বৈদ্যুতিক যানবাহনের প্রকারভেদ উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
একটি ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহন (বিইভি), প্রকৃত বৈদ্যুতিক যানবাহন, শুধুমাত্র বৈদ্যুতিক যানবাহন বা সমস্ত-বৈদ্যুতিক যানবাহন হলো একধরনের বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি), যা রিচার্জেবল ব্যাটারি প্যাকগুলিতে সংরক্ষিত রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে। ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলো (বিইভি) চালিকাশক্তির জন্য অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (আইসিই) এর পরিবর্তে বৈদ্যুতিক মোটর এবং মোটর কন্ট্রোলার ব্যবহার করে। এই যানবাহনগুলো ব্যাটারি প্যাকগুলো থেকেই চলার জন্য সমস্ত শক্তি অর্জন করে এবং সেজন্য এর কোনও অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (আইসিই), জ্বালানি কোষ বা জ্বালানি ট্যাংক থাকে না। [১] ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলোর (বিইভি) মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোটর সাইকেল, বাইসাইকেল, স্কুটার, স্কেটবোর্ড, রেলগাড়ি, ওয়াটারক্রাফট, ফর্কলিফ্ট, বাস, ট্রাক এবং গাড়ি ইত্যাদি।[২][৩]
২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক বাইক ব্যবহৃত হত সবমিলিয়ে প্রায় ২১০ মিলিয়ন। এছাড়া হাইওয়েতে চলতে সক্ষম প্রকৃত বৈদ্যুতিক গাড়ির বিশ্বব্যাপী বিক্রয়সংখ্যা ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ১ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যায়। ২০১৮ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মধ্যে বিশ্বব্যাপী সর্বোচ্চ সংখ্যাক বিক্রয়কৃত সমস্ত-বৈদ্যুতিক গাড়ি নিসান কম্পানির নিসান লিফ, যার বিক্রয়সংখ্যা ৩০০,০০০। এরপরেই ২য় অবস্থানে রয়েছে বিশ্বব্যাপী ২০০,০০০ ইউনিট বিক্রিত টেসলা কম্পানির মডেল এস। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের আমেরিকা বাজারে ৭৫ শতাংশ শেয়ার একাই দখল করে নিয়েছে টেসলা। [৪]
যেসব যানবাহন বৈদ্যুতিক মোটর এবং অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন উভয়ই ব্যবহার করে সেগুলো হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহন (এইচইভি) হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রকৃত-বৈদ্যুতিক যানবাহন হিসাবে বিবেচিত হয় না কারণ তাদের বাহ্যিকভাবে চার্জ করা যাবে না এবং এর পরিবর্তে তারা একনাগাড়ে অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (আইসিই) এবং পুনরাবৃত্তিমূলক ব্রেকিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তি থেকে রিচার্জ করে।
যেসব যানবাহন বৈদ্যুতিক মোটর এবং অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন উভয়ই ব্যবহার করে সেগুলো হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহন (এইচইভি) হিসেবে বিবেচিত হলেও প্রকৃত-বৈদ্যুতিক যানবাহন হিসাবে বিবেচিত হয় না কারণ তাদের বাহ্যিকভাবে চার্জ করা যাবে না এবং এর পরিবর্তে তারা একনাগাড়ে অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (আইসিই) এবং পুনরাবৃত্তিমূলক ব্রেকিং এর মাধ্যমে প্রাপ্ত শক্তি থেকে রিচার্জ করে।
যে হাইব্রিড যানবাহনগুলোর ব্যাটারি অভ্যন্তরীণ জ্বলন ইঞ্জিন (আইসিই) ও গ্যাসোলিন জ্বালানির মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে কিছুটা বা সম্পূর্ণরূপে রিচার্জ করা যায় তাদেরকে প্লাগ-ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহন (পিএইচইভি) বলা হয়। অবশ্য এই যানবাহনগুলো চার্জিত ব্যাটারির মাধ্যমে চলার সময় ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের (বিইভি) মতই চলে থাকে। আর সে সকল প্লাগ-ইন হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহন (পিএইচইভি) সিরিজ পাওয়ারট্রেইন এর প্রক্রিয়ায় চালিকাশক্তি পায় সেগুলোকে রেঞ্জ-বর্ধিত বৈদ্যুতিক যানবাহন (আরইইভি) বলা হয়, যেমন শেভরোলেট ভোল্ট এবং ফিশার কার্মা।
প্লাগ-ইন বৈদ্যুতিক যানবাহন (পিইভি) এক প্রকার বৈদ্যুতিক যানবাহন, এটি দুই (২) প্রকার:
চীনে প্লাগ-ইন বৈদ্যুতিক যানবাহন ও হাইব্রিড বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলোকে নতুন শক্তির যানবাহন (এনইভি) বলা হয়। এছাড়া ইউএসএ-তে এনইভি বলতে যে যানবাহনগুলোকে বুঝানো হয় সেগুলো মূলতঃ বিইভি, যার রাস্তায় চলার জন্য সর্বোচ্চ গতিসীমার আইন ৪৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা (৭২ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা)। সাধারণত এ যানবাহনগুলোর তৈরীর সময় সর্বোচ্চ গতি প্রতি ঘণ্টায় ৩০ মাইল (৪৮ কিমি প্রতি ঘণ্টা) বেঁধে দেওয়া হয় যার সর্বাধিক লোড ওজন 3,000 পাউন্ড।
ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের মূল ধারণা হলো যানবাহনটির চালিকাশক্তির জন্য চার্জিত ব্যাটারি ব্যবহার করা। সারাবিশ্বে তেলের উচ্চ মূল্য এবং নতুন ব্যাটারি প্রযুক্তির (লিথিয়াম আয়ন) উচ্চতর শক্তি (যেমন, অধিকতর সম্ভাব্য ত্বরণ এবং অল্প ব্যাটারিতেই বেশি মাইলেজ) এসব কারণে দিন দিন ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, লেড-অ্যাসিড ব্যাটারীর সাথে তুলনা করলে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারিতে ০.৯-২.৬৩ এমজে/এল এর শক্তি ঘনত্ব রয়েছে, তবে সীসা-এসিড ব্যাটারিতে ০.৩৬ মেগাওয়াট/এল (যা ২.৫ থেকে ৭.৩গুণ উচ্চতর) এর শক্তি ঘনত্ব রয়েছে। পেট্রল-ভিত্তিক জ্বালানী এবং জৈব জ্বালানীগুলির সাথে তুলনা করলেও এটির দীর্ঘতম উপায় রয়েছে (গ্যাসোলিনের ৩৪.২ এমজে/এল যা কিনা প্রায় ৩৮ থেকে ১২.৯২গুণ বেশি এবং ইথানল ২৪ মেগাওয়াট/এল যা কিনা ২৬ থেকে ৯.১২গুন বেশি)।
ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হল ট্রাক, রেলগাড়ি, গাড়ি, বাস, বাইক... ইত্যাদি।
বিশ শতকের বেশির ভাগের জন্য, বিশ্বব্যাপী ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক যানবাহনগুলোর অধিকাংশই ব্রিটিশ দুধ বহনকারী ট্রাক। এরপর ২১ শতকে চীনা বিওয়াইডি কম্পানি ইলেকট্রিক ট্রাকগুলির ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে।
২০১২ সালের মার্চে, স্মিথ ইলেকট্রিক ভেহিকেল কম্পানি নিউটন স্টেপ-ভ্যানের ঘোষণা দেয় যা একটি প্রকৃত বৈদ্যুতিক ও শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী যানবাহন।
চীনা বিওয়াইডি কম্পানি বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক BYD T3 এর বহর দিয়ে DHL সরবরাহ করে।
ইলেকট্রিক কার[৫] বলতে মূলত সেসব গাড়িকে বোঝায়, যেগুলোকে পরিচালনা করার জন্য এক বা একাধিক মোটর ব্যবহার করা হয়। সাধারণ ফুয়েল ব্যবহার না করে পরিবেশবান্ধব লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ব্যাবহৃত হয়। তবে সম্প্রতি ইলেকট্রিক কারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে এই পরিবেশবান্ধব গাড়ি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।[৬] এক্ষেত্রে ট্রান্সপোর্টশনের পরিবর্তন এনে পরিবেশ, পরিবহন ও পরিবেশ দূষণ নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এই ইলেকট্রিক কারগুলো। বিশ্বে সকল প্রকার ইঞ্জিন থেকে প্রায় ২৪% কার্বনডাইঅক্সাইড নির্গমন হচ্ছে
বিশেষ উদ্দেশ্যের যানবাহনগুলো বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যা গল্ফ কার্ট, বৈদ্যুতিক গলফ ট্রলি, দুধ সরবরাহকারী বহর, ভূখণ্ডের বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, এনইভি ইত্যাদি। এছাড়াও কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানার অভ্যন্তরে কিছু কিছু কাজের জন্য বিদ্যুৎ চালিত ছোট বা মাঝারি আকারের বাহন ব্যবহার করে থাকে।
তিন চাকার গাড়ির মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক রিক্সা। কোনো এলাকায় বৈদ্যুতিক দ্বিচক্রযানের বহুল ব্যবহার ট্রাফিক শব্দ এবং সড়ক দুর্ঘটনা ব্যাপকভাবে কমাতে পারে। তবে এর জন্য শহুরে বিদ্যমান অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজন হতে পারে।
ভারতের এভেরা কম্পানি (নতুন এবং পুনঃনবায়নযোগ্য শক্তি সম্পর্কিত কোম্পানি) 2018 সালের শেষ নাগাদ লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারি প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক স্কুটারের দুটি মডেল চালু করার ঘোষণা দেয়।
চীনে ই-বাইকের চাহিদা সাম্প্রতিককালে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর উদাহরণ হল ১৯৯৮ সালে সর্বমোট ৫৬,০০০ ইউনিট বিক্রিত ই-বাইকের বিক্রয়ের পরিমাণ বেড়ে ২০০৮ এ গিয়ে দাঁড়ায় ২১ মিলিয়ন এ। যা গত ২০১০ এ আনুমানিক ১২০ মিলিয়ন স্পর্শ করে। চীন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ই-বাইক নির্মাতা। যারা শুধুমাত্র ২০০৯ সালেই ই-বাইক তৈরী করে ২২.২ মিলিয়ন ইউনিট। বিশ্বব্যাপী ই-বাইকের বৃহত্তম নির্মাতারা প্রতিষ্ঠান চীনের বিওয়াইডি কম্পানি।
সাম্প্রতিককালে ব্যক্তিগত চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন ধরনের একক চাকাযুক্ত স্ব-ভারসাম্যহীন, স্ব-ভারসাম্যপূর্ণ স্কুটার, বৈদ্যুতিক কিক স্কুটার এবং বৈদ্যুতিক স্কেটবোর্ড তৈরী কিছু নির্মাতা কম্পানি।
বেশ কিছু ব্যাটারিচালিত বৈদ্যুতিক জাহাজ সারা বিশ্ব জুড়ে কাজ করে কিছু ব্যবসার জন্য। এছাড়া বৈদ্যুতিক ফেরি পরিচালিত এবং নির্মিত হচ্ছে।
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.