Loading AI tools
বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী (এম এইচ সিদ্দিকী) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর উত্তম খেতাব প্রদান করে। [1]
মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকীর জন্ম নড়াইল জেলার সদর উপজেলার হবখালী গ্রামে। তার বাবার নাম জেড আহমেদ এবং মায়ের নাম ওয়াজেদা আহমেদ। তার স্ত্রীর নাম সৈয়দা রোকেয়া সিদ্দিকী। তাদের দুই মেয়ে।
১৯৭১ সালে ওয়াপদার (বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ড) সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে ভারতে যান। সেখানে তিন মাস বাংলাদেশ সরকারের কার্যালয়ে প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকেন। এরপর পুনরায় যোগ দেন সশস্ত্র যুদ্ধে। প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোর, নড়াইল ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধ করেন। ১৮ বা ১৯ ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধে তিনি আহত হন। তার চোখে গুলি লাগে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানিরা তখন আত্মসমর্পণ করেনি। সেদিন যুদ্ধের পর তারা আত্মসমর্পণ করে।[2]
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসের তৃতীয় সপ্তাহে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছিলেন নড়াইল জেলায়। তাদের নেতৃত্বে মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী (কমল সিদ্দিকী)। তিনি খবর পেলেন, ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস স্টেশনের ডিজেল প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ঈদের দিন পাকিস্তানিরা নড়াইল থেকে সেখানে ডিজেল নিয়ে যাবে। গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে উত্তরে মধুমতী নদীর তীরে ভাটিয়াপাড়া। নদীর ওপারে নড়াইল জেলা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে। এই ক্যাম্পে ছিল সেনা, মিলিশিয়া ও পুলিশের সমন্বয়ে ৪০ জনের একটি দল। বাংকার নির্মাণ করে তারা সেখানে অবস্থান করছিল। এক বাংকার থেকে আরেক বাংকারে যাওয়ার জন্য ছিল সুড়ঙ্গপথ। প্রতিরক্ষা ছিল খুবই মজবুত। এর আগে গণবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা কয়েকবার সেখানে আক্রমণ করেছেন। কিন্তু তারা পাকিস্তানিদের তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারেননি। তখন ওই ওয়্যারলেস স্টেশনের বিদ্যুৎ-ব্যবস্থা ছিল জেনারেটরের মাধ্যমে। জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজন হতো ডিজেলের। পাকিস্তানিরা কিছুদিন পরপর ডিজেল আনত ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ বা নড়াইল থেকে। মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী সিদ্ধান্ত নিলেন, পাকিস্তানিরা যখন ডিজেল নিয়ে যাবে, তখন আক্রমণ করবেন। নড়াইল থেকে তারা আসবে সড়কপথে। পথে ছোট নবগঙ্গা নদী পার হয়ে তারপর মধুমতী নদী। এই নদী পার হতে হবে গানবোটে। মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী সহযোদ্ধাদের নিয়ে ঈদের আগের রাতে অবস্থান নিলেন নবগঙ্গার পাড়ে। নভেম্বর মাসের ১৯ বা ২০ তারিখ। ভোর হয় হয়, এমন সময় তিনি দেখতে পেলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ছয়টি জিপ আসছে। তিনি সহযোদ্ধাদের বলেছিলেন, তার সংকেতের আগে কেউ যেন গুলি না ছোড়েন। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধা উত্তেজনায় আগেই গুলি করে বসলেন। পাকিস্তানিরা দ্রুত জিপ থামিয়ে আড়ালে পজিশন নিয়ে আক্রমণ শুরু করল। নিমিষে শান্ত এলাকা পরিণত হলো রণক্ষেত্রে। যুদ্ধ চলতে থাকল। পাকিস্তানি সেনারা সবাই অবস্থান নিয়েছে জিপের আড়ালে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে তাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। এ অবস্থায় মাসরুর-উল-হক যুদ্ধকৌশল পাল্টালেন। এরপর তারা গুলি করতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের মাথা দেখে। এই কৌশলে বেশ কাজ হলো। তাদের হাতে একের পর এক পাকিস্তানি সেনা নিহত বা আহত হতে থাকল। এভাবে যুদ্ধ চলল প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা। তারপর পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে গেল। সেদিন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটজন পাকিস্তানি সেনা নিহত ও কয়েকজন আহত হয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন গ্রামবাসী শহীদ হন। [3]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.