Loading AI tools
উইকিপিডিয়া থেকে, বিনামূল্যে একটি বিশ্বকোষ
বস্তার রাজ্য ছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতে অবস্থিত একটি দেশীয় রাজ্য, যা বর্তমানে ভারতের অন্তর্গত৷ রাজ্যটি খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীতে[1] কাকতীয় রাজবংশের শেষ রাজা প্রতাপরুদ্রের ভাইয়ের দ্বারা পত্তন ঘটে৷ এটি মোটামুটিভাবে ছত্তিশগড় রাজ্যের পূর্বতন বস্তার জেলা বা বস্তার বিভাগের দক্ষিণ অংশকে সূচিত করে৷ [2]
বস্তার রাজ্য बस्तर | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
ব্রিটিশ ভারত দেশীয় রাজ্য | |||||||
১৩২৪–১৯৪৮ | |||||||
ইম্পেরিয়াল গেজেটিয়ার অব ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত বস্তার রাজ্যের মানচিত্র | |||||||
রাজধানী | জগদলপুর | ||||||
আয়তন | |||||||
• ১৯০১ | ৩৩,৮৩১ বর্গকিলোমিটার (১৩,০৬২ বর্গমাইল) | ||||||
জনসংখ্যা | |||||||
• ১৯০১ | ৩,০৬,৫০১ | ||||||
ইতিহাস | |||||||
• প্রতিষ্ঠিত | ১৩২৪ | ||||||
১৯৪৮ | |||||||
| |||||||
বর্তমানে যার অংশ | ছত্তিশগড়, ভারত | ||||||
বস্তার দেশীয় রাজ্য |
ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতের ব্রিটিশ শাসনকালে এই রাজ্যটি মধ্য প্রদেশ এবং বেরার-এর অংশ ছিলো। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের পয়লা জানুয়ারি তারিখে রাজ্যটি ভারতীয় অধিরাজ্যে যোগদান করে এবং ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে এটিকে নবগঠিত মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে মধ্যপ্রদেশ থেকে নতুন ছত্তিশগড় রাজ্য গঠিত হলে এটি ওই রাজ্যের বস্তার জেলায় পরিণত হয়। সাম্প্রতিক বস্তারের আনুষ্ঠানিক শাসক মহারাজা কমলচন্দ্র ভঞ্জদেও ভঞ্জ রাজবংশের উত্তরসূরী।
বস্তার রাজ্য পূর্বতন মধ্যপ্রদেশ এবং বেরারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত ছিল, যা উত্তর দিকে কাঙ্কের রাজ্য, দক্ষিণ দিকে মাদ্রাজ রাজ্য এজেন্সির গোদাবরী জেলা, পশ্চিম দিকে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের চন্দ্রপুর জেলা ও গোদাবরী নদী এবং পূর্ব দিকে ওড়িশার জয়পুর রাজ্য দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিল।
রাজ্যটি ১৩,০৬২ বর্গমাইল (৩৩,৮৩০ কিমি২) অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত ছিল[3] এবং ১৯০১ খ্রিস্টাব্দের তথ্য অনুসারে মোট জনসংখ্যা ছিল ৩,০৬,৫০১ জন। রাজ্যটির রাজধানী ছিল ইন্দ্রাবতী নদীর তীরে অবস্থিত জগদলপুর শহরে এবং ওই বছর শহরের জনসংখ্যা ছিল ৪,৭৬২ জন।[3]
পৌরাণিক ঐতিহ্যগতভাবে রামায়ণ অনুসারে এই অঞ্চলটি দণ্ডকারণ্য নামে পরিচিত ছিল এবং মহাভারত অনুসারে এটি ছিল কোশল রাজ্যের অন্তর্গত। শিলালেখ থেকে তথ্য পাওয়া যায় মোটামুটি ৪৫০ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে বস্তারের নল রাজা ভবদত্ত বর্মণ তৎকালীন বাকাটক রাজ্যের রাজা নরেন্দ্রসেনের সময়কালে তাঁর রাজ্যের কিছু ক্ষেত্রের ওপর আক্রমণ চালান৷ [4]
তাম্রলেখ অনুসারে রাজা প্রতাপরুদ্রের ভ্রাতা অন্নমরাজা একটি বৃহৎ অঞ্চলে নিজ রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে বস্তার রাজ্যে পরিণত হয়৷ ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দের বস্তারের রাজপরিচিতি বিস্তারণের সময়ে এবং প্রকাশের সময় এই তথ্যটি জনসমক্ষে আসে৷ রাজবংশটির ৪০০ বছরের রাজত্বের মাত্র আটজন রাজাই নথিভুক্ত ছিলেন ফলে মোটামুটি একটি নিরবচ্ছিন্ন রাজার তালিকা নির্ণয়ের কারণে এই প্রক্রিয়াটি করা হয়েছিলো৷ এই স্মৃতিচারণ ও কৃশ প্রমাণাদি এবং কাকতীয় বংশের সহিত স্থানীয় রাজার সম্পর্ক নির্ণয়ের মূল কারণই ছিলো শাসকবর্গের ক্ষত্রিয় বৈধতা ও রাজরক্তের পদমর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখা৷ নথি সংগ্রাহক তালবট অন্নমদেব নামে কাকতীয় এক রাজার ভ্রাতার উল্লেখ পান এবং নথিভুক্ত করেন:
রাজা হিসাবে প্রতাপরুদ্রের পরে তার পুত্রের উদ্বর্তন হলে তিনি ওয়ারাঙ্গল ত্যাগ করে উত্তর-পূর্ব দিকে চলে আসেন৷ এভাবে বস্তারের রাজপরিবার নিজেদের তেলেঙ্গানার এক তেলুগুভাষী ক্ষত্রিয়ের বংশধর এবং কাকতীয় বংশজ বলে উল্লেখ করেন৷[5]
এই কালক্রম অনুসারে আনুমানিক ১৩২৪ খ্রিস্টাব্দে বস্তার অঞ্চলে স্থানীয় দেবী দন্তেশ্বরী দেবীর কূলদেবীরূপে অভিভাবকত্বে বস্তার অঞ্চলে একটি রাজ্য পত্তন করা হয়। কুলদেবী দন্তেশ্বরী আজ ওই রাজবংশের আরাধ্যা, দাঁতেওয়াড়া অঞ্চলে রয়েছে এই দন্তেশ্বরী মন্দির।[6] ভারতের প্রথম শাসক ১৩৬৯ খ্রিস্টাব্দ কে করেছিলেন তারপর বংশানুক্রমে হামির দেব, ভাইতৈ দেব, পুরুষোত্তম দেব এবং প্রতাপরাজ দেব বস্তারের রাজা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপরাজ দেবের মৃত্যুর পর কাকতীয় রাজবংশের বস্তার শাখার পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে দিকপাল দেবে রাজত্বকালে। ১৭০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপরাজ দেবের পর তার ভ্রাতা রাজপাল দেব রাজসিংহাসনে বসেন। তার দুজন স্ত্রী ছিল, প্রথমা স্ত্রী তথা বাঘেল রাজকন্যার সহিত তার দক্ষিণ সিংহ নামে একটি পুত্র সন্তান জন্মায়। দ্বিতীয় স্ত্রী তথা চান্দেল রাজকুমারীর সহিত তার দলপতি দেব এবং প্রতাপ দেব নামে দুই পুত্র সন্তান জন্মায়। ১৭২১ খ্রিস্টাব্দের রাজপাল দেব মৃত্যুবরণ করলেবাঘের রাজকুমারী তথা প্রথমা পত্নী তার ভ্রাতাকে বস্তারের রাজসিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন কিন্তু এই সিদ্ধান্তে বিরূপ হয়ে দলপতি দেব পার্শ্ববর্তী জয়পুর রাজ্যের রাজার নিকট সাহায্যপ্রার্থী হন। এক দশক অতিবাহিত হওয়ার পর ১৭৩১ খ্রিস্টাব্দে দলপতি দেব বস্তার রাজ্যের রাজা ঘোষিত হন। [7][8]
রাজ্যটির সদর জগদলপুর শহরে ছিল এবং সেখানে একটি রাজপ্রসাদে ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে রাজধানী পুরানো বস্তার শহরে স্থানান্তরিত করা হয়।[7]
এই সময়ের মধ্যেই খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বস্তার রাজ্যের দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে, উত্তরের অংশ নিয়ে তৈরি হয় নতুন রাজ্য কাঙ্কের এবং দক্ষিণাংশ বস্তার নামে জগদলপুর থেকে শাসিত হতে থাকে।[9] বর্তমান হালবা জনজাতি নিজেদেরকে ঐ সকল রাজ্যের ক্ষত্রিয়বর্গ বলে দাবি করেন।
মারাঠাদের উত্থানের আগে অবধি খ্রিস্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই রাজ্যটি সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন ছিল। ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে বস্তার নবগঠিত মধ্য প্রদেশ ও বেরার প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয় ও ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে কোটপাড়ে জাতিবিদ্বেষকে কেন্দ্র করে রাজ্যটি বার্ষিক ৩,০০০ ভারতীয় মুদ্রার বিনিময়ে পার্শ্ববর্তী জয়পুর রাজ্যে হস্তান্তরিত করা হয়। আহরিত করের দুই-তৃতীয়াংশ বস্তারের উন্নতিকল্পে ব্যবহার করার শর্ত দেওয়া হয়। এই শর্ত প্রয়োগের মাধ্যমে বস্তারের সার্বিক মূল্য হ্রাস পায়।
বস্তারের বিশতম এবং শেষ শাসক প্রবীরচন্দ্র ভঞ্জদেও ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে বস্তারের সিংহাসনে বসেন এবং তার রাজত্বকালেই একীভূতকরণের দলিল প্রয়োগ মারফত বস্তার ভারতীয় অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। [10]
মহারাজা প্রবীরচন্দ্র ভঞ্জদেও অন্যান্য প্রজাদের সাথে বসবাসকারী জনজাতিদের মধ্যেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫ শে মার্চ তারিখে ভারত সরকারের বস্তার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জনজাতি ভূমি সংরক্ষণের অধিকারের লড়াইতে নেতৃত্বদান করা কালীন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তাকে তার জগদলপুরের রাজপ্রাসাদ থেকে বিতাড়িত করা হয়। ভারতীয় সেনা বল অন্যান্য জনজাতি নেতা এবং নেতৃবৃন্দকে হত্যা করতেও পিছুপা হয়নি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
Seamless Wikipedia browsing. On steroids.
Every time you click a link to Wikipedia, Wiktionary or Wikiquote in your browser's search results, it will show the modern Wikiwand interface.
Wikiwand extension is a five stars, simple, with minimum permission required to keep your browsing private, safe and transparent.