Remove ads
ভারতবর্ষের বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
ভারতের পরিবহন ব্যবস্থা স্থল, জল ও বিমান পরিবহন দ্বারা গঠিত। এটি দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বেশিরভাগ ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে সড়ক পরিবহনের প্রধান মাধ্যম এবং এটি বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ভারতের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ২০১৫ সালে এটি ৮২২.৫ কোটি যাত্রী এবং ৯.৮ কোটি টন (২২,০০০ কোটি পাউন্ড) মাল পরিবহন করেছিল।[১] ভারতের রেল পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় ব্যস্ততম এবং ২০২০ সালে এটি ৮০৯ কোটি যাত্রী এবং ১২০ কোটি টন (২,৬০,০০০ কোটি পাউন্ড) মাল পরিবহন করেছিল।[২] ভারতের বিমান পরিবহন সামরিক ও অসামরিক বিমান পরিবহনে বিভক্ত এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার উপাত্ত অনুযায়ী ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বিকশিত বিমান পরিবহনের বাজার।[৩]
মেয়াদোত্তীর্ণ তথ্যের কারণে এই নিবন্ধটির তথ্যগত সঠিকতা সম্ভবত মানসম্মত নয়।। (মে ২০২৩) |
১৯৯০-এর দশকের অর্থনৈতিক উদারীকরণের সময় থেকেই দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পায়। আজকের ভারতে জল, স্থল এবং আকাশপথে নানা প্রকার পরিবহন ব্যবস্থার উপস্থিতি চোখে পড়ে। যদিও দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) হার কম হওয়ায় সর্বস্তরে এই সকল পরিবহন ব্যবস্থাগুলি সহজলভ্য হয়ে উঠতে পারেনি। দেশের মাত্র দশ শতাংশ পরিবারের (প্রায় ১০২,৮৭৩,৭৪৪ জন) নিজস্ব মোটরসাইকেল রয়েছে।[৪] ধনী পরিবারগুলির নিজস্ব মোটরগাড়ি রয়েছে – এঁদের হার ২০০৭ সালের হিসেব অনুযায়ী ০.৭ শতাংশ (প্রায় ৭,২০১,১৬৩ জন)।[৫] গণপরিবহন ব্যবস্থা আজও দেশের অধিকাংশ জনসাধারণের কাছে পরিবহনের একমাত্র উপায়; এবং ভারতের গণপরিবহন ব্যবস্থাটিও বিশ্বের সর্বাধিক ব্যবহৃত পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম।[১]
উন্নয়ন সত্ত্বেও অচল পরিকাঠামো ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা একাধিক পরিবহন ব্যবস্থাকে সমস্যাকীর্ণ করে রেখেছে। অন্যদিকে পরিবহন পরিকাঠামো ও পরিষেবার দাবিও প্রতি বছর দশ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।[১] রাজ্যসীমান্তে শুল্ক ও উৎকোচ প্রদান অতি সাধারণ ঘটনা। ট্র্যান্সপেয়ারেন্সি ইন্টারন্যাশানালের অনুমান, ট্রাকচালকরা প্রতি বছর পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ উৎকোচ দিয়ে থাকেন।[৬][৭] ভারত বিশ্বের মোট যানবাহনের মাত্র ১ শতাংশের মালিক হলেও এই দেশে যানবাহন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সারা বিশ্বের ৮ শতাংশ।[৮][৯] ভারতের মহানগরগুলি অত্যন্ত ঘনজনবহুল – অনেক বড়ো শহরেই বাসের গড় বেগ ৬-১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। ভারতীয় রাস্তায় যানজটের কারণে যানবাহনের জ্বালানি সাশ্রয়ের হারও খুব কম। এই রকম কম বেগে জ্বালানি অপচয় করে ইঞ্জিন চালানোর জন্য একদিকে যেমন দেশে জ্বালানি ভোগের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বেড়ে চলেছে পরিবেশ দূষণও।[১০] ভারতের রেল পরিবহন ব্যবস্থাটি বিশ্বে দীর্ঘতম তথা চতুর্থ অতিব্যবহৃত পরিবহন ব্যবস্থা।[১] দেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসারের ফলে চাপ বাড়ছে বন্দরগুলির উপরও।[১১] দেশের বিমানবন্দরগুলির উপর যাত্রী পরিবহনের চাপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এগুলির সামগ্রিক আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে বৈমানিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের হারও।[১২] সাধারণভাবে গণপরিবহন ব্যবস্থার মূল সমস্যাগুলি হল অচল প্রযুক্তির ব্যবহার, অদক্ষ ব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অতিরিক্ত কর্মচারী, শ্রম উৎপাদনশীলতার নিম্নহার।[১০] গোল্ডম্যান স্যাকসের একটি সাম্প্রতিক অনুমান অনুসারে আগামী এক দশকের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে ভারতকে ১.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে – এর মধ্যে ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে একাদশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়।[১৩]
প্রাচীনকালে মানুষ পায়ে হেঁটেই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতেন। উদাহরণস্বরূপ, আদি শঙ্করাচার্য পদব্রজে সমগ্র ভারত পর্যটন করেছিলেন।[১৪] শহরাঞ্চলে হণ্টন আজও পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।[১৫] মুম্বই শহরে পথচারীদের হাঁটার বিশেষ সুবিধা দানের জন্য মুম্বই মহানগর অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ মুম্বই স্কাইওয়াক প্রকল্পের অধীনে পঞ্চাশটিরও বেশি স্কাইওয়াক নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।[১৬][১৭]
অতীতে পালকি ছিল ধনী ও সম্ভ্রান্তবংশীয়দের যাতায়াতের একটি বিলাসবহুল উপায়। সুদূর অতীতে পালকি মন্দিরের দেবতার মূর্তি বহনের কাজে ব্যবহৃত হত। অনেক মন্দিরের ভাস্কর্যে পালকিতে করে মূর্তি বহনের চিত্র খোদিত আছে। ভারতের রেলপথ প্রবর্তনের পূর্বে ইউরোপীয় উচ্চবিত্ত সমাজের সম্ভ্রান্তবংশীয় ও মহিলারা পালকি ব্যবহার করতেন।[১৮] বর্তমানে পালকির ব্যবহার সীমিত। কোনো ভারতীয় বিবাহে বধূকে সুসজ্জিত পালকিতে করে বিবাহ মণ্ডপে নিয়ে আসার প্রথা বিদ্যমান রয়েছে।[১৯]
গোরুর গাড়ি মূলত গ্রামীণ ভারতের একটি ঐতিহ্যশালী যান। ব্রিটিশ রাজের প্রথম যুগে ভারতে ঘোড়ার গাড়ির ব্যাপক উন্নতি ঘটে। যদিও যান হিসেবে এই গাড়ির ব্যবহার আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। বর্তমানে কোনো কোনো ছোটো শহরে টাঙ্গা বা বাগি নামে পরিচিত ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে। মুম্বই শহরে নিছক পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে ভিক্টোরিয়া চালানো হয়ে থাকে। তবে আজকের ভারতে ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার অতি নগন্য।[২০] সাম্প্রতিককালে, কোনো কোনো শহরে গোরুর গাড়ি ও অন্যান্য শ্লথগতির যানবাহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।[২১][২২][২৩]
বাইসাইকেল সমগ্র ভারতেই একটি জনপ্রিয় যান। দেশে এখন অধিকতর সংখ্যায় মানুষ নিজস্ব সাইকেলের মালিক। ২০০৫ সালের হিসেব অনুসারে, ভারতের ৪০ শতাংশ পরিবারে নিজস্ব সাইকেল রয়েছে; রাজ্যস্তরে এই হার ৩০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যবর্তী।[৪] নগরাঞ্চলের সাধারণ ক্ষেত্রে হাঁটা ও সাইকেল ভ্রমণের মাধ্যমে যাত্রীপরিবহনের হার ৫০ থেকে ৭৫ শতাংশ।[১৫]
আজও ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইকেল উৎপাদক।[২৪] তবে দেশের জনগণের একাংশের মনে সাইকেল সংক্রান্ত হীন মনোবৃত্তিও লক্ষিত হয়। এই মনোবৃত্তির অন্যতম কারণ নিজস্ব মোটরযান সংক্রান্ত “স্ট্যাটাস সিম্বলের” প্রশ্ন।[২৪] ভারতে "বাইক" শব্দটি সাধারণত মোটরবাইক ও "সাইকেল" শব্দটি বাইসাইকেলের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এই নিবন্ধটি ইংরেজি থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। |
১৯২০-এর দশকে পূর্ব এশিয়ার আদলে ভারতেও সাইকেল রিকশা প্রবর্তিত হয়।[২৭] এগুলি আকারে ট্রাইসাইকেলের তুলনায় বড়ো। পিছনে উত্তোলিত সিটে দুজন আরোহীর বসার জায়গা থাকে এবং সামনের প্যাডেলে একজন বসে রিকশা টানে। ২০০০-এর দশকে কোনো কোনো শহরে যানজট সৃষ্টির জন্য সাইকেল রিকশা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়।.[২৮][২৯][৩০] যদিও দূষণহীন যান হিসেবে সাইকেল রিকশা রেখে দেওয়ার পক্ষেই মত প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।[২৭][৩১]
২০২১ সালের হিসেব অনুসারে, ভারতে সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৬৩,৭১,৮৪৭ কিলোমিটার (৩৯,৫৯,২৮২ মা)।[৩২][৩৩] ভারতে জাতীয় সড়কের নেটওয়ার্ক দেশের সকল রাজ্য-রাজধানী ও প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করেছে। এই নেটওয়ার্ক দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ডস্বরূপ। ২০২১ সালের হিসেব অনুসারে, ভারতে জাতীয় সড়কের মোট দৈর্ঘ্য ১,৪০,৯৯৫ কিলোমিটার (৮৭,৬১০ মা)।[৩২]
ভারতীয় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের মতে, ৬৬% পণ্য পরিবহন ও ৮২% যাত্রী পরিবহন সড়কপথেই সম্পন্ন হয়। ভারতের সড়ক নেটওয়ার্কের মাত্র দুই শতাংশ জাতীয় সড়ক হলেও এই সড়কপথে দেশের ৪০ শতাংশ সড়ক ট্র্যাফিক পরিবাহিত হয়। [৩৪] অন্যদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে বার্ষিক যান বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১০.১৬ শতাংশ।[৩৪]
দেশের জাতীয় সড়কগুলির সবকটিই পাকা রাস্তা। তবে অল্প সড়ক কংক্রিট-নির্মিত। এগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হল মুম্বই-পুনে এক্সপ্রেসওয়ে। সাম্প্রতিককালে, একটি দেশব্যাপী বহু-লেনযুক্ত সড়ক ব্যবস্থা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ভারতে। এই ব্যবস্থায় স্বর্ণ চতুর্ভূজ এবং উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম করিডোর দুটি ভারতের প্রধান প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করছে। ২০০০ সালের হিসেব অনুযায়ী, ভারতের ৪০ শতাংশ গ্রামে সকল ঋতুতে চলাচলের উপযোগী সড়ক নেই। বর্ষাকালে তাই এই গ্রামগুলি সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।[১][৩৫] গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে, ভারত সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ২০০০ সালে চালু হওয়া এই প্রকল্পের লক্ষ্য ৫০০ জন বা ততোধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট (পার্বত্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে ২৫০ জন বা ততোধিক) গ্রামাঞ্চলে সকল ঋতুতে ব্যবহারোপযোগী সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা।[৩৫][৩৬]
বাস ভারতের পরিবহন ক্ষেত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বা যে সব প্রত্যন্ত অঞ্চলে রেল বা বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি, সেই সব অঞ্চলে বাসই প্রধান পরিবহন মাধ্যম। এই সামাজিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে মূলত সরকারি সংস্থাগুলিই গণ বাস পরিবহন ব্যবস্থার মালিকানা ও পরিচালনভার নিয়ন্ত্রণ করে। অধিকাংশ রাজ্য সরকারই কোনো না কোনো রাষ্ট্রীয় সড়ক পরিবহন সংস্থার ছত্রতলে বাস চালায়।.[৩৭] এই সংস্থাগুলি প্রধানত ১৯৬০ ও ১৯৭০-এর দশকে স্থাপিত হয়েছিল। দেশব্যাপী গ্রাম ও শহরগুলির মধ্যে সংযোগস্থাপনের ক্ষেত্রে এই সংস্থাগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।[৩৮]
ভারতীয় শহরগুলিতে গণপরিবহন ব্যবস্থার প্রায় ৯০ শতাংশই বাস পরিষেবার অন্তর্গত।[১০] এই পরিষেবা সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছেই একটি সুলভ এবং উপযোগী পরিষেবা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস পরিষেবার দায়িত্বে থাকেন সরকারি মালিকানাধীন রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থাগুলি। অধিকাংশ যাত্রীবাহী বাসেই স্ট্যান্ডার্ড ট্রাক ইঞ্জিন এবং কাঠামো ব্যবহার করা হয়। এগুলি শহরে ব্যবহারের ক্ষেত্রে লাভজনক নয়। বাস্তবে ভারতে বাসগুলিকে নির্দিষ্টভাবে শহরের ব্যবহারোপযোগী করে উৎপাদন করা হয় না। ফলে শহরের গণ পরিবহন পরিষেবায় ব্যবহৃত বাসগুলিতে ভিড়ের চাপ থাকে অত্যধিক, পরিষেবাও নানাভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।[৩৮] যদিও অর্থনৈতিক উদারীকরণের পর অনেক রাজ্যেই পরিবহন সংস্থাগুলি প্রতিবন্ধীদের জন্য নিচু-মেঝেবিশিষ্ট বাস চালু করে। রাস্তার যানজট কাটানোর লক্ষ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের আকর্ষিত করার জন্য চালু হয় বাতানুকূল বাসও।[৩৯][৪০] ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে ভারতে প্রথম বেঙ্গালুরু শহরে ভলভো বি৭আরএলই আন্তঃনগর বাস পরিষেবা চালু হয়।[৪১][৪২][৪৩]
শহরের বাস গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে বিভিন্ন শহরে দ্রুতগামী বাস পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।[৪৪] পুনে, আহমেদাবাদ ও ইন্দোরে ইতোমধ্যেই দ্রুতগামী বাস পরিবহন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। এই পরিষেবা চালু হওয়ার কথা আছে বিশাখাপত্তনম ও হায়দ্রাবাদেও।
এছাড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বাস দেখা যায় মুম্বই, বেঙ্গালুরু, নাগপুর ও চেন্নাই শহরেও। বেঙ্গালুরুর কাবোন পার্কের কাছে গড়ে উঠেছে দেশের প্রথম বাতানুকূল বাসস্টপ। এটি নির্মাণ করেছে ভারতী এয়ারটেল।[৪৫] চেন্নাইয়ের চেন্নাই মফস্বল বাস টার্মিনাসটি এশিয়ার বৃহত্তম বাস টার্মিনাস।[৪৬] ২০০৯ সালের পয়লা জুন কর্ণাটক সরকারের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে নিম্নবিত্তদের সুবিধার জন্য অতল সারিগে নামক একটি বাস পরিষেবা চালু করা হয়। এই পরিষেবার মূল লক্ষ্য সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণির কাছেও বাস পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া।[৪৭][৪৮]
অটোরিকশা একটি তিন চাকার ভাড়ার গাড়ি। এর কোনো দরজা থাকে না এবং এর সামনে চালকের একটি ছোটো কুঠুরি এবং পিছনে যাত্রীদের বসার আসন।[৪৯]
মুম্বই ও অন্যান্য কয়েকটি শহরে অটোরিকশা মিটার ভাড়ায় চলে। একটি সাম্প্রতিক আইন অনুসারে, অটোচালকদের পক্ষে নির্দিষ্ট ভাড়ার থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া, মধ্যরাতের আগে রাত্রি-ভাড়া নেওয়া বা কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে যাত্রী প্রত্যাখ্যান করা নিষিদ্ধ। মুম্বইই একমাত্র শহর যেখানে শহরের কোনো নির্দিষ্ট অংশে অটোর প্রবেশ নিষিদ্ধ, যা হল দক্ষিণ মুম্বই।[৫০][৫১] চেন্নাইতে অটোরিকশায় নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া দাবি করা এবং মিটারে চলতে অস্বীকার করার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।[৫২]
বেঙ্গালুরু ও হুবলি-ধারওয়াড়ের মতো কিছু শহরের বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশনে প্রিপেইড অটো বুথের সুবিধা পাওয়া যায়। এখান থেকে কর্তৃপক্ষ-নির্দিষ্ট ভাড়ায় নির্দিষ্ট স্থানে যাওয়ার জন্য যাত্রীরা অটো পরিষেবা পেয়ে থাকেন।[৫৩]
বৈদ্যুতিক রিকশা ভারতে দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি লাভ করছে, কারণ এর প্রারম্ভিক মূল্য কম এবং এর অন্যান্য আর্থিক ও পরিবেশগত উপযোগিতা বর্তমান।[৫৪] ২০২২-এর হিসাব অনুযায়ী[হালনাগাদ], ভারতের রাস্তায় ২৪ লক্ষ বৈদ্যুতিক রিকশা বর্তমান। তবে বৈদ্যুতিক যান ব্যবহারের অসুবিধা হলো চার্জিং স্টেশনের ঘাটতি। ২০১৭-এর শেষে ভারতের কেবল ৪২৫টি চার্জিং স্টেশন ছিল এবং ২০২২-এ এর সংখ্যা ২,৮০০-এ দাঁড়াতে পারে বলে অনুমান।[৫৫]
ভারতের পুরনো ট্যাক্সিগুলির অধিকাংশই প্রিমিয়ার পদ্মিনী বা হিন্দুস্তান অ্যাম্বাস্যাডার গাড়ি।[৫৬] তবে উবার ও ওলার মতো অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি পরিষেবার জন্য ট্যাক্সি গাড়ি কখনো সেডান,[৫৭] এসইউভি,[৫৮] এমনকি মোটরসাইকেল ট্যাক্সিও হতে পারে।[৫৯] শহর বা রাজ্যভেদে, ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে ট্যাক্সিকে ডাকতে বা ভাড়া করতে হয়। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ ও আহমেদাবাদের মতো শহরে ফোন করে ট্যাক্সি ভাড়া করতে হয়।[৬০] আবার কলকাতা বা মুম্বইতে রাস্তায় দাঁড়িয়েও ট্যাক্সি ডাকা যায়। ভারত সরকারের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ট্যাক্সিতে ভাড়া-মিটার লাগানো বাধ্যতামূলক।[৬১] এছাড়াও যাত্রীদের মালপথের জন্য বিশেষ সারচার্জ, বেশি রাতে যাতায়াতের জন্য বিশেষ ভাড়া বা টোল ট্যাক্স দিতে হয়। ২০০৬ সাল থেকে নিরাপত্তা ও ব্যবহারোপযোগিতার প্রশ্নে রেডিও ট্যাক্সিও জনসাধারণের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করেছে।[৬২]
২০০৯ সালের ১৩ জুলাই, মুম্বই শহরে ভারতে প্রথম "ইন-ট্যাক্সি" ম্যাগাজিন চালু হয়েছে যার নাম মুমবাই (ইংরেজি: MumBaee)। মুম্বই ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়নের ট্যাক্সিগুলিতেই এই ম্যাগাজিন পাওয়া যায়।[৬৩] কলকাতায় সাদা ও নীল রঙের বহু "নো-রিফিউজাল ট্যাক্সি" বর্তমান।[৬৪]
স্কুটার, কম ক্ষমতাসম্পন্ন মোটরসাইকেল ও মোপেড ইত্যাদি মোটর দ্বিচক্রযানগুলি ভারতে খুবই জনপ্রিয়। কারণ এগুলিতে একদিকে যেমন জ্বালানি সাশ্রয় হয়, তেমনই যানবহুল রাস্তায় সহজেই চালানো যায়। ভারতে বিক্রিত দ্বিচক্রযানের হার বিক্রিত গাড়ির হারের কয়েক গুণ। ২০০৩ সালের একটি হিসেব অনুযায়ী, ভারতে চালু দ্বিচক্রযানের সংখ্যা ৪.৭৫ কোটি, যেখানে দেশে গাড়ির সংখ্যা মাত্র ৮৬ লক্ষ।[৬৬] বাজার-শেয়ারের হার অনুসারে দেশের বৃহত্তম দ্বিচক্রযান কোম্পানিগুলি হল হিরো হন্ডা, হন্ডা, টিভিএস মোটরস ও বাজাজ অটো।[৬৭] দেশের একটি প্রবাদপ্রতিম দ্বিচক্রযান ব্র্যান্ডের নাম হল রয়্যাল এনফিল্ড। এরা বিভিন্ন ধরনের বুলেট মোটরসাইকেল উৎপাদন করে যা আজও উৎপাদনশীল ধ্রুপদী মোটরসাইকেল হিসেবে পরিগণিত হয়।[৬৮]
স্বাধীনতালাভের পর ১৯৪৯ সালে মুম্বইতে অটোমোবাইল প্রোডাক্টস অফ ইন্ডিয়া (এপিআই) প্রতিষ্ঠিত হলে দেশে প্রথম অ্যাসেম্বলিং ইনোসেন্টি-নির্মিত ল্যামব্রেটা স্কুটার উৎপাদন শুরু হয়। পরে তারা লি১৫০ সিরিজ মডেলের লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়। ষাটের দশক থেকে এরা পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে। ১৯৭২ সালে উত্তরপ্রদেশের লখনউ থেকে সরকারি সংস্থা স্কুটারস ইন্ডিয়া লিমিটেড (এসআইএল) সর্বশেষ ইনোসেন্টি ল্যামব্রেটা মডেলের সমস্ত উৎপাদন সত্ত্ব কিনে নেয়। মুম্বই, আওরঙ্গাবাদ (ছত্রপতি সম্ভাজিনগর) ও চেন্নাইতে পরিকাঠামোগত সুবিধাগুলি থাকা সত্ত্বেও এপিআই-এর উৎপাদন ২০০২ সাল থেকে বন্ধ। এসআইএল-ও ১৯৯৮ সালে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।
ভারতের অনেক শহরেই স্কুটার ও মোটরসাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। অধিকাংশ শহরেই চালক ও সহযাত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই হেলমেট পরা বাধ্যতামূলক।
ভারতের নগরাঞ্চলে যাতায়াতকারী যানবাহনের মধ্যে ৩০ শতাংশই ব্যক্তিগত যান। শুধুমাত্র দিল্লিতেই প্রতিদিন গড়ে ৯৬৩টি যান নথিভুক্ত হয়।[৬৯] ২০০২-০৩ সালে ভারতে উৎপাদিত যানবাহনের মোট সংখ্যা ছিল ৬৩ লক্ষ; ২০০৮-০৯ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ১.১ কোটি।[৭০] যদিও এখনও ভারতে গাড়ির মালিকানার হার অত্যন্ত কম। বিআরআইসি উন্নয়নশীল দেশগুলির গাড়ির মালিকানার হারের সঙ্গে বিচার করলে, ভারতে এই হার চীনের সমান[৬৬]; ব্রাজিল ও রাশিয়াতেও এই হার ভারতের চেয়ে বেশি।[৭১] অধিকাংশ শহরেই সুলভ দাম, জ্বালানি সাশ্রয়ের ক্ষমতা, যানজট সমস্যা ও পার্কিং স্পেসের অভাবজনিত কারণে কমপ্যাক্ট কার (বিশেষত হ্যাচব্যাক) জাতীয় গাড়ির সংখ্যাই বেশি। বাজার-শেয়ারের বিচারে মারুতি সুজুকি, হুন্ডাই ও টাটা মোটরস দেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। অ্যাম্বাস্যাডার একসময় দেশে একচেটিয়া ব্যবসা করেছে। বর্তমানে এই ব্র্যান্ড ভারতের প্রাক-উদারীকরণ যুগের একটি প্রতীকস্বরূপ। ট্যাক্সি কোম্পানিগুলি আজও এই ব্র্যান্ড ব্যবহার করে। ১৯৮৪ সালে বাজারে মারুতি ৮০০ গাড়িটির আবির্ভাব হলে এই গাড়ির কম দাম ভারতের অটোমোবাইল ক্ষেত্রে বিপ্লব সূচিত করে। ২০০৪ সাল অবধি এই ব্র্যান্ডটিই ছিল বাজার-শেয়ারের বিচারে বৃহত্তম ব্র্যান্ড। পরে মারুতির অন্যান্য কম দামের মডেল অল্টো ও ওয়াগন আর, টাটা মোটরসের ইন্ডিকা ও হুন্ডাইয়ের স্যান্ট্রো এর বাজার দখল করে নেয়। বাজারে আবির্ভাবের পর কুড়ি বছর সময়কালে মারুতি ৮০০ গাড়িটির মোট বিক্রির সংখ্যা ছিল প্রায় ২৪ লক্ষ।[৭২] যদি বিশ্বে সর্বাপেক্ষা কম খরচে উৎপাদিত গাড়ি টাটা ন্যানোর[৭৩] আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে এই সব গাড়ির ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।[৭৪]
ভারতের গ্রামাঞ্চলে সাধারণ মোটর ও যান যন্ত্রাংশ দিয়ে নানাপ্রকার দেশীয় যানবাহন নির্মিত হয়ে থাকে। এই রকম কয়েকটি আবিষ্কারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জুগাদ, মারুতা, ছাকড়া ও ফেম।[৭৫]
বেঙ্গালুরু শহরে রেডিও ওয়ান ও বেঙ্গালুরু ট্র্যাফিক পুলিশ একটি কারপুলিং ব্যবস্থা চালু করেছে। রবিন উথাপ্পা ও রাহুল দ্রাবিড়ের মতো বিশিষ্টরা জনসাধারণকে কারপুলিং ব্যবস্থায় আগ্রহী করে তোলার প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছেন।[৭৬][৭৭][৭৮] এই উদ্যোগে সাড়াও পাওয়া গেছে ভাল। ২০০৯ সালের মে মাসের শেষ অবধি ১০,০০০ জন শহরে কারপুলিং করছেন বলে জানা গেছে।[৭৯]
ভারতের প্রথম উপযোগমূলক যান বা ইউটিলিটি ভেহিকল উৎপাদন করে মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা। এটি ছিল মূল জিপের একটি কপি এবং এটি উৎপাদিত হয়েছিল লাইসেন্সের অধীনেই।[৮০] যানটি অল্পসময়ের মধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ফলে মহিন্দ্রাও ভারতের একটি প্রথম সারির কোম্পানিতে পরিণত হয়। ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীতে কর্মচারী ও রসদ প্রেরণের কাজে মহিন্দ্রা ও মারুতি জিপসির ব্যবহার ব্যাপক।
১৯৯৪ সালে টাটা গোষ্ঠী অটোমোবাইল উৎপাদন শাখা টাটা মোটরস টাটা সুমো নামে তাদের প্রথম উপযোগমূলক যানটি বাজারে ছাড়ে।[৮১][৮২] সুমো গাড়ির সেই সময়কার অত্যাধুনিক নকশার জন্য গাড়িটির বিক্রি দুই বছরের মধ্যে বাজারের ৩১ শতাংশ স্থান দখল করে নেয়।[৮৩] ফোর্স মোটরসের টেম্পো ট্র্যাক্স কিছুদিন আগে পর্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় রাজত্ব করেছে। বর্তমানে ক্রীড়া উপযোগমূলক যানগুলি (স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল) যাত্রীবাহী যানের বাজারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে রয়েছে।[৮৪] এছাড়া টাটা, হন্ডা, হুন্ডাই, ফোর্ড, শার্ভোলেট ও অন্যান্য ব্র্যান্ডের উপযোগমূলক যানও পাওয়া যায়।[৮৫]
রেল পরিবহন ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
ভারতের সকল প্রধান লাইনে রেল পরিচালনা ভারতীয় রেলওয়ে (আইআর) দ্বারা পরিচালিত হয়, যা রেল মন্ত্রণালয়ের একটি মালিকানাধীন সরকারি সংস্থা। মার্চ ২০২০ সালের হিসাবে ১,২৬,৩৬৬ কিমি (৭৮,৫২০ মা) রেল ট্র্যাক এবং ৭,৩২৫ টি স্টেশন নিয়ে গঠিত। [৮৭] ২০২১ সালের এপ্রিলে ৪৫,৮৮১ কিমি (২৮,৫০৯ মা) বা ৭১ শতাংশ পথ ২৫ কেভি এসি বৈদ্যুতিক ট্র্যাকশন দিয়ে বিদ্যুতায়িত, যার মধ্যে ৩৬.৮৩ শতাংশ দুটি বা দুইয়ের অধিক ট্র্যাক নিয়ে গঠিত।[৮৮]
এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জাতীয় রেলওয়ে নেটওয়ার্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, এবং চীনের পরে। .[৮৯]
এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যস্ততম নেটওয়ার্কগুলির মধ্যে একটি; ২০২০ সালে ৮.০৮৬ বিলিয়ন যাত্রী এবং ১.২০৮ বিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন করেছে। ২০২০ সালের মার্চে ১.২৫৪ মিলিয়নেরও বেশি কর্মীর সাথে ভারতীয় রেল বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইআর-এর রোলিং স্টকে ছিল ২,৯৩,০৭৭ টি মালবাহী ওয়াগন, ৭৬,৬০৮ টি যাত্রীবাহী কোচ এবং ১২,৭২৯ টি ইঞ্জিন।[৮৮] ভারতের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত লোকোমোটিক এবং কোচ উৎপাদন কেন্দ্র আইআর-এর মালিকানাধীন।
দেশের সর্বত্র শহুরে রেল পরিবহন ব্যবস্থা গুলি ভারতীয় রেল থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। বর্তমানে ভারতের ১১টি শহরে ১৫ টি পরিচালনাগত দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা (মেট্রো নামেও পরিচিত) রয়েছে। ৩ এপ্রিল, ২০২২ সাল অনুযায়ি, ভারতের ৭৫১.৭ কিলোমিটার (৪৬৭.১ মাইল) মেট্রো লাইন এবং ৬০৫ টি স্টেশন চালু রয়েছে এবং আরো ৫০০+ কিমি লাইন নির্মাণাধীন রয়েছে।পৌর রেল পরিবহন ব্যবস্থা ভারতের অত্যন্ত জনবহুল শহরের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শহরতলি রেল, ট্রাম, মেট্রো রেল, মনোরেল ও ভারতীয় রেল ব্যতীত আঞ্চলিক রেল ব্যবস্থা নিয়ে গঠিত। ২০২১ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বছরে মোট ২৬৩ কোটি জনসংখ্যা ভারতের পনেরোটি প্রধান শহর জুড়ে মেট্রো রেলে ভ্রমণ করে, যা দেশটিকে রাইডারশিপের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত পৌর দ্রুতগামী গণপরিবহন কেন্দ্র হিসাবে স্থান দেয়। ভারতে মেট্রো রেলের ৮৫৯ মাইল (১,৩৮২ কিলোমিটার) সম্মিলিত দৈর্ঘ্য এটিকে বিশ্বের চতুর্থ দীর্ঘতম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থায় পরিণত করেছে।
নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের পৌর পরিবহন শাখা কেন্দ্রীয় স্তরে মেট্রো রেল প্রকল্প সহ পৌর পরিবহনসংক্রান্ত বিষয়গুলির সমন্বয়, মূল্যায়ন এবং অনুমোদনের জন্য নোডাল বিভাগ। নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের পৌর পরিবহনে সমস্ত হস্তক্ষেপ জাতীয় নগর পরিবহন নীতি, ২০০৬ অনুসারে পরিচালিত হয়।প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত নয়। ভারতের ও বাংলাদেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস (কলকাতা–ঢাকা), বন্ধন এক্সপ্রেস (কলকাতা–খুলনা)[৯০][৯১] ও মিতালী এক্সপ্রেস (নিউ জলপাইগুড়ি–ঢাকা)[৯২] পরিষেবা বর্তমান। ভারত ও নেপালের সঙ্গে জয়নগর-বিজলপুরা যাত্রী পরিষেবা ও রক্সৌল-বীরগঞ্জ পণ্য পরিষেবা বর্তমান।[৯৩] ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ও ভারতের মধ্যে সমঝোতা এক্সপ্রেস (দিল্লি–লাহোর) ও থর এক্সপ্রেস (যোধপুর–করাচি) পরিষেবা ছিল।[৯৪][৯৫] তবে ভুটান, মিয়ানমার, চীন ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের কোনো রেল যোগাযোগ নেই।[৯৬]
শিপিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া নামক সরকারি-মালিকানাধীন সংস্থাটির হাতে ভারতের যাবতীয় সামুদ্রিক পরিবহন এবং উপকূলীয় ও অন্যান্য সামুদ্রিক পরিবহন পরিকাঠামোর পরিচালনভার ন্যস্ত। এই সংস্থা দেশের ৩৫ শতাংশ পোতশুল্কের মালিক ও পরিচালক। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় সম্পূর্ণ অংশের পরিচালনভার কার্যত এই সংস্থার হাতেই ন্যস্ত।[৯৭] এই সংস্থার ২৭ লক্ষ জিটি-র (৮৮ লক্ষ ডিডব্লিউটি) ৭৯টি জাহাজসম্বলিত একটি নৌবহর রয়েছে। এছাড়াও সরকারি বিভাগ ও বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে গবেষণা, সমীক্ষা ও সাহায্যার্থে ১.২ লক্ষ জিটি-র (০.৬ লক্ষ ডিডব্লিউটি) ৫৩টি জাহাজসম্বলিত নৌবহর পরিচালনা করে শিপিং কর্পোরেশন।[৯৮] সংস্থার কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মুম্বই শহরে অবস্থিত মেরিটাইম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে। ১৯৮৭ সালে স্থাপিত এই সংস্থাটি বিশ্ব সমুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শাখা।[৯৯] শিপিং কর্পোরেশন মালটা ও ইরানেও যৌথ উদ্যোগে কাজ করে থাকে।[৯৮]
বন্দরগুলি ভারতীয় বাণিজ্যের প্রধান কেন্দ্র। ভারতের পরিমাণের হিসেবে ৯০ শতাংশ ও মূল্যের হিসেবে ৭০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পাদিত হয় বন্দরের মাধ্যমে।[১০১] দেশে মোট বারোটি প্রধান বন্দর রয়েছে: কলকাতা (হলদিয়া সহ), পারাদ্বীপ, বিশাখাপত্তনম, এন্নোর, চেন্নাই, তুতিকোরিন, কোচি, নিউ ম্যাঙ্গালোর, নবী মুম্বই, মুম্বই ও কান্ডলা।[১০২] এছাড়াও দেশে ১৮৭টি ছোটো ও মাঝারি বন্দর রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি বন্দরে পণ্য চলাচল করে।[১০২]
প্রধান ও অপ্রধান বন্দরের বর্গীকরণ পণ্যবাহী জাহাজের সংখ্যার ভিত্তিতে করা হয় না। প্রধান বন্দরগুলি পরিচালিত হয় কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত পোর্ট ট্রাস্টগুলির মাধ্যমে। এগুলি ১৯৬৩ সালের প্রধান পোর্ট ট্রাস্ট আইন অনুসারে পরিচালিত হয়। অপ্রধান বন্দরগুলি সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার পরিচালিত। অনেক অপ্রধান বন্দর আবার ব্যক্তিগত বন্দর। ২০০৫-০৬ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের প্রধান বন্দরগুলিতে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ ৩৮২.৩৩ মেগাটন।[১০২]
ভারতের অন্তর্দেশীয় জলপথ পরিবহনের ব্যবস্থাটি যথেষ্ট প্রসারিত। নদনদী, খাল, কয়াল, ও ছোটো নদীপথে এই পরিবহন ব্যবস্থাটি দেখা যায়। ভারতের নৌচলাচলযোগ্য জলপথের মোট দৈর্ঘ্য ১৪,৫০০ কিলোমিটার; এর মধ্যে ৫,২০০ কিলোমিটার নদীপথ এবং ৪৫৮ কিলোমিটার খালপথ। যন্ত্রচালিত জলযানের সাহায্যে এই পথে যাতায়াত করা যায়।[১০৩] তবে অন্যান্য বৃহৎ রাষ্ট্রের তুলনায় ভারতে অন্তর্দেশীয় জলপথে পণ্য পরিবহন সুপ্রচলিত নয়। জার্মানি ও বাংলাদেশে যেখানে যথাক্রমে ২০ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ পণ্য পরিবহন অন্তর্দেশীয় জলপথে হয়ে থাকে, সেখানে ভারতে মাত্র ০.১৫ শতাংশ পণ্য অন্তর্দেশীয় জলপথের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়।[১০৪] গোয়া, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও কেরল রাজ্যের কয়েকটি মাত্র জলপথে সংগঠিতভাবে পণ্য পরিবহন চলে। ভারতের অন্তর্দেশীয় জলপথ কর্তৃপক্ষ ভারতের জলপথের দায়িত্বে নিযুক্ত একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থার কাজ এই সকল জলপথের জন্য উপযোগী পরিকাঠামো নির্মাণ, নতুন প্রকল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সমীক্ষা, প্রশাসন পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ।
ভারতে নিম্নলিখিত জলপথগুলি জাতীয় জলপথ ঘোষিত হয়েছে:
ভারতে বর্তমানে দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বিমান ভ্রমণকে সাধারণ মানুষের পক্ষে সুলভতর করে তুলেছে। প্রধান ধ্বজাবাহক বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার ১৪৭টি এয়ারক্র্যাফটের বিমানবহরটি ভারতকে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করে।[১০৮] এছাড়াও আরও কয়েকটি বিদেশি বিমান সংস্থা ভারতকে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করছে।
আভ্যন্তরীন বিমান পরিবহনের বাজার শেয়ারের ভিত্তিতে দেশের জনপ্রিয়তম নাম হল ইন্ডিগো ও এয়ার ইন্ডিয়া। ভারতের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার উদারীকরণের পর থেকে এই বিমান সংস্থাগুলি দেশের প্রায় ৮০টি শহরকে সংযুক্ত করেছে ও বিভিন্ন বৈদেশিক বিমানপথ পরিচালনা করছে। মুম্বই-দিল্লি বিমান করিডোরটি ২০০৭ সালে অফিসিয়াল এয়ারলাইনস গাইড অনুসারে বিশ্বের ষষ্ঠ ব্যস্ততম বিমানপথ।[১০৯] তবুও দেশের বিমান পরিবহন ব্যবস্থার একটি বৃহৎ অংশই আনট্যাপড রয়ে গেছে।
বিগত কয়েক বছরে ভারতের অব্যবহৃত বিমান পরিবহন নেটওয়ার্কে প্রচুর বিনিয়োগ হয়েছে। ২০০৪-০৫ সালে প্রায় আধ-ডজন সুলভ ক্যারিয়র ভারতের বাজারে প্রবেশ করে। বর্তমানে উল্লেখযোগ্য এয়ারলাইন হল: ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, গো ফার্স্ট এবং আকাসা এয়ার।
২০২১ সালের হিসাব অনুসারে ভারতে ৩০টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ১০টি কাস্টমস বিমানবন্দর এবং ১০৭টি জাতীয় বিমানবন্দর ও হেলিপোর্ট বর্তমান।[১১০]
বিশ্বের উচ্চতম হেলিপ্যাড ভারতের সিয়াচেন হিমবাহে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই হেলিপ্যাডের উচ্চতা ৬,৪০০ মিটার (২১,০০০ ফুট)।[১১১]
পবন হংস হেলিকপ্টারস লিমিটেড ভারতের একটি সরকারি কোম্পানি যা ওএনজিসি থেকে এর সমুদ্রমধ্যবর্তী অবস্থান পর্যন্ত হেলিকপ্টার পরিষেবা প্রদান করে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের (বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে) নিজস্ব হেলিকপ্টার পরিষেবা রয়েছে।[১১২]
২০২০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, আকরিক তেলের পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ১০,৪১৯ কিলোমিটার (৬,৪৭৪ মা), পেট্রোলিয়াম জাত পণ্যের পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ৩,৫৪৪ কিলোমিটার (২,২০২ মা) এবং প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের দৈর্ঘ্য ১৭,৩৮৯ কিলোমিটার (১০,৮০৫ মা)।[৩২]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.