২০১৯ সালের ভারতীয়- বাংলা চলচ্চিত্র উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
সাগরদ্বীপে যকের ধন হ'ল সায়ন্তন ঘোষাল পরিচালিত এবং সৌগত বসু রচিত ২০১৯ সালের বাংলা অ্যাকশন অ্যাডভেঞ্চার চলচ্চিত্র।[২][৩] এটি সুরিন্দর ফিল্মস ও চ্যাম্পিয়ন মুভিস ব্যানারে প্রযোজনা করেন নিসপাল সিং ও ঋতুম জৈন।[৪] ছবিটির পরিবেশনের কাজ করে সুরিন্দর ফিল্মস। ছবিটি হেমেন্দ্র কুমার রায় রচিত বিমল-কুমার জুটিকে ভিত্তি করে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত।[৫] এটি যকের ধন ছবির পরে দ্বিতীয় সিনেমা। এতে অভিনয় করেছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, কোয়েল মল্লিক, গৌরব চক্রবর্তী, কাঞ্চন মল্লিক, কৌশিক সেন, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত। ছবিটি ৬ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে ৯৪ টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[১] ছবিটি মুক্তির প্রথম তিন দিনে প্রায় ₹৮০ লাখ টাকা আয় করে।
সাগরদ্বীপে যকের ধন | |
---|---|
পরিচালক | সায়ন্তন ঘোষাল |
প্রযোজক | নিসপাল সিং ঋতুম জৈন |
রচয়িতা | সৌগত বসু |
চিত্রনাট্যকার | সৌগত বসু |
কাহিনিকার | সৌগত বসু |
উৎস | হেমেন্দ্র কুমার রায়-এর লেখা বিমল-কুমার জুটির গল্প |
শ্রেষ্ঠাংশে | পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কোয়েল মল্লিক গৌরব চক্রবর্তী কাঞ্চন মল্লিক কৌশিক সেন শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় রজতাভ দত্ত |
সুরকার | বিক্রম ঘোষ |
চিত্রগ্রাহক | অলোক মাইতি |
সম্পাদক | সায়ন্তন ঘোষাল |
প্রযোজনা কোম্পানি | সুরিন্দর ফিল্মস চ্যাম্পিয়ন মুভিস |
পরিবেশক | সুরিন্দর ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১২৫ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | বাংলা |
আয় | প্রায় ₹১১.৮ মিলিয়ন টাকা |
বিমল ও কুমার একটি পেট্রোল পাম্পের মালিকা বাঁকশ্যাম ধরের সাথে দেখা করেছেন, যার বাবা রাধেশ্যাম ধর ছিলেন একজন বিজ্ঞানী। রাধেশ্যাম অত্যন্ত সাহসী ছিলেন এবং বহু বছর আগে তিনি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপে পৌঁছেছিলন, যেখানে তিনি একটি পাথর আবিষ্কার করেন, যার মধ্যে রেড মার্কারি নামে একটি পৌরাণিক রাসায়নিক যৌগের একটি স্তর রয়েছে। রাধেশ্যাম গবেষণা করে পরামর্শ দিয়েছে যে এই রাসায়নিক ধীরে ধীরে ক্লান্তিকর জীবাশ্ম জ্বালানীর খুব কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
বিমল এবং কুমার এই রাসায়নিকের জন্য তাদের সন্ধান শুরু করেন। এই উদ্যোগে বিমল মিলিত হয় ডাক্তার রুবি চ্যাটার্জীর সঙ্গে। রবিও একই পৌরাণিক যৌগের সন্ধান করছেন, যা একটি শিশুর জীবন বাঁচাতে প্রয়োজনীয়।
২০১৭ সালে মুক্তি প্রাপ্ত যকের ধন ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার হয় প্রযোজক ও পরিচালক ছবিটির ধারাবাহিক হিসাবে বিমল ও কুমার জুটির অন্য একটি ছবি নির্মাণে আগ্রহী হন। সাগরদ্বীপে যকের ধন ছবিতে ডাঃ রুবি চ্যাটার্জী চরিত্রে প্রথমে সোহিনী সরকারকে নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ছবিটিতে ডাঃ রুবি চ্যাটার্জী চরিত্রে অভিনয় করার জন্য চুক্তি বদ্ধ হন কোয়েল মল্লিক[৬] ছবিটিতে ভিএফএক্স ব্যবহার করা হয়েছে বেশ ভালো মাত্রায়। ভিএফএক্স এর কাজের কারণে ছবিটির মুক্তির সময় পিছিয়ে যায় প্রায় ৪-৫ মাস।
ছবির দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে মূলত পশ্চিমবঙ্গ, সিক্কিম ও থাইল্যান্ডের আও নাং এবং ক্রবি দ্বীপপুঞ্জে।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে ছবিটির দৃশ্যধারণ হয় থাইল্যান্ডে। থাইল্যান্ডে দৃশ্যধারণ প্রধানত ফি ফি আই দ্বীপপুঞ্জ, ক্রবি দ্বীপ এবং মায়া উপসাগরের নিকটবর্তী বেশ কয়েকটি কুমারী দ্বীপ, ট্রাং গুহা, আও নাং এবং পোডা দ্বীপে দৃশ্যধারণ করা হয়।[৭] ছবির একটি দৃশ্যে কোয়েল মল্লিকের গুহার মধ্যে দৃশ্য ধারণ করা দৃশ্য হয়েছে ট্রাং গুহাতে। ছবির প্রয়োজনে জলের নিচে কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয় পরমব্রতকে নিয়ে।[৮][৯]
ছবিটির একটি প্রথম বর্ণিত ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডি) পোস্টার ২০ মে, ২০১৯ সালে প্রকাশিত হয়। এতে সাগরদ্বীপে যকের ধন প্রধান পুরুষ চরিত্র বিমল হিসাবে পরমব্রতকে এবং কুমার চরিত্রে গৌরব চক্রবর্তীকে উপস্থাপন করা হয়। পোস্টারটিতে ছবির প্রধান নারী চরিত্র ডাঃ রুবি চ্যাটার্জী হিসাবে কোয়েল মল্লিককে উপস্থাপন করা হয়।[১০] ২৩ মে ২০১৯ সালে ছবিটির আনুষ্ঠানিক টিজার মুক্তি পায়। এটি ইউটিউবে মুক্তির পর ৬ মাসের মধ্যে ৩ লাখের বেশি বার দর্শকেরা দেখেন। চলচ্চিত্রটির আনুষ্ঠানিক ট্রেইলার ৬ নভেম্বর ২০১৯ সালে মাধ্যমে মুক্তি পায়। ইউটিউবে মুক্তির এক মাসের মধ্যে ৪.৫ লাখের বেশি বার দর্শকেরা দেখেন এটি।
ছবিটি ২০১৯ সালের জুন-জুলাই মাসে মুক্তির জন্য নির্ধারিত ছিল, তবে ছবির প্রযুক্তিগত কিছু কাজের জন্য মুক্তির তারিখ পিছিয়ে ৬ ডিসেম্বর ২০১৯-এ পরিবর্তন করা হয়।
ছবির আবহ সংগীত পরিচালনা করেছেন বিক্রম ঘোষ।
ছবিটি মুক্তির পর বেশীরভাগ সংবাদ পত্র ছবিটির প্রশংসা করে। আনন্দবাজার পত্রিকায় সংবাদ পত্রটির লেখক "মধুমন্তী পৈত চৌধুরী" ছবিটিকে রহস্য বেশি, রোমাঞ্চ কম হিসাবে উল্লেখ করেন এবং ছবিটিকে রেটিং প্রদান করে।[১১] সংবাদ পত্রটিতে আরও বলা হয় যে "গুপ্তধনের সন্ধানে কল্পলোকের আশ্রয়— সায়ন্তন ও চিত্রনাট্যকার সৌগত বসুর এই অভিনবত্ব এ ছবির সেরা আবিষ্কার এবং যকের ধন হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদকে তুলে ধরাও খুবই প্রাসঙ্গিক ও যুগোপযোগী।"[১১] এই সময় পত্রিকায় ছবিটির প্রশংসা করে বলা হয় নীল জলে গুপ্তধন, বাঙালির স্বপ্নউড়ান মন্দ নয়!। সংবাদ পত্রটি ছবিটি পর্যালোচনা করতে গিয়ে জানায় যে "ভালো লাগে এই সিনেমার চিত্রনাট্যের বুনোট। গুপ্তধনের সন্ধান করতে গিয়ে যেভাবে বিজ্ঞানকে মেশানো হয়েছে এবং যকের ধন হিসেবে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করার বিষয়টি উঠে এসেছে তা খুবই শিক্ষনীয়। প্রকৃতির সম্পদ রক্ষা করার দায়ভার যে আমাদেরই সে কথা বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন পরিচালক সায়ন্তন ঘোষাল এবং চিত্রনাট্যকার সৌগত বসু। ছবিটিকে এই সময় রেটিং প্রদান করে।[১২] সংবাদ প্রতিদিন ছবিটির কম্পিউটার গ্রাফিক্স-এর প্রশংসা করে বলে "জলের তলার দৃশ্য বা গুপ্তধনের প্রকৃত অবস্থানটিকে দেখানোর কাজেও আর্ট ডিরেকশন বিভাগ এবং কম্পিউটার গ্রাফিক্স বিভাগ বিশ্বাসযোগ্য কাজ করেছে। সত্যিই বেশ প্রশংসার"।[১৩] এছাড়া আইই বাংলাতে দেবস্মিতা দাস ছবিটিকে রেটিং প্রদান করেন এবং ছবিটি সম্পর্কে উল্লেখ করেন যে "ছবির ভালদিকের কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় গ্রাফিক্সের কথা। বাংলা ছবির ক্ষেত্রে সীমিত বাজেট ও ততোধিক কম সময়ে এই আউটপুট সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। দ্বিতীয়ত ছবির চিত্রনাট্য। জমজমাট স্ক্রিপ্ট অনেকক্ষণ আপনার গোয়েন্দা সত্ত্বাকে জাগিয়ে রাখবে।"।[১৪]
সিনেসট্যান ছবিটিকে রেটিং প্রদন করে, এছাড়া ছবির কলাকুশলীদের অভিনয়, ছবির গান, পরিচালনা এবং চিত্রনাট্য প্রতিটি বিভাগে রেটিং প্রদান করা হয়।[১৫]
ছবিটি মুক্তির পরে প্রথম দিনে ₹১৪.৮৩ লাখ, দ্বিতীয় দিনে ₹২৪.১৯ লাখএবং প্রথম রবিবার বা তৃতীয় দিনে ₹৪০.১৬ লাখ টাকা গ্রোস বক্স অফিস আয় করে। সপ্তাহান্তে ছবিটির গ্রোস বক্স অফিস আয় প্রায় ₹৮ মিলিয়ন টাকা। ছবিটি প্রথম সপ্তাহে ₹১.১৮ কোটি টাকা আয় করে।[১৬]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.