজিল্যান্ড গমন, ১৯৬৮-৬৯
সারাংশ
প্রসঙ্গ
১৯৬৮-৬৯ মৌসুমে সর্বশেষবারের মতো বিদেশ গমন করেন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সফরই তার শেষ সফর ছিল। তবে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খুব কম সময়ই নিজেকে স্বাভাবিক খেলায় নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। দলীয় সঙ্গীদের অনেকের মতো তিনিও জন গ্লিসনের আনঅর্থোডক্স বোলিং ও ইনিংসের শুরুতে গার্থ ম্যাকেঞ্জির ঘূর্ণায়মান বল মোকাবেলায় যথেষ্ট বেগ পান।[২৬] সিডনিতে সিরিজের পঞ্চম ও চূড়ান্ত টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৭ রান তুলেন। তবে, স্বাগতিকদের ৩৮২ রানের জয়লাভে ঐ ইনিংসটি বাঁধার প্রাচীর গড়ে তুলতে পারেনি।[২৭]
এ সিরিজ চলাকালে কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে আভাষ পান যে, অদূর ভবিষ্যতে তাকে হয়তো আর না-ও রাখা হতে পারে। গ্যারি সোবার্স এ প্রসঙ্গে বলেন যে, নার্স তাকে আগেই বলেছিল যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে তাকে কেউ বাইরে রাখতে পারবে না; বরঞ্চ, তিনিই তাদেরকে আগে ফেলে দেবেন।[২৮] দলীয় অধিনায়ক গ্যারি সোবার্স, সেম্যুর নার্সকে আসন্ন ইংল্যান্ড সফরে দলের অপরিহার্য খেলোয়াড়ের কথা বলেন। তবে, সেম্যুর নার্স তার মন পরিবর্তন করেননি।[২৮]
নিউজিল্যান্ডে সেম্যুর নার্স অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন। অসাধারণ খেলোয়াড় হিসেবে এ সফরে ৯১.৮০ গড়ে ৮২৬ রান তুলেন।[২৯] প্রথম টেস্টটিতে জীবন লাভ করে ১৬৮ রানের চিত্তাকর্ষক ইনিংস খেলেন। এ ইনিংসটি দূর্দান্ত স্ট্রোকপ্লের দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শন ছিল।[২৬] উইজডেন মন্তব্য করে যে, অনেকগুলো সুন্দর শট খেললেও নার্স বেশ কয়েকবার ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছেন। অনেকগুলো ফিল্ডারের কাছাকাছি এলাকায় ও তিনবার খেলায় বোল্ড হওয়া থেকে বেঁচে যান।[৩০]
ল্যাঙ্কাস্টার পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও চূড়ান্ত টেস্টের পূর্বে এ সফর শেষে জনসমক্ষে নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন।[২৯] ক্রাইস্টচার্চে ২৫৮ রানের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ টেস্ট রান তুলে খেলোয়াড়ী জীবনের সফল সমাপ্তি ঘটান। আলোকমন্দা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ডীয় পেস বোলারদেরকে নাকানি-চুবানি খাইয়ে পিছনের পায়ে ভর রেখে মনোরম ড্রাইভে এ ইনিংসটি খেলেন। উইজডেনের মতে, দূর্দান্ত, আক্রমণাত্মক ব্যাটিং হলেও তা দায়িত্বশীল ব্যাটিংরূপে আখ্যায়িত হয়ে থাকবে। এ ইনিংসটিতে ৩৫টি চার ও একটি ছক্কার মার ছিল।[৩১] নার্সের এ ইনিংসটি যে-কোন ক্রিকেটারের সর্বশেষ টেস্টে সর্বোচ্চ সংগ্রহরূপে বিবেচিত। কমপক্ষে ৩ টেস্টে গড়া সিরিজে যে-কোন ক্রিকেটারের ১১১.৬০ গড়ে সংগৃহীত ৫৫৮ রান অদ্যাবধি রেকর্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।[৩২]
Remove ads
অবসর
টেস্ট খেলোয়াড়ী জীবন শেষে বার্বাডোসে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন সেম্যুর নার্স। ক্লাব পর্যায়সহ প্রথম-শ্রেণীর ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে থাকেন।[৩৩][৩৪] ১৯৭১-৭২ মৌসুমে সফররত নিউজিল্যান্ডীয় একাদশের বিপক্ষে সর্বশেষ প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। খেলায় তিনি ৭৬ ও শূন্য রান তুলেন।[৩৫]
খেলোয়াড়ী জীবনের শেষ দিনগুলোয় বার্বাডোসের স্থানীয় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলতে তাকে দেখা যেতো। গ্যারি সোবার্স বেশ পূর্বেই তার অবসর গ্রহণকে সময়ের অপব্যয়রূপে আখ্যায়িত করেছিলেন। আরেকজন ধারাভাষ্যকার নার্সের অবসর গ্রহণকে সেরা খেলোয়াড়ী জীবনের সূত্রপাতকে অস্বীকার করার সাথে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অস্বীকার করার শামিলরূপে গণ্য করেন। অথচ, ১৯৭০-এর দশকে রান সংগ্রহের জন্যে তার খুবই প্রয়োজন ছিল।[২৬] ১৯৯০-এর দশকে বার্বাডোস দলের ব্যবস্থাপক ও প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, বার্বাডোস ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন বোর্ডের শ্রদ্ধেয় সদস্যরূপে বিবেচিত হতেন। পাশাপাশি, বার্বাডোস জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার প্রধান কোচের মর্যাদা পেয়েছেন।[৩৪]
বার্বাডোস ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সর্বদাই আমি খেলে এসেছি ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। যা পেয়েছি তাতে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। জীবন বেশ ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছে। সন্দেহাতীতভাবেই আমি ভীষণ সুখী। আমি আমার জনগণের জন্যে খেলেছি ও তাঁরা আমাকে যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করেছেন।
— সেম্যুর নার্স[৩৪]
Remove ads
খেলার ধরন
শারীরিকভাবে বেশ মজবুত গড়নের অধিকারী ছিলেন তিনি। প্রচণ্ড জোর খাটিয়ে আক্রমণাত্মক ঢংয়ে ব্যাটিং করতেন সেম্যুর নার্স। ইনিংসের শুরুতেই এ ধরনের মারের মাধ্যমে অগ্রসরে বেশ খুশী হতেন। অনেক সময় এর জন্যে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতো।[১১][৩৬] তার স্ট্রোকপ্লেগুলো বেশ আকর্ষণীয় ছিল। পিছনের পায়ে ভর রেখে সুন্দরভাবে বল মোকাবেলায় অগ্রসর হতেন।[১][১১][৩৬] মাঝে-মধ্যেই অফ-স্পিন বোলিং করতেন। উইকেটের কাছাকাছি এলাকায় অভিজ্ঞ ফিল্ডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেন তিনি।[৩৬]
এম্পায়ার দলের সঙ্গী এভারটন উইকসকে তার ক্রিকেট সফলতা প্রাপ্তিতে কৃতিত্ব দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উইজডেনকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে, উইকস তাকে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটার হতে ভীষণভাবে সহায়তা করেছিলেন। একজন ব্যাটসম্যানকে অবশ্যই বলের কাছে যেতে হবে ও যথোপযুক্ত আঘাত হানতে হবে।[১] গ্যারি সোবার্সের কাছে ‘গর্বিত ব্যক্তি’ হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও[২৮] সেম্যুর নার্স নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। ম্যারাথন দৌড়বিদ ও তার বীর ক্যাসো নাম অনুসরণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দলীয় সঙ্গীরা তাকে ‘ক্যাসো’ ডাকনামে ভূষিত করেছিলেন।[৩৭] ওয়েস হল তাকে বিস্ময়কর গায়করূপে বর্ণনা করেন।[৩৭]
ব্যক্তিগত জীবন
তরুণ বয়সে ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন ও একনিষ্ঠ ফুটবল অনুরাগী তিনি। এম্পায়ারের পক্ষে খেলাসহ জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণ করিয়েছেন। তিনি নিজস্ব ফুটবল ক্লাব গঠন করেন ও ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপে যতটুকু সম্ভব খেলা দেখেছিলেন।[১]
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত সেম্যুর নার্স রোজিয়ান ও চেরিলেন নাম্নী যমজ কন্যার পিতা ছিলেন।[৩৮] তারা ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করে।[১] তার প্রপৌত্র লি নার্সও প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন। মে, ২০১৯ সাল থেকে অসুস্থ ছিলেন। এরপর ৬ মে, ২০১৯ তারিখে ৮৫ বছর বয়সে ব্রিজটাউনের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে তার দেহাবসান ঘটে।[৩৯]
Remove ads
তথ্যসূত্র
আরও দেখুন
গ্রন্থপঞ্জি
বহিঃসংযোগ
Wikiwand - on
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Remove ads