Remove ads
একজন ইংরেজ কবি ও নাট্যকার উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
উইলিয়াম শেকসপিয়র (/ˈʃeɪkspɪər/;[১] ইংরেজি: William Shakespeare ৱিলীঅ্যম্ শেইক্স্পীঅ্যর্; ব্যাপ্টিজম:২২ অথবা ২৩ এপ্রিল, ১৫৬৪; মৃত্যু: ২৩ এপ্রিল, ১৬১৬)[nb ১][২] ছিলেন একজন ইংরেজ কবি ও নাট্যকার। তাকে ইংরেজি ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক এবং বিশ্বের একজন অগ্রণী নাট্যকার মনে করা হয়।[৩] তাকে ইংল্যান্ডের "জাতীয় কবি" এবং "বার্ড অব অ্যাভন" (অ্যাভনের চারণকবি) নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে।[৪][nb ২] তার যে রচনাগুলি পাওয়া গিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে ৩৯টি নাটক,[nb ৩] ১৫৪টি সনেট, তিনটি দীর্ঘ আখ্যানকবিতা এবং আরও কয়েকটি কবিতা। কয়েকটি লেখা শেকসপিয়র অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে যৌথভাবেও লিখেছিলেন। তার নাটক প্রতিটি প্রধান জীবিত ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং অপর যে কোনো নাট্যকারের রচনার তুলনায় অধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে।[৫]
উইলিয়াম শেকসপিয়র William Shakespeare | |
---|---|
জন্ম | |
অপ্সুদীক্ষা | ২৬ এপ্রিল, ১৫৬৪ |
মৃত্যু | ২৩ এপ্রিল, ১৬১৬ (৫২ বছর) স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন, ওয়ারউইকশায়ার, ইংল্যান্ড |
সমাধি | চার্চ অফ দ্য হলি ট্রিনিটি, স্ট্র্যাটফোর্ড-আপন-অ্যাভন |
পেশা |
|
কর্মজীবন | আনু. ১৫৮৫-১৬১৩ |
যুগ |
|
আন্দোলন | ইংরেজি নবজাগরণ |
দাম্পত্য সঙ্গী | অ্যানি হ্যাথাওয়ে (বি. ১৫৮২) |
সন্তান |
|
পিতা-মাতা |
|
স্বাক্ষর | |
শেকসপিয়রের জন্ম ও বেড়ে ওঠা স্ট্যাটফোর্ড অন-অ্যাভনে। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি অ্যানি হ্যাথাওয়েকে বিবাহ করেন। অ্যানির গর্ভে শেকসপিয়রের তিনটি সন্তান হয়েছিল। এঁরা হলেন সুসান এবং হ্যামনেট ও জুডিথ নামে দুই যমজ। ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে তিনি অভিনেতা ও নাট্যকার হিসেবে লন্ডনে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। লর্ড চেম্বারলেইন’স ম্যান নামে একটি নাট্যকোম্পানির তিনি ছিলেন সহ-সত্ত্বাধিকারী। এই কোম্পানিটিই পরবর্তীকালে কিং’স মেন নামে পরিচিত হয়। ১৬১৩ সালে তিনি নাট্যজগৎ থেকে সরে আসেন এবং স্ট্র্যাটফোর্ডে ফিরে যান। তিন বছর বাদে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছিল। শেকসপিয়রের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে নথিভুক্ত তথ্য বিশেষ পাওয়া যায় না। তার চেহারা, যৌনপ্রবৃত্তি, ধর্মবিশ্বাস, এমনকি তার নামে প্রচলিত নাটকগুলি তারই লেখা নাকি অন্যের রচনা তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে।[৬]
শেকসপিয়রের পরিচিত রচনাগুলির অধিকাংশই মঞ্চস্থ হয়েছিল ১৫৮৯ থেকে ১৬১৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে।[৭][nb ৪] তার প্রথম দিকের রচনাগুলি ছিল মূলত মিলনান্তক ও ঐতিহাসিক নাটক। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে তার দক্ষতায় এই দুটি ধারা শিল্পসৌকর্য ও আভিজাত্যের মধ্যগগনে উঠেছিল। এরপর ১৬০৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানত কয়েকটি বিয়োগান্ত নাটক রচনা করেন। এই ধারায় রচিত তার হ্যামলেট, কিং লিয়ার ও ম্যাকবেথ ইংরেজি ভাষার কয়েকটি শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি। জীবনের শেষ পর্বে তিনি ট্র্যাজিকমেডি রচনায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এই রচনাগুলি রোম্যান্স নামেও পরিচিত। এই সময় অন্যান্য নাট্যকারদের সঙ্গে যৌথভাবেও কয়েকটি নাটকে কাজ করেন তিনি।
তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত নাটকগুলির প্রকাশনার মান ও প্রামাণ্যতা সর্বত্র সমান ছিল না। ১৬২৩ সালে তার দুই প্রাক্তন নাট্যসহকর্মী দুটি নাটক বাদে শেকসপিয়রের সমগ্র নাট্যসাহিত্যের ফার্স্ট ফোলিও প্রকাশ করেন।
তার সমকালে শেকসপিয়র ছিলেন একজন সম্মানিত কবি ও নাট্যকার। কিন্তু মৃত্যুর পর তার খ্যাতি হ্রাস পেয়েছিল। অবশেষে ঊনবিংশ শতাব্দীতে খ্যাতির শীর্ষে ওঠেন। রোম্যান্টিকেরা তার রচনার গুণগ্রাহী ছিলেন। ভিক্টোরিয়ানরা রীতিমতো তাঁকে পূজা করতেন; জর্জ বার্নার্ড শ’র ভাষায় যা ছিল চারণপূজা ("bardolatry")।[৮] বিংশ শতাব্দীতেও গবেষণা ও নাট্য উপস্থাপনার বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তার রচনাকে পুনরাবিষ্কার করার চেষ্টা করা হয়। আজও তার নাটক অত্যন্ত জনপ্রিয় ও বহুচর্চিত। সারা বিশ্বের নানা স্থানের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নানা আঙ্গিকে এই নাটকগুলি মঞ্চস্থ ও ব্যাখ্যাত হয়ে থাকে।
উইলিয়াম শেকসপিয়রের পিতা জন শেকসপিয়র ছিলেন একজন সফল গ্লোভার ও অল্ড্যারম্যান। তার আদি নিবাস ছিল স্নিটারফিল্ডে। শেকসপিয়রের মা মেরি আরডেন ছিলেন এক ধনী ভূম্যধিকারী কৃষক পরিবারের সন্তান।[৯] শেকসপিয়র জন্মগ্রহণ করেছিলেন স্ট্র্যাটফোর্ড-আপঅন-অ্যাভনে। ১৫৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল তার ব্যাপ্টিজম সম্পন্ন হয়। তার জন্মের সঠিক তারিখটি জানা যায় না। তবে ২৩ এপ্রিল অর্থাৎ, সেন্ট জর্জ’স ডে-এর দিনে তার জন্মদিন পালন করার প্রথা রয়েছে।[১০] অষ্টাদশ শতাব্দীতে এক গবেষক ভুল করে এই তারিখটিকে শেকসপিয়রের জন্মদিন বলে উল্লেখ করেছিলেন। পরে তারিখটি জীবনীকারেদের কাছে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে। কারণ, শেকসপিয়র মারা গিয়েছিলেন ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল।[১১] তিনি তার পিতামাতার আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় এবং জীবিত সন্তানদের মধ্যে সর্বজ্যেষ্ঠ।[১২]
সেযুগের কোনো লিখিত প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, অধিকাংশ জীবনীকার মোটামুটি একমত যে শেকসপিয়র সম্ভবত স্ট্র্যাটফোর্ডের কিং'স নিউ স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন।[১৩] ১৫৫৩ সালে এই মুক্ত বিদ্যালয়টি সনদ পায়।[১৪] স্কুলটি শেকসপিয়রের বাড়ি থেকে পৌনে-এক মাইল দূরে অবস্থিত ছিল। এলিজাবেথীয় যুগে গ্রামার স্কুলগুলির মান সর্বত্র সমান ছিল না। তবে স্কুলগুলির পাঠ্যক্রম সারা ইংল্যান্ডেই আইন দ্বারা নির্দিষ্ট করা ছিল।[১৫] এই কারণে মনে করা হয়, স্কুলে লাতিন ব্যাকরণ ও ধ্রুপদি সাহিত্যের বিস্তারিত পাঠ দেওয়া হত।
১৮ বছর বয়সে শেকসপিয়র ২৬ বছর বয়সী অ্যানি হ্যাথাওয়েকে বিবাহ করেন। ১৫৮২ সালের ২৭ নভেম্বর ওরসেস্টরের অ্যাংলিক্যান ডায়োসিসের কনসিস্টরি কোর্ট একটি বিবাহ লাইসেন্স জারি করেছিল। দু-দিন বাদে হ্যাথাওয়ের প্রতিবেশীরা একটি বন্ড পোস্ট করে জানান যে, বিবাহের কোনো আইনগত দাবি আদায় বাকি নেই।[১৬] খুবই তাড়াহুড়োর মধ্যে দিয়ে তাদের বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছিল। ওরসেস্টরের চ্যান্সেলর "ম্যারেজ ব্যানস" প্রচলিত প্রথায় তিন বার পাঠের বদলে মাত্র এক বার পাঠের অনুমতি দেন।[১৭] বিয়ের ছয় মাস পরে অ্যানি সুজানা নামে একটি মেয়ের জন্ম দিয়েছিলেন। ১৫৮৩ সালের ২৬ মে তার ব্যাপ্টজম হয়।[১৮] এর প্রায় দুই বছর বাদে শেকসপিয়র দম্পতির হ্যামনেট নামে এক পুত্র ও জুডিথ নামে এক কন্যা জন্মায়। এরা ছিল যমজ। ১৫৮৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এদের ব্যাপ্টিজম হয়।[১৯] হ্যামনেটের মৃত্যু হয়েছিল মাত্র এগারো বছর বয়সে। তার মৃত্যুর কারণ জানা যায় না। ১৫৯৬ সালের ১১ অগস্ট তাকে সমাধিস্থ করা হয়।[২০]
যমজ সন্তানের জন্মের পর শেকসপিয়রের পরবর্তী ঐতিহাসিক উল্লেখ পাওয়া যায় ১৫৯২ সালে লন্ডনের একটি মঞ্চদৃশ্যের বর্ণনায়। ১৫৮৫ থেকে ১৫৯২ পর্যন্ত বছরগুলিকে বিশেষজ্ঞেরা তাই শেকসপিয়রের জীবনের "হারানো বছর" বলে উল্লেখ করে থাকেন।[২১] জীবনীকারেরা নানা অপ্রামাণিক গল্পের ভিত্তিতে এই পর্বের এক একটি বিবরণ প্রস্তুত করেছেন। শেকসপিয়রের প্রথম জীবনীকার তথা নাট্যকার নিকোলাস রো স্ট্র্যাটফোর্ডের একটি কিংবদন্তির উল্লেখ করে বলেছেন, হরিণ রান্না করার অপরাধে বিচারের হাত থেকে বাঁচতে শহর ছেড়ে লন্ডনে পালিয়ে গিয়েছিলেন শেকসপিয়র।[২২] অষ্টাদশ শতাব্দীতে প্রচলিত আর একটি গল্প হল, শেকসপিয়র লন্ডনের থিয়েটার পৃষ্ঠপোষকদের ঘোড়ার রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে নাট্যশালায় কাজ করতে শুরু করেন।[২৩] জন অব্রে লিখেছেন শেকসপিয়র গ্রামের স্কুলশিক্ষকের চাকরি করতেন।[২৪] বিংশ শতাব্দীর কয়েকজন গবেষকের মতে ল্যাঙ্কাশায়ারের আলেকজান্ডার হঘটন নামে এক ক্যাথলিক ভূস্বামী তাকে স্কুলশিক্ষক রূপে নিয়োগ করেছিলেন। এই ব্যক্তি তার উইলে "উইলিয়াম শেকশ্যাফট" নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেছিলেন।[২৫] তবে এই সব গল্পের সমর্থনে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। এই সব গল্পই তার মৃত্যুর পর প্রচলিত হয়েছিল। অন্যদিকে ল্যাঙ্কাশায়ার অঞ্চলে শেকশ্যাফট একটি সাধারণ নাম।[২৬]
১৬২৩ সালে ফার্স্ট ফোলিওতে প্রকাশিত শেকসপিয়রের ৩৬টি নাটককে উক্ত ফোলিওতে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলি হল: মিলনান্তক (কমেডি), ঐতিহাসিক (হিস্ট্রি) ও বিয়োগান্তক (ট্রাজেডি)।[২৭] যে দুটি নাটক ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি, সেগুলি হল দ্য টু নোবল কিনসমেন ও পেরিক্লিস, প্রিন্স অব টায়ার। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই দুই নাটকের অধিকাংশটাই শেকসপিয়রের রচনা। সেই হিসেবে এই দুটি নাটককেও শেকসপিয়রের নাট্যসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়েছে।[২৮] শেকসপিয়রের কোনো কবিতাই ফোলিওর অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এডওয়ার্ড ডওডেন শেকসপিয়রের শেষ জীবনের চারটি কমেডিকে "রোম্যান্স" নামে চিহ্নিত করেন। যদিও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ এই চারটি নাটককে "ট্রাজিকমেডি" নামে চিহ্নিত করার পক্ষপাতি।[২৯] এ নাটকগুলো এবং দ্য নোবল কিনসমেন নাটকটি নিচে তারকা (*) চিহ্নিত। ১৮৯৬ সালে ফ্রেডরিক এস. বোয়াস অল’স ওয়েল দ্যাট এন্ডস ওয়েল, মেজার ফর মেজার, ট্রলিয়াস অ্যান্ড ক্রেসিডা ও হ্যামলেট নাটক চারটির জন্য "প্রবলেম প্লে" নামে একটি শব্দ ব্যবহার করেন।[৩০] তিনি লেখেন, "বিষয়বস্তুগত সমতা ও সমধর্মিতা-সম্পন্ন নাটকগুলিকে নিছক কমেডি বা ট্রাজেডি বলা যায় না। তাই আমাদের আজকের থিয়েটার থেকে যথোপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করতে হবে এবং এ নাটকগুলোকে শেকসপিয়রের "প্রবলেম প্লে" শ্রেণির অন্তর্গত করতে হবে।"[৩১] এই শব্দবন্ধটি যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল। কখনও কখনও অন্যান্য নাটকের ক্ষেত্রেই এই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হত। তবে এর ব্যবহার বন্ধ হয়নি। যদিও হ্যামলেট নাটকটি নির্দিষ্টভাবেই ট্রাজেডি শ্রেণিভুক্ত হয়ে আছে।[৩২] অন্যান্য "প্রবলেম প্লে"-গুলি জোড়া ছোরা (‡) চিহ্নিত হল।
যেসব নাটকগুলো অংশত শেকসপিয়রের লেখা সেগুলিকে নিচে ছোরা চিহ্নিত (†) করা হল। অন্য যেসব লেখা কখনও সখনও তার লেখা বলে উল্লিখিত হয়ে থাকে, সেগুলি "অপ্রামাণিক রচনা" অংশের অন্তর্ভুক্ত হল।
|
|
|
|
|
|
উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত কমেডি অফ এররস্ অবলম্বনে ১৮৬৯ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর-এর হাতে রচিত হয় বাংলা গ্রন্থ ভ্রান্তিবিলাস। উল্লেখ্য, শোভাবাজার রাজবাড়িতে আনন্দকৃষ্ণ বসুর কাছে তিনি শেকসপিয়রের পাঠ নেন। কথিত আছে, মাত্র পনেরো দিনে তিনি কমেডি অফ এরর-এর এই ভাবানুবাদটি রচনা করেছিলেন।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.