দ্বিতীয় ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৬৫ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘটিত হয়।
দ্বিতীয় ভারত–পাকিস্তান যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: ভারত–পাকিস্তান সংঘর্ষ | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
ভারত | পাকিস্তান | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ লাল বাহাদুর শাস্ত্রী জয়ন্ত নাথ চৌধুরী হরবখশ সিং গুরবখশ সিং অর্জন সিংহ |
আইয়ুব খান মুহাম্মদ মুসা খান বখতিয়ার রানা টিক্কা খান আখতার হুসেইন মালিক ইফতেখার খান জানজুয়া আব্দুল আলী মালিক মালিক নূর খান সৈয়দ মুহম্মদ আহসান এস. এম. আনোয়ার | ||||||
শক্তি | |||||||
৭,০০,০০০-৯,০০,০০০ পদাতিক সৈন্য[২] ১৭২০টি ট্যাঙ্ক[২] ৬২৮টি আর্টিলার পিস[৩] ৭৯০টি যুদ্ধবিমান |
২,৬০,০০০ পদাতিক সৈন্য[২] ৭৫৬টি ট্যাঙ্ক[৩] ৫৫২টি আর্টিলারি পিস[৩] ১৩৮টি যুদ্ধবিমান | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
৮০০[৪][৫]–১,১১২[৬] সৈন্য নিহত ১,৬৩৮ সৈন্য আহত[৬] ৫০[৭]–৪৯[৪] টি ট্যাঙ্ক ধ্বংসপ্রাপ্ত ৮৫–১২০[৪] টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত |
৭৫০০,[৪] সৈন্য নিহত ১০,১০০[৬] সৈন্য আহত ৮০০[৪]–৯০০[৮] টি ট্যাঙ্ক ধ্বংসপ্রাপ্ত ২০[৪] টি যুদ্ধবিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত |
যুদ্ধ-পূর্ব সংঘাত
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হওয়ার পর থেকেই বেশ কয়েকটি বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরোধ বিদ্যমান ছিল। কাশ্মীর সমস্যা দেশ দু'টির মধ্যে বিরাজমান প্রধান সমস্যা হলেও অন্যান্য বিষয়েও দেশ দু'টির মধ্যে বিরোধ ছিল। বিশেষত ভারতের গুজরাত রাজ্যের কচ্ছ মরু অঞ্চলের কর্তৃত্ব নিয়ে দেশ দু'টির মধ্যে বিরোধ ছিল। ১৯৫৬ সালে দ্বন্দ্বটির সূচনা হয় এবং পরিশেষে ভারত অঞ্চলটির কর্তৃত্ব লাভ করে[৯]। ১৯৬৫ সালের জানুয়ারিতে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীরা ভারত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে প্রহরা দিতে আরম্ভ করে। ১৯৬৫ সালের ৮ এপ্রিল উভয় দেশই কচ্ছ অঞ্চলে একে অপরের সীমান্ত চৌকির ওপর আক্রমণ চালায়[৯][১০]। প্রথমে কেবল উভয় দেশের সীমান্ত পুলিশরা এই সংঘর্ষে জড়িত হলেও শীঘ্রই উভয় দেশের সশস্ত্রবাহিনীও জড়িত হয়ে পড়ে। ১৯৬৫ সালের জুনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন দেশ দু'টিকে সংঘর্ষ বন্ধ করতে রাজি করান এবং বিরোধটির নিষ্পত্তি করার জন্য একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। ১৯৬৮ সালে ট্রাইব্যুনালটির রায় প্রকাশিত হয় এবং পাকিস্তান কচ্ছ অঞ্চলে দাবিকৃত ৩,৫০০ বর্গ কি.মি. ভূমির মধ্যে ৩৫০ বর্গ কি.মি. ভূমি লাভ করে[১১]।
কচ্ছ অঞ্চলে সাফল্যের পর এবং ১৯৬২ সালে চীনের নিকট ভারতের পরাজয়ের পরিপ্রেক্ষিতে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান ধারণা করে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী কাশ্মীরের বিরোধপূর্ণ অঞ্চলে পাকিস্তানের একটি দ্রুতগতির আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না[১]। পাকিস্তানের ধারণা ছিল যে কাশ্মীরের জনসাধারণ ভারতীয় শাসনের প্রতি অসন্তুষ্ট এবং কিছু অনুপ্রবেশকারী সেখানে একটি প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। এজন্য অপারেশন জিব্রাল্টার পরিচালনার মাধ্যমে পাকিস্তান গোপনে কাশ্মীরে কিছুসংখ্যক অনুপ্রবেশকারী প্রেরণ করে[১২]। কিন্তু স্থানীয় কাশ্মীরিরা এ ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিলে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীরা শীঘ্রই ধরা পড়ে যায়[১৩] এবং অভিযানটি ব্যর্থ হয়।
যুদ্ধ
১৯৬৫ সালের ৫ আগস্ট ২৬,০০০ থেকে ৩৩,০০০ পাকিস্তানি সৈন্য স্থানীয় কাশ্মীরিদের ছদ্মবেশে লাইন অফ কন্ট্রোল অতিক্রম করে এবং কাশ্মীরের বিভিন্ন অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করে। স্থানীয় জনসাধারণ এ বিষয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দিলে ১৫ আগস্ট ভারতীয় সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করে[১]।
যুদ্ধের প্রথমদিকে ভারতীয় সৈন্যবাহিনী বিশেষ সাফল্য অর্জন করে এবং গোলন্দাজ বাহিনীগুলোর মধ্যে একটি প্রলম্বিত যুদ্ধের পর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পার্বত্য অবস্থান দখল করে। তবে আগস্টের শেষদিকে উভয়পক্ষই তুলনামূলক সাফল্য লাভ করে; পাকিস্তানি সৈন্যরা তিথওয়াল, উরি ও পুন্চ সেক্টরে অগ্রসর হয়, অন্যদিকে ভারতীয় সৈন্যরা পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৮ কি.মি. অভ্যন্তরে হাজী পীর গিরিপথ দখল করে নেয়[১৪]।
১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে তাদের রসদ সরবরাহের পথ রুদ্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের গুরুত্বপূর্ণ আখনুর শহর দখলের সিদ্ধান্ত নেয় এবং এজন্য অপারেশন গ্র্যান্ড স্লাম নামে একটি প্রতি-আক্রমণ পরিচালনা করে। আইয়ুব খান ধারণা করেছিলেন যে, "সঠিক সময় ও স্থানে কয়েকটি জোর আঘাত করা হলে ভারতের মনোবল টিকবে না"[১৫][১৬][১৭], যদিও ততক্ষণে অপারেশন জিব্রাল্টার ব্যর্থ হয়েছে এবং ভারত হাজী পীর গিরিপথ দখল করে নিয়েছে[১৫][১৮]। ১৯৬৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাত ৩:৩০ মিনিটে সমগ্র চম্ব অঞ্চলের ওপর পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ব্যাপক হারে গোলাবর্ষণ আরম্ভ করে। পাকিস্তান পরিচালিত এই অভিযানে ভারতীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ হতভম্ব হয়ে পড়ে[১৯]। প্রচুর সৈন্য ও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ট্যাঙ্কবহর ব্যবহার করে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী অগ্রসর হয় এবং হতচকিত ও অপ্রস্তুত ভারতীয় সৈন্যরা বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সস্মুখীন হয়। পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ভারতীয় সরকার ভারতীয় বিমানবাহিনীকে নিযুক্ত করে। পরবর্তী দিন পাকিস্তান বিমানবাহিনী কাশ্মীর ও পাঞ্জাবে ভারতীয় বিমানঘাঁটিগুলোর ওপর আক্রমণ চালায়। কিন্তু ইতোমধ্যে ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের পাঞ্জাব আক্রমণের ফলে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী পাঞ্জাবের প্রতিরক্ষার জন্য সৈন্য স্থানান্তর করতে বাধ্য হয় এবং ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান আখনুর দখলে ব্যর্থ হলে অপারেশন গ্র্যান্ড স্লাম ব্যর্থ হয়। ভারতীয় সরকার কর্তৃক কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর ওপর চাপ কমানোর জন্য আরো দক্ষিণে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। কাশ্মীর উপত্যকার আরেকটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল কারগিল। কারগিল ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী কারগিলের নিকটস্থ উচ্চভূমি এবং শ্রীনগর-লেহ সড়ক দখল করে নেয়। তবে আগস্টের শেষদিকে ভারতীয় সৈন্যরা এ অঞ্চল থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে বিতাড়িত করতে সমর্থ হয়[২০]।
৬ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সৈন্যবাহিনী পশ্চিম সীমান্তে রেডক্লিফ লাইন অতিক্রম করে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের সূচনা করে[২১]। ৬ সেপ্টেম্বরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৫তম পদাতিক ডিভিশন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মেজর জেনারেল প্রসাদের নেতৃত্বর ইসোগিল খালের পশ্চিম পাড়ে একটি বৃহৎ পাকিস্তানি প্রতি-আক্রমণকারী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ভারতীয় জেনারেলের নিজ কলামটিই আক্রান্ত হয় এবং তিনি তাঁর বাহন ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। অবশ্য লাহোরের পূর্বে বার্কি গ্রামের সেতু দিয়ে খালটি অতিক্রম করার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা সফল হয়। এর ফলে ভারতীয় সৈন্যরা লাহোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সন্নিকটে পৌঁছে যায়। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র লাহোরে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের স্থানান্তর করার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানায়। কিন্তু অন্যদিকে, পাকিস্তানি প্রতি-আক্রমণে খেমকারান অঞ্চলে ভারতীয় সৈন্যরা পরাজিত হয় এবং খেমকারান পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনীর কর্তৃত্বে আসে।
ট্যাঙ্কযুদ্ধ
নিরপেক্ষ মূল্যায়ন
যুদ্ধবিরতি
গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের ব্যর্থতা
অন্যান্য দেশের ভূমিকা
এই ক্ষেত্রে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষ অবলম্বন করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন পাকিস্থানের পক্ষ অবলম্বন করে। ফ্রান্স ও ইসরাইল ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করে এবং সৌদি আরব ও আরব আমিরাত পাকিস্থানকে সমর্থন করেন।
শরণার্থী সমস্যা
ফলাফল
অমীমাংসিত
আরও দেখুন
তথ্যসূত্র
বহিঃসংযোগ
Wikiwand in your browser!
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.