Remove ads
হবিগঞ্জ জেলার একটি রেলওয়ে স্টেশন উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশন হচ্ছে বাংলাদেশের একটি জংশন রেলওয়ে স্টেশন যা হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে সেকশনের সিলেট বিভাগে যে সকল জংশন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম এটি।[3] ১৯০৩ সালে এটি চালু হয়।[4] পরবর্তীতে ১৯২৮-১৯২৯ সালে হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ জংশন–বাল্লা রেলপথ চালু হলে স্টেশনটি জংশন স্টেশনে রুপান্তরিত হয়।[4]
চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে একটি রেলপথ সংযোগের জন্য আসামের চা উৎপাদনকারীদের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে ১৮৯১ সালে বঙ্গের পূর্বাঞ্চলে একটি রেলওয়ে ট্রাক নির্মাণ শুরু করে। চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লায় ১৫০ কিলোমিটার (৯৩ মা)-এর একটি পথ ১৮৯৫ সালে চালু করা হয়।
১৮৯২ সালে ইংল্যান্ডে গঠিত আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি এদেশে রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব নেয়। ১৮৯৫ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা ১৫০ কিমি মিটারগেজ লাইন এবং লাকসাম থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত ৬৯ কিমি রেললাইন জনসাধারণের জন্য খোলা হয়। ১৮৯৬ সালে কুমিল্লা-আখাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ স্থাপন করা হয়।[5]
কুমিল্লা–আখাউড়া–কুলাউড়া–বদরপুর রেলপথ অংশ ১৮৯৬–৯৮-এ চালু করা হয় এবং ১৯০৩ সালে লামডিং পর্যন্ত বিস্তৃত করা হয়।[6][7][8]
হবিগঞ্জ বাজার–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি ১৯২৮ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কর্তৃক [9] হবিগঞ্জ জেলা সদর শহর থেকে শায়েস্তাগঞ্জ জংশন হয়ে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৪৫[10] অথবা ৫২ কিলোমিটার[11] দীর্ঘ রেলপথ চালু করে।[10][12] এর মধ্যে ১৯২৮ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ (১৫[10] অথবা ১৬ কিমি[11]) এবং ১৯২৯ সালে শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা (৩০[11] অথবা ৩৬ কিমি[10]) রেলপথ উদ্বোধন করা হয়।
সে সময় হবিগঞ্জের চুনারঘাট উপজেলার ১৩টি বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও বাগানের রেশনসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র আমদানী করার একমাত্র মাধ্যম ছিল এ রেলপথ। শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে মোট ৪টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: হবিগঞ্জ বাজার, হবিগঞ্জ কোর্ট, ধুলিয়াখাল এবং পাইকপাড়া। শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে মোট ৭টি স্টেশন রয়েছে (শায়েস্তাগঞ্জ জংশন বাদে), যথা: বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা।
বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরবর্তীকালে এরশাদ সরকারের প্রথম দিকে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথটি সর্বপ্রথম বন্ধ হয়, তবে পরে আবার চালু হয়। এরপর ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে অনুরূপ বন্ধ হয় এবং ২০০০ সালে রেলপথটি উন্নত সংস্কার করে ট্রেন চলাচল চালু হয়েও সর্বশেষ ২০০৩ সালে এ লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের অঘোষিতভাবে বন্ধ হওয়ার পর থেকেই একটি প্রভাবশালী মহল রেলের বিশাল সম্পদের দিকে নজর দেয়।[11] ২০০৫ সালের দিকে সড়ক করার অজুহাতে হবিগঞ্জ বাজার থেকে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথ তুলে ফেলা হয়।[10] পরে আবার শায়েস্তাগঞ্জ থেকে হবিগঞ্জ পর্যন্ত রেল লাইনটি উঠিয়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হয়।[11]
২০০৩ সালে এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এ রেলপথটি।[10] এরপর থেকে কোটি কোটি টাকার রেল সম্পদ লুটপাট হতে থাকে।[10] এরই মধ্যে পথটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি ও স্টেশন ঘরের আসবাবপত্র লুটপাট হয়ে গেছে।[10] এখন চলছে রেলপথের জমি দখল।[10] একশ্রেণির মানুষ এসব জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ করছে।[10] চাষ করছে নানা ফসল।[10] পরিত্যক্ত রেলপথটির সাথে জড়িয়ে আছে শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম।[11] জশংনের ঐতিহ্য রক্ষায় দ্রুত এ রেলপথে পুনরায় ট্রেন চালুর দাবি স্থানীয়দের।[11]
শায়েস্তাগঞ্জ জংশন রেলওয়ে স্টেশনটি আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথের অন্তর্ভুক্ত। শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের আওতাধীন ২৩ টি রেলওয়ে স্টেশন (শায়েস্তাগঞ্জ জংশনসহ) রয়েছে। এই জংশন রেলওয়ে স্টেশনের মোট ৪ টি রেলপথ সেকশন রয়েছে। এই স্টেশন থেকে চারটি দিকে রেলপথ গেছে, যথা: পূর্ব-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথ, পশ্চিম-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–আখাউড়া রেলপথ, এবং পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ[11] রেলপথ, পূর্ব-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা[11] রেলপথ।
পূর্ব-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–কুলাউড়া রেলপথে ২ টি রেলওয়ে স্টেশন। যথা- সাটিয়াজুড়ি এবং লস্করপুর।
পশ্চিম-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ–আখাউড়া রেলপথে ১০ টি রেলওয়ে স্টেশন। যথা- শায়েস্তাগঞ্জ জংশন, সুতাং, শাহজীবাজার, ছাতিয়াইন, নোয়াপাড়া, ইটাখোলা, তেলিয়াপাড়া, মনতলা, কাশিমনগর এবং হরষপুর।
পশ্চিম-উত্তরে শায়েস্তাগঞ্জ–হবিগঞ্জ রেলপথে ৪ টি রেলওয়ে স্টেশন। যথা- পাইকপাড়া, ধুলিয়াখাল, হবিগঞ্জ কোর্টা এবং হবিগঞ্জ বাজার।
পূর্ব-দক্ষিণে শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথে ৭ টি রেলওয়ে স্টেশন। যথা- বারকোটা, শাকির মোহাম্মদ, সুতাং বাজার, চুনারুঘাট, আমু রোড, আসামপারা এবং বাল্লা।
স্টেশনটিতে প্ল্যাটফর্ম ও প্ল্যাটফর্ম শেড রয়েছে।[4]
২০২০ সাল অব্দি এই স্টেশন থেকে সিলেট–ঢাকা, সিলেট–চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন অন্তত ১০ জোড়া ট্রেন চলাচল করে।[13] তার মধ্যে রয়েছে সিলেট–চট্টগ্রাম রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ও উদয়ন এক্সপ্রেস,[3]মেইল ট্রেন জালালাবাদ এক্সপ্রেস। সিলেট–ঢাকা রেলপথে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, কালনী এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, উপবন এক্সপ্রেস, মেইল ট্রেন সুরমা এক্সপ্রেস, এবং আখাউড়া–সিলেট রেলপথে চলাচলকারী লোকাল ট্রেন কুশিয়ারা এক্সপ্রেস। এখানে উল্লেখ্য যে, ২০০৩ সাল থেকে পূর্ববর্তী বিগত বছরগুলোতে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে লোকাল ট্রেন চলাচল করতো, ২০০৩ সালে হবিগঞ্জ–শায়েস্তাগঞ্জ–বাল্লা রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় সেই লোকাল ট্রেন এখন সিলেট-আখাউড়া রুটে চলে।[11][যাচাইকরণ ব্যর্থ হয়েছে]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.