মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি ব্লক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি ব্লক উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলার আলিপুরদুয়ার মহকুমার একটি প্রশাসনিক বিভাগ (সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক)।
মাদারিহাট-বীরপাড়া | |
---|---|
সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক | |
পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৬.৭০০° উত্তর ৮৯.২৮৩° পূর্ব | |
দেশ | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | আলিপুরদুয়ার |
আয়তন | |
• মোট | ৩৮০.৯৬ বর্গকিমি (১৪৭.০৯ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ২,০২,০২৬ |
• জনঘনত্ব | ৫৩০/বর্গকিমি (১,৪০০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• সরকারি | বাংলা, ইংরেজি |
সময় অঞ্চল | ভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০) |
লোকসভা কেন্দ্র | আলিপুরদুয়ার |
বিধানসভা কেন্দ্র | মাদারিহাট |
ওয়েবসাইট | jalpaiguri |
মাদারিহাটের স্থানাংক ২৬°৪২′০০″ উত্তর ৮৯°১৬′৫৯″ পূর্ব।
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক জেলার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। এই জেলার পশ্চিম সীমান্ত বরাবর দাদুয়া নদী প্রবাহিত। এই অঞ্চলের ভূমিরূপ পাহাড়ি, যা উত্তর-হিমালয় পর্বতশ্রেণির অন্তর্গত।[1][2]
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের উত্তর দিকে ভুটান রাষ্ট্রের সামৎসে জেলা, পূর্ব দিকে কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক, দক্ষিণ দিকে ফালাকাটা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক এবং পশ্চিম দিকে জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক অবস্থিত।[2]
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের আয়তন ৩৭৬.৭৫ বর্গ কিলোমিটার। এই ব্লকে একটি পঞ্চায়েত সমিতি, ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৩৯টি গ্রাম সংসদ, ৫০টি মৌজা, ৪৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম ও ২টি জনগণনা নগর রয়েছে। ব্লকটি মাদারিহাট ও বীরপাড়া থানার এক্তিয়ারভুক্ত এলাকার অধীনস্থ।[3] ব্লকের সদর মাদারিহাট।[2]
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি হল: বান্দাপানি, বীরপাড়া ১, বীরপাড়া ২, হাঁটাপাড়া, খয়ারবাড়ি, লঙ্কাপাড়া, মাদারিহাট, রঙ্গালিবাজার, শিশুজুমরা ও টোটোপাড়া বল্লালগুড়ি।[4]
২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সামগ্রিক জনসংখ্যা ২০২,০২৬। এর মধ্যে ১৮৮,২৬৫ জন গ্রামবাসী এবং ১৩,৭৬১ জন শহরবাসী। আবার মোট জনসংখ্যার মধ্যে ১০১,৫৩৬ জন পুরুষ এবং ১০০,৪৯০ জন মহিলা। ২৪,৩২৮ জনের বয়স ছয় বছরের কম। মোট জনসংখ্যার মধ্যে ২৮,৮১৩ জন তফসিলি জাতি এবং ৭৮,৩১৪ জন তফসিলি উপজাতি তালিকাভুক্ত।[5]
২০০১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৮৫,৪৯৯; যার মধ্যে ৯৪,৩১৫ জন ছিল পুরুষ এবং ৯১,১৮৪ জন ছিল মহিলা। ১৯৯১-২০০১ দশকে কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির নথিবদ্ধ হার ছিল ২১.৮৮ শতাংশ।[6]
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের জনগণনা নগরগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): শিশুজুমরা (৪,১৩০), উত্তর মাদারিহাট (৯,৬৩১)।[5]
কালচিনি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের বড়ো গ্রামগুলি (৪,০০০+ জনসংখ্যাবিশিষ্ট) হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): ডিমডিমা চা বাগান (৭,৩৭৫), বীরপাড়া চা বাগান (৪২,০৮০), নাংদলা চা বাগান (৪,৯২৯), বান্দাপানি চা বাগান (৫,৩৯০), দালমোর চা বাগান (৮,৫৫১), গোপালপুর চা বাগান (৫,৩৭২), রামঝোরা চা বাগান (৪,৬১২), লঙ্কাপাড়া চা বাগান (১২,৪০১), মধ্য রঙ্গালিবাজার (৫,৪২৭), দুমচিপাড়া চা বাগান (৭,০৬২), হাঁটাপাড়া চা বাগান (৭,৩৩৬) ও গড়গন্ডা চা বাগান (৪,৬৩৩).[5]
এই ব্লকের অন্যান্য গ্রামগুলি হল (বন্ধনীতে ২০১১ সালের জনগণনার হিসেব): টোটোপাড়া (২,৯৬০) ও ঢেকলাপাড়া চা বাগান (২,৬৪৩)।[5]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সাক্ষর জনসংখ্যা ১২০,৩৯১ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী জনসংখ্যার ৬৭.৭৭ শতাংশ); এর মধ্যে পুরুষ সাক্ষরের সংখ্যা ৬৭,৭১৭ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী পুরুষ জনসংখ্যার ৭৫.৯২ শতাংশ) এবং সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৫২,৬৭৪ (অন্যূন ছয় বছর বয়সী মহিলা জনসংখ্যার ৫৯.৫৫ শতাংশ)। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের হার ছিল ১৬.৩৬ শতাংশ।[5]
ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি, ২০১১ সেন্সাস-এ প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সালে অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (২০১৪ সালে যে জেলা ভেঙে আলিপুরদুয়ার জেলা গঠিত হয়) মোট জনসংখ্যার ৫৫.৮ শতাংশের মাতৃভাষা ছিল বাংলা; এরপর ছিল সাদান/সাদরি (১৪.৩ শতাংশ), নেপালি/গোর্খালি (৬.৯ শতাংশ), হিন্দি (৪.৬ শতাংশ), কুরুখ/ওঁরাও (২.৬ শতাংশ), সাঁওতালি (১.০ শতাংশ), বোড়ো (০.৮ শতাংশ), মুন্ডারি (০.৭ শতাংশ), ভোজপুরি (০.৭ শতাংশ), রাজবংশী (০.৫ শতাংশ), তেলুগু (০.৪ শতাংশ), উর্দু (০.৩ শতাংশ), রাভা (০.৩ শতাংশ), ওডিয়া (০.৩ শতাংশ), খাড়িয়া (০.১ শতাংশ) ও অন্যান্য ভাষাভাষী মানুষ (১০.৮ শতাংশ)। এই জেলায় বাংলা-ভাষী মানুষের জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫৪.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৯৮১ সালে ৬৮.৫ শতাংশ হয়েছিল। ২০০১ সালে তা আবার কমে ৫৫.৮ শতাংশ হয়। অন্যদিকে সাদান/সাদরি-ভাষী জনসংখ্যার হার ১৯৬১ সালে ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০০১ সালে হয় ১৪.৩ শতাংশ। তবে নেপালি/গোর্খালি, হিন্দি, কুরুখ/ওঁরাও, সাঁওতালি, মুন্ডা ও রাজবংশী-ভাষী জনসংখ্যার হার হ্রাস পায়।[7]
পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা আইন, ১৯৬১ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (সংশোধনী) আইন, ২০১২ অনুয়ায়ী, সারা পশ্চিমবঙ্গেই সরকারি কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে দার্জিলিং জেলার পার্বত্য মহকুমাগুলিতে এবং কালিম্পং জেলায় নেপালিও সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া যে সকল জেলা/মহকুমা/সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক/পৌরসভায় উর্দুভাষীর সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি সেখানে উর্দুও সরকারি কাজে ব্যবহার করা হয়। এই আইনগুলি কার্যকর হওয়ার আগে ইংরেজি ভাষা সরকারি কাজে ব্যবহৃত হত; আইনগুলি পাসের পরও তার ব্যবহার অব্যাহত থাকে।[8][9][10][11]
২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল অনুযায়ী, কোনও নির্দিষ্ট ব্লক বা মহকুমা বা জেলায় জনসংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি অংশের ভাষা হিন্দি, সাঁওতালি, ওডিয়া বা পাঞ্জাবি হলে সংশ্লিষ্ট ভাষাটি সেই অঞ্চলে অতিরিক্ত সরকারি ভাষার মর্যাদা পাবে। এরপর ২০১৮ সালের পশ্চিমবঙ্গ সরকারি ভাষা (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিলে রাজ্যের সংখ্যালঘু ভাষার তালিকায় কামতাপুরী, রাজবংশী ও কুর্মালিকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[12][13]
২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের হিন্দুদের মোট সংখ্যা ১৪৬,৯২৪; যা মোট জনসংখ্যার ৭২.৭৩ শতাংশ। মুসলমানের সংখ্যা ২২,০৪৯ (১০.৯১ শতাংশ), খ্রিস্টানের সংখ্যা ১৫,৮১১ (৭.৮৩ শতাংশ), বৌদ্ধের সংখ্যা ১১,৩২২ (৫.৬০ শতাংশ) এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা ২১,৭৩১ (১০.৭৬ শতাংশ)।[14] অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আছে আদিবাসী, মারাং বোরো, সাঁওতাল, সারনাথ, সারি ধর্ম, সর্না, আলছি, বিদিন, সন্ত, সায়েভধর্ম, সেরান, সরন, সারিন, খেরিয়া,[15] ও অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়।[14]
১৯৯৯-২০০০ শালে এনএসএস ৫৫তম রাউন্ডের কেন্দ্রীয় নমুনা তথ্য ব্যবহার করে গ্রামীণ ও শহর এলাকায় মাথাপিছু ভোগের একটি পর্যালোচনায় জানা যায়, অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলায় দারিদ্র্যের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। গ্রামীণ এলাকায় ৩৫.৭৩ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৬১.৫৩ শতাংশ। এটি দেশের অল্প কয়েকটি জেলার অন্যতম যেখানে শহরাঞ্চলীয় দারিদ্র্যের হার গ্রামীণ দারিদ্র্যের হারের থেকে বেশি।[16]
বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী জলপাইগুড়ি, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৬-৩১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, যা পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রিক হারের তুলনায় কিছুটা বেশি। রাজ্যের মোট ২০ শতাংশ মানুষ এই সীমার নিচে বাস করেন।[17]
২০১১ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের সকল শ্রমিকদের মধ্যে ৭,১৭১ জন কৃষক (৮.৭৮ শতাংশ), ৯,১৭৪ জন খেতমজুর (১১.৮৯ শতাংশ), ১,৪০৬ জন কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত (১.৭২ শতাংশ) এবং ৬৩,৩৭৮ জন অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক (৭৭.৬০ শতাংশ)।[18] ব্লকে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ৮১,৬৬৯ (মোট জনসংখ্যার ৪০.৪২ শতাংশ) এবং অ-শ্রমিকের সংখ্যা ১২০,৩৫৭ (মোট জনসংখ্যার ৫৯.৫৮ শতাংশ)।[19]
টীকা: জনগণনার নথিতে সেই ব্যক্তিকেই কৃষক বিবেচনা করা হয়েছে, যিনি স্বীয়/সরকারি/প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানাধীন জমিতে কৃষিকাজ/তত্ত্বাবধানের কাজে নিযুক্ত। যে ব্যক্তি অন্যের জমিতে অর্থ বা সম্পদ বা অংশীদারিত্বের বিনিময়ে শ্রমদান করেন, তাঁকে খেতমজুর ধরা হয়। কুটিরশিল্প সেই শিল্পকেই বলা হয়, যাতে পরিবারে বা গ্রামের মধ্যে এক বা একাধিক সদস্য যুক্ত এবং যে শিল্প ১৯৪৮ সালের কারখানা আইন মোতাবেক কারখানা হিসেবে নথিভুক্ত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন নয়। অন্যান্য শ্রমিকেরা হলেন কৃষক, খেতমজুর বা কুটিরশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ভিন্ন অন্য উপায়ে যাঁরা অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত। এঁদের মধ্যে আছেন কারখানা, খনি, বন, পরিবহণ ও অফিসের কর্মচারী, যাঁরা ব্যবসা ও বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, শিক্ষক, বিনোদনশিল্পী প্রমুখ।[20]
২০১১ সালে প্রকাশিত ডিস্ট্রিক্ট সেন্সাস হ্যান্ডবুক, জলপাইগুড়ি-তে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৪৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রাম রয়েছে। ১০০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৪৭টি গ্রামে (৯৭.৯২ শতাংশ) পানীয় জলের সরবরাহ রয়েছে। ২১টি গ্রামে (৪৩.৫৭ শতাংশ) ডাকঘর রয়েছে। ৩৮টি গ্রামে (৭৯.১৭ শতাংশ) টেলিফোন সংযোগ (ল্যান্ডলাইন, পাবলিক কল অফিস ও মোবাইল ফোন সহ) রয়েছে। ১৩টি গ্রামে (২৭.০৮ শতাংশ) পাকা রাস্তা এবং ২৫টি গ্রামে (৫২.০৮ শতাংশ) পরিবহন সংযোগ (বাস, রেল ও নাব্য জলপথ) রয়েছে। ২টি গ্রামে (৪.১৭ শতাংশ) কৃষিঋণ সংস্থা ও ৭টি গ্রামে (১৪.৫৮ শতাংশ) ব্যাংক পরিষেবা সুলভ।[21]
অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার (অধুনা জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা) অর্থনীতি মূলত কৃষি ও বাগিচা-নির্ভর। এখানকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিজীবী। জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলা চা ও কাঠের জন্য সুপরিচিত। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ফসল হল ধান, পাট, তামাক, সরষে, আখ ও গম। এখানকার বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩,৪৪০ মিলিমিটার, যা কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার প্রায় দ্বিগুণ। এলাকাটি বন্যাপ্রবণ এবং নদীগুলি প্রায়ই গতি পরিবর্তন করে শস্য ও শস্যক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।[22]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ১৪টি সারের ডিপো, ১০টি বীজের দোকান ও ৪৫টি রেশন দোকান রয়েছে।[23]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৫,৬৬৩ হেক্টর জমি থেকে মোট ২৩,৫২৮ টন আমন ধান (প্রধান শীতকালীন ফসল); ২৬২ হেক্টর জমি থেকে ৫৫৫ টন বোরো ধান; ১,২৬৭ হেক্টর জমি থেকে ৩,০১৭ টন আউস ধান (গ্রীষ্মকালীন ফসল); ২২৯ হেক্টর জমি থেকে ৬৮২ টন গম; ৭১৮ হেক্টর জমি থেকে ১০,২২৪ টন পাট; ৮১৭ হেক্টর জমি থেকে ১,৮৪৩ টন ভুট্টা; এবং ১,১৫১ হেক্টর জমি থেকে ২৬,১৩০ টন আলু উৎপাদিত হয়। এছাড়াও এই ব্লকে মাসকলাই ও তৈলবীজও উৎপাদিত হয়।[23]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের মোট সেচিত জমির পরিমাণ ৩,৭৬০ হেক্টর, যার মধ্যে ২,১৫৮ হেক্টর জমির খালের জলে সেচিত, ৫২ হেক্টর জমি জলাধারের জলে সেচিত, ৮৪০ হেক্টর জমি নদী থেকে তোলা জলে সেচিত, ৮০ হেক্টর জমি গভীর নলকূপের জলে সেচিত, ৬৫৫ হেক্টর জমি অগভীর নলকূপের জলে এবং ৫৫ হেক্টর জমি খোলা কুয়োর জলে সেচিত হয়।[23]
ডুয়ার্স ও তরাই অঞ্চলের চা বাগানগুলিতে ২২৬ মিলিয়ন কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়, যা ভারতের সমগ্র চা উৎপাদনের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। ডুয়ার্স-তরাই চায়ের বৈশিষ্ট্য হল, এটি একটি উজ্জ্বল, মসৃণ ও সুঠাম পানীয়, যা আসাম চায়ের তুলনায় অতি অল্পই হালকা। ডুয়ার্স অঞ্চলে চা চাষ প্রাথমিকভাবে শুরু করেছিল এবং তার উন্নতিসাধন ঘটিয়েছিল ব্রিটিশরা, কিন্তু এতে ভারতীয় শিল্পপতিদেরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।[24][25]
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৫টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এবং ৪টি গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যালয় রয়েছে।[23]
পুরুলিয়া জেলা অনুন্নত অঞ্চল হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় এই জাতীয় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার কর্তৃক গঠিত অনুন্নত অঞ্চল অনুদান তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য লাভ করে। ২০১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, সারা দেশের ২৭২টি জেলা এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত; যার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ১১টি জেলা রয়েছে।[26][27]
নিউ জলপাইগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-শামুকতলা রোড রেলপথ | ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
Source:Google maps, Indian Railway – East Zone Time Table, |
মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে ৭টি প্রান্তিক বাস রুট অবস্থিত।[23] ৩১ নং জাতীয় সড়ক এই ব্লকের উপর দিয়ে গিয়েছে।
২০১৩-১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১২,৩৩১ জন শিক্ষার্থী, ৫টি মধ্য বিদ্যালয়ে ১,০৩১ জন শিক্ষার্থী, ৫টি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫,৭৯০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৪টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১৮,৩৯৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এই ব্লকের ২টি প্রকৌশল/পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২২৯ জন শিক্ষার্থী এবং বিশেষ ও অচিরাচরিত ধারার ৬৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬,৭৫২ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। ব্লকের একটি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ২,৬৮৩ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে।[23]
২০১১ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের ৪৮টি জনবসতিপূর্ণ গ্রামের মধ্যে সকল গ্রামেই বিদ্যালয় রয়েছে, ৩৪টি গ্রামে দুই বা ততোধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে, ৩১টি গ্রামে অন্তত একটি প্রাথমিক ও একটি মধ্য বিদ্যালয় আছে এবং ১৩টি গ্রামে অন্তত একটি মধ্য ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।[28]
১৯৮৬ সালে বীরপাড়ায় বীরপাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এই কলেজে কলা ও বাণিজ্য বিভাগে পঠনপাঠন চলে।[29]
২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী, মাদারিহাট-বীরপাড়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে একটি হাসপাতাল, একটি গ্রামীণ হাসপাতাল, ৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ৩টি এনজিও-পরিচালিত/বেসরকারি নার্সিং হোম আছে। এগুলিতে মোট ১৯৮টি শয্যা ও ২৭ জন চিকিৎসক সুলভ (বেসরকারি সহ)। এছাড়া এই ব্লকে ৩৭টি পরিবার কল্যাণ উপকেন্দ্রও আছে। ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলিতে ৩৪,৭৪৯ জন রোগী অন্তর্বিভাগে ও ২৭২,৯০৬ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসার সুযোগ পান।[23]
মাদারিহাটে অবস্থিত ৩০টি শয্যাবিশিষ্ট মাদারিহাট গ্রামীণ হাসপাতাল এই সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের প্রধান সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে ছোটো মধ্য রঙ্গালিবাজার (ডাকঘর গোপালবাগান) (১০টি শয্যাবিশিষ্ট), শিশুজুমরা (ডাকঘর শিশুবাড়িহাট) (৬টি শয্যাবিশিষ্ট) ও টোটোপাড়ায় (১০টি শয্যাবিশিষ্ট)।[30][31]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.