ভূপেন হাজারিকা (অসমীয়া: ভূপেন হাজৰিকা; ৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬ - ৫ নভেম্বর ২০১১) ছিলেন একজন স্বনামধন্য কন্ঠ শিল্পী ও ভারতীয় সঙ্গীত জগতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এবং বিশ্বশিল্পী। এই কিংবদন্তিতুল্য কণ্ঠশিল্পীর জন্ম ভারতের আসামে। অত্যন্ত দরাজ গলার অধিকারী এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। অসমীয়া চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে গানের জগতে প্রবেশ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় গান গেয়ে ভারত এবং বাংলাদেশে অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। অল্প সময়ের জন্যে তিনি বিজেপি বা ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে বিবিসি বাংলার শ্রোতা জরিপে তার "মানুষ মানুষের জন্যে" গানটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কুড়িটি বাংলা গানের তালিকায় দ্বিতীয় লাভ করে।[2]
ড. ভূপেন হাজারিকা | |
---|---|
জন্ম | শদিয়া, আসাম, ব্রিটিশ ভারত | ৮ সেপ্টেম্বর ১৯২৬
মৃত্যু | ৫ নভেম্বর ২০১১ ৮৫) | (বয়স
মৃত্যুর কারণ | কিডনী বৈকল্য |
পেশা | গায়ক, সঙ্গীতজ্ঞ, কবি, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সুরকার |
পুরস্কার | ভারতরত্ন (২০১৯) (মরণোত্তর) পদ্মবিভূষণ (২০১২) (মরণোত্তর) মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা (২০১১) অসম রত্ন (২০০৯) সঙ্গীত নাটক একাডেমি ফেলোশিপ (২০০৮) পদ্মভূষণ (২০০১) দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২) পদ্মশ্রী (১৯৭৭) |
ওয়েবসাইট | http://bhupenhazarika.com/bio/index.php |
স্বাক্ষর | |
জীবনী
আসামের সদিয়ায় ভূপেন হাজারিকার জন্ম। তার পিতার নাম নীলকান্ত হাজারিকা, মায়ের নাম শান্তিপ্রিয়া হাজারিকা। পিতা-মাতার দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সকলের বড়। তার অন্য ভাই-বোনেরা হলেন - অমর হাজারিকা, প্রবীণ হাজারিকা, সুদক্ষিণা শর্ম্মা, নৃপেন হাজারিকা, বলেন হাজারিকা, কবিতা বড়ুয়া, স্তুতি প্যাটেল, জয়ন্ত হাজারিকা ও সমর হাজারিকা।
ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ভূপেন হাজারিকা কানাডায় বসবাসরত প্রিয়ম্বদা প্যাটেলকে বিয়ে করেন। একমাত্র সন্তান তেজ হাজারিকা[3] নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন।
শিক্ষাগ্রহণ
তিনি ১৯৪২ সালে গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট আর্টস, কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৪ সালে বি.এ. এবং ১৯৪৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ. পাস করেন। ১৯৫২ সালে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল "প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষায় শ্রবণ-দর্শন পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারতের মৌলিক শিক্ষাপদ্ধতি প্রস্তুতি-সংক্রান্ত প্রস্তাব"।
কর্মজীবন
ড. ভূপেন হাজারিকা তার ব্যারিটোন কণ্ঠস্বর ও কোমল ভঙ্গির জন্য বিখ্যাত ছিলেন।[4] তার রচিত গানগুলি ছিল কাব্যময়। গানের উপমাগুলো তিনি প্রণয়-সংক্রান্ত, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিষয় থেকে তুলে আনতেন। তিনি আধুনিকতার ছোঁয়া দিয়ে লোকসঙ্গীত গাইতেন।
তিনি মাত্র ১০ বছর বয়স থেকেই গান লিখে সুর দিতে থাকেন।[5] আসামের চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের সূচনা হয় এক শিশুশিল্পী হিসেবে। ১৯৩৯ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি অসমীয়া ভাষায় নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জ্যোতিপ্রসাদ আগরওয়ালা পরিচালিত ইন্দুমালতী ছবিতে "বিশ্ববিজয় নওজোয়ান" শিরোনামের একটি গান গেয়েছিলেন। পরে তিনি অসমীয়া চলচ্চিত্রের একজন নামজাদা পরিচালক হয়ে ওঠেন। বাংলাদেশ, আসাম ও তার প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গে তার জনপ্রিয়তা ছিল ব্যাপক ও বিশাল। অসমীয়া ভাষা ছাড়াও বাংলা ও হিন্দি ভাষাতেও তিনি সমান পারদর্শী ছিলেন এবং অনেক গান গেয়েছেন। অবশ্য এসব গানের অনেকগুলোই মূল অসমীয়া থেকে বাংলায় অনূদিত।
বাংলা গান
ভূপেন হাজারিকার গানগুলোতে মানবপ্রেম, প্রকৃতি, ভারতীয় সমাজবাদের, জীবন-ধর্মীয় বক্তব্য বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। এছাড়াও, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ প্রতিবাদী সুরও উচ্চারিত হয়েছে বহুবার।
|
|
চলচ্চিত্র জগতে
বছর | চলচ্চিত্র | অংশগ্রহণের মাধ্যম | |||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী | সুরকার | পরিচালক | প্রযোজক | চিত্রনাট্যকার | অভিনেতা | ||
১৯৩৯ | ইন্দ্ৰমালতী (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৪৮ | সিরাজ (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৫৫ | পিওলি ফুকন (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৫৬ | এরা বাটর সুর (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৫৮ | মাহুত বন্ধু রে (বাংলা ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৬১ | শকুন্তলা (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৬৪ | প্রতিধ্বনি (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৬৪ | কা স্বরিতি | হ্যাঁ | |||||
১৯৬৬ | লটিঘটি (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৬৯ | চিকমিক বিজুলি (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৭৩ | তিতাস একটি নদীর নাম | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৩ | আরোপ (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৪ | ফর হুম দ্য সান শাইনস (ডকুমেণ্টরী ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৫ | চামেলি মেমসাহেব (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৭৬ | রুপ কোঁঅর জ্যোতিপ্রসাদ আরু জয়মতী (ডকুমেণ্টরী ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৬ | মেরা ধরম মেরি মা | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | |||
১৯৭৭ | থ্রু মেলডি অ্যান্ড রিদম (ডকুমেণ্টরী ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৭ | সীমানা পেরিয়ে | হ্যাঁ | |||||
১৯৭৯ | মন-প্রজাপতি (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৭৯ | দেবদাস | হ্যাঁ | |||||
১৯৮২ | অপরূপা (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৮৬ | স্বীকারোক্তি | হ্যাঁ | |||||
১৯৮৬ | এক পল (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||
১৯৮৮ | সিরাজ (অসমীয়া ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৯৩ | রুদালী (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৯৩ | প্রতিমূর্তি | হ্যাঁ | |||||
১৯৯৭ | দো রাহেঁ (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
১৯৯৭ | দর্মিয়াঁ: ইন বিটুইন (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
১৯৯৮ | সাজ (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
২০০০ | গজগামিনী | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
২০০১ | দমন: আ ভিক্টিম অফ মেট্রিয়াল ভায়োলেন্স (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ | ||||
২০০৩ | কিউঁ? (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | |||||
২০০৬ | চিঙ্গারি (হিন্দী ফিচার ফিল্ম) | হ্যাঁ | হ্যাঁ |
পুরস্কার
- ২৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ আঞ্চলিক চলচ্চিত্র 'চামেলী মেমসাহেব' ছবির সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি।[6] (১৯৭৫)
- পদ্মশ্ৰী (১৯৭৭)
- 'শ্রেষ্ঠ লোকসঙ্গীত শিল্পী' হিসেবে 'অল ইন্ডিয়া ক্রিটিক অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার' (১৯৭৯)
- অসম সরকারের শঙ্করদেব পুরস্কার (১৯৮৭)
- দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৯২)
- জাপানে এশিয়া প্যাসিফিক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে রুদালী ছবির শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের পুরস্কার অর্জন। তিনিই প্রথম ভারতীয় হিসেবে এই পুরস্কার পান। (১৯৯৩)
- পদ্মভূষণ (২০০১)
- অসম রত্ন (২০০৯)
- সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার (২০০৯)
- ভারতরত্ন (২০১৯)
স্বীকৃতি
- ১৯৯৩ সালে ড. ভূপেন হাজারিকা অসম সাহিত্য সভার সভাপতি হন।
- ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সালে অল আসাম স্টুডেন্টস্ ইউনিয়নের উদ্যোগে গুয়াহাটির দীঘলিপুখুরী (ঐতিহাসিক দীঘি) জিএসবি রোডে একটি স্মারক ভাস্কর্য তৈরী করে। আসামের ভাস্কর্যশিল্পী বিরেন সিংহ ফাইবার গ্লাস ও অন্যান্য পদার্থ সহযোগে চমকপ্রদ 'ড. ভুপেন হাজারিকা ভাস্কর্য' তৈরী করেন।[7]
- প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীর ৯৬তম জন্মদিনে ২০২২ খ্রিস্টাব্দের ৮ সেপ্টেম্বর গুগল এক ডুডল এর মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানায়।[8]
মৃত্যু
ড. ভূপেন হাজারিকাকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় মুম্বইয়ের কোকিলাবেন ধীরুভাই আম্বানী হাসপাতাল ও চিকিৎসা গবেষণা ইন্সটিটিউটের আইসিইউতে ৩০ জুন, ২০১১ সালে ভর্তি করা হয়। অতঃপর তিনি কিডনী বৈকল্যসহ বার্ধক্যজনিত সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ৫ নভেম্বর, ২০১১ সালে স্থানীয় সময় (আইএসটি) বিকাল ৪:৩৭ ঘটিকায় ধরাধাম ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে এই গুণী শিল্পীর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।[9][10]
চিত্রশালা
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.